Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

এম রহমান

১০ বছর আগে

মাহবুব মোর্শেদের কলামঃ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে দুই স্কয়ারের লড়াই

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় সন্ত্রাসী হামলার পর কী ঘটেছিল তা সবার জানা। 

বছরের হিসাবে এ বছর সেপ্টেম্বরে সে হামলার পর এক যুগ পূর্ণ হবে। নাইন-ইলেভেন বলে খ্যাত ওই হামলার বিহিত করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী যে যুদ্ধ শুরু করেছিল তার নাম ‘ওয়ার অন টেরর’ বা সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ। 

সম্ভাব্য হামলাকারী হিসেবে ওসামা বিন লাদেন চিহ্নিত হয়েছিলেন এবং তাকে, তার সংগঠন আল কায়েদা এবং উভয়ের আশ্রয়দাতা আফগানিস্তান ও আফগানিস্তানের তৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকারকে অপসারণের জন্য সামরিক অভিযান শুরু হয়েছিল। বলা বাহুল্য, এ যুদ্ধ প্রত্যক্ষভাবে আফগানিস্তানে শুরু হলেও এর রেশ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে গেছে। সন্ত্রাস-বিরোধী সর্বাত্বক যুদ্ধের ফলে গত এক যুগে আফগানিস্তান ও আফগানিস্তানের বাইরে আল কায়েদার প্রভাব অনেকটাই প্রশমিত হয়েছে। নাইন-ইলেভেন হামলার সন্দেহভাজন মাস্টারমাইন্ড ওসামা বিন লাদেনকে মার্কিন সেনা সদস্যরা পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে খুঁজে বের করে হত্যাও করেছে। অবশ্য আফগানিস্তানে প্রাথমিকভাবে তালেবানদের পরাজিত করা সম্ভব হলেও শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের যে ফল দাঁড়াচ্ছে, তাতে হয়তো হার-জিত নিশ্চিত না করেই ন্যাটো বাহিনীকে আফগানিস্তান ছেড়ে যেতে হবে। ন্যাটোর মতো পরাক্রমশালী বাহিনীর জন্য এটি পরাজয়েরই নামান্তর। এক যুগের আফগান যুদ্ধ শেষে হয়তো দেশটিকে তালেবানদের হাতেই ফেরত দিতে হবে। প্রত্যক্ষ ফল বিবেচনা করলে ওয়ার অন টেরর কী বয়ে আনল তা নিয়ে তর্ক চলতে পারে, কিন্তু পরোক্ষ ফল বিবেচনা করলে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করেছে। বলা চলে, দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে নির্ধারক ভূমিকা পালন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ। 
প্রথমত, ন্যাটো বাহিনীর আফগানিস্তান অভিযানের পর এ বাস্তবতা সবাই স্বীকার করে নিয়েছে- কোনো মুসলিম দেশেই আল কায়েদার প্রতি পক্ষপাত আছে এমন কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন হতে পারবে না। শুধু তাই নয়, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে যেসব রাজনৈতিক দল ইসলামের নামে রাজনীতি করে তাদেরও কঠিন অগ্নিপরীক্ষার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের আস্থাভাজন হতে হচ্ছে। এমনকি মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতে পলিটিক্যাল ইসলাম নামে যে রাজনৈতিক ধারা বহু দিন ধরে সক্রিয় এবং যাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথা বহুল প্রচারিত তারাও সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ যায়নি।
আফগানিস্তানে ন্যাটো বাহিনীর অভিযান ও দখলদারিত্বের প্রতিক্রিয়ায় মুসলিমপ্রধান বহু দেশেই ইসলামপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীর জন্ম হয়েছে। অনেক দেশে ইসলামপন্থীরা সশস্ত্র না হয়ে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করলেও তাদের বক্তব্য-বিবৃতিতে কট্টরপন্থার নানা আলামত লক্ষ করা গেছে। জনমনে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের প্রতি যে ঘৃণা ও সন্দেহ তা কোথাও সশস্ত্র ইসলামপন্থীরা কাজে লাগিয়েছে, কোথাও বা কট্টরপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো একে অবলম্বন করেই তাদের রাজনীতির গতিমুখ ঠিক করেছে এবং উচ্চাশা চরিতার্থ করেছে। অনেক দেশে পলিটিক্যাল ইসলামও এ ক্ষোভের ফায়দা তুলেছে। 

