Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

ভেবে পাইনা এদের কথায় হাসবো না কাঁদবো

ইদানিং বিএনর শীর্ষ নেতা, ও দ্বিতীয় সারির নেতাদের বক্তৃতা-বিবৃতি বা গণমাধ্যমে কথা নিয়ে সারা দেশেই হাস্য রসের সৃষ্টি হয়। এসব কথা নিয়ে তো গ্রাম-গঞ্জের চায়ের দোকান আরো সরগরম।  সর্বশেষ লন্ডনে তারেক রহমান কতৃক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘রাজাকার’ বলা। সুন্দর বনে তেলের টেঙ্কার ডুবিতে ভারতকে টেনে অানা। আর আজকাল বিএনপির গর্জন সিংহ বলে খেতাব পাওয়া মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ডুবে যাওয়া ট্যাঙ্কারকে বালুর ট্যাঙ্কার বলে ঘোষণা দেয়া। এবং ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবসের আলোচনায় বুদ্ধিজীবী হত্যার বিষয়ে নতুন তত্ত্ব হাজির করে বিএনপির মহা ভারআক্রান্ত মহাসচিব নিজেকে আরেক দফা বিতর্কের মুখে ফেলেছেনতিনি বলেছেন, বুদ্ধিজীবীদের নাকি হত্যা করেছে মুজিব বাহিনী

 

গতকাল এক চায়ের আড্ডার বিষয়বস্তু ছিল বিএনপি নেতানেত্রীদের দায়িত্বহীন কথাবার্তা নিয়ে। উপস্থিত আমাদের এক বন্ধু এ ব্যাপারে একটা কিস্সাই শুনিয়ে দেন। বন্ধুটি বলে- তোমাদের কথা শুনে আমার একটা গল্পের কথা মনে পড়ে গেল। গল্পটি হলো এরকম: গ্রামের এক ভদ্রলোক শীতকালের এক সন্ধ্যায় ইরি খেতে সেচ দিয়ে এসে তার মেয়েকে সামনে পেয়ে বলে বইনগো (বোনগো) তর মারে ক তাড়াতাড়ি গোসলের গরম পানি দিত। মেয়েতো বাবার এমন কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতে মায়ের কাছে গিয়ে বলে‘ মা বাবা খেত থাইক্যা ফিরা আইসা আমারে কয়, যা বইন তর মা-রে ক তাড়াতাড়ি গোসলের গরম পানি দিত। বাবা মাইয়ারে বইন (বোন) ডাকতে পারনি তুমিই কও। মেয়ের কথা শুনে মা গরম পানি নিয়ে স্বামীর সামনে গিয়ে বলে-‘তোমার মাথা কি নষ্ট হইয়া গেছে নাকি, নিজের মাইয়ারে তুমি বইন কইয়া ডাকলা। ছিঃ ছিঃ ছিঃ। বউয়ের এ কথা শোনে স্বামী প্রবর বলে-‘মাতিস নাগো মাই (মা) শীতের কাঁপুনীতে আমার চুদুবুদু (মাথা ঠিক না থাকা) নাই।’ বন্ধুটির এ কথা শোনে ঘর কাঁপিয়ে সবাই হোঃ হোঃ হোঃ উচ্চস্বরে হেসে ওঠে। আমাদের হাসি দেখে বন্ধুটি মিরাঙ্কেলের স্টাইলে বলে-বলোতো এ পরিস্থিতিতে গল্পটির মোরাল অবটি স্টরি কি? সবাই একই সুরে বলে কি….? বন্ধুটি তখন আবার মিরাঙ্কেল এর ঢঙেই বলে- এর মোরাল অবদি স্টরি হলো-জামায়াতের চাপে ও বিদেশী প্রভুদের আশ্বাসে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন না করে আম-ছালা দুটোই হারিয়ে বিএনপি নেতা-নেত্রীদের এখন মাথা ঠিক (চুদুবুদু) নাই। তাই তারা বক্তৃতা বিবৃতি সব জায়গায়েই দায়িত্বহীন কথাবর্তা বলে নিজেদেরকে ধীরে ধীরে ক্লাউনে পরিনত করছে। এর বেশি আমার আর কিছু বলার নেই। বন্ধুটির গল্প শেষ হলো আড্ডা শেষ হয় না। বিএনপি নেতানেত্রীদের দায়িতাহীন কথা নিয়ে আড্ডা আরো জমে উঠে। আর গরম চায়ের কেতলী খালী হতে থাকে। এ পর্যায়ে আসুন পাঠক বন্ধুরা মাত্র এক সপ্তাহেরও কম সময়ের বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, মীর্জা ফখরুল, ও গয়েস্বর চন্দ্র রায়ের বিভিন্ন উবাচ শোনাতে আপনাকে কিছুটা বিরক্ত করি।

