Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

ঘাস ফুল

১০ বছর আগে

ভালো কাজ

কাল শুক্রবার। স্কুল বন্ধ। মাস্টার মশাই সব ছাত্র ছাত্রীকে বললেন,

-আগামীকাল তোরা সবাই একটা একটা করে ভালো কাজ করবি। আর শনিবার দিন আমি ক্লাসে একে একে সবাইকে জিজ্ঞেস করবো তোরা কে কি করেছিস । মনে থাকবেতো?

সবাই সমস্বরে বলল,

-জি মাস্টার মশাই।

একটু পরে স্কুল ছুটি। প্রতিদিনের মতো ক্লাস শেষ হবার আগে ছাত্র ছাত্রীরা মাস্টার মশাইর সাথে রুটিন মাফিক সমস্বরে বলছে,

সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি

সারাদিন আমি যেন ভালো ভাবে চলি।

শিমুল বিকাল বেলা তার বন্ধু দোয়েলদের বাড়িতে এলো। দোয়েল কি ভালো কাজ করেছে খবর নেয়ার জন্য আর সে ফাঁকে কিছুক্ষণ খেলা করতে।

-কিরে দোয়েল তুই আজ কি ভালো কাজ করেছিস? কাল কিন্তু মাস্টার মশাইর ক্লাসে সবাইকে যার যার ভালো কাজের কথা বলতে হবে। তোর মনে আছেতো? 

-আমি কিছু করতে পারি নাইরে।

দোয়েল, শিমুলকে বলল।

-এখনো পারিসনিতো কি হয়েছে। জলদী করে কিছু একটা করে ফেল। খেলবি না যখন আমি চলে গেলাম। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। মা আবার চিন্তা করবে।

এই কথা বলে শিমুল বাড়ি ফিরে গেল।

মাস্টার মশাই ক্লাস নিচ্ছেন। আজ কোন পড়া নেই। সবাইকে একে একে জিজ্ঞেস করছেন কে কি ভালো কাজ করেছে শুক্রবারে। 

-অর্জুন তুই বল, গতকাল তুই কি ভালো কাজ করেছিস?

মাস্টার মশাইয়ের কথা শুনে অর্জুন উঠে দাঁড়াল।

-বাবাকে বলেছিলাম বাজার থেকে আমার জন্য একটা কাঁঠাল গাছের চারা আনতে। বাবা কাঁঠাল গাছের চারা আনার পর আমি উঠাকে নিজ হাতে আমাদের বাড়ির কোনায় লাগিয়েছি। এখন থেকে আমি প্রতিদিন ওটার যত্ন নেব  আর সকাল বিকাল ওটার গোরায় পানি দেব, যাতে সুন্দর ভাবে বেড়ে উঠতে পারে।  

অর্জুন তার ভালো কাজের কথা এভাবে বললো।

এবার তুহিনের পালা।

- আগে আমি ঠিক মতো খেতে চাইতাম না। এর জন্য মা খুব মন খারাপ করতো। কিন্তু মাকে কথা দিয়েছি এখন থেকে প্রতিদিন আমি সময় মতো খাব। গতকাল মা আমাকে যখনই খাবার খেতে ডেকেছেন, আমি তখনই খুব সুন্দর করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে খেতে বসেছি। কোন দুষ্টুমি করি নাই। আর কখনো করবোও না।

তুহিনের ভালো কাজের কথা শুনা শেষ হলে মাস্টার মশাই পায়েল কে দাঁড়াতে বলে।

পায়েল বলল,

-আমি বাসায় ঠিক মতো পড়তে বসি না। শুধু কার্টুন দেখতে পছন্দ করি। আব্বু আম্মু অনেক বোকা দেয়। তারপরেও আমি কার্টুন দেখা বন্ধ করি নাই। আব্বু আম্মুকে বলেছি এখন থেকে আর বেশী কার্টুন দেখবো না। পড়ার সময় ঠিক মতো পড়তে বসবো। শুধু শুক্রবার স্কুল বন্ধের দিন জন্য কার্টুন দেখবো। যদিও গতকাল শুক্রবার ছিল, তারপরেও আমি কার্টুন না দেখে পড়তে বসেছিলাম।  

-এবার তুই বল।

মাস্টার মশাই শিমুলের দিকে তাকিয়ে বললো।

-রোজ শুক্রবার আমাদের বাড়িতে একজন ভিক্ষুক আসে। রোজ শুক্রবারেই আমি তাকে দুপুরে পেট ভরে খাওয়াই। কিন্তু এই শুক্রবার যখন সে আসলো, তখন তার সাথে ছোট্ট একটা মেয়েও আসলো। জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম, মেয়েটা তাদেরই বস্তিতে থাকে। দুদিন হল মেয়েটার মা মারা গেছে। ওর বাবা কোথায় জানি চলে গেছে কয়েক বছর আগে। আর ফিরে আসে নাই। এখন তার কেউ নেই। তাই সে মেয়েটাকে সাথে নিয়ে ভিক্ষা করে। ভিক্ষা করে যা পায়, তাই দুজনে ভাগ করে খায়। কিন্তু মেয়েটার গায়ে কোন কাপড় ছিল না। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলে বলে, তার একটা জামা আছে। বেশী ময়লা হয়ে গেছে বলে ধুয়ে রোদে শুকাতে দিয়ে এসেছে। তখনো শুকায় নাই বলে খালি গায়েই চলে এসেছে। বাবা আমাকে গেলো জন্মদিনে নতুন একটা জামা কিনে দিয়েছিল। বাবা মাকে রাজি করিয়ে ঐ জামাটা আমি মেয়েটাকে দিয়ে দিয়েছি।  

