Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

ধ্রুব বাধন

৮ বছর আগে

ব্রেসলেট (The Bracelet)

ব্রেসলেট (The Bracelet )    "দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে বেশ ঝামেলায় পড়ি । বিশেষ করে এমিলিয়ার সামনে। এমিলিয়া আমার বর্তমান সঙ্গী । আমি এমিলিয়াকে কিছুটা ভালোওবাসি । প্রচণ্ড দুঃসময় এ হাত ধরে রাখা খুব অল্প কয়েকটা মেয়ের মাঝে এমিলিয়া একজন। এই এমিলিয়া যখন লাল সবুজ হলুদ রং এর একটি ব্রেসলেট কেন আমি হাত থেকে খুলি না কোন সময় – এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চায় তখন সত্যিকার অর্থে় মন খারাপ হয় ।    শ্রুতির সাথে পরিচয় আমার মেয়েবন্ধু অ্যাথনিয়ার মাধ্যমে। শ্যাম বর্ণের কালো চুলের উপমহাদেশীয় নারী শ্রুতি। প্রথম দেখাতেই মেয়েটির প্রেমে পড়লাম। অজানা কারনে প্রচণ্ড রকমের অহংকারী মনে হয়েছিল ওকে। যদিও শ্রুতির সাথে চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে তবু আমি ভালো বুঝতাম না ওকে।    অদূরের ইউনিভার্সিটি অব এথেন্সের সাইক্রিয়াটিস্ট এর লেকচারার মেয়েটা। যার কোন কন্টাক্ট নাম্বার নেই। ভাবতে় অবাক লাগতো। এমনকি তার কোন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও ছিল না। যদিও মেয়েটির বন্ধুর অভাব ছিল না। টিচার্স কলোনির বিলাসবহুল সুইচরুম ছেড়ে এতোটা দূরে সিমসাম এপার্টমেন্ট নেয়াটাও আমার কাছে রহস্যপূর্ণ ছিল। অনলাইন এর যুগে খবর এর কাগজ এর চলন টা প্রায় উঠে গেছে । তবু প্রতি সকাল এ একটি নিগ্র ছেলে শ্রুতির দরজার সামনে খবর এর কাগজ রেখে যেত। সেই খবর এর কাগজ অনেক সময় নিয়ে পড়তো শ্রুতি।      খুব বেশি অগোছালো প্রকৃতির সে । প্রচুর বই পড়ার অভ্যাস এবং গভীর রাতগুলোতে গ্রীসের রাস্তায় একা একা হাঁটত মেয়েটি । আমি গভীর বিস্ময় এর সাথে আবিষ্কার করলাম অ্যাথনিয়ার সঙ্গে আমার দূরত্ব বাড়ছে। প্রতি সন্ধ্যায় ইরাকাস স্ট্রিট এ শ্রুতির সাথে হাঁটতে হাঁটতে আইসক্রিম খাওয়াটা দৈনন্দিন রুটিন এ পরিণত হল।      মাঝে মাঝে এই মেয়ে খুব অসংলগ্ন আচরণ করতো। এমন ও হয়েছে- ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমি শ্রুতির ডোর বেল বাজিয়ে চলেছি। দরজা খোলে নাই শ্রুতি । ভিনিলিও ক্লাব এ মাতাল হয়ে বোতল এর সব হুইস্কি আমার মাথায় ঢেলে দেয় মেয়েটা – এই স্মৃতিটা অনেক বেশি সুন্দর।    তিনটা বছর খুব কাছ থেকে দেখেছি বলে জানি, কখনো জন্মদিন পালন করে নাই মেয়েটা । জানতে চেয়েছিলাম। “ না কেউ লিখে রেখেছে , না কেউ মনে রেখেছে । আমি আমার জন্মতারিখ জানি না” – শ্রুতির সরল স্বীকারোক্তি।    আমি প্রথম শ্রেণির একজন এল্কোহলিক হলেও ধুমপান এর প্রতি কোন ধরনের আগ্রহ ছিল না । নিজের অজান্তেই অদ্ভুত হয়ে খেয়াল করলাম – শ্রুতির অর্ধটানা সিগ্রেট এর বাকি অংশটা পোড়ায় আমার ফুসফুস । আর মস্তিষ্ক তো পুড়েছিল অনেক আগেই়।    