ইসলামপন্থীদের উত্থান মোকাবিলা করতে মুসলিমপ্রধান বহু দেশেই ক্ষমতাসীন সরকারকে নিজ নিজ উপায়ে সন্ত্রাসবিরোধী ছায়া-যুদ্ধ করতে হয়েছে এবং হচ্ছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে ক্ষমতাসীন পশ্চিমাভাবাপন্ন উদারপন্থী শাসকরা নিজেদের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে- হয় অংশ নিয়েছে নয়তো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এতে সমর্থন দিয়েছে। ক্ষমতার বাইরে থাকা উদারপন্থীরা সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের ছায়া অবলম্বনে নিজেদের রাজনীতি পুনর্বিন্যস্তও করেছে। এমনকি আগে যারা কমিউনিস্ট হিসেবে প্রচণ্ড মার্কিনবিরোধী বলে পরিচিত ছিলেন তারাও নিজেদের পুরনো অবস্থান পরিবর্তন করে কার্যত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়েছেন।

কমিউনিস্ট মতাদর্শের তুমুল আলোড়নের সময় মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতে প্রগতিশীল হিসেবে বিবেচিত হতেন প্রধানত বামপন্থী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। মার্কিনপন্থী বুর্জোয়াদের তারা প্রতিক্রিয়াশীল বলে আখ্যায়িত করতেন আর এদের সঙ্গে ইসলামপন্থীদের সম্পর্ক সন্দেহের চোখে দেখতেন। কোথাও কোথাও মার্কিনপন্থীদের সঙ্গে ইসলামপন্থীদের পুরনো সম্পর্ক রয়ে গেলেও এবং কমিউনিস্টদের কোনো কোনো অংশ মার্কিনবিরোধিতা অব্যাহত রাখলেও মোটা দাগে বামপন্থী প্রগতিশীল ও বুর্জোয়া প্রগতিশীলদের একটি ঐক্যবদ্ধ মোর্চা গঠিত হয়েছে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের প্রত্যক্ষ প্রভাবে। এই মোর্চার প্রভাবেই সংখ্যালঘু প্রগতিশীলদের সংখ্যা হঠাৎ করে বেড়ে গিয়েছে।  

নিজ দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ধর্মীয় তৎপরতা এবং রাজনীতিতে এদের বড় ভূমিকাকে অধিকাংশ সময়ই এই প্রগতিশীল শক্তি ইতিবাচক হিসেবে দেখেনি। প্রত্যক্ষ সংগ্রামে এদের পরাজিত করা যে খুব কঠিন তাও তারা এরই মধ্যে বুঝে গেছে। ফলে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের বড়-মাঝারি-ছোট শক্তিগুলোর আশ্রয়ে নিজ দেশের ইসলামপন্থীদের ঠেকিয়ে দেওয়ার নীতিই তারা কার্যত হাতে নিয়েছে। এদের অনেকেই মনে করে, নিজেদের উদারপন্থী জীবনচর্চায় কট্টর ইসলামপন্থীরা কখনো বাধা হয়ে দাঁড়ালে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ তাদের পক্ষে থাকবে। বহু ক্ষেত্রে তা হয়েছেও। ফলে মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর শাসকরা বিপদাপন্ন বোধ করলে জঙ্গি ইসলামপন্থী উত্থানের ধুঁয়া তুলে দেশের ভেতরের শহুরে মধ্যবিত্ত বুর্জোয়া প্রগতিশীলদের সমর্থন পেতে চায় যেমন, তেমনি সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের আন্তর্জাতিক নেতাদের প্রশয়ও কামনা করে। 
পুরনো বামপন্থী প্রগতিশীলদের শোষণ মুক্তি ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এজেন্ডা নতুন প্রগতিশীলরা হারিয়ে ফেলেছে বলে বুর্জোয়া শাসকশ্রেণী এদের সহজেই বিশ্বাস করে এবং স্বাগত জানায়। তথ্যপ্রযুক্তি মাধ্যমের বিস্তার, শহুরে মধ্যবিত্তের নব-উত্থান ও পাশ্চাত্যের শিক্ষা ও সংস্কৃতির উল্লেখযোগ্য বিস্তারের কারণে প্রগতিশীলদের সংখ্যাটা এখন কম নয়। বলা চলে, শহুরে নাগরিক মধ্যবিত্তের বড় একটি অংশ এর অন্তর্ভুক্ত। ফলে কেন্দ্রীয় শহরের বড় কোনো স্কয়ারে সমবেত হলে সংখ্যাটা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণের জন্য বেশ লাগসই হয়ে ওঠে। 
সম্প্রতি মিসরের তাহরির স্কয়ারে সমবেত হয়ে সে দেশের প্রগতিশীল জনগোষ্ঠী ক্ষমতাসীন ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির প্রতি অনাস্থা ব্যক্ত করার পরপরই সে দেশের সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে নিজেদের পছন্দমতো লোককে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পদে বসিয়েছে। 

