Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

শফিক সোহাগ

৭ বছর আগে

মা’কে নিয়ে ভারত ভ্রমণ (৩য় পর্ব)



২০ এপ্রিল সকালে আজমীর শরীফের আশপাশের দর্শনীয় স্থানসমূহ দেখার উদ্দেশ্যে আমরা বের হলাম । আজমীর শরীফের মেইন গেটের নিকট হতে ঘোড়ার গাড়ী নিয়ে চললাম “আনা সাগর” এর দিকে । ঘোড়ার গাড়ী রাজস্থানের পথে পথে টকবক টকবক করে আমাদের নিয়ে ছুটে চলেছে । আমরা আশপাশের পরিবেশ ও স্থাপনাগুলো দেখছি । রাজস্থানের একটি বিষয় আমাকে বিস্মিত করলো । রাজস্থানের পথে পথে যতগুলো মোটরসাইকেল/স্কুটার চলতে দেখেছি তার প্রায় ৭০% ড্রাইভ করছেন নারী ! ১২ বছরের কিশোরী থেকে শুরু করে ৬০/৭০ বছরের বৃদ্ধারাও স্কুটার ড্রাইভ করছেন । ছোট ছোট কিশোর-কিশোরীরা মোটরসাইকেল/স্কুটার ড্রাইভ করে স্কুলে যাচ্ছে । মা’কে বললাম “ মা দেখো, তোমার চেয়েও বেশি বয়স্ক মহিলারা কিভাবে স্কুটার চালিয়ে অফিসে যাচ্ছে আর তোমাকে এখন ধরে ধরে গাড়িতে তুলতে হয়”। মা হাসে ।


                                                                               আনা সাগর 

ঘোড়ার গাড়ী আনা সাগরের প্রবেশদ্বারে এসে থামলো । প্রবেশদ্বার দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে পার্কের মত সাজানো সুন্দর পরিবেশ । এর একটু সামনেই আনা সাগর । নামে সাগর হলেও আসলে এটি একটি বিশাল হ্রদ । ঐতিহাসিক ঘটনার কারণে এই হ্রদটি হয়েছে বিখ্যাত ।  রাজা পৃথ্বিরাজের রাজ্য পরিচালনার সময় আনা সাগরের পানি শুধুমাত্র উচ্চ বর্নের হিন্দু এবং পুরোহিত সম্প্রদায়ছাড়া অন্য কেও ব্যবহার করতে পারতো না।নিম্ন বর্ণের হিন্দুরা এটা তাদের ধর্মীয় বিধান বলে মনে করতো । একদিন আনাল সাগরে অজু করতে গিয়েছিলেন হজরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী’র একজন সাগরেদ।পুরোহিতরা অপমান করে তাড়িয়ে দিলো তাকে।সাগরেদ সমস্ত ঘটনা বর্ননা করলেন খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রঃ) কে।তখন খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রঃ) মোহাম্মদ সাদীকে (যিনি ছিলেন হিন্দু ধর্মের আধ্যাধিক সিদ্ধপুরুষ - রামদেও) ”আনা সাগর” থেকে এক ঘটি পানি আনার নির্দেশ দিলেন।নির্দেশ মত মোহাম্মদ সাদী ‘আনা সাগর’ থেকে এক ঘটি পানি আনতেই দেখা গেলো এক আশ্চর্য দৃশ্য ! কোথায় সাগর ? সব পানি শুকিয়ে গিয়েছে ! এই আলৌকিক ঘটনাপুরোহিতরা রাজাকে জানালো ।বিব্রত বোধ করলো রাজা।রাজা বাধ্য হয়ে আবারও পুরোহিতদের দুর্ব্যবহারের জন্য খাজার কাছে ক্ষমা চাইতে নির্দেশ দিলেন ।উপায়ন্তর না দেখে তারা খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রঃ) এর কাছে গিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন । মানুষের দুর্দশা দেখে ও পুরোহিতদের ক্ষমা চাওয়ার প্রেক্ষিতেখাজা মঈনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) মোহাম্মদ সাদীকে পুণরায় ঘটিতে ভরা পানি আনা সাগরে ঢেলে দিতে নির্দেশ দিলেন।নির্দেশ পালিত হলো।ঘটির পানি ঢেলে দেয়ার সাথে সাথেই ভরে গেল বিশাল হ্রদ ‘আনা সাগর’। এই আলৌকিক ঘটনার পর বহুলোক ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিল খাজা মঈনুদ্দিন চিশ্‌তী (রঃ) এর হাত ধরে।

                                                                               তারাগড় পাহাড় 

আনা সাগর থেকে ফিরে মাইক্রো ভাড়া করে আমরা চললাম তারাগড় পাহাড়ের দিকে । প্রায় ৩ হাজার ফুট উঁচু আকাশচুম্বি এই তারাগড় পাহাড়ের পাদদেশ থেকে আঁকাবাঁকা পথ বেঁয়ে আমাদের গাড়ি উপরে উঠতে লাগলো । এই পাহাড়ের রয়েছে বহু স্মৃতি বিজড়িত ঘটনা । রাজা পৃথ্বীরাজের সময় এটি একটি বড় কেল্লা ছিল। সুলতান সাহাবউদ্দীন ঘোরী এটি বিজয় করে হযরত মিরান সৈয়্যদ হোসাইন (রহ.) কে এই কেল্লার অধিপতির দায়িত্ব অর্পণ করেন। হযরত মিরান সৈয়্যদ হোসাইন (রহ.) হলেন খাজা গরীবে নেওয়াজের ভাগিনা। এক রাতে কিছু কট্টরপন্থী হিন্দু তারাগড় পাহাড়ের কেল্লায় ঘুমন্ত অবস্থায় হযরত মিরান সৈয়্যদ হোসাইন (রহ.) ও তাঁর সাথীদের উপর অতর্কিত হামলা চালায় । এতে হযরত মিরান সৈয়্যদ হোসাইন (রহ.) ও তাঁর সাথীরা শাহাদাত বরণ করেন। বর্তমানে তারাগড় পাহাড়ে হযরত মিরান সৈয়্যদ হোসাইন (রহ.) এর রওজা রয়েছে । আমরা আঁকাবাঁকা পথ বেঁয়ে ৩ হাজার ফুট উপড়ে পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছি । প্রিয় পাঠক, আপনারা যারা এই স্থানে যাবেন অবশ্যই সতর্ক থাকবেন । কিছু অসাধু ব্যক্তি স্বেচ্ছায় গাঁয়ে পড়ে আপনাদেরকে সহযোগিতা করতে আসবে । মাজার ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য গাইড করতে চাইবে । তাদেরকে এড়িয়ে চলবেন । আমরা তাদেরকে পাশ কাঁটিয়ে রওজা জেয়ারত করে আবার আজমীর শরীফের খাদেমের বাড়িতে ফিরে আসি । 

Email: shafiq_shohag@yahoo.com 

১ Likes ২ Comments ০ Share ৪২১ Views