Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

মায়ের স্পর্শ মুমূর্ষ নবজাতকের অব্যর্থ জীবনীশক্তি

বিশ্বের অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ নিউ সাউথ ওয়েলেস এর মাতৃসদনে এ ভর্তি হলেন অস্ট্রেলিয়ান কেইট(২৯)। তাঁর স্বামীর ডেভিড এর হাত ধরে হুইলচেয়ারে করে লেবার রুমে যাচ্ছেন। পাশে দুটি ছোট ট্রলি, ১৪ জন উচ্চ ডিগ্রীধারী ডাক্তার, একজন নবজাতক বিশেষজ্ঞ, প্রয়োজনীয় সংখ্যাক নার্স এবং ধাত্রী। তাদের জমজ সন্তানের প্রথম শিশুটি জন্মগ্রহন করল। কেইট এক পলক দেখে নিল। কিন্তূ এখনো জানেন না ২য় সন্তানের কি ঘটতে যাচ্ছে। ততক্ষণে ডাক্তারদের মধ্যে এদিক সেদিক ছোটাছুটি বেড়ে গেল। ডাক্তাররা ২য় বাচ্চার ফুসফুসে টিউব দিয়ে দম নিতে সাহায্য করতে লাগলেন। শিশুকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ফুসফুসে ঔষধ দেয়া হল। প্রায় ২০ মিনিট ধরে দ্বিতীয় শিশুর ফুসফুসে টিউব দিয়ে অক্সিজেন দেয়ার চেষ্টা করা হল। কিন্ত সে নিশ্বাস নিতে পারল না। কিছুক্ষন পর ডাক্তাররা চুড়ান্তভাবে চেক আপ করে বাচ্চার মাকে জানালেন ‘‘আমরা দুখিত, আপনার বাচ্চাকে রক্ষা করতে পারলাম। আমরা তাকে হারিয়েছি’’ ডাক্তার সে নিথর বাচ্চাটাকে ছোট একটি বান্ডেলের মত করে কম্বল জড়িয়ে মায়ের কাছে এনে দিলেন। কিন্তু মা কেইট চাইলেন না তার সে বাচ্চা বান্ডেল বন্দি থাকুক। বাচ্চা যখন চলেই গেল মায়ের শেষ ইচ্ছা তাঁর মৃত সন্তানকে কিছুক্ষণ বুকে জড়িয়ে রাখবেন। তাই বাচ্চাকে ছোট কম্বলের বান্ডেল থেকে মুক্ত করে মায়ের খোলা বুকে নিথর বাচ্চাকে জড়িয়ে দেয়া হল। আদরের মানিক মৃত হলেও তার শরীরের শেষ স্পর্শ পেতে মা তার খোলা বুকে এমন ভাবে জড়িয়ে ধরলেন যেন বাচ্চা জীবিত। মা বারবার কান্নায় ভেংগে পড়ছিলেন কারণ কিছুক্ষণ পর তার আদরের মানিককে চিরতরে বিদায় জানাতে হবে। পাশে স্বামী ডেভিড এর অবস্থা একই। মা পাগলের মত বুকে জড়িয়ে থাকা মৃত বাচ্চার সাথে কান্না জড়িত কণ্ঠে কথা বলছেন- তার বড় একটি বোন হয়েছে কিছুক্ষণ আগে আরো অনেক কথা ...

