Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

কবীর আলমগীর

৮ বছর আগে

ভালো সাব এডিটর হতে চাইলে (কিস্তি ১)

সংবাদপত্র অফিসে একজন সাব এডিটরের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। একজন সাব এডিটরের কাজ হলো সংবাদ সংগ্রহ করা এবং তা সম্পাদনা ও প্রকাশের ব্যবস্থা করা। তিনি বিভিন্ন সংস্থা, প্রতিনিধি, প্রতিবেদক ও বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাথমিকভাবে সংবাদ সংগ্রহ করেন এবং সেগুলো বাছাই করেন। তবে তিনি সব সংবাদ প্রকাশ করতে পারবেন না। এ কারণে তাকে গুরুত্বপূর্ণ এবং মজাদার সংবাদ সংগ্রহ ও বাছাই করতে হবে। বাছাই করার পর তিনি সেগুলো ভালোভাবে সম্পাদনা করবেন। এই প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত ব্যক্তিকেই সাব এডিটর বলা হয় এবং তিনি যে কাজ করেন তাকে বলা হয় সাব এডিটিং বা সাবিং।

বিশ্বের অনেক দেশের পাশাপাশি আমাদের দেশেও সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়ানো হয়। এ ছাড়া সাংবাদিকতা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কোর্সের ব্যবস্থা করেছে। আপনি এ সব প্রতিষ্ঠান থেকে সাংবাদিকতা শিখতে পারবেন। তবে তা হবে তত্ত্বগত। আপনাকে কিন্তু প্র্যাকটিক্যাল শিখতে হবে কোনো এক অফিস থেকেই, যেখানে আপনি ইন্টার্ন কিংবা চাকরি করবেন। আগেকার দিনে সাংবাদিক হওয়ার যোগ্যতা ছিল তত্ত্বগত বিষয়ে লেখাপড়া করা। তবে এখন যুগ পাল্টেছে। সাংবাদিকতা পেশা সবার জন্য উন্মুক্ত। একটুখানি খোলা হাতে লেখার দক্ষতা থাকলেই আপনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নিতে পারবেন। অনেক সাংবাদিক আছেন যাদের সাংবাদিকতা বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ডিগ্রি নেই। তারপরও তারা গুণগতমানের লেখালেখি এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ভালো অবস্থানে রয়েছেন। তত্ত্বগত ধারণা না থাকলেও আপনি প্র্যাকটিক্যাল জগতে ভালো দক্ষতা দেখাতে পারলে আপনি ভালো একজন সাংবাদিক হতে পারবেন। তবে কিছুটা তত্ত্বগত ধারণা কিংবা একাডেমিক জানাশোনা থাকলে মন্দ নয়। একজন ভালো সাব এডিটর হতে গেলে বেশকিছু বিষয় মাথায় রেখে আপনাকে এগুতে হবে। জেনে নেওয়া যাক সেগুলো।

হাউজের পলিসি মাথায় রাখুন : সাব এডিটরকে সংবাদপত্রের মেরুদণ্ড বলা হয়। সুতরাং যে হাউজের সাব এডিটর যত দুর্বল, সে হাউজের সাব এডিটিং তত দুর্বল এবং সে হাউজের মেরুদণ্ড তত দুর্বল। সাব এডিটরের কাজ হলো একটি নিউজকে সুন্দর এবং যথাযথ ও নির্ভুলভাবে সংবাদপত্রে তুলে ধরা। এক্ষেত্রে ওই সাব এডিটরকে সংবাদপত্রে নীতি, হাউজের নীতি মাথায় রাখতে হবে। হাউজকে বিতর্কিত করে এরকম কোনো সংবাদ তিনি ছাপানোর ব্যবস্থা করবেন না। কোনো নিউজ নিয়ে সন্দেহ তৈরি হলে তা সিনিয়রদের সঙ্গে আলাপ করুন। বিপজ্জনক কিছু হলে তা হোল্ড করুন।

