Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

রাজীব নূর খান

৮ বছর আগে

বৃক্ষ কথা

১। শীতকালীন সবজিগুলোর মধ্যে অন্যতম লাউ। লাউ এর ইংরেজি নাম- Bottle gourd। লাউকে আঞ্চলিক ভাষায় কদু বলা হয়। বৈজ্ঞানিক নাম লাজেনারিয়াস। লাউয়ের জন্ম কিন্তু আফ্রিকায়। বর্তমানে সারাবছরই এ সবজিটি পাওয়া যায়।

কোষ্ঠকাঠিন্য, অর্শ, পেট ফাঁপা প্রতিরোধে সহায়ক। চুলের গোড়া শক্ত করে এবং চুল পেকে যাওয়ার হার কমায়। আপনি যদি ওজন কমানোর কথা ভেবে থাকেন তাহলে খাবার তালিকায় লাউ রাখুন। লাউয়ের চেয়ে এর শাক বেশি পুষ্টিকর। লাউয়ের ৯৬% হলো পানি। লাউ খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। নিয়মিত লাউ খাওয়া উচিত।

সব ধরনের মাটিতেই লাউ হয়। ছোটবেলা দাদীকে দেখতাম- কচি লাউ এর উপরের আবরন টা কুচি কুচি করে কেটে দুধ দিয়ে কি যেন রান্না করতেন। সবাই একদম চেটেপুটে খেত। আমি কোনো দিন খাই নাই। খেতে ইচ্ছা করে নাই।

ছবিঃ ছবি আমার'ই তোলা। যেহেতু আমি একটা পত্রিকাতে ফোটোসাংবাদিক হিসেবে কাজ করি- তাই লেখার সাথে অন্যের তোলা ছবি ব্যবহার করতে ইচ্ছে করে না। নিজের তোলা ছবি ব্যবহার করে অনেক আনন্দ আর তৃপ্তি পাই।

বিঃ দ্রঃ আমার ত্রিশ বছরের জীবনে আমি কোনোদিন লাউ খাই নাই। বাকি জীবনে খাবোও না। 


২।
এ্যাই, দেখো দেখো -কদম ফুল। আমাকে একটা কিনে দাও তো ! ফুটপাতে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা কদম ফুল বিক্রি করছে।

কদম ফুল বাদুড় ও কাঠবিড়ালির প্রিয় খাদ্য। এই ফুল নিয়ে রবীন্দ্রনাথের খুব সুন্দর একটা গান আছে- ''বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল/ করেছ দান, আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান।'' কদম ফুলের স্নিগ্ধ ঘ্রানে যুগে যুগে মুগ্ধ করে এসেছে গ্রাম ও নগরবাসীকে। দেখতে অসাধারণ হলেও এই ফুলের আর্থিক মূল্য খুব কম। কাঠ নরম বলে আসবাবপত্র তৈরি করা যায় না। কাঠ দিয়ে দেয়াশলাই ও কাগজ তৈরি হয়ে থাকে। কদম ফুলের আরেকটি নাম হচ্ছে নীপ।

বর্ষা - রবীন্দ্রনাথের প্রিয় ঋতু। এই ঋতুতে কদল ফুল সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। বর্ষা মানেই গুচ্ছ গুচ্ছ কদম ফুলের সুবাস। বর্ষা কবিদের ঋতু, কবিতা-গানের ঋতু, আবেগের ঋতু, প্রিয়জনের সান্নিধ্য পাবার আকাক্ষার ঋতু। কদম ফুলকে বলা হয় বর্ষা ঋতুর হাসি। বৃষ্টির স্বচ্ছ জলে ধুয়ে-মুছে কদম ফুল হেসে উঠে পাতার আড়াল থেকে। কদম নামটি এসেছে সংস্কৃত নাম কদম্ব থেকে। কদম্ব মানে হলো ‘যা বিরহীকে দুঃখী করে’।

প্রাচীন সাহিত্যের একটি বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে কদম ফুলের আধিপত্য। মধ্যযুগের বৈষ্ণব সাহিত্যেও কদম ফুলের সৌরভমাখা রাধা-কৃষ্ণের বিরহগাথা রয়েছে। ভগবত গীতাতেও রয়েছে কদম ফুলের সরব উপস্থিতি। কদম ফুল শুধু বর্ষায় প্রকৃতির হাসি নয়, এর রয়েছে নানা উপকারিতা। কদম গাছের ছাল জ্বরের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কোনো কোনো অঞ্চলে কদম ফুল তরকারি হিসেবে রান্না করেও খাওযা হয়। প্রকৃতির ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে অন্য গাছের পাশাপাশি কদম গাছ রোপণ করা প্রয়োজন।