 

বেগম জিয়া গত সপ্তাহে তাঁর কাঁচপুরের জনসভায় বলেছেন, সুন্দরবনের দুর্ঘটনা পরিকল্পিতসুন্দরবনে এখন আর পশুপাখি থাকবে না, প্রতিবেশী দেশে পালিয়ে যাবেআর যে ট্যাঙ্কারে তেল বহন করা হয়েছে ওটা অয়েল ট্যাঙ্কার ছিল না, ছিল বালুর ট্যাঙ্কারতিনি বলেন, পরিবেশ দূষণের এ ঘটনায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হবেএ সরকার শুধু মানুষখেকো নয়, পশুপাখি খেকোওওরা সারা বাংলাদেশ খেয়ে ফেলতে চায়সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্যর অংশঅথচ সরকার এই সম্পদ প্রতিবেশী দেশের হাতে তুলে দিতে ষড়যন্ত্র করে সেখানে তেলের জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছেএতে এখানের সকল সম্পদের ওপর প্রতিবেশী দেশের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে

 

এখন আসি বিএনপির সিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কথায়। এ যাত্রায় তিনি বঙ্গবন্ধুকে রাজাকার বানিয়ে ছেড়েছেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এর আগেও বিতর্কিত মন্তব্য করা তারেক বলতে থাকেন, আওয়ামী লীগ দাবি করে তারা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের দল, মুক্তিযুদ্ধের দলএই দলকে শেখ মুজিব কি করল-ব্যান করে দিলআরে তুমি তো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রাজাকাররে ভাই। ... মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের দলকে তুমি ব্যান করে দিলে, তা তো মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বড় বিপক্ষের কাজ হলোমুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের কাজ কে করবে ভাই? একজন রাজাকারই তো করবেতাহলে শেখ মুজিবকে কি বলা যায়? বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজাকার  বিজয় দিবস উপলক্ষে সোমবার লন্ডনে বিএনপির এক আলোচনা সভায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক দাবি করেছেন, একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা আসার ঠিক আগে ইয়াহিয়া খানকে প্রেসিডেন্ট মেনে তাঁর সঙ্গে সমঝোতা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানযদিও আজগুবি এই তথ্যের জনক তারেক রহমানআওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি ছিল না দাবি করে এর পক্ষে বহুল বিতর্কিত দুই লেখকের লেখা উদ্ধৃত করে শোনান তারেকহাওয়া ভবনের সম্রাট বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান যদি ৭ মার্চ সেনাবাহিনীর বাঙালী অফিসারদের নিয়ে যুদ্ধ শুরু করতেন, তাহলে যে সামান্য সংখ্যকপাকিস্তানী সৈন্য তখন ছিল, তাদের সহজেই পরাজিত করা যেত; প্রাণহানি ও অর্থনৈতিক ক্ষতি অনেক কমানোযেতবিএনপির এই নেতার সাহসিকতা দেখে অনেকেই প্রশ্ন করছেন, এত সাহস এত বোঝেন এর পরও উনাকে কেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে পালিয়ে থাকতে হবেকয়েক মাস আগে আরেক সভায় নিজের বাবা জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতিবলে দাবি করেন তারেকসেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে অবৈধ প্রধানমন্ত্রীবলেন। আর বঙ্গবন্ধুকে রাজাকার ঘোষণার আগে ‘বঙ্গবন্ধু বন্ধুকে বঙ্গবন্ধু না ডেকে‘পাকবন্ধু’ ডাকার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন চিকিৎসার নামে লন্ডনে পালিয়ে থাকা তারেক রহমান।