প্রতি মধ্য দুপুর এ ঘুম থেকে ওঠার পর আমি প্রতিক্ষায় থাকতাম সন্ধ্যা নামার । যেহেতু শ্রুতির সাথে যোগাযোগ এর কোন মাধ্যম ই ছিল না , শেষ বিকাল থেকে আমি ওর ফেরার প্রতীক্ষায় থাকাতাম । আর এই প্রতিদিন এর প্রতীক্ষাই় আমাকে শ্রুতির প্রতি দুর্বল থেকে দুর্বলতর করে তুলছিল । আমি একধরন এর ঘোর এর মাঝে থাকতাম । আমার উদ্ভ্রান্ত চোখ অ্যাথনিয়ার দৃষ্টি এড়ালো না । সে ভেবে নিলো আমার ব্যাবসা ভালো যাচ্ছে না । অ্যাথনিয়া গভীর আগ্রহ নিয়ে আমার সাথে টুমরো ল্যান্ড এ কয়েকটা দিন কাটানোর আবদার করলো । আমি তীব্র খারাপ আচরণ করলাম অ্যাথনিয়ার সাথে । সে রাতেই অ্যাথনিয়া বেসিন ভর্তি বমি করলো ।       ...........................অনেকদিন পর ম্যাপল পাতাঝরা সকালে অ্যামান্ডা ঘুম ভাঙ্গা চোখে ভয় এবং বিস্ময় নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । এই অ্যামান্ডা একটা সময় মিয়ামিতে থাকতো । পরে ভয়াবহ অনলাইন সেক্সওয়ার্কার এবং পর্ণগ্রাফিতে জড়িয়ে পড়ে । এমন না যে ওগুলো জীবন এর প্রয়োজন এ করা । ওগুলোতে ফ্যান্টাসি পেতো ও । দৈনন্দিন শখ পূরণ এর মত। পরে মায়ের ব্যাবসা সামলাতে এথেন্সে চলে আসতে হয় বাধ্য হয়ে । এখানকার  একজন লয়ার কে বিয়ে করেছে । সুখে আছে কিনা জানি না , তবে এটা জেনেছি প্রথম প্রেমিক জোহান এর জন্য এখনও মন পোড়ে তার । তাই মাঝে মাঝে মিয়ামি তে ফিরলে সি বিচের বিকেলবেলায় ভলিবল খেলতে খেলতে ক্লান্ত হয়ে অথবা মধ্যরাত এ ঘুম ভাঙলে হঠাৎ , জোহান এর প্রতিটা নিঃশ্বাস নাভিমূল এ অনুভব করে অ্যামান্ডা ।    ব্যাবসার মাধ্যমে পরিচয় আমাদের । তারপর আমাদের ঘনিষ্ঠ হওয়াটা । আমাকে অনেকদিন পর কাছে পেয়ে অ্যামান্ডা খানিকটি উন্মাদ । নিজেকে তখন শত তৃষ্ণার জল ধারন কারী মানুষ বলে মনে হচ্ছিলো আমার । ওকে ঠান্ডা করাটা অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। আমার এত ধৈর্য  নাই আজকাল। ওকে যতটা সময় পারলাম ঠান্ডা    রাখার ট্রাই করলাম।    সব কিছু খুলে বললাম। সব শুনে সে বলল , পাসওয়ার্ড  রং ট্রাই এর মতো হয় এমন। মোমেন্ট তৈরি সাড়া জাগায় না ভেতর থেকে। বয়োসন্ধির আবেগ এর মত। উত্তাপ এ ভরা। এমন হতেই পারে এবং শ্রুতি কে বুঝবে ও না কখনো। পুরাতন পৃথিবীর মানুষ অনেক জটিল হয়।    আমি সমস্যার সমাধান পেলাম বলে মনে হল না।  গভীর রাতে এপেল বৃক্ষের বাগান চিরে ব্লু 30 ছুটে চলেছে। আমি ড্রাইভ এ কন্সেন্ট্রেট রাখতে পারছি না ঠিক ঠাক। ফেরার সবটা সময় জুড়ে একটি গান ই বার বার শুনেছি। শ্রুতি কে গভীরভাবে অনুভব করেছি। আমি অপেক্ষায় আছি চুড়ান্ত মুহূর্তের।    বেনকিঊট হলে শ্রুতি বর্ষসেরা শিক্ষক এর পুরস্কার গ্রহন করছেন । আমি সেই কোটিতে একজন জন্ম নেয়া শ্রুতির কথায় বলছি। একজন  জিনিয়াস শ্রুতির গল্প বলছি। প্রচুর হাত এর কাজ জানতো মেয়েটা। 