Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

বিসর্জন


চারুর সাথে আজ তার প্রথম দেখা হবে। সম্পর্কের ছয় মাস হয়ে গেলো কেউ কাউকে দেখেনি। এবার প্রবাল সময় পেল চারুর সাথে দেখা করার। আর চারুতো তাই খুশীতে আত্মহারা। যার সাথে ফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা হতো, তার সাথে আজ সাক্ষাৎ হবে। আর প্রবালও বাসে উঠার পর থেকে কখন চারুকে দেখতে পাবে তার জন্য উতলা হয়ে যাচ্ছে।

-হ্যালো -আর কতক্ষণ লাগবে তোমার? -জানিনা, হয়তো দুই/দেড় ঘন্টা লাগতে পারে। -আচ্ছা আসো -হুমম

ঠিক দুপুর সাড়ে এগারোটায় প্রবাল স্টেশনে নামলো। এরপর দাড়িয়ে থাকা রাস্তার অপর পাশে চারুকে দেখেই চিনতে পারলো। চারুও কোন এক কারণে প্রবালকেও দেখতে পেল শত মানুষের ভীড়ে। যেহেতু দুইজন দুইজনকে দেখেই চিনতে পারলো তাই আর সময় নষ্ট হলোনা খোঁজাখুঁজি করে। এরপর একসঙ্গে তারা একটা রেস্টুরেন্টে বসলো। সামনাসামনি বসে আছে তারা আর একে অপরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হয়তো কথা হচ্ছেনা মুখে মুখে কিন্তু কথা হচ্ছে তবুও মনে মনে।

-এই কথা বলবেনা তুমি ? এমন তাকিয়ে কি দেখছো ?

-তোমাকে দেখছি ।

-এতো দূর থেকে কি শুধু দেখতেই আসছো ? কথা বলবেনা ?

-না, শুধু দেখবো । আমার দিকে তাকিয়ে থাকো তুমি শুধু ।

-হুম

-চলো কিছু খাই, খুব ক্ষুধা লাগছে ।

-তুমি খাও । আমার ক্ষুধা নেই ।

-তুমি না খেলে যে আমি খাবোনা ।

-আচ্ছা খাবো ।

-কি খাবে ?

-তোমার যা খুশি খাও ।

-হুমম, গরু দিয়ে ভাত খাই চলো ।

-খাও, এটাই ভালো হবে তোমার জন্য ।

-আচ্ছা ঠিক আছে ।

 

আজই দেখা হলো প্রথম । কিন্তু তাদের দেখে কেউ ভাবতে পারবেনা যে তারা আজই প্রথম একে অপরের সামনাসামনি আসছে । তাদের মাঝে এতো মিল আর এতো মানিয়ে চলা সত্যিই যে কাউকে মুগ্ধ করবে । চারুর একটা ভয় ছিলো, যদি প্লাবন তাকে দেখে পছন্দ না করে কিন্তু প্লাবন যে মোটেই এমন ছেলে নয় । সে যাকে পছন্দ করে ফেলে সে যদি দেখার অযোগ্যও হয়, তবুও সে তাকে ভালোবাসবে । আসলে প্লাবনের ভালোবাসাটা আসে ঠিক মনের মধ্য থেকে । সেখানে সৌন্দর্যের কোন স্থান নেই, সেখানে শুধু ভালোবাসা আর ভালোবাসা । আর কিছুই সেখানে বাঁধা দিতে পারেনা ।

 

খাওয়া-দাওয়া শেষ করেই প্লাবন মোবাইলে সময় চেয়ে বললো তার হাতে সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে । বন্ধুদের সাথে পিকনিকে যাচ্ছে বলে বের হয়েছিলো বাসা থেকে । যদি কোনভাবে কেউ বলে দেয় , কোন পিকনিক-টিকনিক ছিলোনা তাহলে তো হলোই । এই প্রথম এতো দূর পথ সে পাড়ি দিলো একাই কেবল চারুর সাথে দেখা করার জন্য । একটু দেখাই যে তার মনে কতোটা প্রশান্তির ঢেউ তুলে দিয়েছে তা হয়তো বিধাতা খুব ভালো করেই জানেন । চারু যে আকাশের চাঁদ হাতে পেলো । চারুর বরাবরের মতো একটা লোভ ছিলো, সেটা অর্থকড়ি বা সম্পদের নয়, প্লাবনের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আর তা খুব কাছ থেকে অনুধাবন করার জন্য । প্লাবনের ভালোবাসার মাত্রা হয়তো সবকিছুকে ছাপিয়ে যাচ্ছে যার ফলে ভালোবাসাকে অনুভব করার লোভও কারো কারো হয় চারুর মতো ।