ছবিঃ ছবি আমারই তোলা। একদিন সুরভি আমাকে বলল, তোমার তোলা কোনো কদম ফুলের ছবি নেই !!! আমি ভেবে দেখলাম, আসলেই তো এত্ত এত্ত ফুলের ছবি তুলেছি কিন্তু কোনো কদম ফুলের ছবি তোলা হয় নাই। সর্বনাশ। তারপর একদিন সারা ঢাকা শহর রিকশা নিয়ে ঘুরলাম- কিন্তু কোথাও কদম ফুল খুঁজে পেলাম না। মন খারাপ করে বাসায় ফিরলাম। পরের দিন অফিসের সামনের রাস্তার ফুটপাতে বসে চা খাচ্ছি হঠাত দেখি মাথার উপরে কদম ফুল। আহ শান্তি !‍! সাথে সাথে ক্যামেরায় বন্দী করে ফেললাম।


৩।
‘জোটে যদি মোটে একটি পয়সা,
খাদ্য কিনিয়ো ক্ষুধার লাগি
দুটি যদি জোটে অর্ধেকে তার,
ফুল কিনে নিয়ো, হে অনুরাগী!’


রঙ্গন ফুল একান্ত ভাবেই এই উপমহাদেশের ফুল। রঙ্গনের আরেক নাম রুক্সিনী। পার্বত্য চট্টগ্রামে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের চৈত্রসংক্রান্তি ও নববর্ষে সুরভি রঙ্গন ফুল ডালসহ ঘরের দরজায় ঝুলিয়ে রাখে। রঙ্গনের আদি নিবাস সিঙ্গাপুর। তরুরাজ্যে প্রায় সারাবছরই সবুজ পাতার ফাঁকে রঙ্গনের প্রস্ফুটন মানুষ প্রাণভরে উপভোগ করে। পাতার ঘন বিন্যাস অপূর্ব। এই ফুলের ইংরেজি নামঃ Flame of the woods।

রঙ্গন সারা বছরই ফোটে। কিন্তু বর্ষাকালে বেশি ফোটে। ষড় ঋতুর এই দেশে ঋতুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফুল ফোটে। সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত যখন `ফুলের ফসল` কবিতাটি লিখেছিলেন তখন ফুল কতটা বিক্রি হতো, আর হলেও ক্রেতা কারা ছিলেন সেটা গবেষণার বিষয়। এখন মফস্বল শহরেও ফুল বিক্রি হতে দেখা যায়। রাজধানীর রাস্তায় ট্রাফিক সিগনালে গাড়ী থামলে ফুল বিক্রেতারা জানালার পাশে এসে ভিড় করে। সুতরাং ফুলের ক্রেতার সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে এটা বলা যায়।

জোছনা রাতে রঙ্গন ফুলের ওপর যখন বৃষ্টি ঝড়ে তখন সেগুলোকে আকাশের তারা বলে মনে হতে পারে। রঙ্গন খুব কষ্টসহিষ্ণু গাছ । ছাদে দুই একটা রঙ্গন গাছের টব থাকলে ছাদের সৌন্দর্য অনেক বৃদ্ধি পায় । এর চাষ পদ্ধতিও সহজ । ফুল ফোটা শেষ হয়ে গেলে রঙ্গন গাছ ছেটে দেওয়া ভাল ।

ছবিঃ ছবি আমারই তোলা। আর হাতটা সুরভি'র। সুরভি'র সাথে তখন আমার বিয়ে হয়নি। কিন্তু আমরা খুব ঘুরে বেড়াতাম। একসাথে দু'টা কাজ করতাম। সুরভি'কে সময় দিতাম, নানান জাগায় ঘুরে বেড়াতাম- ফোটোগ্রাফীও করতাম।
আমি রঙ্গন ফুলের ছবি তোলার সময় সুরভি বলল- দাঁড়াও, আমি ফুলটা ধরি, তুমি ছবি তুলো। দেখবে ছবিটা বেশি ভাল লাগবে।

০ Likes ১ Comments ০ Share ৫৫২ Views

Comments (1)

  • - আলমগীর সরকার লিটন

    সুন্দর