'রেড আরডেন এলিজাবেথ ' - যে মেয়ের প্রিয় পারফিউম ব্রান্ডের নাম। আমি সবসময় চরম উগ্র পোশাকেই দেখে এসেছি শ্রুতি কে। বাট পুরস্কার নিতে আসার সময় টাতে শুধু আমি না, সারা এথেন্স, প্যারিস, লন্ডনের চোখ ও চেয়ে দেখল নীল রং এর শাড়ি আর কালো টিপ পরিহিত কালো চুলের মেয়ে শ্রুতির দিকে।    উঠে আসার সব ধরনের গল্প , ব্যক্তি জীবন নিয়ে করা সব ধরনের প্রশ্ন অতি সযত্নে এড়িয়ে গেল সে। বলা ভালো নিজের দেশ টির নাম ও একবার ও নিজ মুখে উচ্চারন করে নি। সব কিছু এড়িয়ে যাওয়ার জন্য একটি চমৎকার লাইন ব্যবহার করছিল ও।      "Look into my eyes - you will see what you mean to me"        এই একটি লাইন এমিলিয়ার অরনামেন্ট এর দোকান এর উপর লেখার জন্য অনুরোধ করেছিলাম আমি। অনুরোধ রেখেছিল এমিলিয়া। ও প্রায়ই এখন আমাকে অনেক গর্ব নিয়ে বলে , তার দোকানে যে ই ঢুকে সেই ই- লেখাটা একবার পড়ে । কিছু সময় এর জন্য অন্যমনস্ক হয়। ক্রেতার আনমনা চোখ আর লেখাটার একটি ছবি তুলে নেয়ার চমৎকার দৃশ্য দেখতে এমিলিয়ার দারুন লাগে। কিন্তু লাইন টা যে ছিল শ্রুতির বলা , এই ঘটনাটি আমি এমিলিয়াকে কোনভাবে জানাতে পারি নাই। বলা ভালো জানাতে চাই ও নাই। ....         .............................একটা ক্রিস্টাল পাথর এর উপর সাদা রং মস্তিষ্কের উপর লেড , ছুরি আর কবুতর এর যে প্রতীকি উপহারটি নিয়ে দাড়িয়ে ছিল ও। চা , কফি কোনটাই খেত না এই মেয়েটা । যা আমাকে অবাক করতো । চা কফির ঘ্রান তার নাকি সহ্য হয় না। গভীর রাত গুলোতে শ্রুতির রুমে গেছি মাঝে মাঝে , অ্যাথনিয়া ঘুমিয়ে যাবার ও অনেক পর। ৩ বছর এর চেনা কালে আমি একরাত এর জন্য হলে ও ওকে ঘুমাতে দেখি নাই। শ্রুতিরা ভোরবেলা ঘুমায় চিরকাল। সে প্রায় রাতে নিজ হাতে আমাকে চা করে খাওয়া তো। হলুদ রং এর একটি প্যাকেটের অসাধারণ চা - যে প্যাকেটের উপর লাল রং এ লেখা - ইস্পাহানি। আমি খেয়াল করলাম । ভাবলাম।  মেলাতে পারলাম না।    যে নারী চা খায় না রাতের পর রাত , তার রুমে চা এর প্যাকেট থাকে কিভাবে ?        আমার কাছে সব কিছু সাজানো মনে হল।  মনে হল এই রুমটা ও শ্রুতির নিজ হাতে সাজানো না। পুরোটা দেখে আর হাসে। আমার চা খাওয়াটা হাসায় ওকে। চোখ এ চোখ রাখে। সে চোখেতে হাসি নাই। কিন্তু ঠোট জুড়ে কি সুন্দর হাসি খেলা করে যাচ্ছে। আমার শ্রুতিকে খুব চুমু খেতে ইচ্ছে করে। আমি পারি না। কি যে হয় আমার । আমি কেন চাইতে ও পারি না।    এত পাথুরে এবং সূক্ষ্ম চোখ একজন নারী কিভাবে পান আমার জানা নেই। একদিন । সময়টা সন্ধ্যার পর। বাহিরে স্নো ফল হচ্ছে খুব। শ্রুতি পুরস্কার হাত এ নিল। প্রশ্ন করল আমি  কি দেখতে পাচ্ছি। আমি আচ্ছন্নের মত বলে গেলাম।    - আচ্ছা নিল। তুমি নিজেকে সব সময় এতো উচু ভাবো কেন? তুমি কি জানো? নাক উচু টাইপ এর ছেলে আমার মোটে ও পছন্দ না।      