 

চারু খুব মন খারাপ করে প্লাবনের দিকে তাকিয়ে আছে । সে যেন চাইছেনা প্লাবনকে হাতছাড়া করতে । যদি প্লাবন হারিয়ে যায়, এই ভয়ে ।

 

-প্লিজ যেওনা ।

-তা কি হয়রে পাগলী ।

-আমি কিছু জানিনা , তুমি যাবেনা যাবেনা যাবেনা ।

-কোথায় থাকবো ? কি খাবো ? কই ঘুমাবো ?

-আমি আছিনা , আমি যা খাই তুমি তাই খাবে ।

-হুমম, দেখিতো ।

-কি ?

-আই লাভ ইউ

-হুম

-বলবেনা

-হুম, আমি তো তোমাকে আগেই লাভ ইউ বলছি ।

-কখন ?

-আরে আগে

-সে তো অন্য কথা, সরাসরি তো বলোনি ।

-আই লাভ ইউ সো মাচ

-নেও ।

-কি আছে এতে ?

-তোমার পছন্দের জিনিস ।

-তাই ?

-হুম

 

এরপর কিছু সময় কেটে গেলো তাদের । বিভিন্ন বিষয় নিয়েই কথা হচ্ছে তাদের । তবে কথা হলেও একজন আরেকজনকে বেশিরভাগ সময়েই চোখের পাতায় মুখস্ত করছিলো, যেন আর তাদের দেখা হবেনা । নিয়তির সত্য যে কখন কোথায় চলে যায় তাও তো বলা মুশকিল । হতেও পারে এই তাদের প্রথম আর শেষ দেখা ।

 

প্লাবন হঠাৎ বললো, এবার আমি যাই । উঠে দাঁড়ালো চেয়ার থেকে । চারুও দাঁড়ালো । এবার আর চারু ছেলেমানুষী করলোনা । সুন্দর করে উঠে স্টেশনে যেয়ে বাসে উঠিয়ে দিলো । চারুর চোখ বেয়ে বারিধারা বেয়ে পড়ছিলো অঝরে । প্লাবন খুব মন খারাপ করে চারুকে হাতে ইশারা দিলো । ইশারা যা বুঝালো তা হলো সে আবার আসছে তার সাথে দেখা করতে কয়দিনের মধ্যেই । আর তখনই বাস ছেড়ে দিলো ।

 

আধ ঘন্টা পর চারু ফোন করলো ।

 

-কোথায় আছ এখন ?

-কি জানি ? আমিতো কোথাও জায়গার নাম খুঁজে পাচ্ছিনা ।

-হইছে, বলতে হবেনা ।

-কেমন লাগলো আজ ?

-খুব ভালো ।

-জানো স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ঐ লোকটা আমাকে কি বলছে ।

-কি ?

-বলছে, আপার হাজবেন্ড নাকি উনি ।

-হুম, তোমার ভাব দেখে তো আমিও তাই ভাবছিলাম ।

-হুম, হইছে । ভালো মতো যাও তাহলে ।

 

এভাবেই তাদের সম্পর্ক আরও গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছিলো দিনকে দিন । তবে মাঝেমধ্যে চারু খুব কান্না করতো । সে খুব ভয় পেত প্লাবনকে হারানোর । প্রায়ই প্লাবনকে বলতো বিয়ের কথা । চারুর মা-বাবা তার বিয়ের জন্য নাকি উঠে-পড়ে লেগেছে । কিন্তু প্লাবন কিছু বরতে পারছেনা । না পারছে নিজের পরিবারকে বলতে, না পারছে চারুকে নিয়ে আসতে । এর মাঝে কয়েকটা বিয়ে আসছেও । কিন্তু কয়টা বিয়ে সে ঠেকাবে ।

