মানিক’ এর খোঁজে-
॥ শরীফ হাসান ॥
আগেকার দিনে রাজা বাদশাহ্দের শখ ছিল ‘মানিক’ (রতœ) সংগ্রহ করা। ভারত বর্ষের বাদশাহ্রা কোহিনূর নামের এক ‘মানিক’ সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। তবে তা বেশী দিন ধরে রাখতে পারেননি। ১৭৫৭ সালে বৃট্রিশ সাম্রাজ্যবাদের নিকট ভারত বর্ষের পরাজয়ের মধ্যে দিয়ে এ কোহিনূর নামের ‘মানিক’ চলে যায় বৃট্রিশ রাজ ভান্ডারে। যা এখন শোভা পাচ্ছে বৃট্রিশ রাণীর মুকুটে।
এরপর বাংলাদেশের গণতন্ত্রের যুগে আমরা আর এক ‘মানিক’ এর খোঁজ পাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। বড় এক রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা। সত্যিই ছাত্র সংগঠনের ‘মানিক’ । মানিক ধর্ষণের সেঞ্চুরী উৎসব পালন করেছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। অনেকে ভাববেন তারপর? তার আর পর নেই। মানিকের কোন শাস্তি হয়নি। এমন কী মানিক গ্রেফতারও হয়নি। ক্ষমতা (!) বলে কথা আছে না। আগ্রহিদের জানিয়ে রাখি পরে ‘মানিক’ স্বসম্মানে জার্মানীতে চলে গিয়েছিল। সেখান থেকে ‘মানিক’ যায় পরপারে। রাজনৈতিক কীট ‘মানিক’ এর গল্প এখানেই শেষ।
প্রথমে বললাম রাজা বাদশাহ্দের ‘মানিক’ এর কথা এরপর বললাম রাজনৈতিক কীট ‘মানিক’ এর কথা। এবার অন্য এক ‘মানিক’ এর কথা বলিÑ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের অমূল্য সরকার পেশায় দর্জি। তার ছেলে ‘মানিক’। পুরো নাম মানিক সরকার। হ্যাঁ আমি জনগণের নেতা ত্রিপুরার বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের কথাই বলছি- যিনি মনে করেন-জনগণ আমাদের নির্বাচিত করে সম্মানিত করে-আর আমাদের সম্মান আমাদেরকেই রক্ষা করতে হবে।
মানিক সরকার পরপর চারবার মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। সর্ব প্রথম নির্বাচিত হয়েছেন ১৯৯৮ সালে। মানিক সরকারের ২০০৮ সালে ব্যাংক ব্যালান্স ছিল ১৬ হাজার ১২০ রুপি আর ২০১৩ সালে তা এসে দাড়িয়েছে ১০ হাজার ৮০০ রুপিতে। অন্যদিকে আমাদের দেশে নির্বাচিত নেতাদের সম্পদ দিনে দিনে বেড়ে ভাঙ্গা সুইটকেস থেকে বড় বড় জাহাজ বেরিয়ে আসে বা পৃথিবীর সবচেয়ে গরীব দেশে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী প্রেসিডেন্ট হয় অথবা আরও আরও কতো কী ?
আমাদের দেশে যেখানে রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নির্বাচিত হলেও জনগণের সম্পদ লুটে নেবার প্রবনতা এক্কেবারে কম নয়; সেখানে পরপর চার চারবার মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হবার পরও মানিক সরকারের কোন বাড়ি নেই। আর জমির কথা-নিজের কোন জমি নেই। উত্তরাধিকার সূত্রে বোনের সাথে মিলে পেয়েছিলেন শূন্য দশমিক এক একর জমি; তাও আবার দিয়ে দিয়েছেন বোনকে।
আমাদের দেশে সরকার আর বিরোধী দলের মধ্যে যতোই বিরোধ থাকুক না কেন ; কোন প্রকার ব্যতিক্রম ছাড়াই তারা সব সময় একটি বিষয়ে একমত হতে কখনও ভুল করেন না; তা হলো-মন্ত্রী আর এমপিদের জনগণের নিকট হতে সুযোগ সুবিধা নেয়ার বিষয়টি। আর এ সুযোগ সুবিধা নিয়ে তারা জনগণকে কোন প্রকার কর না দিয়েই দামী গাড়ি কিনতে পারেন, জনগণের গাড়িতে ভাড়া না দিয়ে চড়তে পারেন, টোল ছাড়াই পার হতে পারেন জনগণের সেতু, কোন প্রকার ভাগ্য পরীক্ষা ছাড়াই জনগণের নিকট হতে প্লট নিতে পারেন; আরও আরও অনেক কিছু ! কিন্তু মানিক সরকারের সুযোগ সুবিধা ? তিনি বেতন নেন ৬ হাজার ৫০০ রুপি। যা একজন প্রাইমারী স্কুল শিক্ষকের বেতনের চেয়েও কম। এখানে একটি কথা উল্লেখ না করলেই নয় - এ বেতনের পুরো টাকাটাই তিনি দিয়ে দেন তার দলকে। আর তার দল তাকে একটি ভাতা প্রদান করেন যার পরিমান ৫ হাজার রুপি। এতক্ষণে আমরা সবাই নিশ্চয়ই বুঝে গেছি যে- মানিক সরকারের নিজের কোন গাড়ি নেই। তবে তিনি দলের একটি গাড়ি ব্যবহার করেন। তবে খুব কম সময়ই এ গাড়িতে উঠতে সুযোগ পান তাঁর স্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী পাঞ্চালী ভট্টাচার্য্য। তাই তাকে প্রয়োজনীয় কাজ রিক্সায় চড়েই করতে হয়। মানিক সরকার ও পাঞ্চালী ভট্টাচার্য্য দম্পতির কোন সন্তান নেই। বাড়িতে নেই কোন কাজের লোক। তাই প্রতিদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে মানিক সরকারকেই নিজের কাপড় ধোয়ার কাজে নেমে পড়তে হয়। ধোয়ার কাজে খুব বেশী একটা ঝামেলা নেই-এক্কেবারে সাদা-সিধে পায়জামা আর পাঞ্জাবী।
বাংলাদেশের রাজ পরিবারের(?) সদস্যরা খুঁজছেন প্রথম প্রকার ‘মানিক’ যা তাদের আভিজাত্যের শ্রীবৃদ্ধি করবে। নষ্ট রাজনৈতিক দলগুলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সেই দ্বিতীয় প্রকার কীট ‘মানিক’ দের খোঁজ করছে ক্ষমতায় যাওয়া বা ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য। আর আমরা যারা আম জনতা তারা খুঁজছি তৃতীয় প্রকার জনগণের ‘মানিক’ কে।
Comments (1)
ভাললাগা জানালাম...
thanks kobi,,,,,,,,,,,,
কেমন করে যায় ফুড়িয়ে?
স্বপ্ন ধরা ঘ্রাণ;
বন্যপ্রাণীর শিকার ধরা মতো
অপেক্ষার সময় ধৈর্য্য গিলে খায়
হিংস্র অতি ব্যঘ্র হননকারীসুন্দর।