আমি অবাক হয়ে খেয়াল করলাম , কবুতর এর উপর খুব সুক্ষ ভাবে খোদাই করে ইগল পাখি আকা হয়েছে। আমি একটু পর মনে মনে বললাম। প্রচন্ড পরিমান নেশার মাঝে ও যে কথাগুলি আমার নিউরন যত্ন করে তুলে রেখেছিল।  সে কথাগুলি হল-     - জানো নিল? মাঝে মাঝে ঈগল এ কেড়ে খায় সাপ এর ভালোবাসা। আর মাঝে মাঝে গাংচিল এ কেড়ে নেয় ঝিনুক এর ভালোবাসা । এজন্য আমি কখনো সমুদ্রের ধার এ যাই না। জীবনের প্রতিটা পাওয়া পুরস্কার এর উপর ঈগল পাখি আকাই।    আ্যকুইরিয়াম এর ছোট্ট ছোট্ট রঙিন মাছের প্রতি শ্রুতির খুব দুর্বলতা ছিল।  সাড়া বাড়িতে এই একটি জিনিস শ্রুতি খুব যত্ন করে গুছিয়ে রেখেছে। আ্যাকুইরিয়াম। বিজনেস সফর শেষে হংকং থেকে ফেরার পথ এ ২১ টি রঙিন মাছ এনেছিলাম । শ্রুতির জন্য।  সেই ২১ টি মাছ আলাদা একটি ছোট কাচের আ্যাকুইরিয়াম এ রাখল শ্রুতি।.........       .............................অদ্ভুত ব্যাপার এই যে আ্যাকুইরিয়াম টা বেডের পাশে একটা টেবিল এর উপর রাখা দেখি একটা সময়। ঐ টেবিল টার উপর শ্রুতি ভুলে ও সিগ্রেট এর প্যাক অথবা আ্যাশট্রে রাখে না। কাচের টেবিল টার নিচে নীল রং এর ডিমলাইট নিজ হাত সেট করেছে শ্রুতি। শেষ রাতে সব আলো নিভে যাওয়ার পর বেডল্যাম্প ও নিভে যায় এক সময়। মাথার পাশের নীল টেবিল এর ডিমআলো  টা নিভে না কখনো।  নীল আলোতে রাখা কাচপাত্রে ঘুরে বেড়াচ্ছে ২১ টি খুদ্র প্রাণ। এই দৃশ্য দেখে যে মেয়েটি ঘুমোতে যায়; সে তো নিষ্ঠুর হবেই।    এই সব কিছুর সাথে যুদ্ধ করে আমি সত্যিই খুব ক্লান্ত ছিলাম। নিজের গোপন ইচ্ছা খুলে বলতে পারি না আমি। যন্ত্রনায় পুড়ে মরছি। ঠিক এমন সময় আমার মাথায় খেলে গেলো রিহানার কথা।    চমৎকার মেয়ে রিহানা। বছর কয়েক আগে ইউরেসিয়াস এই জব করতো। আমার অনেক বিশ্বাস এর জায়গা। আমি রিহানার সঙ্গ ও শেষ পর্যন্ত অনুভব করলাম না। পুরোটা সময় আমি শ্রুতির চোখ খুজে ফিরলাম । মিলানের চতুর্থ রাত এ রিহানা কে খুলে বললাম। একজন উপমহাদেশীয় নারীর প্রতি আমার অস্বস্তির কথা। কথা শোনার পুরোটা সময় রিহানা আই প্যাড এ ক্লাস এন্ড টাইটান গেমস খেলে চললো। আমার কথা শুনলো বলে মনে হল না। সব শুনে ও কোন ধরনের মন্তব্য ও করল না সে। আমি রিহানার মন্তব্যের অপেক্ষায় ছিলাম ও না। এমন সময় ফোন আসে এমিলিয়ার। এমিলিয়ার এবরসন শেষ হয়েছে। আমার মন ভালো হল।    রিহানার ওখান থেকে বিদায় নিব ঐ দিন। নেইল কাটার দিয়ে যত্ন নিয়ে রিহানা আমার নখ কেটে দিচ্ছে। রিহানা বলে চলল-    - নিল , আজ হচ্ছে না। কাল হবে তাই। কাল হচ্ছে না, হবে না তাই।  হবে না তাই, কখনোই হবে না। এটাই তোমার শ্রুতি সম্পর্কিয় সমস্যার সমাধান।    আর অনেকদিন ধরে মনে একটা প্রশ্ন কাটার মত বিধে ছিল। ভেবেছিলাম কোনদিন যদি আবার দেখা হয় তখন জেনে নিব। একবার তোমার বেডরুম এর বালিশ এর নিচে আমি একটা পায়েল পেয়েছিলাম । পায়েল টা কার ছিল?   