Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

সুলতানা সাদিয়া

১০ বছর আগে

ভোমলা

 

ভোমলা

 

আজ ভোমলার মন খারাপ। ভোমলার মন খারাপ থাকলে এই বাসার দুইজন মানুষেরও মন খারাপ থাকে। আমার আর ছোট চাচ্চুর। সকালে ছোট চাচ্চু বাজারে যাওয়ায় এখন আমার মন খারাপ। ভোমলাকে এই বাসার সবাই ভালোবাসে। শুধু নতুন চাচী ওকে ভালোবাসে কিনা এখনো বুঝতে পারছি না। কারণ চাচী এই বাসায় এসেছে তিন দিন আগে। বিয়ে বাড়ির হৈ চৈ এর মাঝে কমপক্ষে বিশ বার ভোমলা ছোট চাচীর সামনে পড়েছে আর চারবার তার বিছানায় উঠেছে। ভোমলা পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে ছোট চাচী কিছু করে না। কিন্তু বিছানায় উঠলেই এমন চিৎকার জুড়ে দেয় যে পাশের বাড়ির তোতন আর ওর মাও ছুটে আসে।

ছোট চাচ্চু তখন একটা মজার কাজ করে, ভোমলাকে কোলে তুলে ছোট্ট বাবুর মত আদর করতে থাকে আর বলতে থাকে, ভোমলা...শুসু পেয়েছে? দৌড়ে বাগানে চলে যাও। নতুন চাচীর তখন আরেক চিৎকার! ওরে বাবা, এটা কী এখন বিছানায় ওই কাজ করতে এসেছে? ছোট চাচ্চু ভ্রু নাচিয়ে উত্তর দেয়, কেউ ওকে বিরক্ত করলে ও শোধ নেয়। চুপিসারে তার বিছানায় কাজটা সেরে আসে।

আমি নতুন চাচীর ভয় দেখে এত মজা পাই! ছোট চাচ্চু নতুন চাচীকে ভালই ভয় দেখিয়েছে। ভোমলা কিন্তু নতুন চাচীকে খুব পছন্দ করেছে। নতুন চাচী খুব সুন্দর। বিয়ে আর বৌভাতের মেকআপ ধুয়ে ফেলবার পর তাকে আরও সুন্দর লাগছে। বিয়ে বাড়ির আনন্দের মাঝে ভোমলা কিছুক্ষণ পর পরই ছোট চাচ্চুর ঘরে যায় আর নতুন চাচীর পায়ের কাছে ঘড়ঘড় করে। নতুন চাচী কেমন ভয় ভয় পায় ভোমলাকে। অথচ ভোমলার এই আদুরে ঘড়ঘড় ডাক শুনে আমার এত আদর লাগে। ওর ঘাড় ফুলে যায় আর ছোট চোখ দুটি আরও ছোট হয়ে যায়।

ভোমলাকে এই বাসায় এনেছিল ছোট চাচ্চু। গত বছর শীতের সময় রাস্তার বড় ধারে বসে নাকি কুই কুই করছিল। আমার ছোট চাচ্চু খুব ভালো। সেদিন বাড়ির নতুন অতিথিকে দেখে আমার মা একটু বিরক্ত হয়েছিল। বলেছিল, কী আনলে ছোট? টুপাই বাবুর যদি অসুখ করে? এইসব রাস্তার বিড়াল! ঘরের খাবারে মুখ দিবে! যাও যাও ফেলে দিয়ে এসো। কিন্তু ততক্ষণে ভোমলাকে দেখে দাদাভাই আর আমার মায়া লেগে গেছে। কী সুন্দর বিড়াল ছানা! সাদা ধবধবে। গলায় বাদামী দাগ। তুলো তুলো শরীর আর মিষ্টি বাদামী লেজ। আহা...এই শীতে ওকে রাস্তায় ফেলে দিলে ও মরে যায় যদি! আমি কান্না জুড়তেই মা ওকে রাখল। দাদী কিছু বলল না। আমার আর ছোট চাচ্চুর সেই কী আনন্দ! ছোট চাচ্চু ওর নাম রাখল ভোমলা।

তবে দুইদিন পর একটা ভয়াবহ ঘটনা ঘটল। মা চুপিচুপি দাদীর সাথে মিলে ভোমলাকে বাজারের ব্যাগে করে শিউলিকে দিয়ে রাস্তায় ফেলে এল। আমি তখন স্কুলে। ছোট চাচ্চু অফিসে। স্কুল থেকে ফিরে ভোমলাকে না পেয়ে আমি কান্না জুড়ে দিতেই শিউলি আমাকে বলে দিল, ভাইজান আমি ফালায় দিছি ওই বিলাইয়ের ছাউ। দেইখেন বাইত রাখলে অসুখ হইব। আমার কান্না থামাতে মা-দাদী কত কিছু দিল আমাকে কিন্তু আমি মানছিলামই না। বড়রা এমন কেনো? আমার অসুখ হলে তো ডাক্তার আছে। ভোমলার তো কেউ নেই! আর ওকে আমি আর চাচ্চু আমার বেবি শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করিয়েছি, ও তো নোংরা না। মায়ের সাথে আড়ি করে আমি দুপুরে ভাত খাইনি সেদিন। তারপর একটা অবাক ব্যাপার হলো। হঠাৎ দেখি আমার পায়ের কাছে একটা তুলোর বল ঘুমাচ্ছে। তাকিয়ে দেখি ভোমলা! ও ঠিক ঠিকই বাসা খুঁজে চলে এসেছে! এরপর মা-দাদী দুইজন আমাকে সরি বলল। আমি আর ভোমলা একসাথে মাছ দিয়ে ভাত খেলাম। দাদী মাকে বলল, পশুপাখি মানুষের উপকার ভোলে না, মানুষ ভুলে যায়। বৌমা এরপরও একে ভালো না বাসলে পাপ হবে।