এর পরের উবাচটি হলো বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের। সরকার পতনের নতুন তত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়
তিনি বলেছেন, মাত্র এক মাস আন্দোলন করলেই নাকি ক্ষমতাসীনদের খুঁজে পাওয়া যাবে নাআন্দোলন জমাতে নেতাকর্মীদের শপথ বাক্য পাঠ করাতে যেয়ে বিএনপির এই সংখ্যালঘু বড় নেতা এমন উচ্চারণ করে বলেছেন চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নিজেই রাস্তায় নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেনগতকাল ১৮ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে গয়েশ্বর এসব কথা বলেন। তার মুখ থেকে এসব কথা শুনে উপস্থিত নেতাকর্মীদের অনেকেই মুখ চেয়ে হাসেন, আর বলেন কত বড় আঁতেল। তিনি আরও বলেন ‘যেখানে গণতন্ত্র নেই, সেখানে মানবাধিকার নিয়ে আলোচনা করা অসারএক পাত্রে যেমন দুধ আর তেঁতুল রাখা যায় না, তেমনি আওয়ামী লীগ যেখানে আছে সেখানে গণতন্ত্র থাকতে পারে না

 

এখন আসি বিএনপির ভার আক্রান্ত মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রসঙ্গে। ভারপ্রাপ্ত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সরকারের সব খাওয়া শেষএবার সুন্দরবন খাচ্ছে সরকারসরকারের এখন সব খাওয়া শেষ এবার সুন্দরবন খাবেতার আয়োজন নাকি তেলের জাহাজ ডুবিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে গেছে’ তার ভাষায় সুন্দরবন খাওয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবেই সরকার তেল দিয়ে ক্ষতি করেছেতাছাড়া বিজয় দিবসে বুদ্ধিজীবী হত্যার বিষয়ে নতুন তত্ত্ব হাজির করে বিএনপির এ নেতা নিজেকে আরেক দফা বিতর্কের মুখে ফেলেছেনতিনি বলেছেন, বুদ্ধিজীবীদের নাকি হত্যা করেছে মুজিব বাহিনী!.. সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রথমে সরকারের সমালোচনা করতে গিয়ে সুন্দরবন প্রসঙ্গ টেনে আনেন ফখরুল ইসলামফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ হিংস্র জানোয়ার হায়েনার মতো দেশের মানুষ খেয়ে ফেলছেবর্তমান সরকার ব্যাংক, পদ্মা সেতু আগেই খেয়ে ফেলেছেএবার সুন্দরবন খেয়ে ফেলেছেবর্তমান সরকার হায়েনা হয়ে গেছেহায়েনার মতো তারা শুধু আক্রমণ করে যাচ্ছে আর খাচ্ছেসর্বশেষ সুন্দরবন খেয়ে ফেলেছে যে ট্যাঙ্কারে তেল বহন করা হয়েছে ওটা অয়েল ট্যাঙ্কার ছিল না, ছিল বালুর ট্যাঙ্কারবিএনপি নেতা-নেত্রীদের জ্ঞানের বহর নিয়ে হাসাহাসি করছে দেশের মানুষ। তারা বালূ বহনের বগেটকে তেলের ট্যাংকারের গুলিয়ে ফেলেছেন। প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে বলগেট আর তেলের ট্যাংকার এক ক্যাটাগরির জলজান নয়। দুই যানের নির্মাণ প্রযুক্ত ও কৌশল পুরোপুরি আলাদা। তাদের এ বিষেয়ে সামান্য জ্ঞান থাকলে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য এমন উদভট কথা কিছুতেই বলতেন না। 