আমি অনেক চেষ্টা করে ও যে কথা টি বলতে পারলাম না, কথাটি হল-  ঐ পায়েল টি আমার মা এর।      আমি এথেন্সে পৌছেই ছুটে গেলাম শ্রুতির কাছে। ডোরবেল বাজালাম । যে ছেলেটি দরজা খুলল , আমি সেই ছেলে কে দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। সে ছিল খুব ভোরে খবর এর কাগজ দিতে আসা ২৩ বছর এর নিগ্র ছেলেটা। ঐ দিক এর কিচেন থেকে শ্রুতি চিল্লাচ্ছে । নিল ইজ ব্যাক। নিল ইজ ব্যাক। আমাকে না দেখেই আমার ডোরবেল বুঝতে পারে ও। সেই রাতে আমরা ৩ জন একসাথে ডিনার করলাম। শ্রুতি গুনে গুনে ২৪ টি মোমবাতি জালালো। ডিনার শেষে ছেলেটি চলে গেল।    সে রাতে শ্রুতি আমাকে অদ্ভুত কিছু শোনালো।  ঘটনা টি একটি কুকুর এর।  সাদা রং এর কুকুর । কুকুরটির নাম টিটো।       শেষ  যখন শ্রুতি মুঠোফোন ব্যবহার করত , তখন টিটো বেচে ছিল।  টিটো মরে যাওয়ার পর তার আর মুঠোফোন এর প্রয়োজন হয় নাই।     কুকুর টা কে বড্ড ভালোবাসতো শ্রুতি। তরুনী বয়স এ এক বান্ধবীর কাছে টিনো কে রেখে এসেছিল ওর দেশ এ। দেশ থেকে মাঝে মাঝে ওর বান্ধবী ফোন দিতো এবং ঐ কন্টাক্ট নাম্বার টায় ছিল ঐ মুঠোফোন এ সেভ থাকা দ্বিতীয় ফোন নাম্বার।  টিটোর ডাক বন্ধ হয়ে আসে একটা সময় এবং খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেয়। এই খবর শুনে এখন পর্যন্ত শেষ বার এর মত নিজের দেশে ফেরা শ্রুতির। যেখানে সে টিটো কে রেখে এসেছিলো । শ্রুতি টিটো বলে চিৎকার দিতেই কুকুর টি ছোট একটি ডাক দিয়ে পা এর কাছে এসে পড়ে । এবং মারা যায়।     ঘটনাটি বলে আমার জন্য চা করে আনতে উঠতে যাচ্ছিল ও। আমি গভীর আবেগ নিয়ে শ্রুতির হাত স্পর্শ করলাম। শ্রুতির ঠোট হাসছে। চোখ হাসছে না।  শ্রুতি আমায় বলল    - জানো নিল? এই নিগ্র ছেলেটির আজ জন্মদিন। ২৪ তম জন্মদিন। এই ছেলেটির বড় বোন বোবা। ছেলেটি ওর বড় বোন কে অনেক বেশি ভালোবাসে। তোমার মানিব্যাগ এ তুমি যেমন আ্যথনিয়ার ছবি রাখো , নিগ্র ছেলেটির মানিব্যাগ এ কোন ছবি নেই। এই ছেলেটি কখনো তার মানিব্যাগ এ কারো ছবি রাখে না।    - তুমি জানো কিভাবে?    - প্রতি মাস এ নিউজ পেপারস বিল দেয়ার সময় টাকাটা ঢুকানোর জন্য অথবা খুচরা করে দেয়ার জন্য ঐ যখন মানিব্যাগ খোলে , তখন ই দেখা যায়।    আমি অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে রইলাম শ্রুতির দিক এ। এরপর শ্রুতি যে কথাটি বলল সেটি শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না আমি।    - তোমরা যারা অনলাইনে কেনা কাটা কর , দেনা পাওনা কর , তখন এই সৌন্দর্য  গুলো কি কখনো তোমরা দেখতে পাও?   আমি আচ্ছন্ন হয়ে রইলাম। শেষ ৬ দিন আমি শ্রুতি কে দেখি নাই। শ্রুতির শরীর শুকিয়েছে বলে মনে হল। চোখের নিচে গাড়ো রং এর কালি। উজ্জল শ্যাম বর্ণের চেহারার চোখে গাড়ো রং এর কালি পড়লে সেই মেয়ের আর চোখে কাজল ব্যবহার এর প্র‍য়োজন নেই। ...................   ....................   অনেকগুলো দিন পর ইউরিসিয়াস শিপিং কোম্পানির হেডকোয়ার্টজ এ আসতেই হল আমাকে।  ড. এ্যানাস্টাসিয়াস এস্লিডিস এখন প্রধান হিসাব রক্ষক অফিসার হিসাব এ দায়িত্বে আছেন। আমি তার সঙ্গে দীর্ঘ সময় নিয়ে আলাপ করলাম। চেরিং হেলেনিক শিপিং এর সাথে একটি নতুন চুক্তি তে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা। তার চোখে মুখে খুব বেশি আগ্রহ ফুটে উঠল বলে মনে হল না।  অনেক গুলো দিন পর আমার উপস্থিতি ই তার কাছে বেশি আনন্দের বলে মনে হল। আলোচনা শেষে আমরা  ২ জন হাভানা লেক এর পাশে বসে কফি পান করছিলাম। ড. এস্লিডিস এর একমাত্র কন্যাসন্তান এর বয়স ১৩ বছর। মেয়েটি দারুন আকে এবং খুব ভালো সাতার কাটে। ড. এস্লিডিস প্রসন্ন মুখে আমায় বললেন  - নীল , দেখে নিও তুমি। আমার মেয়েটি অলিম্পিকে স্বর্ণ আনবেই।  - অবশ্যই। অবশ্যই।    পাশের লেকের জল এ ফ্লাড লাইট এর আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছিল। একটি অংশের জল সে আলোতে চিক চিক করছিলো।  শ্রুতির জন্য আমি ভেতর এ ভেতর ছটফট করছিলাম।  শ্রুতির গভিরতা বুঝে উঠতে পারি নাই আজ ও।  আমার খুব করে মনে হতে থাকলো -  যে জলাধার যত বেশি গভীর তার বয়ে চলার শব্দ তত কম। মালিশার ফোন টা এল হঠাৎ। যদি ও আমার ফোনকল রিসিভ এর ইচ্ছা ছিল না। তবু আমাদের একজীবন এ এমন কিছু বন্ধু থাকে যেখানে আমরা চিরকাল ধরা।  মালিশা ঐ রকম এর একটি মেয়ে।    - ১৩/২ নং সাউথ স্ট্রিট । ফ্রেঞ্জ স্টকের ২২ নং টেবিল এ অপেক্ষায় রইলাম। ১০ মিনিটের মধ্যে চলে আসবি।    - প্লিজ। আজ তো  ক্ষমা কর।      - আচ্ছা যা। ক্ষমা। শুধু তুই না এলে আমি সারারাত এখানে এভাবেই বসে থাকব। আসবি কিনা সেটা এখন পুরাটাই তোর সিদ্ধান্ত ।    এই হল আমার মালিশা। শরীরে প্রচুর পরিমান ট্যাটু আকানো যার হবি। Aprilia [RSV 1000R  mile   175 MPH (281 km/hour) ] ছুটে চলেছে এথেন্স এর রাজপথ এ। মালিশা আজীবন ই বাইক ক্রেজি রয়ে গেল। ১২৩ কি মি / আউয়ার এ ছুটে চলেছে বাইক। আমি পেছন থেকে চতুর্থ বারের মত চিৎকার করে ও মালিশা কে বোঝাতে পারলাম না  " বাইক এর গতি কখনো নিয়ন্ত্রন এর বাহিরে নিতে হয় না। " কখনো আমি ওকে বোঝাতে পারি ও না।      ক্লান্ত শরীর নিয়ে মালিশার এপার্টমেন্ট থেকে নেমে যখন আমি রাজপথ এর ফুটপাত ধরে হাটা শুরু করেছি তখন মধ্য রাত ।  ওর এপার্টমেন্ট এ ৬/৭ বছর এর একটি নীল চোখের ছেলে আছে। চুল এর রং বাদামী । এই ছেলেটি অনাথ এবং মালিশার দত্তক।  মালিশা- আমার শৈশব এবং কৈশর এর মেয়েবন্ধুটির বাহিরটা যত শক্ত , ভেতর টা ঠিক ততটাই নরম।  খুব ছোট তে ক্যাপ্টাস একসাথে পড়তাম।  রোজ সকাল এ কোথা থেকে যেন টিউলিপ ফুল নিয়ে আসতো মেয়ে টা।      ঐ সময় টা তে গ্রিন পি , আমার এবং মালিশার খুব পছন্দের ছিল। তবু মালিশা প্রতি রাত এর খাবার পাত্রের গ্রিন পি গুলো আমার পাত্রে ঢেলে দিতো ।    