Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

এম রহমান

৯ বছর আগে

বিহারি মরার ঘটনায় জাতীয়তাবাদী ইন্ধন নাইঃ সালাউদ্দিন শুভ্রর কলাম

বিহারি মরার ঘটনায় জাতীয়তাবাদী ইন্ধন নাই

 

সালাহ উদ্দিন শুভ্র

 পল্লবীতেদীর্ঘদিন আমার বাস। কালশি এলাকায় বার কয়েকই যাওয়া হইছে। চুল থেকে মাংসকাটা, নিত্যদিনের বাজার থেকে শুরু করে ঈদের কেনাকাটা পর্যন্ত সে এলাকায়বিহারিদের প্রতি নির্ভরশীলতা আছে বাঙালিদের । গরুর মাংস কাটা কিম্বা রান্ধাঅথবা বেনারশির বুননে বাঙালি তার অপারঙ্গমতা বিহারিদের দিয়া মিটাইত। আমাদেরবাসা থিকা হাঁটতে শুরু করলে ঘাম ঝরানির আগেই বিহারি বস্তি। বাঙালিদেরতুলনায় কম এলাকায় গাদাগাদি করে এরা বেশি লোকজন থাকে। এখানকার কায়কারবারআলাদা। বিয়া, খতনা, ঈদ, রোজা এমনকি সালিশ, সব মিলায়ে বিহারিরা আলাদা আইনভোগ করে। স্ফূর্তি, রঙ আর আতশবাজিতে তারা নিজেদের আলাদা করে। কথাও কয়উর্দূতে। মিরপুর এলাকায় চুল কাটানির বেশ দামি দোকানেও তারা কাঁচি চালায়।উর্দূ ভালো না বুঝলে তাদের হাসি-মশকরায় আপনে অ্যামবারাস ফিল করতে পারেন।কিন্তু এটুকু যদি বুঝেন যে রিজিকের প্রতি তাদের শতভাগ সততা আছে। তাইলে এতেআর আপনার সমস্যা হবে না। মুক্তিযুদ্ধকালীন সেই ভয়াবহতার প্রতি দুই পক্ষেরইএখন আর সমর্থন নাই। বিহারিরাও বাংলাদেশি হিসাবেই থাকে। ক্রিকেট খেলায়মুশফিকুর রহিমদের সাপোর্ট দেয়, বাঙালি লিডারদের হয়ে ভাড়া খাটে। এ দেশে তারাটিকে আছে এমন সব পারদর্শিতা দিয়া। হাতের কাজ, রান্নার কাজ এসব তাদের টিকেথাকার উপায়। নইলে এ দেশে তাদের আছেটা কী?

বিহারিদের বলতে গেলে কিছুই নাই। পায়েরনিচে মাটি নাই। এখানে তারা টিকে আছে বাঙালিদের খেদমতের লাগি। উচ্চ পদেআসীন হওয়া কিম্বা উচ্চ শিক্ষার তরে তাদের তেমন আগ্রহ নাই। অনাধুনিকজীবন-যাপনে অভ্যস্ত। কোথাও কোথাও গরিব বাঙালিদের সঙ্গে তাদের ঘর-সংসার আছে।আল্লার দুনিয়ার এতিম ইনসান হিসাবে তারা এ ভূখণ্ডে টিকে আছে। পলিটিক্যালিপরাজিত, অন্যের দয়ায় টিকে থাকা জনগোষ্ঠি। জাতিসংঘ না-থাকলে কী যে হইততাদের!

বাংলাদেশে জেনেভা ক্যাম্পের তলায় তারাআশ্রয় নিয়েছে। এখনো আছে। লাশের সংখ্যা যতই হোক, তাদের এটা ছেড়ে যাওয়ারউপায় নাই। ফলে এখানে প্রশ্ন সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতি হিসাবে বাঙালির কর্তব্য কী।দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ জানতে চাওয়া এ সময়ে এমন ঘটনার কী কারণ?