 

শেষ করার আগে অমর একুশে গানের রচয়িতা বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল গফফার চৌধুরীর তারেক রহমান সন্মন্ধে একটি মন্ত্যব্যের উদ্ধৃতি দিতে চাই।  এক অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জীবন্তউন্মাদ ও পাগল বলে আখ্যায়িত করেছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক কলামিস্ট আবদুলগাফ্ফার চৌধুরীতিনি বলেন, ‘পাগল না হলে কেউ বিদেশে বসে এ কথা বলে নামীরজাফরের ছেলে মিরন শেষ বয়সে পাগল হয়ে গিয়েছিলনানান ধরনের পাগলামি করতআরবলত আমি দিল্লী সম্রাটকখনও বলত আলীবর্দী খান সিরাজউদ্দৌলাকে সিংহাসনেবসিয়ে ভুল করেছিলপাগলামি করতে করতে বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়েছিলতারেকরহমানের শেষ পরিণতি হবে উন্মাদ অবস্থায়১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মিলনায়তনেযুক্তরাজ্য ভিত্তিক সেভেন মার্চ ফাউন্ডেশন নামক সংগঠনের মতবিনিময় সভায়গাফ্ফার চৌধুরী আরও বলেন, তারেক রহমানকে অর্ধ উন্মাদ বললেওসম্মান করা হবেসে পুরোটাই পাগল এবং উন্মাদতারেক রহমানকে অশিক্ষিত, অযোগ্য মামলার ভয়ে লন্ডনে পালিয়ে আছেদেশে এসে মামলামোকাবেলা করার যোগ্যতা তার নেইলন্ডনে বসে লাখ লাখ পাউন্ড খরচ করেজামায়াতের লোক ভাড়া করে কি সব বলে বেড়াচ্ছেসে যদি দেশে এসে গ্রেফতার হয়েমামলা মোকাবেলা করত তাহলে তার বীরত্ব প্রকাশ পেততারেক উন্মাদ- যা ইচ্ছা তাই বলুক, বঙ্গবন্ধুর কিছু যায় আসে না

 

শেষ করতে চাই এই বলে যে সুন্দরবনের তেলের ট্যাংকডুবির বিপর্যয়ের মুহূর্তে সরকার, পরিবেশ ও নৌ-মন্ত্রনালয়, হাজার হাজার স্থানীয় সেচ্ছাসেবীর দিন-রাতের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় যখন এই বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠতে শুরু করেছে ঠিক সে মুহূর্তেই বিএনপির দায়িত্বশীল নেতানেত্রীদের এধরনের হাস্যকর কথাবার্তা বলে প্রতিপক্ষকে ঘায়েলের চেষ্টা করা হলেও নিজেরাই দেশের সাধারণ ও বুদ্ধিদীপ্ত মানুষের কাছে হাসির পাত্র হচ্ছেন; তা বোধ হয় বিএনপির শীর্ষ থেকে তৃণমূলের কেউ ভাবতেই পারছেনা।  এখন তারা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ভুলে জাতীয় বিপর্যয় ও দুর্যোগে দলটি পরামর্শ দিয়ে বা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে দেশবাসী প্রশংস না কুড়িয়ে নিন্দাই কুড়াচ্ছে। এ ধরনের অপচেষ্টা বিএনপির জন্য কোনো কালেই কল্যাণ বয়ে আনবে না। বরং দিনে দিনে এ দলটি মানুষের হাসির খোরাকে পরিনত হবে, এ কথা বলতে কাউকে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই।  

 

 

 

 

 

 

০ Likes ০ Comments ০ Share ৪২৪ Views

Comments (0)

  • - পিয়ালী দত্ত

    khub valo laglo