 

কিছুদিন বেশ ভালোই কেটে যাচ্ছিলো তাদের । মান-অভিমান-ভালোবাসা সবই চলছে । হঠাৎই একদিন বিকেলে চারুর ফোন । তাকে নাকি জোর করে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে একজন কালো, খাটো, কুৎসিৎ ছেলের সাথে। খুব কান্না করছে সে । কিছু বলতে পারছেনা কান্নার জন্য । শুধু কাঁদছে সে।

 

-তুমি কি বলছো এসব ?

-তুমি এখনই মেসে চলে যাও প্লিজ ।

-আমি তোমাকে যেকোন মূল্যেই হোক চাই ।

-পারবোনা, সবাই আমার চারপাশে । মা-বাবা আমার পা ধরে বসে আছে ।

-আমি কি করবো ? আমার কথা কি একটুও ভাববেনা ?

-সবাই আমাকে বুঝাচ্ছে ।

-আমাকে সাজাচ্ছে ওরা ।

-আমি যে পারছিনা কিছু করতে । আমি জানিনা এসব কিছু হবে আজ ।

-আমি কি করবো এখন । আমাদের ভালোবাসা কি এভাবেই শেষ হয়ে যাবে ?

 

চারু শুধু কান্না করছে । কিছু বলতে পারছেনা ।

 

প্লাবন তখন তাদের গ্রামের বাড়িতে ছিলো । কাউকে কিছু বলতেও পারছেনা । কারণ তখন প্লাবনের বড় ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে মেহমান ছিলো অনেক । সে কিছুই বুঝতে পারছেনা । তার হাত-পায়ে বল কমে যাচ্ছে । যা সে কোনদিন ভাবেনি তাই হতে চলছে তার সাথে । জীবনে এই একটা মেয়েকেই সে ভালোবাসলো আর সেই আজ তার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে । খুব দুর্বল হয়ে গেল সে । সন্ধ্যায় চারু বলছিলো তার বিয়ে হয়ে গেছে । তার স্মামী থাকবে আজ । আজই সব শেষ হয়ে যাবে চারুর । প্লাবনের তো আর সহ্য হচ্ছেনা । সে দুঃখে একদম মিইয়ে গেল । চুপচাপ শুয়ে পড়লো । এতো মেহমানের ভীড়ে কেউ বুঝলোনা তার যে হঠাৎ এই অকস্মাৎ পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে । রাত পার হয়ে সকাল হলো । প্লাবন চারুর জন্য হন্যে হয়ে ছুটছে এদিক-সেদিক । চারুর সাথে কথা হলো তখনই । চারু প্লাবনকে যা শুনালো তাতে সে নিজেকে যেন আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলোনা । সারা রাত খুব কষ্ট হয়েছে চারুর । যে অমানুষটার সাথে চারুর বিয়ে হয়েছে সে যেন বিয়ে করেছে তার সতীত্বকে কেড়ে নিতেই । তাইতো হঠাৎ বিয়ে করেই সব শেষ করে দিলো সে । এছাড়াও আর যা শুনলো তা হলো, বিয়ের আগে যা করছে তো করছেই এখন যেন এসব আর না করে সে মর্মার্থে কোরআন ছুঁয়ে শপথ ।

 

চারু খুব অসুস্থ হয়ে পড়লো । প্রচন্দ জ্বর তার । প্লাবন যতটানা কষ্ট পাচ্ছে তার চেয়ে বেশি যন্ত্রণা পাচ্ছে চারুর অশান্তিময় জীবনের কথা শুনে ।

 

তবে প্লাবন এখনো নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছেনা যে চারু তার নেই আর । সে চারুকে শূধু অনুরোধ করছে একবারের জন্য বলতে যে সে শুধু তার সে অন্য কারো হতেই পারেনা ।

