Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

Shah Alam Badsha

৯ বছর আগে

মনের পর্দা আসল পর্দা!

‘পর্দা’র বিষয়ে লিখিতে বসিয়া বড়ই টেনশন ফিল করিতেছি। না জানি, কাহার গাত্রে আবার দাউদাউ করিয়া আগুন জ্বলিয়া উঠিলো? কেহ আমার চৌদ্দগোষ্ঠি উদ্ধারেও উঠিয়া-পড়িয়া লাগিয়া গেলেন কিনা, তাহা ভাবিয়া সত্যই আশংকাবোধ করিতেছি! কেহ চটিয়া থাকিলে বিনীত করজোড়ে বলিতেছি, চটিবেন না। কারণ আমার কথাতো এখনো শুরুই হয় নাই কিংবা সমাপ্তও করি নাই; পুরাপুরি না শুনিয়া অযথা চটিবার কী আছে? অবশ্য অনেকের আবার এমন বাতিক আছে কিনা, কাহারো জবানে অপ্রিয় সত্যকথা শুনিলেই ব্যস, আর যায় কোথায়! আগাগোড়া শোনা দূরের কথা, তাহাদের অযোক্তিক লম্ফ-ঝম্ফই শুরু হইয়া যায়।

তেমনি ’পর্দা’ বলিতেই যাহারা অজ্ঞান, তাহাদেরও আনন্দিত হইবার কোনো কারণ নাই। আমি পর্দা’র ওয়াজ কিংবা উহার গুণগান করিতেও কলম ধরি নাই! বরং আমার মনের পর্দায় ঢাকা কতক দুঃখ-বেদনার গুঁমোট কাহিনী শুনাইতেই এতো কথার প্রলাপ বকিতে হইতেছে, আরকি? আমি অনলবর্ষী কিংবা নামকরা সুবক্তাও নই, তাই ভুল-ত্রুটি হইলে এই কমবক্তার উপর দোহাই কেহ ক্রুদ্ধ হইবেন না। আমার ঠিক ’হাইপার টেনশনব্যামো’ আছে কিনা-তাই হঠাৎ অক্কা পাইবার সমূহসম্ভাবনা রহিয়াছে। অতএব দয়া করিয়া ক্রুদ্ধ হইবেন না। নতুবা এই অধম অক্কা পাইলে পর্দা টাংগাইয়া স্নান করাইতে কিংবা কাফন পরাইয়া কবরস্থ করিবার মতো ধকল নির্ঘাত আপনাদেরই সামলাইতে হইবে।

যাহাই হউক, আজকাল পর্দা’র বহুত রকমফের বাহির হইয়াছে বলিয়া শুনিতেছি, আপনারাও নিশ্চয় শুনিয়া থাকিবেন? মনের পর্দা, চোখের পর্দা, কানের পর্দা, ঘরের পর্দা, দরজার পর্দা, জানালার পর্দা , আরো কত কী? তওবা, তওবা- আরেক পর্দার কথাতো বেমালুম ভুলিয়াই গিয়াছিলাম। ভুলিয়াই বা যাইবোনা কেনো- সেকেলে সাম্প্রদায়িক হইবার আশংকাতো আমারও থাকিবার কথা। কাজেই মাঝেমাঝে না ভুলিলে চলিবেই বা কেমন করিয়া? ইদানিং পত্রিকার পাতা খুলিলেই শরীর কাহার না শিহরিয়া ওঠে! এতোসব সুরক্ষিত পর্দাভেদ করিয়া ঘরের বাহিরের যতোসব বেপর্দাকান্ডের খবর শুনিয়া শুনিয়াতো আমার কানের পর্দাটাই টুটিয়া যাইবার উপক্রম হইয়া পড়িয়াছে? নারীধর্ষণ, শিশুধর্ষণ, ছাত্রী-শিক্ষিকাধর্ষণ, গণধর্ষণ, সহপাঠিনীধর্ষণ, বুয়াধর্ষণ, শ্যালিকাধর্ষণ, ঘরে ধর্ষণ, বাইরে ধর্ষণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের সেঞ্চুরীপালন, ধর্ষণের ভিডিওনির্মাণ, কলগার্ল, সেক্সগার্ল, মক্ষীরাণী, পতিতাসর্দারনী, ইয়াবাসমাচার, ভ্রাম্যমাণ যৌনকর্মীর পতিতাবৃত্তি, নারীশিশুপাচার, জ্বেনা-ব্যাভিচার, পরকিয়া, অসমপ্রেম, এসিডনিক্ষেপ, ইভটিজিং ইত্যাদি অহরহ ঘটিতেছে দেখিয়া ব্যাকডেটেড আলেম সাহেবানদের মুখে আমি প্রায়ই শুনিতে পাই–”আহা, নর-নারীর জন্য আল্লাহনির্ধারিত পর্দাপ্রথা এবং শালীনতার চর্চা থাকিলে কি আর এতোসব আকাম-কুকাম ঘটিতে পারিতো! আগুনের সাথে মোমের বসবাসের পরিণতি এমনই তো হওয়া স্বাভাবিক? নর-নারীদের আলাদা আলাদা কর্মক্ষেত্র থাকিলে কি এমন পশ্বাচার আর নারীদুর্গতি দিনের পর দিন বাড়িতেই থাকিতো!! বৈষয়িক উন্নয়নের পাশাপাশি নারীদের দুর্গতি বাড়িয়া যাওয়াটাও তবে কি আধুনিক উন্নতির লক্ষণ নাকি? কই, আগের দিনেতো এতো বেশী নারীনির্যাতন আর নারীদের দুর্গতি দেখি নাই আমরা ইত্যাদি ইত্যাদি?

