Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

কবীর আলমগীর

৮ বছর আগে

ভালো সাব এডিটর হতে চাইলে (কিস্তি ৩)


সংবাদপত্র অফিসে একজন সাব এডিটরের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। একজন সাব এডিটরের কাজ হলো সংবাদ সংগ্রহ করা এবং তা সম্পাদনা ও প্রকাশের ব্যবস্থা করা। তিনি বিভিন্ন সংস্থা, প্রতিনিধি, প্রতিবেদক ও বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাথমিকভাবে সংবাদ সংগ্রহ করেন এবং সেগুলো বাছাই করেন। তবে তিনি সব সংবাদ প্রকাশ করতে পারবেন না। এ কারণে তাকে গুরুত্বপূর্ণ এবং মজাদার সংবাদ সংগ্রহ ও বাছাই করতে হবে। বাছাই করার পর তিনি সেগুলো ভালোভাবে সম্পাদনা করবেন। এই প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত ব্যক্তিকেই সাব এডিটর বলা হয় এবং তিনি যে কাজ করেন তাকে বলা হয় সাব এডিটিং বা সাবিং। ভালো সাব এডিটর হতে বেশকিছু বিষয় মেনে চলা দরকার। জেনে নেওয়া যাক সাব এডিটরদের কাজ কী? বিস্তারিত লিখেছেন : কবীর আলমগীর



নিউজ সংশোধন :
অনেক সময় নিউজ ঠিকমতো লেখা থাকে না। এতে অপ্রাসঙ্গিক বাক্য-শব্দের ব্যবহার থাকতে পারে। অনেক সময় একই তথ্যের পুনরাবৃত্তি থাকে। সাব এডিটর এগুলোর সম্পাদনা করে থাকেন। তিনি ব্যাকরণ মেনে নিউজটি সংশোধন করে। কোথাও কোনো অসঙ্গতি দেখা দিলে তিনি সংবাদের সোর্সের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেগুলো ঠিক করে নেন।

নিউজটির উন্নতি করা : সাব এডিটরের কাজ হলো সংশ্লিষ্ট নিউজটির উন্নতি করা। আপনি যদি নিউজটি এডিট করতে গিয়ে রিপোর্টারের লেখার চেয়ে নিউজটি আরো খারাপ করে ফেলেন তাহলে আপনি ভালো দক্ষতার পরিচয় দিলেন না। চেষ্টা করতে হবে নিউজটির উপস্থাপনা যেন ভালো হয়, তার ট্রিটমেন্ট আপনার হাতে। আপনি নিউজটি ভালো করলে হাউজের সুনাম, পত্রিকার সুনাম।

উপযুক্ত ইন্ট্রু তৈরি করা : নিউজটির বিষয়বস্তু বা অ্যাঙ্গেল কী সেটা মাথায় রেখে একটা যোগ্য ইন্ট্রু তৈরি করা সাব এডিটরের কাজ। যাতে পাঠক ইন্ট্রু পড়ে নিউজটি সম্পর্কে একটা প্রাথমিক ধারণা পেতে পারে। ধরুন : ‘হবিগঞ্জে ৪ শিশু খুন, ১০ জন রিমান্ডে’ শিরোনামে সংবাদে আপনি যদি ইন্ট্রু এভাবে লেখেন : হবিগঞ্জের বাহুবলে চার শিশুর লাশ স্থানীয় এক বালুর মাঠ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। সোমবার সকাল ১১টায় লাশগুলো উদ্ধার করা হয়। লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে এলাকার লোক ঘটনাস্থলে ভিড় জমান। এভাবে লিখলে আপনার ইন্ট্রুটা হেডলাইনের সঙ্গে মিলবে না। ওই নিউজটির ইন্ট্রু হতে পারে এভাবে : হবিগঞ্জের বাহুবলে চার শিশুকে হত্যার ঘটনায় পুলিশ ১০ জনকে রিমান্ডে নিয়েছে। সোমবার সন্দেহভাজন ওই দশজনকে আদালতে নিয়ে এক মাসের রিমান্ড আবেদন করে বাহুবল থানা পুলিশ। আদালতের বিচারক মো. সুজা মৃধা শুনানি শেষে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সংবাদ পুনর্লিখন : অনেক সময় সাব এডিটরের হাতে আসা সংবাদটি এলোমেলো-অগোছালো থাকতে পারে। আবার এমনও হতে পারে নিউজটি আকারে বেশ বড়। আপনি যদি প্রিন্টিংয়ে কাজ করেন তাহলে আপনাকে সংবাদ ছাপানোর জন্য কতটুকু জায়গা পাবেন সেটি মাথায় রেখে নিউজটি পুনর্লিখন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য বা কোনো অংশ যেন বাদ না যায়। সংবাদটি সব তথ্য ঠিক রেখে, নিয়ম মেনে পুনর্লিখন করাও আপনার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আর আপনি যদি অনলাইনে কাজ করেন তাহলে চিন্তা রাখতে হবে পাঠকের বিষয়টি। কারণ বড় নিউজ হলে অধিকাংশ পাঠক নিউজটি সম্পূর্ণ না পড়ে অন্য কোনো পেইজে চলে যেতে পারেন। তাই নিউজ বড় মানে পাঠককে বিব্রত করা। কোনো নিউজ ৫০০/৬০০ শব্দের ওপরে যাওয়া নামে সেখানে অনেক কথা, অনেক অপ্রাসঙ্গিক বিষয় চলে আসে। তাই নিউজ পুনর্লিখনে সচেতন হওয়া দরকার।