প্রথমত বাংলাদেশের চিত্রপরিচালক তারেকমাসুদের নরসুন্দরনামের একটা ছোট্ট ফিল্মের কথা যদি আমরা স্মরণে আনিতাইলে দেখব সেখানে বিহারিরা চুল কাটে। পাকিস্তানি আর্মিদের কাছ থিকাপালাইতে পালাইতে সেই বিহারি দোকানে আশ্রয় নেয় এক বাঙালি মুক্তিযোদ্ধা।উর্দূতে বাত করতে থাকা আর ভয়ংকর মুখভঙ্গির বিহারিরা মানবিক কারণে ঐমুক্তিযোদ্ধা বাঙালিকে পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দেয় না। এটুকু তাদেরবদান্যতা। বিহারি মাত্রই খারাপ এমন কোনো কথা নাই- অনেক কসরত করে তারেকমাসুদ তা বুঝাতে চাইলেন। কিন্তু একটা গুরুত্ব তিনিও দিতে চান নাই বা পারেননাই যে এরা অপরিহার্য। এদের কেউ কেউ খোদ মুক্তিযুদ্ধের জন্য ফাইট করছে।এরাও লোকাল। ভোট দেয়। তার চাইতে বড় বিষয় দৈনন্দিন চাহিদা মিটায়। এদেরবিকাশের অথবা পলিটিক্যাল আশ্রয় কী হইতে পারে সে বিষয়ে তিনি কেন কেউ কিছুবলতে পারেন নাই তেমন। ফলে এরা আমাদের এখানে একটা যেনবা বাড়তি, বিড়ম্বনাহিসাবে টিকে আছে। এদের অবদানের কথা কেউ স্বীকার করেন নাই কোথাও।

কালশিতে এমন ভয়াবহ একটা ঘটনা কখন ঘটলআসলে। যখন ঢাকা শহর নানাভাবে বাড়তেছে। কালশি এলাকা সরাসরি বনানীএয়ারপোর্টের সঙ্গে যুক্ত। অভিজাত এলাকায় যাতায়াতের পথে বিহারিরা এলাকা দখলকরে রাখলে অনেকেরই সমস্যা হওয়ার কথা। ব্যবসায়িকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতেপারতেছে না এসব স্থান। এদের উচ্ছেদ করতে পারলে তো সুবিধা হওয়ার কথা। বাঙালিবস্তি উচ্ছেদের কাহিনীও তো এমনই। এই ঘটনায় তো পুলিশ যেভাবে ইনভল্ভ হইছেতাতে নিছক এরে বাঙালিদের সঙ্গে বিরোধ হিসাবে দেখানো যাইতেছে না। বরং পুলিশসরাসরি তাদের বিপক্ষে অবস্থান নিছে। তাদের কোনো স্বার্থ থাকতে পারে। কিন্তুএখানে জাতীয়তাবাদী কোনো ব্যাপার আমি দেখতেছি না। এখন যারা এ প্রসঙ্গেমুক্তিযুদ্ধের সেসব ঘটনা টেনে আনবেন সেসব বাড়তি আলাপ হবে। সেই ঘটনা তোআছেই, সেগুলা আমরা সারা বছর করি। কিন্তু এই দিনেও সেসব টেনে আনা কোনো মহলেরস্বার্থ রক্ষার কারণ হয়ে যেতে পারে।

বিহারিদের জায়গার দখল নিয়ে আজ অনেকেইপয়সাওয়ালা হয়েছেন। একাত্তর পূর্ব সময়ে তাদের জমি-জিরাতের দখল বদল যেপ্রক্রিয়ায় ঘটছে তা নিয়েও এখানে কেউ তেমন ভাবে নাই। বরং গুটিকয় লোকের এমনদখলদারির সাফাই হিসাবে নানা জাতীয়তাবাদী আকাঙ্ক্ষার ব্যবহার দেখা গেছে। ফলেএই ঘটনাও আসলে অস্ত্রবাজদের কাছে নিরীহ মানুষদের মরণ হিসাবে সাব্যস্ত হবে।এই দুষ্ট লোকেরা পাকিস্তান-বাংলাদেশ-ইন্ডিয়ার পলিটিক্যাল ট্রমা এবংটারময়েলকেও ইউজ করতে সক্ষম হবে। ইন্ডিয়া বাংলাদেশী ফেরত না-পাঠানোর জন্যতাদের শ্ত্রু পাকিস্তানে বিহারি পাঠানোর রাজনীতিও এভাবে প্রতিষ্ঠা পায়াযাইতে পারে। কিন্তু আসল ঘটনা সবসময়েই ভিন্ন থাকে।

অথচ বিভিন্ন মিডিয়ার খবরে মনে হবেবুঝি বিহারিরা বাঙালিদের সঙ্গেই মারামারিতে খুন হইছে। এমন সাংবাদিকতাসামাজিক গণ্ডগোলকে যে কোথায় নিয়ে যাবে একদিন।

 লেখক: ব্লগার ও সাংবাদিক

 

০ Likes ২ Comments ০ Share ৬৭৩ Views