Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

ভারতীয় উপমহাদেশে মূকাভিনয় শিল্পে শীর্ষ স্থানীয় ব্যক্তিত্ব পার্থ প্রতীম মজুমদারের ৬১তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা


বাংলাদেশের জনপ্রিয় একজন মূকাভিনয় বা মাইম শিল্পী পার্থ প্রতীম মজুমদার।ফ্রান্স প্রবাসী এই মূকানিভয় শিল্পী মাইমের বিচারে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান দখল করে আছেন। বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে মাইম প্রদর্শন করে প্রচুর সুনাম অর্জন করেন পদ্মাপাড়ের এই ছেলে। বিশ্বের যেখানে যান সেখানেই উজ্জ্বল করে আসেন বাংলাদেশের মুখ আর পতাকা। সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে মালয়েশিয়ার সাংবাদিকদের কাছ থেকে 'মাস্টার অব দ্য ওয়ার্ল্ড' উপাধি লাভ করা ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে বহু আন্তর্জাতিক সম্মান ও পুরস্কার লাভ করেছেন। এভাবেই একদিন পার্থ উঠে আসেন ফ্রান্সের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের সর্বোচ্চ সম্মাননার তালিকায়। ফ্রান্স সরকারের শেভালিয়র উপাধি পেয়েছেন তিনি। তিনিই প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে এ পদক পেলেন। 

(ফ্রান্স সরকারের শেভালিয়র (নাইট) পুরস্কার গ্রহণ করছেন পার্থ প্রতীম মজুমদার)
তাঁর নাম তালিকায় উঠেছে শুনে বাংলাদেশের ফ্রান্সের প্রাক্তন এ্যম্বাসেডর শার্লি কোজরেভ খুব শক্ত অবস্থান নেন পার্থ প্রতিমের জন্য। যেদিন ঢাকার বুকে পার্থ প্রতিম মজুমদারকে নাইট ব্যাজ পরিয়ে দেন তিনি, সেদিন তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘......উপস্থিত প্রিয় সুধী, আজ আমি একটা কথা আপনাদের জানাতে চাই। আর তা হচ্ছে, পার্থ যখন ফ্রান্সে যান, তখন তিনি এদেশের এ্যম্বাসেডর হিসেবে ফ্রান্সে এ দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। আবার যখন সে বাংলাদেশে ফিরে আসে, তখন আমি আর এদেশের এম্বাসেডর থাকি না। বরং পার্থ তখন বাংলাদেশে ফ্রান্সের এ্যম্বাসিডর হিসেবে অবস্থান করে।’ এ দেশের একজন নাগরিক হিসেবে এর চেয়ে গর্বের কথা আর কি হতে পারে! যখন একজন এ্যম্বাসেডর বলেনআমি না... বরং আপনাদের এই ছেলেই আমার দেশের এ্যম্বাসেডর! এই বরেণ্য মূকাভিনেতার ৬১তম জন্মদিন আজ। ১৯৫৪ সালের আজকের দিনে তিনি পাবনা জেলার কালাচাঁদপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। জনপ্রিয় এই মূকাভিনয় শিল্পীর জন্মদিনে আমাদের ফুলেল শুভেচ্ছা।