ধর্ষিতা 

তাহাদের আফসোসের কথা যুক্তিযুক্ত এবং বিজ্ঞানসম্মত কিনা ভাবিয়া দেখি নাই। কিন্তু প্রগতিশীল ভদ্রমহিলাদের উন্নতির প্রচন্ড গতির কথা না ভাবিয়াও পারি নাই। ঠিকই তো, একবিংশ শতাব্দীর চরম অগ্রগতির যুগেও মধ্যযুগীয় কায়দায় মাতৃজাতিকে পর্দার অন্তরালে শুধু সন্তানজন্মদান আর প্রতিপালনের জন্যই কোনঠাসা করিয়া রাখিবার কোন যুক্তিযুক্ত কারণ থাকিতে পারে কি? তাহাদের সেবাদান এবং রূপ-সৌন্দর্যকে পারিবারিক গন্ডিতে আবদ্ধ রাখিয়া একজনমাত্র পুরুষইবা কেনো উপভোগ করিবে? তাহার সুফল হইতে গোটাজাতিকে বঞ্চিত রাখা কি সত্যই বৈষম্যমূলক কাজ হইতেছে না! আর যাহারা বহুবিবাহের আদলে বহুস্বামীও রাখিতে চাহেন কিংবা একস্ত্রীর সঙ্গদাবীদার বহুস্বামীদের কর্তৃত্বের নিত্য লড়াইয়ের যাতাকলে পড়িয়া মরিতে চাহেন না এবং চরিত্রহীনতার মতো সামাজিক লজ্জার হাত হইতে বাঁচিতে পুরুষপতিতালয়ও বানাইতে চান; তাহা হইতে তাহাদের বঞ্চিতকরণের অধিকার কে দিয়াছে মোল্লাদের??

সেকেলে মা, খালা, ফুফু, চাচী, নানী, দাদীদের মতো একেলে নারীদের এতো বেকুব ভাবিয়া প্রকৃতপক্ষে পুরুষসমাজ দেশ-জাতির কতই না ক্ষতিসাধন করিয়া চলিয়াছে। ‘নদী কভূ পান নাহি করে নিজ জল, তরুগন নাহি খায় নিজ নিজ ফল।‘ অথবা ’’ফুল ফোটে অপরের তরে’ এইসব চিরসত্য কথার অনুসরণে নিত্যনতুন কসমেটিক্সের উগ্রগন্ধ মাখিয়া এবং বাহারী সাজে সজ্জিত হইয়া উলংগ- অর্ধ উলংগ পোশাকে এমনকি জাঙ্গিয়া-পেন্টি পর্যন্ত পরিধান করিয়া প্রজাপতির মতো কুস্তি লড়িতে বা সাঁতার কাটিয়া যদি বেড়ানোই না গেলো, তবে আদমকে গন্ধম খাওয়াইয়া নারীজীবনকে সার্থক করিবে কে!