সিদ্ধান্ত নিন তাড়াতাড়ি : প্রিন্টিং মাধ্যমে সংবাদ সংগ্রহ ও বাছাইয়ে অনেক সময় থাকলেও অনলাইন গণমাধ্যমে সে সময় খুব কম। প্রিন্টিং গণমাধ্যমে একজন সাব এডিটর নিরিবিলি সময় ধরে নিউজ সংগ্রহ এবং তা সম্পাদনার সুযোগ পান প্রয়োজনে তা আরো সংযোজন বিয়োজন করতে পারেন। সকালে সংগ্রহ করা নিউজ বিকেলের আগেই মোটামুটিভাবে তৈরি করতে পারলে হয়। কিন্তু অনলাইন নিউজ পোর্টালের একজন সাব এডিটরকে তাৎক্ষণিকভাবে নিউজ সংগ্রহ, বাছাই এবং তা সম্পাদনার কাজ করতে। তাই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাড়াতাড়ি। এবং মাথায় রাখবেন তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিলেও আপনাকে বিচক্ষণ হতে হবে। তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্তের কারণে ভুল সংবাদ বা অপ্রয়োজনীয় সংবাদ যেন চলে না যায় সে বিষয়ে মাথায় রাখবেন।

ধরুন : ভারতের রাষ্ট্রপতির স্ত্রী মারা গেছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শোক জানাতে ভারতে যাবেন। এখানে কতগুলো শিরোনাম হতে পারে। ‘ভারতের রাষ্ট্রপতিকে শোক জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’, ‘সোমবার ভারতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী’, ‘বিমানবন্দরের পথে প্রধানমন্ত্রী’, ‘রওয়ানা দিল প্রধানমন্ত্রী বহনকারী বিমান’, ‘ভারতে পৌছালেন শেখ হাসিনা’, ‘ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে শেখ হাসিনা’, ‘শোকগ্রস্ত রাষ্ট্রপতিতে সমবেদনা জানালেন প্রধানমন্ত্রী।’ একই ঘটনার সাতটি হেডলাইন। সাব এডিটর হিসেবে কোন কোন নিউজ যাওয়ার মতো তা আপনাকেই বাছাই করতে হবে। আপনি কি সবগুলো সংবাদ অনলাইনে ছাড়বেন? কোনটা ছাড়বেন, কোনটা জরুরি? বিষয়গুলো ব্যাপারে বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত নেওয়া আপনার কাজ। তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নিলে না পারলে সিনিয়রের পরামর্শ নিন। তিনিও আপনাকে সহায়তা করবেন।

কাজ করুন দ্রুত : ধরুন আপনার সাত ঘণ্টা অফিস সময়। এর মধ্যে চা পান, নাস্তা করা, রিপোর্টারদের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলা প্রয়োজনীয় কাজে আপনার সময় যাবে অন্তত দেড় ঘণ্টা। হাতে থাকল আর সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা। এর মধ্যে একজন সাব এডিটরকে অন্তত ১৫টি নিউজ দেওয়া দরকার। ভাবছেন ১৫টি অনেক বেশি হচ্ছে না? মোটেও না। কারণ এই ১৫টির মধ্যে কোনো কোনো নিউজ যেমন থাকছে ৩০ লাইন, ৪০ লাইন। আবার কোনো কোনো নিউজ থাকবে ৫/১০ লাইনও। সুতরাং সবমিলিয়ে ১৫টি নিউজ সম্পাদনা একটা সাব এডিটরের জন্য আদর্শ মাপকাঠি। ১৫ টি নিউজ এডিট করার জন্য আপনি হাতে পাচ্ছেন ২২ মিনিট করে। নিউজ সংগ্রহ, বাছাই, ফন্ট কনভার্ট, ছবি বাছাই, শিরোনাম ঠিক করা, এবং তা ছাপানোর উপযোগী করে এডিট করার কাজ করতে হবে এই ২২ মিনিটেই। নিউজ এডিট অনেকটা পরীক্ষার খাতায় উত্তর লেখার মতো। সময় ঠিকমতো কাজে লাগাতে না পারলে আপনি ব্যর্থ হবেন।