প্যারা বিভাজন : সাব এডিটর একটি নিউজকে প্রয়োজনীয় প্যারায় বিভক্ত করেন। প্যারা বিভাজনের ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে। কারণ প্যারা বিভাজনের ফলে নিউজের ঘটনাবলী বা বিষয়বস্তু আলাদাভাবে ধরা দেয়। উদাহরণ দিলে পরিষ্কার হতে পারে-   ‘রাজধানীর উত্তরায় গ্যাস লাইন বিস্ফোরণে এক পরিবারের ৫ জন দগ্ধ’
রাজধানীর উত্তরায় একটি বাসায় গ্যাস লাইনের বিস্ফোরণে নারী-শিশুসহ একই পরিবারের ৫ জন দগ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। রাতে রান্না শেষে ভুল করে চুলা না নেভানোর কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানান দগ্ধদের স্বজনেরা।

রাজধানীর উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ৮ নম্বর বাড়ির সপ্তম তলায় শুক্রবার ভোরে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

দগ্ধদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। দগ্ধরা হলেন মো. শাহনেওয়াজ (৫০), তার স্ত্রী সুমাইয়া (৪০),  ছেলে শাহলিল (১৫), জারিফ (১০) ও ১৪ মাস বয়সী শিশু জারান। দগ্ধদের চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।  শাহনেওয়াজের শরীরের ৯৫ শতাংশ, সুমাইয়ার ৯০ শতাংশ, শাহলিলের ৮৮ শতাংশ, জারিফের ৭৪ শতাংশ ও জারানের ১১ শতাংশ পুড়ে গেছে।

হাসপাতাল পুলিশ ক্যম্পের ইনচার্জ মোজাম্মেল হক জানান, ভোরে একই পরিবারের পাঁচ সদস্যকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়। তারা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে জারান ছাড়া সকলের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

আহত সুমাইয়ার ভাই আবুল মাসুদ বলেন, রাতে রান্না শেষে ভুল করে চুলা বন্ধ না করেই ঘুমিয়ে যায় সকলে। পরে সকালে চুলা জ্বালাতে গেলে সারা ঘরে আগুন ধরে যায়। এতে করে পরিবারের সবাই দগ্ধ হয়।

এই নিউজটির প্যারা বিভাজন করলে আমরা কতগুলো অংশ পেতে পারি সেগুলো হলো, ঘটনা কী, ঘটনার কারণ?, কখন ঘটেছে? ঘটনার শিকার কারা ও তাদের অবস্থা, এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বক্তব্য। প্রত্যেকটি বিষয় প্যারা প্যারা সাজানোর ফলে তা রূপ নিয়েছে একটি নিউজে।

ইন্ট্রুর প্রথমেই বলা হয়েছে রান্না শেষে ভুল করে চুলা না নেভানোয় আগুন লাগে। দগ্ধদের স্বজনদের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানানো হয়েছে। নিউজের শেষ প্যারায় উল্লেখ করা হয়েছে আহত সুমাইয়ার ভাই আবুল মাসুদ বলেন, রাতে রান্না শেষে ভুল করে চুলা বন্ধ না করেই ঘুমিয়ে যায় সকলে। পরে সকালে চুলা জ্বালাতে গেলে সারা ঘরে আগুন ধরে যায়। এতে পরিবারের সবাই দগ্ধ হয়। শেষের প্যারা ইন্ট্রুর পরে দেওয়া যেত তাহলে ঘটনার কারণ সম্পর্কে তথ্যের রিপিটেশন এড়ানো যেত।



যথাযথ শিরোনাম দেওয়া : নিউজের শিরোনাম হলো চুম্বকের মতো যা পাঠককে আকৃষ্ট করবে। সুতরাং হেডলাইনটি হতে হবে আকর্ষণীয়। একই ঘটনার একাধিক শিরোনাম ভেবে নিন। এরপর তা চূড়ান্ত করুন। ধরুন ঢাকার কারওয়ান বাজারে বাস উল্টে চারজন মারা গেছেন। এর একাধিক শিরোনাম হতে পারে- ‘ঢাকায় বাস উল্টে নিহত ৪’ ‘দুই বাসের পাল্লায় প্রাণ গেল ৪ যাত্রীর’ ‘চালকের ঘুম, বাস উল্টে নিহত ৪’ প্রভৃতি। এর মধ্যে যেটি পাঠককে আকৃষ্ট করবে সে রকম শিরোনাম চূড়ান্ত করতে হবে।

তবে শিরোনাম বানানোর সময় চিন্তা করতে হবে বাড়তি বা বাহুল্য কিছু যেন না চলে আসে। এ ছাড়া নিউজের বিষয়বস্তুর বাইরে অন্য কোনো শিরোনাম যেন না আসে। তাহলে পাঠক বিভ্রান্ত হতে পারেন।
 
শিরোনাম এমন হতে হবে যাতে পাঠক নিউজটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটা ধারণা পেতে পারেন। আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে শিরোনাম কিন্তু পাতার সৌন্দর্য বাড়ায়। শিরোনাম যত ছোট এবং আকর্ষণীয় হবে ততই ভালো। কোনো শিরোনাম তিন কলাম-চার কলাম হয়ে যায়। অনলাইনের বেলায় তিন/চার লাইন হয়ে যায়। প্রয়োজন বুঝে শিরোনাম যথাসম্ভব ছোট করা বাঞ্ছনীয়।
০ Likes ০ Comments ০ Share ৩৯৫ Views