তাহরির স্কয়ার বিখ্যাত হয়েছিল হোসনি মোবারকের একনায়কতান্ত্রিক শাসনের বিরোধিতা করে। তাহরির স্কয়ারের সে প্রতিবাদে ইসলামপন্থী-প্রগতিশীল নির্বিশেষে সবাই অংশ নিয়েছিল। প্রতিবাদের ফল হিসেবে মোবারকের বিদায় হয়েছিল। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হয়েছিল মুসলিম ব্রাদারহুডের সংগঠন ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি। মুসলিম ব্রাদারহুডকে ক্ষমতা থেকে তাড়াতে সেই একই তাহরির স্কয়ারে সমবেত হয়ে প্রগতিশীল জনগোষ্ঠী আবার সামরিক শাসন ডেকে এনেছে। এই নতুন সমাবেশের পেছনে সামরিক বাহিনীর মদদ ছিল কিনা, সামরিক বাহিনী এই প্রতিবাদের আয়োজন করেছিল কিনা সে প্রশ্ন উঠেছে; কিন্তু এ সত্য অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ব্রাদারহুডের কট্টরপন্থী শাসনের আশঙ্কায় শহুরে উদারপন্থী, প্রগতিশীলরা ভয় পেয়ে গিয়েছিল এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় ব্রাদারহুডের শাসনের চেয়ে তারা সামরিক শাসনের অধীনে উদারপন্থী জীবনযাপনের স্বাধীনতাকে বেছে নিয়েছে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ভোট দিয়ে ব্রাদারহুডকে নির্বাচন করলেও সেটি এখন আর আলোচ্য বিষয় নয়। আলোচ্য বিষয়, আগামীতে ব্রাদারহুড রাজনীতি করতে পারবে কিনা, তাদের নিষিদ্ধ করা হবে কিনা। ব্রাদারহুডের নেতাকর্মীরা তাহরির স্কয়ারের চেয়ে বড় সমাবেশ করছেন নাসর স্কয়ারসহ বিভিন্ন স্থানে, পুরো মিসরে তাদের সমর্থন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। তার পরও সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ সামরিক শাসনেরই পক্ষাবলম্বন করে যাচ্ছে। 
এই ঘটনাবলীর প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, মিসরের এ ঘটনাবলি মুসলিম দেশগুলোতে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে। নির্বাচনে জয়লাভ করেও যখন ক্ষমতা ধরে রাখা যায় না তখন তারা নির্বাচনের বিকল্প উপায় অবলম্বন করতে চাইবে। ইসলামপন্থীরা ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছেন, নির্বাচন তাদের জন্য নয়। অন্য পথ দেখতে হবে।
রাজনীতির জন্য বহু ইস্যু আছে, মানুষের দৈনন্দিন জীবনের নানামুখী সংকটেরও শেষ নেই- তারপরও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো প্রধান ইস্যু এখন ইসলাম। সবকিছু ছাপিয়ে প্রশ্ন উঠছে রাষ্ট্রে ইসলামের অবস্থান কী হবে অথবা ইসলামকে কীভাবে মোকাবিলা করা হবে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এ কথা সত্য, আফগানিস্তানের নিকটবর্তী দেশ হিসেবে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের যে প্রভাব বাংলাদেশে পড়ার কথা ছিল তা পড়েনি। এখানে জঙ্গিবাদ হালে পানি পায়নি, কিন্তু ইসলামপন্থীদের সমর্থন বেড়েছে। ইসলামপন্থীরা রাজনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়েছে। সম্প্রতি শাহবাগ স্কয়ারে প্রগতিশীলদের সমাবেশের প্রতিক্রিয়ায় শাপলা চত্বরে ইসলামপন্থীদের যে সমাবেশ হয়ে গেল, তার সঙ্গে মিসরের তাহরির স্কয়ার বা নাসর স্কয়ারের মিল অনেকের চোখে পড়তে পারে। যদিও দুই দেশের মধ্যে পার্থক্য বিস্তর। পাশে ইসরাইলের অবস্থানের কারণে মার্কিনিদের কাছে মিসরের যে গুরুত্ব এবং মিসরের ক্ষমতায় ইসলাম-পরিপন্থী শাসক থাকার যে তাৎপর্য সে বাস্তবতা বাংলাদেশে হয়তো নেই। মিসরে সামরিক ও একনায়কতান্ত্রিক শাসনের বিস্তার বাংলাদেশের চেয়েও দীর্ঘস্থায়ী ও গভীর প্রভাব-সঞ্চারি হয়েছে। এমন অনেক পার্থক্য সত্ত্বেও যে মিল দুই দেশের দুই স্কয়ারের মধ্যে দেখা যাচ্ছে তা মোটেও কাকতালীয় নয় বরং এমন মিল প্রায় প্রত্যেক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মধ্যেই পাওয়া যাবে। 