ধরা যাক কোনো নিউজ এডিট করতে আপনি ৫০ মিনিট লাগালেন, সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টায় আপনি ৭/৮টার বেশি নিউজ দিতে পারবেন না। এ রকম হলে আপনি অনলাইন সাব এডিটিংয়ের জন্য যোগ্য নন। অনলাইনে যেহেতু অনেকগুলো নিউজ ছাপাতে হবে। একই ঘটনার একাধিক নিউজ ছাপানোর দরকার হতে পারে। সেক্ষেত্রে নিউজের সংখ্যা বাড়াতে না পারলে আপনাকে কোনো হাউজের খুব বেশি উপকার হবে না। তবে নামে কেবল সংখ্যা বাড়ানো নয়, নিউজের গুণগত মানটিও বজায় রাখা দরকারি।

কোনো কোনো সাব এডিটর ১৫টির বেশি নিউজ করতে পারবেন। তাদের জন্য সাধুবাদ। আর সিনিয়র সাব এডিটর বা শিফট ইনচার্জে যারা আছেন তাদের দায়িত্ব আরো বেশি। দিনে এরা কতগুলো নিউজ দেখে ছাড়বেন তা নির্দিষ্ট নয়। তবে গুরুত্বপূর্ণ কোনো নিউজ যাতে বাদ না যায়, কোনো নিউজের এডিটিং যাতে খারাপ না হয় সে ব্যাপারে নজর রাখাও শিফট ইনচার্জদের কাজ। কারণ কোনো গুরুত্বপূর্ণ নিউজ না গেলে পরের দিন হয়ত নিউজ এডিটরের কাছে আপনাকেই জবাবদিহি করতে হবে।

টাইপিং স্পি বাড়ান : অনলাইনে আপনাকে অবশ্যই টাইপিং স্পিড বাড়িয়ে কাজ করতে হবে। কোনো কোনো সাব এডিটর আছেন কি-বোর্ডের অক্ষর খুঁজে পান না। একবার এ প্রান্তে আরেকবার ও প্রান্তে আঙুল চালানো শুরু করেন তবুও অক্ষরের দেখা পান না। এরকম হলে আপনি ভালো সাব এডিটর হতে পারবেন না। কোনো কোনো সাব এডিটর হয়ত এমনটি বলেন, ‘আমার টাইপিং স্পিড অনেক স্লো। কিংবা আমি তো দুই হাত দিয়ে লিখতে পারি না। ’ তার মানে আপনি স্বীকার করলেন অনলাইন সাংবাদিকতায় আপনার টাইপিং স্পিড ভালো হওয়া দরকার। কীভাবে টাইপিং স্পিড বাড়ানো যায় সেটি চিন্তা না করে আপনি বছরের পর বছর কচ্ছপগতিতে টাইপ করেই যাচ্ছেন।

ধরুন : ভারতের রাষ্ট্রপতির স্ত্রী মারা গেছেন। প্রধানমন্ত্রী শোক জানাতে ভারতের উদ্দেশ্য বিমানবন্দর ছাড়লেন। এই নিউজটি আপনার ২২ মিনিটে করার কথা। আপনি সেখানে ব্যয় করলেন ৪০ মিনিট। এর মধ্যে দেখা গেল শেখ হাসিনা দিল্লির বিমানবন্দরে পৌঁছে গেলেন। এরপর খবর পেলেন, শেখ হাসিনা এখন দিল্লি বিমানবন্দরে। আপনি আগের নিউজ ফেলে এটা এডিটিং শুরু করতে লাগলেন। আপনার নিউজ এডিট করতে করতে লেগে গেল ৩০ মিনিট। শেখ হাসিনা ততক্ষণে বিমানবন্দর থেকে রাষ্ট্রপতি ভবনে চলে গেছেন। আপনি সেটাও লিখতে বসলেন। এরপর আপনার কাছে ভারতের প্রতিনিধি মেইল পাঠালেন শেখ হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতিকে সমবেদনা জানিয়েছেন। আপনি এখন এটি এডিট করছেন। হিসাব করে দেখা গেল, আপনি সময় নষ্ট করলেন ঠিকই কিন্তু কোনো নিউজই দিতে পারলেন না। কারণ আপনার টাইপ স্পিড স্লো। ততক্ষণে আপনার প্রতিযোগী অন্য অনলাইনগুলো সুন্দরভাবে সবগুলো নিউজ প্রকাশ করেছে। আপনি একটাও নিউজও দিতে পারলেন না। আপনি কিন্তু আপনার প্রতিষ্ঠানকেই ক্ষতিগ্রস্ত করলেন। এবার চিন্তা করুন পাঠক আপনার পোর্টাল পড়বে না অন্য কারোরটা পড়বে।