 

প্লাবন আর গ্রামে থাকবেনা । একাই রওনা দিলো বাড়ির উদ্দেশ্যে । তখন তার মন একটু শান্ত ছিলো । তাই ঠান্ডা মাথায় কষ্টটাকে চাপা দিয়ে চারুকে বলছিলো- তুমি তোমার স্মামী-সংসার নিয়ে ভালো থেকো । আমার কথা মোটেই ভাববেনা । আমি কেমন আছি? কি করছি না করছি এসব নিয়ে একটুও দুশ্চিন্তা করেবেনা । কোলে ছেলে-মেয়ে আসলে আমাকে ভুলে যাবে তুমি একদম, দ্যাখো ।

কিন্তু চারু তখন শুধু কাঁদতেছিলো আর না না বলতেছিলো । সে যে করেই হোক প্লাবনের সাথে কথা বলতে চায় ।

 

প্লাবন বাসায় ফিরেই আবার যখন চারুর সব কথা মনে মনে ভাবছিলো । তখন নিজেকে আর সামলে রাখতে পারছিলোনা । বারবার ইচ্ছে করছে তার চারুর কাছে ছুটে যেতে । চারুকে ছাড়া আর কাউকে বউ ‍হিসেবে ভাবতে পারছেনা । এক পর্যায়ে সে সিদ্ধান্ত নিলো, চারুকে সে নিয়ে আসবে । এনে ডিভোর্স দিয়ে বিয়ে করবে সে । কিন্তু চারু তাতে ঠিক রাজি হচ্ছিলোনা । এক সময় বললো প্লাবনের পরিবার তাতে রাজি হবে কিনা তা।

 

প্লাবন তখন তার পরিবারকে বুঝানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো । এমন সময় তার মা-বাবা বাসায় চলে আসছে । সে তার বড় ভাবীর হাতে বিশাল একটা চিঠি ধরিয়ে দিয়ে বললো পড়িয়ে সবাইকে শুনাতে । এরপর সে চলে গেলো । এদিকে তার এই বিশাল চিঠি পড়ে তার মা খুব কান্না করতে লাগলো । সে কখনো আশা করেনি প্লাবন এমন একটা কাজ করবে । কিন্তু এর পরেই যখন সে ভাবলো ছেলেটা যখন একটা মেয়েকে মনেপ্রাণে ভালোবেসেই ফেলেছে তাতে সে আর না করবেনা । কিন্তু বাঁধ সাজলো চারুর বিয়ে ও ডিভোর্স । এমন সময় চারু বলে বসলো তার বিয়ে হয়নি । তবে সব ঠিকঠাক হয়ে আছে । সে এখনই তার বাবাকে বলে যে করেই হোক বিয়েটা বন্ধ করাবে । এর পরের দিনই খবর এলো বিয়েটা ভেঙে গেছে ছেলেটার আগে একটা বিয়ে হয়েছে গোপনে তার খালাতো বোনের সাথে তা শুনে ।

 

হয়তো চারুর এই বিষয়টি প্লাবনের কাছে অবিশ্বাস্য লাগছিলো । কিন্ত চারুর মুখের সব কথাই যে সে বিশ্বাস করে । অবশেষে প্লাবনের পরিবারের সম্মতিক্রমেই চারু আর প্লাবনের সম্পর্ক চলছে আর নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পর ঘরে তুলবে চারুকে এ কথায় সিদ্ধান্ত হয়েছে ।

 

আবার প্লাবনের মুখে হাসি, আবার চারুর মুখে হাসি । আবার সেই আগের মতো করে মান-অভিমান-ভালোবাসা চলছে । কিন্তু কেন যেন এবারের ভালোবাসাটা আর আগের মতো লাগছেনা প্লাবনের কাছে । আগে তাদের মধ্যে নিজেদের সংসার নিয়ে যেমন কথা হতো তেমন হচ্ছেনা । স্বপ্নের অনেক অনেক কথাই চারু আজ তুলছেনা । তবে একটা নতুন বিষয় চারুর মাঝে উদয় হলো আর তা হলো আগের থেকে একটু বেশী বাস্তবিক কথা বলা । আগে সে বেশি আবেগপ্রবণ থাকতো এখন সে অনেকটা বাস্তবিক হয়ে উঠছে ।

