Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

sarwar hossain bhuiyan

৮ বছর আগে

মা' কে লেখা চিঠি।

মা।

  মা, তুমি কেমন আছ?

অফিসে যাবার পথে ঘর্মাক্ত হয়ে ক্লান্ত বেলায়, কিংবা শত ঝামেলায় অফিসের কাজে, কিংবা একাকী বিকেল বেলায়, কিংবা অনেক মানুষের ভিড়ে - সারাটি সময় তুমি থাক আমার মনের গভীরে।

বলে চলি,
" রাব্বিল হাম হুমা কামা রব্বায়ানি সগিরা"।

শুনেছি, যখন কোন মা, বাবারা না ফেরার দেশে চলে যায়, ওনাদের সাথে কথা বলার একমাত্র মাধ্যম এই দোয়া। তাহলে, নিশ্চয়ই তুমি প্রতিদিন আমার ডাক শুনতে পাও।
তাই না মা !

কিন্তু তোমার ডাকতো আর শুনতে পাই না, মা!

মাগো, তোমার কি মনে আছে?
তুমি বলতে, ' নিজের সংসারের জন্য কিছু জমা রাইখ , বাড়িতে এত্ত টাকাপয়সা ভাইঙ্গনা'। কিন্তু তোমার কথা শুনিনি। আজ যখন আমি আর্থিক সমস্যায়, কেউই আর আমাকে কাছে টানে না। জান, মা, বাবাও আজ জানি কেমন দূরে হয়ে গেছে। কেনযে, তোমার কথা শুনে, সেই সময় টাকার পাহাড় বানালাম না !

তবোও শান্তনা মা, এই ভেবে যে, তোমার সাথেতো কথা বলতে পারছি, দোয়ার মাধ্যমে। আর, তুমিও তা শুনতে পাচ্ছ। ভাগ্যিস দোয়া করতে পয়সা লাগে না, তা না হলে, আমার এমন কঠিন দিনে, হয়ত তোমাকেও 'কিনে কিনে' দোয়া পাঠাতে পারতাম না!

মা গো, তোমার যেমন সন্তানের চিন্তায় ঘুম আসত না, তেমনি হয়েছে আমারও। তবে, এটুকু বলতে পারি মা, তোমার নাতনী রা পৃথিবীর সেরা সন্তানই হবে। যে সন্তানের উপর বড়দের দোয়া আর মা, বাবার চেষ্টার সাথে দোয়া থাকে, আর সাথে থাকে হালাল কামাই- সেই সন্তান কি পৃথিবীর সেরা হবে না!
এই যে মা, আমরাতো হয়েছি।

মা গো, তুমি যে জান্নাতি, তা আমি জানি। যেদিন, তোমাকে আমি ও তোমার ছোট ছেলে, কবরে নামাচ্ছিলাম, তোমার তুলতুলে শরীরের কারনে তুমি কেমন যেন হেলেদুলে যাচ্ছিলে। আমি আর তোমার ছোট্ট ছেলে লে: কর্নেল মোবারক বিস্মিত হয়ে একে অপরের মুখের দিকে তাকাচ্ছিলাম। কবরের উপরে চাদরে ঢাকা। দু' ভাই মিলে তোমার মুখের কাফনের বাধন খুলে, তোমার মায়াবি মুখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম এই ভেবে, তুমি কি এখনো বেচেঁ আছ?

শেষে, বড় হুজুরকে এ ব্যপারে জিজ্ঞেস করাতে তিনি বললেন,
" যারা জান্নাতি, তাদের শরীর মরার পরে শক্ত হয় না"।

মা গো, জান্নাতের ফেরেসতারা কি তোমাকে যত্ন ঠিকমত করে?
তারা কি তোমাকে পানশুপাড়ি ছেচে দেয়? তোমাকে দুধকলা কচলিয়ে নরম করে মেখে দেয়? তোমার হাত পা জ্বালাপুড়া করত বলে, ফ্রিজের ঠান্ডা পানি খেতে, সেই ঠান্ডা পানি কি তারা এনে দেয় মা?

মা, গো, সারাটি জীবন তুমি ফজরের আগে উঠে তাহাজ্জুদ পড়েছ। শীতের রাতে কত কষ্ট করে, ঠান্ডা পানিতে অজু করেছো। এখনো কি মা, তাহাজ্জুদ পড়? ফেরেসতারা ত অজুর পানি গরম করে দেয়, তাই না, মা?

মা গো, তোমার সামনের মাড়ির দাতঁগুলো ছিল না বলে, কত কষ্ট করেই না, শুদ্ধ উচ্চারনে কোরআন তেলাওয়াত করতে! এখনও কি তেলাওয়াত করো মা? ফেরেসতারা কি তোমাকে জান্নাতি দাতঁ লাগিয়ে দেয় নি মা?

মা গো, তোমারত একটি মেয়ে হয়েছিল। সে জন্মের ক' মাস পরেই মারা গেল। শুনেছি মা, নিষ্পাপ শিশুরা সব জান্নাতি। আমার বোনটি কি তোমাকে দেখতে আসে মা? তোমাকে যত্নটত্ন করেত?

মাগো, তোমার আদরের বড় বোনটি, সেই যুদ্ধের পরেই দুনিয়া ছেড়ে চলে গিয়েছিল, আট আটটি ছেলেমেয়ে রেখে। ওনার সাথে কি তোমার দেখা হয়? দেখা হলে বলো, ওনার রেখে যাওয়া এতিম সবগুলো সন্তানই খুব ভাল আছে।

মা, তুমিত কোনদিন গানটান শুননি । জান, একটা গান আছে

" মায়ের মত আপন কেহ নাই রে,
মায়ের মত আপন কেহ নাই।
মা জননী নাই রে যাহার,
ত্রিভূবনে তাহার কেহ নাই রে"
----------------------------
তুমি যেদিন থাকবে না মা সেদিন আমার হবে কি
সুখে থাকি দুঃখে থাকি কাহার আসবে যাবে কি।

-------আজ সেটি ই টের পাচ্ছি মা।
তোমার জন্য রইল মা, নিখাদ ভালবাসা আর দোয়া।

১ Likes ৪ Comments ০ Share ৫৪১ Views