(শিশু পার্থ প্রতীম মজুমদার)
পার্থ প্রতীম মজুমদার ১৯৫৪ সালের ১৮ জানুয়ারি পাবনা জেলার কালাচাঁদপাড়ায় পার্থ প্রতীম মজুমদার জন্মগ্রহণ করেন। পিতা হিমাংশু কুমার বিশ্বাস আর মাতা সুশ্রিকা বিশ্বাস। বাবা মায়ের দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন পার্থ প্রতীম মজুমদার। তিনি ছাড়া ছোটবড় আরও তিনটি ভাই আর চার ভাইয়ের একটি মাত্র বোন নিয়ে তাদের পরিবার। কন্ঠশিল্পী বাপ্পা মজুমদারের বাবা পাবনার জমিদার বারীণ মজুমদার ছিলেন তাঁর দুঃসম্পর্কের আত্মীয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় বারীণ মজুমদারের মেয়েটি হারিয়ে যায়। তখন মেয়ে-হারানো বারীণ মজুমদারের অনুরোধে তিনি চলে যান ঢাকার ২৮ নম্বর সেগুনবাগিচার বাসায়। তখন থেকেই তিনি পার্থ প্রতীম মজুমদার নামে পরিচিত। পাবনার কালাচাঁদপাড়াই পার্থর প্রথম স্কুল। বাড়ি থেকে মাত্র দু'তিনটি বাড়ি পরে ছিল জুবলী ট্যাংক নামে একটা বিশাল পুকুর। আর পুকুরের পাশেই জুবলী স্কুল। সেখানেই পড়াশোনার প্রথম পাঠ।
প্রাথমিক শিক্ষা শেষের পর বড় ভাইয়েরা তাকে কাকা শুধাংশু কুমার বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে কলকাতা শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে চন্দননগরে পাঠিয়ে দেন। সেখানে ড. শীতল প্রসাদ ঘোষ আদর্শ বিদ্যালয়ে পড়ার সময় পরিচয় হয় মূকাভিনয় বা মাইমের আর্টিষ্ট যোগেশ দত্তের সাথে। তার কাছে মাইম শেখা শুরু। পার্থ প্রতীম মজুমদার ১৯৬৬ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত কলকাতার যোগেশ দত্ত মাইম একাডেমীতে মাইমের উপর শিক্ষাগ্রহণ করেন৷ ১৯৭২ সালে ভারতের চন্দননগর থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন৷ ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা মিউজিক কলেজ থেকে স্নাতক হন৷ ১৯৮১ ও ১৯৮২ সালে মডার্ণ কর্পোরাল মাইমের উপর "ইকোল দ্য মাইম" নামে এতিয়েন দু্য ক্রু কাছে শিক্ষাগ্রহণ করেন ৷ এরপর ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত মারসেল মার্সোর কাছে "ইকোল ইন্টারন্যাশনালি দ্য মাইমোড্রামা দ্য প্যারিস" এ মাইমের উপর উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণ করেন৷

(প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে পার্থ প্রতীম মজুমদার)
পার্থ প্রতীম মজুমদার মঞ্চের পাশাপাশি ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার বিভিন্ন চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। তাঁর অভিনীত একটি ফরাসি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ২৬টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পায়। প্যারিস, ফ্রাঙ্কফুর্ট, নিউ ইয়র্কসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাঁর মূকাভিনয়ের প্রদর্শনী হয়েছে। প্রসঙ্গত, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, নাইকি, আইবিএম ও ম্যাকডোনাল্ডের মতো বিশ্বখ্যাত কোম্পানির পণ্যের প্রচারে মডেল হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। তাঁর মাধ্যমেই বাংলাদেশে মূকাভিনয় পরিচিতি লাভ করে। জীবনে পার্থ প্রতিম পেয়েছেন অনেক সম্মাননা। ২০০৯ সালে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ নাট্যপদক ‘ম্যলিয়ার-২০০৯’ অর্জন করেন। ২০০৯ সালে অর্জন করেন মুনীর চৌধুরী নাট্য পদক। কলকাতার একমাত্র মাইম একাডেমী থেকে মাস্টার অব মাইম সম্মননায় ভূষিত হন তিনি। ২০১০ সালে তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সম্মান ‘একুশে পদক’ অর্জন করেন। ২০১১ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি ফরাসি সরকার সরকার কর্তৃক ঘোষিত সে দেশের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের সর্বোচ্চ সম্মান ‘নাইট ইন দ্য অর্ডার অফ ফাইন আর্টস এন্ড হিউমিনিটিস’ ক্যাটাগরিতে ‘নাইট’ পদক লাভ করেন।

পার্থ প্রতীম মজুমদার আমৃত্যু মাইম ও পৃথিবীর বুকে তাঁর ছোট্ট দেশটিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসেন। সাধারণ জীবন যাপন আর বাংলাদেশের বুকে একটি পূর্ণাঙ্গ মাইম ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন নিয়ে আজ তিনি পালন করবেন তাঁর ৬১তম জন্মকার্ষিকী। ভারতীয় উপমহাদেশে মূকাভিনয় শিল্পে শীর্ষ স্থানীয় ব্যক্তিত্ব পার্থ প্রতীম মজুমদারের জন্মদিনে আমাদের ফুলেল শুভেচ্ছা
০ Likes ০ Comments ০ Share ৪৯১ Views