 

চারু ইদানিং প্লাবনের মায়ের সাথে কথা বলতে চাইছে খুব । একদিন খুব কান্না করছিলো প্লাবনের মায়ের সাথে কথা বলার জন্য । প্লাবনের পরিবারটাই ভালোবাসায় ঘেরা । খুব সহজেই ভালোবাসার অধিকারগুলো যে কেউ আদায় করে নিতে পারে তার পরিবারে । মনে হয়না এতোটা আবেগ আর ভালোবাসাকে প্রশ্রয় দেয় এমন কোন পরিবার আছে বাংলাদেশে ।

 

একদিন দুপুরে প্লাবন তার মাকে বললো চারু তার সাথে যে কথা বলতে চায় তার কথা । প্লাবনের মাও বললো ফোন দিতে । কথাও হলো অনেক ।চারু বারবার বিয়ে করার কথা বলছিলো । আর প্লাবনের মা বলছিলো প্লাবনের একটা চাকরী হোক একবারে উঠিয়ে আনবে । বিয়ে করে দূরে রাখতে দিবেনা সে । চারুও খুশি এ কথা শুনে ।

 

এরপর তো বেশ কাটছিলো চারু আর প্লাবনের সম্পর্ক । প্লাবনের সব কথা চারুকে বলে । প্লাবনতো চারুকে বলে তার সব কথা যেন সে মনে রাখে । সে কোন কিছু করতে পারবেনা । সে কিছু মনে রাখতে পারবেনা । চারুও তাতে সায়ও দিতো ।

 

কিছুদিন পর একটা খটকা লাগে হঠাৎ । কেউ একজন ফোন দিয়ে চারুর কথা বলছে । কিছু উল্টাপাল্টা কথা বলছে । যা শুনে প্লাবনের মাথা পুরোই গরম হয়ে গেলো । সে চারুকে ফোন দিতেই চারু তাকে বললো সে কি তাকে বিশ্বাস করে কি না ? প্লাবন বললো করে । আর এরপর প্লাবন আর খথা বাড়ালোনা । চারুর কথাই মেনে নিলো যে, কেউ একজন তাদের সম্পর্ক ভাঙতে চায় । কিন্তু এর কিছু বাদেই চারু কান্না করছে ফোন দিয়ে প্লাবনের সাথে । প্লাবন কিছু বুঝতে পারছেনা । কি হলো হঠাৎ চারুর । চারু তখন বলে বসলো সে বিবাহিত । সে এতদিন প্লাবনকে মিথ্যা বলছিলো প্লাবনের পড়াশোনা যাতে নষ্ট না হয় তার জন্য । কিন্তু এখন সে আর পারছেনা । তার স্মামীকে কেউ একজন জানিয়ে দিয়েছে এসব । এরপর থেকেই চারুর সাথে প্লাবনের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেলো । কিসের মধ্যে কি হলো কিছুই সে বুঝতে পারলোনা । এক নিমিষে কি এতোদিনের সব আশা, বিশ্বাস, তিলতিল করে গড়ে উঠা স্বপ্ন ভেঙে যাবে । প্লাবন যেন ঠিক হতভম্ব হয়ে পড়লো । অনেক প্রশ্ন তার মনে ভেসে ঊঠছে । কিন্তু এসবের উত্তর তো সে পাচ্ছেনা । সে খুব ভেঙে পড়লো । খুব একাকীত্ব অনুভব করতে লাগলো । যে মানুষটি চারুর সাথে সম্পর্ক হওয়ার পর থেকে এক মুহুর্তের জন্যও তাকে ভুলতে পারতোনা, সে কিনা আজ চারুকে ছাড়াই জীবন পাড় করবে । এ কি করে সম্ভব তার পক্ষে । প্লাবন এক ঘন্টা কথা না হলেই চারুর নাথে থাকতে পারেনা আর এখন কি করে থাকবে ? এসবের উত্তর কে দিবে ? এমনই সময় কোন এক অচেনা কন্ঠ ভেসে উঠলো তার কানে । ফোনের অপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসা কন্ঠ তাকে বলতে লাগলো একএক করে সম প্রশ্নের উত্তর । সে চারুর খুব কাছের বান্ধবী নিহা । সে বললো চারু বিয়ে করেছে যাকে তাকে আগে একটু পছন্দ করতো আর কোন কারণে হোক সে তাদের বাড়ি যেত । চারুর পরিবার ছিলো আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল একটি পরিবার । গেল গ্রীষ্মে তাদের কয়েকটা গাভী আর অনেক পরিমান শস্য নষ্ট হয়ে গেছে । চারুর বাবার পক্ষে আর একা সম্ভব হচ্ছিলোনা সংসার টেনে নেওয়া । আর চারুর পরিবার থেকে শুরু করে আত্মীয়স্বজন সবাই তাকে তখন এক প্রকার জোড় করেই বিয়েতে রাজি করিয়েছিলো । আসলে চারু তার পরিবারের জন্যই বিয়েটা করেছে । আপনাকে অনেক ভালোবসে বলেই আপনার পাগলামী সহ্য করতে না পেরে এমনটা করেছে, যদি আপনি পড়াশোনা ছেড়ে দেন তাই ।