তারপর থেকে এই বাসার কেউ ভোমলাকে তাড়ানোর কথা ভাবেনি। কয়দিনের মধ্যেই আমার আর ছোট চাচ্চুর আদরে ভোমলা আরও নাদুসনুদুস হয়ে উঠল। আমার মত প্রতিদিন দুধ বরাদ্দ থাকে ওর জন্য। তবে মাছের কাটা ভোমলার বেশি পছন্দ। মাঝে মাঝে কাটা ওর গলায় আটকে গেলে ও এমন ঘড়ঘড় শুরু করে! আমিতো টেনশনে পড়ে যাই। কিন্তু একটু পর দেখি ও লাফালাফি করতে করতে পায়ের কাছে আসে, যার মানে হলো, আরও চাই! ছোট চাচ্চু ছড়া বলে, বিলাই ম্যাও, কাটা খাও।

আমার স্কুল আজ ছুটি। আমি ক্লাস ফোরে উঠলাম। নতুন বছরের প্রথম ক্লাস শুরু হওয়ার কথা কিন্তু আজ বড় ক্লাসের ভর্তি পরীক্ষা। ঘুম থেকে উঠে মায়ের কাছে নাস্তা খোঁজার আগে আমি ভোমলাকে খুঁজি। আজ প্রথমে ওকে পাচ্ছিলাম না। একটু আগে ও আমার পায়ের কাছে এসে কেমন চুপ করে বসেছে। ওর তুলো শরীরটাও চুপসে আছে। প্রতিদিনের মত আদুরে ঘড়ঘড়ে আওয়াজ নেই। আমি তখনই বুঝে ফেলি ওর মন খারাপ। কিন্তু কারণটা বুঝতে পারছি না। আমি ভোমলাকে নিয়ে বিছানায় আসি। কোলের মাঝে রেখে ওর গায়ে হাত বুলাই। আমার আদুরে ভোমলা!

নতুন চাচী আমার ঘরে এসেছে। আমার কাছে এসে আমার চুলগুলো নেড়ে দিয়ে চাচী বলল, টুপাই সোনা চল নাস্তা খাই। নতুন চাচী ভোমলার দিকে তাকিয়ে বলল, ছি ছি এটা আবার বিছানায় উঠেছে! দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা! আমি ঠিক তখনই ভোমলার মন খারাপের কারণ বুঝে ফেলি। সকালে নিশ্চয়ই নতুন চাচী ওকে বকেছে। আমি নতুন চাচীর কাছে যাই, নতুন চাচী, তুমি আমাকে ভালোবাস? চাচী মিষ্টি করে হেসে আমাকে কাছে টেনে নেয়, বারে টুপাইসোনাকে ভালোবাসব না! আমি নতুন চাচীর হাত ধরে বলি, তুমি তাহলে ভোমলাকেও ভালোবাস। ও তোমাকে খুব পছন্দ করে!

 

এক সপ্তাহ পর

টুপাই স্কুল থেকে ফিরেছে। ডায়নিং রুমে যেয়ে ও চমকে গেল, ভোমলা নতুন চাচীর পায়ের কাছে বসে আস্ত একটা মাছ খাচ্ছে। টুপাই এর মনটা খুশিতে নেচে ওঠে, ভোমলাটা এমন না, সবার আদর আদায় করে ছাড়ে!!!

(সময়কাল: ১১ জানুয়ারি, ২০১৪ খ্রিঃ)

০ Likes ২৬ Comments ০ Share ১২৬৬ Views

Comments (26)

  • - ইকবাল মাহমুদ ইকু

    ভালো লাগলো ... শুভেচ্ছা জানবেন 

    • - ইকবাল মাহমুদ ইকু

      ফাঁকিবাজি করিনাই কিন্তু... মন্তব্য করসি 

    • Load more relies...
    - সনাতন পাঠক

    সুন্দর গল্গ। সমাপ্তিতে বেদনা জুড়ে দিয়েছেন
    ভাল লেগেছে 

    - আনমনা

     

    বাস্তবতা বেদনায় পূর্ণ। আমরা হলাম দারুন সব অভিনেতা আর অভিনেত্রী। 

    ধন্যবাদ ভাই। 

    Load more comments...