সেদিন টিভিতে সেক্সিসাজে সজ্জিত কতিপয় উঠতি বালিকার ডিস্কোনৃত্য শুরু হইতেই আমার মুখ ফসকাইয়া হঠাৎ বাহির হইয়া গেলো–”ছিঃ ছিঃ, অবুঝ শিশুদের এখন হইতেই দেখি সেক্সি করিয়া তোলা হইতেছে, পুরুষের মাথা গরম হইবেনা কেনো আর নারীনির্যাতন বাড়িবেই বা না কেনো?” ভাবিলাম, কাহারো সমর্থনলাভ করিবো। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার, সেই আশায় গুড়েবালি। রক্তচক্ষু পাকাইয়া এক ভদ্রলোক চেঁচাইয়া উঠিলেন,আরে মিয়া রাখেন ওইসব বাজে কথা; মনটাকে আগে উদার করেন।বলিলাম, কেমন উদার?

ঃ আপনারা সবকিছুতেই শুধু ইসলাম আর সেক্স খোজেন কেনো, বলুনতো! নাচতো সুন্দর একটা শিল্পকর্ম, এই বালিকাদের নিজের মা-বোন বা মেয়ের মতো ভাবিলেই তো পারেন। আসলে, নিজের মনটা ঠিক থাকিলেই হইলো বুঝিলেন–চরম বিরক্তির সাথে বেচারা গড়গড় করিয়া এই গরম কথাগুলি বলিয়া ফেলিলেন! সেকেলে প্রমাণিত হইবার আতঙ্কে কথা না বাড়াইয়া আমিও চুপ মারিয়া গেলাম। তবে মনেমনে বলিলাম, সরকার আমাদের সবাইর মা, মেয়ে, বোন, বউদের বাধ্যতামূলকভাবে এই মহৎ শিল্পকর্মে নিয়োজিত করিলেই তো পারে, আয় রোজগারও হইবে আর লক্ষজনতাও মনকে ঠিক রাখিয়া নয়নকে সার্থক করিবে এবং এমন পবিত্র নৃত্য দেখিয়া জাগ্রত কামত্তেজনাকেও বীরপুরুষের মতো ঝাড়িয়া ফেলিয়া ধর্ষণবিরোধী এবং এহেন শিশুধর্ষণকারী মহাশিক্ষক পরিমলবিরোধী তীব্র গণআন্দোলন গড়িয়া তুলিবে।

হায়, যেইখানেই যাই সেইখানেই শুধু এই মন ঠিকরাখা আর ‘মনের পর্দা’র ব্যাপার-স্যাপার শুনিতে শুনিতে আমার কান ঝালাপালা হইয়া গেলো। কী আশ্চর্য ব্যাপার, যেই সকল একেলে নারীর উগ্র ঝাঁঝালো গন্ধে বিভ্রান্ত ভ্রমর নিত্য পিছু লয়, কিন্তু বাসে, ট্রেনে বা পথে অনিচ্ছায়ও কেহ তাহাদের গায়ে হোঁচট বা ধাক্কা খাইলে তাহারাই আবার চেঁচাইয়া ওঠেন, এইযে, চোখে দেখেন না–চোখের পর্দা নাই বুঝি? অথচ তাহারাই আবার পর্দা’র কথা শুনিলে অকপটেই বলিয়া ফেলেন, পর্দা-টর্দা কী, মনের পর্দাই আসল পর্দা? (চলবে)

 

১ Likes ৪ Comments ০ Share ৪৮৯ Views

Comments (4)

  • - লুৎফুর রহমান পাশা


    ভালোবাসা খোঁজে-
    বাউল সংসার ত্যাগী বটতলায়
    বাঁশরীর বাঁশিতে,একতারায় 
    তপস্যায় ধ্যানে বিজনে পাহাড়ে
    জায়নামাজের পাটিতে মাথা নত করে।

    এই অংশটা দারুন

    • - মো: মালেক জোমাদ্দার

      ধন্যবাদ পাশা ভাই।

    • Load more relies...
    - তৌফিক মাসুদ

    দারুন অনুভূতির প্রকাশ। 

    - আলমগীর সরকার লিটন

    ভালোবাসা মানে

    বাউল তারা ঘসা

    ভাল লাগল কবিতা

    Load more comments...