Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

শফিক সোহাগ

১০ বছর আগে

মহামায়া লেকে এক বিকেল


 

আমার এক ছোট ভাই স্বপন । রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও আন্তরিকতার মাত্রা রক্তের সম্পর্ককে অতিক্রম করেছে । সম্পর্ক অনেকটা বন্ধু সুলভ বটে । জীবিকা নির্বাহের তাগিদে সে এখন ওমানে অবস্থান করছে । ওমান যাওয়ার প্রাককালে সে তার আত্মীয়-স্বজনদের সাথে দেখা করতে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার উদ্যোগ নেয় । তখন সে বায়না ধরে বসে তার সাথে তার দুজন প্রিয় ব্যক্তিকেও যেতে হবে । সে দুজন আমি এবং আমার বন্ধু ডাঃ শাহীন । অনেক ব্যস্ততা সত্ত্বেও আমরা স্বপনের আবদার রক্ষা করার জন্য তার গ্রামের বাড়িতে যেতে সম্মতি জানালাম । গ্রামের বাড়ি ফেনী জেলার ফাজিলপুর । আমরা চট্টগ্রাম থেকে সকাল ৯ টার ট্রেনে উঠে মাত্র ২ ঘণ্টা ১০ মিনিটেই ফেনী পৌঁছে গেলাম । স্বপনের ভাগিনা কিরণ অত্যন্ত অমায়িক একটি ছেলে । এইচ.এস.সি পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে । আমাদেরকে কাছে পেয়ে তার আনন্দের যেন সীমা রইল না । সারাদিন আমাদেরকে সাথে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে । পরদিন দুপুরের খাওয়া শেষ করে সবার কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার পর কিরণ প্রস্তাব করলো আমাদেরকে কিছু পথ এগিয়ে দিবে এবং একটি সুন্দর জায়গা দেখাতে নিয়ে যাবে । আমরা দ্বিমত করলাম না । কিরণ একটি সিএনজি ভাড়া করলো । আমরা তখনও জানতাম না কোথায় যাচ্ছি ।

 

আনুমানিক ৩০/৪০ মিনিটের মধ্যে আমাদের সিএনজি মহাসড়ক ছেড়ে বাইলেইনে প্রবেশ করলো । আমি সাইনবোর্ড পড়ে বুঝতে পারলাম জায়গাটি মিরসরাই উপজেলার ৮ নং দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঠাকুরদীঘি বাজার । সেখান থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার পূর্বে এসে আমাদের আর বুঝতে বাকি রইল না যে, আমরা উপস্থিত হয়েছি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক মহামায়ার সম্মুখে । টিকেটের মূল্য জন প্রতি ১০ টাকা । টিকেট নিয়ে আমরা ভিতরে প্রবেশ করলাম । মহামায়া লেকের বাঁধের উপর দাঁড়িয়ে আমি চারপাশে চোখ বুলাতে শুরু করি । আমি সত্যিই বিমোহিত হলাম এর অপরূপ সৌন্দর্য দেখে । সেখানে অসংখ্য পাহাড়ের বুক চিরে আসা অসংখ্য ছোট বড় পাহাড়ী ছড়ার মিলন মোহনায় রয়েছে স্বচ্ছ সবুজ জলাধার । তাতে নৌকা আর ইঞ্জিন বোটের ছুটোছুটি ভিন্ন রকম সৌন্দর্য রচনা করে । দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই কৃত্রিম লেকটি প্রায় ৮০০ হেক্টর পাহাড় ও ছড়া শ্রেণীর ভুমিতে প্রতিষ্ঠিত । ছড়ার পানি পাহাড়ে আটকে রেখে কৃষি জমিতে সেচের কাজে ব্যবহার করতে বাঁধ দেওয়া হয়েছে ।

 

মহামায়ার মূল আকর্ষণ পাহাড়ী ঝর্না । এটি বাঁধ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত । বাঁধ থেকে বোটে চড়ে ঝর্ণায় যেতে হয় । তবে আমার কাছে ঝর্ণার চেয়েও ঝর্ণায় যাওয়ার পথে দৃষ্টি কাড়া দৃশ্যগুলোই মূল আকর্ষণ মনে হল । বাঁধ থেকে ইঞ্জিন চালিত বোটে চড়ে ঝর্ণার কাছে যেতে প্রায় ১৫ মিনিট সময় লাগে । আর বৈঠা চালিত রঙ-বেরঙের ছোট ছোট নৌকা গুলো দিয়ে সময় লাগে প্রায় আধ ঘণ্টা । ইঞ্জিন চালিত নৌকায় মোট ৩০ জন যাত্রী নেওয়া হয় । জন প্রতি ৩০ টাকা ভাড়া । আর বৈঠা চালিত ছোট ছোট নৌকা গুলোর রিজার্ভ ভাড়া ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা । আমরা ঝর্ণা দেখার উদ্দেশ্যে বোটে উঠলাম । স্বচ্ছ-সবুজ জলের উপর ছুটে চলেছে আমাদের বোট । দু’পাশে উঁচু উঁচু পাহাড় তাতে সারি সারি বৃক্ষ । চারপাশ সবুজ আর সবুজ । পাহাড়ের বুক চিরে চলে যাওয়া লেকের জলরাশিও ধারণ করেছে সবুজ রং । এযেনো চির সবুজের রাজ্য । নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এই লীলাভূমি স্বপ্নে নয় বাস্তবেই দেখছি তা যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না । এযেনো কোনো শিল্পীর ক্যানভাসে কল্পনার রং তুলি দিয়ে আঁকা ছবি !

ঝর্ণার কাছাকাছি পৌছাতেই দূর থেকে ভেসে আসছিল শো শো শব্দ । ঝর্ণার কাছে গিয়ে দেখি অসংখ্য তরুণ-তরুণী, শিশু-কিশোর মেতে উঠেছে উল্লাসে । একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়, কিরণের বাবা কিরণের জন্য বিদেশ থেকে একটি দামী সানগ্লাস পাঠিয়েছিল । সখের সানগ্লাসটি সেদিন তার সাথেই ছিল । কিন্তু দুঃখজনক, সেদিন মহামায়ার ঝর্ণার স্রোত সখের সানগ্লাসটি আমাদের চোখের সামনেই ভাসিয়ে নিয়ে যায় । ঝর্ণার কাছে আনুমানিক ১০ মিনিট অবস্থান করে আমরা পুণরায় বোটে উঠলাম এবং আবার উপভোগ করতে লাগলাম চারপাশের সবুজ দৃশ্যগুলো । গোধূলি লগ্নে চির সবুজের রাজ্য তার আপন সৌন্দর্যে ধরা দেয় ।

Email : shafiq_shohag@yahoo.com

২ Likes ৬ Comments ০ Share ৪৫৭ Views

Comments (6)

  • - মোঃসরোয়ার জাহান

    বঙ্গাব্দ বাঙালীত্বের নিদর্শন কাঠ ফাটাচৈত্রকে বিদায় দিয়ে বৈশাখকে সম্ভাষণ জানানো আমাদের কর্তব্য

    ---------khub valo laglo