কয়েক মিনিট পর হঠাৎ যেন তার মৃত বাচ্চা যেন একটু নড়ে উঠল। তখন মা কেইট নিশ্চিত হল এই মাত্র তার ছোট বাচ্চাটি তাঁর বুকেই মারা গেল। এবার কেইট আর নিজেকে সামাল দিতে পারলেন না। সন্তানকে হারানো বেদনায় কান্নার রোল বেড়ে গেল। ইতিমধ্যে তার বাচ্চা আবার নাড়া দিয়ে উঠলে কেইট ডেভিডকে ব্যাপারটা জানালেন। ডেভিড দ্রুত ডাক্তার ডাকলেন। কিন্তু ডাক্তার আসলেন না। আসলেন দায়িত্বরত নার্স এবং বললেন সন্তানের প্রতি মায়ের অতিরিক্ত স্নেহ এবং আবেগের কারণে এরূপ অনুভূতি পাওয়া স্বাভাবিক। এ বলে তিনি চলে গেলেন। আবার মা-বাবা দুজনই আশা হারা হয়ে গেলেন। তবু বাচ্চাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরেই রাখলেন কেইট। এবার বাবা-মা এবং মৃতবাচ্চা এক সাথে হল। এর পর যা ঘটল তা কেইট বা ডেভিড এর কাছে অবিশ্বাস্য মনে হল। বাচ্চা একটু মাথা নাড়াল এবং যেন বাবার আঙুল ধরতে চাইল। এবার নার্স ডাক্তারকে নিয়ে আসলেন। ডাক্তার একটি চেয়ার নিয়ে বসে ডাক্তার তাদের বুঝালেন তারা যা দেখেছেন তা বাস্তব নয়। ঠিক সেই মুহুর্তে বাচ্চা মাকে খোচা দিল । তা ডাক্তার সচক্ষেই দেখলেন। সাথে সাথে ডাক্তার কোলে তুলে নিলে দেখলেন, অত্যাধুনিক মেশিনের মাধ্যমে যাকে অক্সিজেন দিয়ে শ্বাস প্রশ্বাস করানো যায়নি সে এখন নিজে নিজে নিশ্বাস নেয়ার চেষ্টা করছে। উত্তর উত্তর তার শ্বাস-প্রশ্বাস ক্ষমতা বাড়ছে। এক সময় যে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেছিলেন তিনিই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।

আসলে যা ঘটছে তা হল মায়ের সাথে “Skin-to-skin contact”। এটা এমন এমন ঐশী দান যা মৃতপ্রায়, কিংবা মারাত্মকভাবে অসুস্থ নবজাতকে পুরোপুরি সুস্থ করে দিতে পারে। তাই জন্মগ্রহণ করার সাথে সাথে নবজাতকে মায়ের শরীরের সাথে দীর্ঘক্ষন জড়িয়ে রাখা নবজাতকের মৃত্যুর হার যেমন কমায় তেমনি তা নবজাতকের স্বাস্থ্যবান হয়ে বেড়ে উঠার সম্ভাবনা বাড়ায়- বললেন World Expert on the power of Touch, Matt Hertenstein, Associate Professor, DePauw University, USA এভাবে অসুস্থ বা প্রিম্যাচিউ নবজাতককে মায়ের সাথে “Skin-to-skin contact” দিলে আরোগ্য লাভের মাত্রা অকল্পনীয়। এ বিষয়টি হাজার বছর ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে চালু আছে। আগে মানুষ এ পদ্ধতিকে কুসংস্কার বললেও আধুনিক প্রযুক্তি তা অব্যর্থ বলে প্রমাণিত করেছে। পৃথিবীর উন্নত দেশে এ পদ্ধতি প্রয়োগ দিন দিন বাড়ছে। এটাকে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ‘‘Kangaroo Mother Care’’ বলা হয়।

নয় মাস পর মায়ের সাথে সম্পূর্ণ সুস্থ জমজ জেমি এবং এমিলি

(Reader’s Digest, February 2012 অবলম্বনে)

আজকের পত্রিকায় লেখাটি দেখুন

 

০ Likes ১৩ Comments ০ Share ৭১৫ Views

Comments (13)

  • - আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম

    ভাই শিবাশীষ বিশ্বাস, গল্পটি কী পুরোপুরি প্রকাশ হয়েছে? আমার কাছে আংশিক মনে হচ্ছে।

    • - শিবাশীষ বিশ্বাস

      অনুগল্প তাই কিছুটা অপ্রকাশিত। ধন্যবাদ হেনা ভাই। 

    - ঘাস ফুল

    এখন মনে হচ্ছে তিনটে মোমবাতি জ্বলছে... 

    প্রিয় মানবীর জন্য কষ্টটা কেবল বেড়েই যাচ্ছে। ভেজা চোখ দিয়ে যেন এবার অশ্রু বন্যা হচ্ছে। তাই মোমবাতির সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। বিরহ ব্যথার দারুণ বহিঃপ্রকাশ। খুব ভালো লাগলো শিবাশীষ। 

    • - শিবাশীষ বিশ্বাস

      ধন্যবাদ ঘাস ফুল। 

    - জাকিয়া জেসমিন যূথী

    এত ছোট দারুন গল্প কিভাবে লিখেন, বুঝিনা। 

    কষ্টের অনুভূতি প্রকাশের ভঙ্গীটায় চমৎকৃত হয়েছি। 

    • - শিবাশীষ বিশ্বাস

      যূথী আপু ধন্যবাদ। 

    Load more comments...