প্রশ্ন হলো- অর্থনৈতিক, সামাজিক ও বাণিজ্যিক অন্য বহু প্রশ্ন থাকলেও মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতে রাষ্ট্র পরিচালনায় ইসলামী রীতিনীতি বনাম জীবনাচারের উদারপন্থার যে বিবাদ দেখা যাচ্ছে, তা সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের আগে এত বড় আকারে দেখা দেয়নি কেন? হতে পারে তখন ইসলামপন্থী ও উদারপন্থীরা কট্টর পথ বেছে নেয়নি। রাজনীতির অন্য বিষয়গুলো হয়তো তখন ধর্ম প্রশ্নের চেয়ে গুরুত্ব সহকারে বিবেচিত হতো। এমনও হতে পারে, ধর্ম বনাম উদারপন্থার মধ্যে সহাবস্থানের নীতি সমাজে সক্রিয় ছিল। ধার্মিকদের মধ্যে কট্টরপন্থা ও উদারপন্থীদের মধ্যে নৈরাজ্য থাকলেও সমাজের মূল স্রোতে ধর্ম ও উদারপন্থী জীবনযাপনের একটি মিথষ্ক্রিয়া সক্রিয় ছিল। মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতে স্থানীয় বা এথনিক সংস্কৃতির সঙ্গে ইসলামের গুরুতর সংঘাত যেমন বাধেনি, তেমনি পাশ্চাত্য সংস্কৃতিমনা জনগোষ্ঠীর সঙ্গেও সংঘাত বড় আকার ধরেনি। এই স্থিতাবস্থায় বড় ফাটল ধরিয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ। যেসব দেশে এই সংঘর্ষ মূলতবী ছিল সেই আরব দেশগুলোতে একনায়কতান্ত্রিক শাসন অবসানের পর নতুন করে প্রত্যেক দেশকেই নিজেদের মতো করে এ সংকট মোকাবিলা করে যেতে হচ্ছে। 
সর্বত্রই সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের ছায়া পড়েছে। বাংলাদেশও দুই স্কয়ার ও দুই মতাদর্শের সংঘাতে রক্তপাত কম হচ্ছে না। আর সংঘাত জিইয়ে রাখলে তা যে বাড়বে তাতে সন্দেহ নেই। দুঃখের ব্যাপার, সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের ছায়া অবলম্বনে আমরা ইসলামপন্থী ও প্রগতিশীল সেজে যা আমরা করছি তা আদতে আমাদের যুদ্ধ নয়। এ দেশে মূলধারার ইসলাম কখনো এত কট্টর ছিল না আবার উদারপন্থীরা এত ইসলামবিদ্বেষী ছিল না। নিজস্ব সংস্কৃতি-আমদানীকৃত সংস্কৃতি ও ইসলামের মধ্যে একটা সমঝোতাই আমাদের সমাজের মুখ্য অবয়ব রচনা করেছিল। 
আর এই স্থিতাবস্থাকে ভিত্তি ধরেই এ দেশ গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিকে যাচ্ছিল। এখন এতে ব্যত্যয় ঘটার লক্ষণ তৈরি হয়েছে, কিন্তু নবাগত এই সংঘাত আমাদের সমাজকে আমূল নাড়িয়ে দিতে পারবে কি? পারা উচিত নয়। 
স্কয়ারে স্কয়ারে বিভক্ত সমাজ রক্তপাত ছাড়া কিছু দিতে পারে না। মুসলিমপ্রধান কোনো দেশে আজকের দিনে যেমন উদারপন্থী সেক্যুলার শাসন পুরোদমে কায়েম করা সম্ভব নয়, তেমনি ইসলামপন্থী কট্টর ব্যবস্থাও সম্ভব নয়। ফলে এ দুটোই অবাস্তব রাজনৈতিক কর্মসূচি। অন্যদিকে, নাগরিকরা চাইলেই এ দেশগুলোতে পুরনো স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব। আর এ জন্য সবার আগে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের ছায়া থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

 

০ Likes ০ Comments ০ Share ৫০৪ Views

Comments (0)

  • - বাবুল হোসেইন

    আব্দুল্লাহ উপন্যাস তো এস এস সি তে সিলেবাসে ছিলো কিছু দিন আগেও। এখন জানি না কি পড়ায় বাংলা ৩য় পত্র হিশেবে।