একটা বিষয় মনে রাখবেন আপনার প্রতিদিনের কর্মদক্ষতা কিন্তু অফিস কর্তৃপক্ষ নজরে রাখছেন। সুতরাং নিজের অযোগ্যতা নিয়ে পড়ে থাকলে আপনি অফিসের কাছ থেকে ভালো মূল্যায়ন পাবেন না। আপনি অফিসে নিয়ম করে আসেন, কলিগদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন, আপনি ভালো সহকর্মী। আপনার অনেকগুণ, কিন্তু একটি খারাপ গুণ হলো আপনার টাইপিং স্পিড ভালো না। আমি হলফ করে বলতে পারি, বছর শেষে আপনার বেতন কিন্তু বাড়বে না। সুতরাং নিজের কোনো অযোগ্যতা থাকলে তা সমাধান করে ফেলুন।

শকুনের মতো চোখ চাই : আমরা অনেক সময় বলে থাকি। তোর তো শকুনের চোখ, ওই চোখ থেকে কিছুই বাদ যায় না। আক্ষরিক অর্থে সব মানুষের বেলায় কথাটি প্রযোজ্য নয়। কিন্তু একজন সাব এডিটরকে শকুনের চোখের দৃষ্টি নিয়ে তাকাতে হয় নিউজের দিকে। একটুখানি চোখ এড়িয়ে গেলেই গুরুত্বপূর্ণ কোনো ভুল হতে পারে। এই ভুল হওয়া মানে নিউজের বড় ক্ষতি হয়ে গেল কিংবা আপনার ভুলের কারণে ক্ষতি হয়ে গেল আপনারই প্রতিষ্ঠানের। তাই শকুনের চোখ হওয়া চাই-ই চাই।

ধরুন : আপনি একটা নিউজ আপনি এডিট করছেন। সেটির শিরোনাম দেওয়া যাক : ৫ জানুয়ারি ঘিরে মুখোমুখি দুই দল। নিউজটি বেশ বড় অন্তত ৩০ লাইন। আপনি খুব মনোযোগ দিয়ে প্রথম ২৮ লাইন পড়লেন, ওই ২৮ লাইনে কোনো বানান ভুল পেলেন না, রিপোর্টার যা লিখেছেন বাক্য ঠিক আছে। আপনি বিশ্বাস করলেন পরের দুই লাইনে আর কোনো সমস্যা নেই। দেখা গেল পরের দুই লাইনে গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য আছে। ধরুন বাক্য দুটো এ রকম : ৫ জানুয়ারিকে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র হত্যা দিবস এবং বিএনপি গণতন্ত্র রক্ষা দিবস হিসেবে পালন করে। দুই দলকেই শান্তিপূর্ণভাবে রাজধানীতে কর্মসূচি পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হাফিজ।

আপনি নিজেই বিশ্বাস করেছেন ওই সংবাদে আর কোনো ভুল নেই। ভুল কিন্তু রয়ে গেছে। রিপোর্টার লেখার সময় হয়ত কোনো অবচেতন মনে আওয়ামী লীগের জায়গায় বিএনপি, বিএনপির জায়গায় আওয়ামী লীগ লিখে ফেলেছে। তাহলে অর্থ এবং পুুরো বাস্তবতা উল্টে গেল। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের জায়গায় কি- বোর্ডের চাপে রয়ে গেল আব্দুল হাফিজ। আপনি ২৮ লাইন মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন বাকি দুই লাইন পড়েননি। এবং ভুল রয়ে গেল শেষের দুই লাইনেই। তাহলে আপনার পরিশ্রম বৃথা। একটা বিষয় মনে রাখবেন, আপনি নিউজের যে অংশে বা যে লাইনে শকুনের চোখ ফেললেন না সেখানে কিন্তু ভুল থাকবে এই বিশ্বাস রেখেই কাজ করতে হবে। নিউজ এডিট করার সময় রিপোর্টারকে পুরোপুরি বিশ্বাস করবেন না।
২ Likes ০ Comments ০ Share ৬৪২ Views