শিমুলের ভালো কাজের কথা বলা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই মাস্টার মশাই যেন কিছু একটা লুকানোর চেষ্টা করলেন। কিছুক্ষণ তিনি আর কাউকে দাঁড়া করালেন না। তারপর আবার একে একে সবাইকে জিজ্ঞেস করলেন। এদের মধ্যে কেউ বলল, মিথ্যা কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে, আর মিথ্যা বলবে না। কেউ বলল, বাড়ির কাজের মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে, আর খারাপ ব্যবহার করবে না। কেউ বলল, কোন পশু পাখিকে অযথা মারবে না। একজন বলল, বেশী বেশী চকলেট খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ বেশী চকলেট খেলে দাঁতের ক্ষতি হয়। আরেক জন আবার বলল, রাতে ঘুমানোর আগে নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা শুরু করে দিয়েছে, যাতে দাঁতের ক্ষতি না হয়। শরীর নিতান্তই খারাপ না হলে আর কখনো স্কুল ফাঁকি দিবে না বলে কেউ কেউ ভালো কাজ হিসাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে গতকাল।

দোয়েল মাথা নিচু করে সবার ভালো কাজের কথা শুনছিল আর মনে মনে ভাবছিল তাকে যেন মাস্টার মশাই দাঁড়া না করান। কারণ সে কোন ভালো কাজ করার সময় পায় নাই। কিন্তু মাস্টার মশাই তাকে ঠিকই দাঁড় করালেন।

-দোয়েল এবার তুই বলতো, তুই কি ভালো কাজ করেছিস গতকাল?

দোয়েল উঠে দাঁড়াল ঠিকই কিন্তু মাথা নিচু করে চুপ করে রইলো। এবার মাস্টার মশাই গলার স্বর একটু উঁচিয়ে দোয়েলকে আবার জিজ্ঞেস করলো,

-কিরে তুই বলছিস না কেন? কি ভালো কাজ করলি গতকাল?

দোয়েল কিছুটা ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি বলে উঠল,

-আমি কোন ভালো কাজ করতে পারি নাই মাস্টার মশাই।

দোয়েল খুব ভালো ছাত্রী। বরাবরই ক্লাসে সে ফার্স্ট হয়। মাস্টার মশাই তাকে খুব ভালো করেই চিনেন। দোয়েলের বয়স যখন দুই বছর, তখন তার বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। তারপর থেকে তার মা বাড়িতে সেলাইয়ের কাজ করে সংসার চালান। এবার মাস্টার মশাই দোয়েলের কাছে এসে তার মাথায় হাত রাখল।

-কি হয়েছিলরে তোর মা? সবাই একটা না একটা ভালো কাজ করলো, আর তুই ক্লাসের সব চাইতে ভালো ছাত্রী হয়ে একটাও ভালো কাজ করতে পারলি না? কেন পারিসনি আমাকে বলতো?

দোয়েলের চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। কিন্তু লজ্জায় জোড়ে কাঁদতে পারছে না। কাঁদো কাঁদো গলায় সে বলল,

-মাস্টার মশাই আমার মা গত দুইদিন ধরে অসুস্থ। গতকাল হঠাৎ করে মার গায়ের জ্বর প্রচণ্ড বেড়ে যায়। সারাদিন শুয়ে ছিলেন। কোন কাজ কর্মই করতে পারেন নাই। তাই আমি টুকটাক যা পেড়েছি করেছি। আর সারাক্ষণ মায়ের পাশে থেকে মায়ের সেবা যত্ন করেছি। মায়ের মাথায় পানি ঢেলেছি। হাত পা টিপে দিয়েছি। মাথায় জল পট্টি দিয়েছি কিছুক্ষণ পর পর। মাকে তুলে খাইয়ে দিয়েছি। যখন ওষুধ খাওয়ার সময় হয়েছে, তখন মাকে ওষুধ খাইয়েছি। আর এভাবেই আমার সারাদিন কেটে যায়। বিকালে শিমুল এসেছিল আমাদের বাড়িতে। তার সাথে খেলতেও পারিনি।

কথাগুলো বলে দোয়েল কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। কিন্তু মাস্টার মশাই কিছুই বলছেন না। তাই আবার সে বলে উঠলো,

-মাস্টার মশাই, মা সুস্থ হয়ে উঠুক, তখন অবশ্যই আমি একটা না দুটা ভালো কাজ করে আপনাকে বলবো।

মাস্টার মশাই এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না।

-তুই আমার কাছে আয় মা। তোকে আর কোন ভালো কাজ করতে হবে না। তুই যা করেছিস তার চাইতে আর কোন ভালো কাজ এই পৃথিবীতে আছে কিনা আমার জানা নেই। যে তার মা বাবাকে সেবা যত্ন করার সুযোগ পায়, তার চেয়ে সৌভাগ্যবান কেউ এই পৃথিবীতে নাইরে মা। আমি তোকে প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করছি মা, তুই যেন অনেক বড় হতে পারিস। তখন দেখবি তোর আলোয় কতো মানুষ আলোকিত হবে।

মাস্টার মশাইর চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু তা লুকানোর চেষ্টা করলেন না। দোয়েলকে বুকে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। মিনিট দশেক পর ছুটির ঘণ্টা বেজে উঠলো। 

১ Likes ২৭ Comments ০ Share ৮৬৩ Views

Comments (27)

  • - সালাহ্‌ আদ-দীন

    এত ঝামেলা ভাল লাগেনা। পারলে দাওয়াত দেন এসে খেয়ে যাই।  

    • - লীলাবতী পরী

      অলস মানুষ

    - ঘাস ফুল

    চেষ্টা করে দেখবো পারি কিনা। মনে হচ্ছে বেশ সুস্বাদু হবে। ধন্যবাদ লীলাবতী। 

    • - লীলাবতী পরী

      ধন্যবাদ