আর এই চমৎকার মায়াময় মেয়েটিকেই  একবার টয়লেট এ আটকে  রেখে বাহির থেকে দরজা , লাইট বন্ধ করে দিয়েছিলাম। ঐ ভাবে মালিশাকে প্রায় ২ ঘন্টা রাখি। খুব ভয় পেয়েছিল ও। এর পরের রাতেই খুব জ্বর হয় ওর। আমি ভয় এ ভয় এ থাকি।  গভীর রাতে ওর মাথার পাশে অপরাধীর মত বসে থাকি ঘন্টার পর ঘন্টা।  ১০৪ জ্বরে আচ্ছন্ন মালিশার চোখ লাল।  সেই চোখ তুলে মালিশা বলে -     -  এই পাগলা , ঘুমাস নাই এখন ও ? মন খারাপ কেন ? কিছুই হয় নাই আমার। একটু অর্ধেক জ্বর সবার ই হয়।    একজীবন এ সব থেকে বেশি যে মেয়েটিকে বিরক্ত করেছি আমি, সে এই মালিশা।    মালিশার ডান হাটুতে একটি কাটা দাগ আছে। আর মালিশার বিশ্বাস - ঐ কাটা দাগ টির উপর চুম্বন এর অধিকার শুধু আমার ই । প্রতিবার ফেরার সময় আমি যখন মালিশাকে গুডবাই জানাই , তখন মালিশা হাসে আর বলে - where is the good in goodbye? - আজ এর ব্যতিক্রম হয়েছে। মালিশা মন খারাপ করে বলেছে - আসলে এমন এক সময় এ এসে অবস্থান করছি যখন অর্ধেক বন্ধু জীবন নিয়ে ব্যস্ত আর বাকি অর্ধেক  এতটাই ড্রাঙ্ক যে আমার পাঠানো টেক্সট এর রিপ্লাই পর্যন্ত আসে না। ভালো থাকিস। .....      হটাৎ করেই খবরটা দিল শ্রুতি। এক কুয়াশা ঝরা সন্ধ্যায় । এথেন্স এর রাজপথ তখন ও ভিজে আসে নি। বাস্কেটবল খেলতে থাকা একদল সোনালী আর বাদামী  চুলধারী প্রজন্মের ছেলে মেয়ে গুলো খেলা থামায়নি তখনও। আমার হৃদপিন্ডের  দ্বিতীয়  সঞ্চালন থামিয়ে দেয়ার মত ছিল কথাটি। গুডবাই।    শ্রুতি চাকরী ছেড়ে দিল হঠাৎ। গুটিয়ে নিল এথেন্স জীবন। পরের গন্তব্য প্যারিস। উদ্দেশ্য - ভায়োলিন শেখা।  ভায়োলিন শেখার শখ টা শ্রুতির বহুদিন এর।    ভায়োলিন প্রেমি শ্রুতির বলা শেষ কথা গুলি আমি শুনছি । একধরনের ঘোর এর মাঝে দাড়িয়ে। এপেল জুস শ্রুতির খুব ই প্রিয়। আমি হোল ইউরোপ জুস কালেকসন থেকে ব্যস্ত হাত এ জুস তুলছি। শ্রুতি বলে চলল-    বহু বছর হতে চলেছে। আমি আমার যোনিতে আর কোন ব্যথা অনুভব করি না।    - কিন্তু কেন তুমি কখনো কাউকে বলতে না?    খুব শকড ছিলাম। মা আমার যোনি রক্ত দেখে অভ্যস্ত ছিল। সে কিছুই করে নি। তাই আমি ভেবেছিলাম এটা এমন কিছু যা প্রতিদিন ই করতে হয়। আমার বয়স তখন সাত ।    আমি শ্রুতির চোখ এর দিকে তাকালাম। ভাবলেশহীন একজোড়া চোখ। সহসা দেখলে মনে হবে এ চোখ জৈবিক না। পাথুরে একজোড়া চোখ। আমি ওর সিগ্রেট এর প্যাক থেকে সিগ্রেট নিয়ে ধরালাম। শেয়ার করেই টানলাম। ওর চেহারাতে ফুটে ওঠা ম্লান হাসিটা আমার দৃষ্টি এড়ালো না।    তুমি জানো ? ঐ পরিবার এর সবাই আমাকে স্পর্শ  করেছে। মামা কাকা ফুফা। কিন্তু বাবা....    ইমিগ্রেসন এর সামনে এসে বসলাম দুজন। কিছু পর এ ভেতরে ঢুকে যাবে শ্রুতি।    সে? সে কি করেছে!!!!!    