 

প্লাবন শুধু চুপ থেকে কথাগুলো শুনে চলছিলো । কি বলবে কিছু বুঝতে পারছেনা । সে কাউকেই দোষারোপ করতে পারছেনা । শেষমেষ নিয়তিকে দোষারোপ করে হু হু করেই কেঁদে দিলো । সে আর কিছু বলতে পারছেনা । আর সে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেনা চারু যে আর তার নাই । মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়ছে সে । কোনভাবেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেনা । বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছে প্লাবন চারুকে ।

 

-আমার মনে হয়না পৃথিবীতে আপনার মতো ভালো মানুষ আর একটাও আছে । কোন মানুষ কি করে এতো ভালোবাসতে পারে । আমার বুঝে আসছেনা কিছু ।

-তাওতো ধরে রাখতে পারলাম না ।

-কি আর করবেন ? চারু পরিস্থিতির স্বীকার ।

-আর আমি কি এখন মরে যাবো তাহলে ?

-কেন মরবেন ?

-ওকে ছাড়া বেঁচে থাকাটা আমার পক্ষে সম্ভব না ।

-তবুও বাঁচতে হবে আপনাকে চারু যে খুব কষ্ট পাবে না হলে ।

-ও তো আর আমার কোন খবরই জানবেনা । কষ্ট পাবে কেন?

-পেতেও তো পারে কোনভাবেই হোকনা কেন ।

-পাবেনা কোনদিন আমার খবর ।

-পেলেও তখন তেমন কষ্ট পাবেনা কারণ ততদিনে চারু তার সংসার, স্মামী-সন্তান নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়বে ।

 

হয়তো ভালোবেসে প্লাবন শুধু কষ্টই পেল । কিন্তু সে যে চারুর জন্য একটা ইতিহাস গড়ে তুলেছে, তা কেউ হয়তো জানেও না । চারুর হৃদয়ে সে যে ভালোবাসার সত্তাকে ঢুকিয়ে দিয়েছে তা চারুকে আজীবন ভাবতে শিখাবে ভালোবাসতে হয় কি করে, কি করে নিজের ভালোবাসাকে বিসর্জন দিয়ে অপরকে সুখী করা যায় আর কি করে নিজে বড্ড দুঃখে থাকার পরও অন্যের সুখের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিতে হয় । এই ভালোবাসকে চারু আজীবন শ্রদ্ধা করবে । প্লাবনের নাম হয়তো ভুলে যাবে , কিন্তু ভালোবাসার এই দৃষ্টান্ত হয়তো সে কোনদিন ভুলতে পারবেনা ।

 

২৩/৬/২০১৬

০ Likes ১ Comments ০ Share ৩৮৪ Views