সে তাদের থামায় নি। কারন বাবা চেয়েছিল কাজ ছাড়া উপার্জন । আর আমি ই ছিলাম তার একমাত্র অপশন। যদি ও সে অন্যদের কে আমাকে স্পর্শ করতে দিত না । পরিবার এর সদস্যরা ই সম্ভাব্য সকল নোংরা উপায়  এ আমাকে ব্যবহার করত।  একই দিন এ মামা , কাকা এসে ইচ্ছামত ধর্ষন কর‍তো। কাদতাম। চিল্লাতাম।  তবু বাবা মা কে খুব ভালোবাসতাম। তাই ওখানে আর ফিরি নাই কখনো।  টিটো আমার বাহু এবং কপাল চেটে দিত, মাথার পাশে বসে থাকত । ডাক ছাড়া।  মা চা পরিবেশন করতেন। একটি সময় সয়ে গেল সব কিছু। আমি শিখে গেলাম কিভাবে নগ্ন হয়ে দুই পা ছড়িয়ে দিতে হয়।    শ্রুতি আমার হাতে ব্রেসলেট পরিয়ে দিচ্ছে। একটি বহু পুরানো ব্রেসলেট। যেটা শ্রুতি তার ৮ বছর এর জীবন থেকে হাত এ জড়িয়ে রেখেছে। কেউ কবে কখনও বড় বিশ্বাস নিয়ে বেধেছিল বুঝি।    আমি জীবন এর প্রথম বার এর মত আজ দেখলাম। যেটা দেখার ইচ্ছা টা বহুদিন এর। শ্রুতির দু গাল দিয়ে টপ টপ করে গড়াচ্ছে ইমোশনাল টিয়ারস। আমরা মানুষই একমাত্র সৃষ্টি  যারা ইমোশনাল টিয়ারস উৎপন্ন করতে পারি।    শ্রুতির পাশে সেই এ্যাকুইরিয়াম টা। ভেতর এ চার টি রঙ্গিন মাছ। চারটি খুদ্র প্রান। ২১ টি খুদ্র প্রান থেকে চার টি খুদ্র প্রান বেচে আছে তখন ও।    শ্রুতি ঢুকে পড়ার কয়েক মুহূর্ত  আগে - ২ পা এগিয়ে এসে আমাকে শার্টের  কলার ধরে  কাচ এর দেয়াল এ ঠেসে ধরে পাগল এর মত কিস করতে থাকল। শুধু একবার একটু থেমে বলল।  কমপ্লিকেসন আছে আমার একটা। আমি কখন ও মানব ভ্রুণের জন্ম দিতে পারব না। আমি আমার ভাগ্যের পশম পোড়া শৈশব এ  অনেক বেশিই ধর্ষিত হয়েছি বলে মনে হয়।       আমি বাতাস আর কতগুলো অমানুষ এর সাথে বেচে আছি।  বেচে আছি লাল চাদর এ বাধা অভিশাপ এর মতন।      মাঝে মাঝে রাত এর রাস্তায় একা একা হাটি বলে সবাই ভাবে বেশ্যা। আর এ রাত এর বেলা ধীর পা এ একটি মেয়ে শুধু টাকা কুড়ানোর জন্য না, শুধুমাত্র হাটার জন্য হাটতে পারে। এই সহজ সত্য টা তোমরা বুঝো না কেন ? আচ্ছা নিল। উপমহাদেশীয় কোন নারীর প্রতি অভিমান ছিল নাকি মনে তোমার ?""      ................  মাঝে মাঝে নীল ইকারাস স্ট্রিট এ যায়়। গভীর আনন্দ আর গাঢ় বিষাদ নিয়ে তরুণ তরুনীদের আইস্ক্রীম খাওয়া দেখে। উজ্জল শ্যাম বর্ণের চেহারার  কোন মেয়েকে চোখে পরলে সে যতক্ষন পারে চেয়ে থাকে। হারাতে দেয় না।     মাঝে মাঝে বৃষ্টি হয়। প্রেমিক প্রেমিকারা হাত ধরাধরি করে সন্ধ্যার ঝকঝকে হাইওয়েতে হেটে চলে। নীল  বৃষ্টি ভয় পায়। বৃষ্টিতে সে ভিজলেও ব্রেসলেট কখনো ভিজতে দেয় না।    নিল জানে গোল এই বৃত্তে শুধু শ্রুতি না----অনেকেই আটকে আছে ।      -ধ্রুব বাধন  ২১ আগস্ট , ২০১৫     __উৎসর্গ : ২২কোটি ৫০ লাখ শ্রুতির জন্য। ( প্রতি বছর বিশ্বে  ২২ কোটি ৫০ লাখ শিশু ৮ বছর বয়সের আগেই কোন না কোনভাবে যৌন নির্যাতন এর শিকার) । ওদের হয়ে চিল্লাচ্ছি ......    Stop It . Pretty please.
০ Likes ১ Comments ০ Share ৭৩৯ Views