Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

বিশ্বের ইতিহাসে ৩য় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা সাভারের রানা প্লাজা ভবন ধসের বর্ষপূর্তিতে নিহতদের স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি


২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল ৮:৪৫ এ সাভারে একটি বহুতল ভবন ধসে পড়ে। ভবনটিতে পোশাক কারখানা, একটি ব্যাংক এবং একাধিক অন্যান্য দোকান ছিল, সকালে ব্যস্ত সময়ে এই ধসের ঘটনাটি ঘটে। ভবনটিতে ফাটল থাকার কারণে ভবন না ব্যবহারের সতর্কবার্তা থাকলেও তা উপেক্ষা করা হয়েছিল। সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশেই নয়তলা এই ভবনটি রানা প্লাজা হিসেবে পরিচিত এবং এর মালিক সোহেল রানা সাভার পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। ২০০৭ সালে রানা প্লাজা নির্মাণ করার আগে জায়গাটি ছিল পরিত্যক্ত ডোবা। ভবন নির্মাণ করার আগে বালু ফেলে এটি ভরাট করা হয়। বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর তথ্যমতে ভবনের উপরের চার তলা অনুমতি ছাড়াই নির্মাণ করা হয়েছিল। এতে ভূগর্ভস্থ তলায় গাড়ি রাখার জায়গা এবং দ্বিতীয় তলার বিপণিকেন্দ্রে বহু দোকান ছিল। তৃতীয় থেকে সপ্তম তলা পর্যন্ত পোশাক কারখানা ছাড়াও এর ওপরের দুটি তলা খালি ছিল। ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় ছিল প্রথম তলায়। গার্মেন্টস কারখানায় প্রায় ৫০০০ এর মত কর্মী কাজ করত। নয়তলা রানা প্লাজা ধসে মারা যান ভবনটিতে অবস্থিত পাঁচ পোশাক কারখানার এক হাজার ১৩৫ জন শ্রমিক। আহত হন এক হাজার ১৬৭ জন শ্রমিক, যাদের মধ্যে গুরুতর আহত ছিলেন ৮১ জন। এখনো ৭৪টি লাশের পরিচয় জানা যায়নি। বিশ্বের ইতিহাসে রানা প্লাজা ধস ৩য় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। সাভারের রানা প্লাজা ট্রাজেডির বর্ষপূতি আজ। মর্মান্তিক রানা প্লাজা দূর্ঘটনায় নিহত সকলের আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং আহতদের এবং তাদের পরিবারের সকলের প্রতি সমবেদনা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করছি।

গতবছর ২৩ এপ্রিল ভবনটির ফাটল নিশ্চিত হওয়ার পর ভবন ছেড়ে চলে যেতে বলা সত্ত্বেও, অনেক গার্মেন্টস সুপারভাইজাররা ভবনটিকে নিরাপদ ঘোষণা করে শ্রমিকদের পরের দিন কাজে ফিরতে বলা হয়। নির্দেশ মত শ্রমিকরা যথা সময়ে কাজে যোগ দিলে সকাল ৯:০০ টার দিকে ৯তলা ভবনটির প্রথম তলা বাদে বাকি সবগুলি তলা ধসে পড়ে। কিছু অংশ পাশের একটি ভবনের ওপর পড়ে। ধসে পড়ার সময় ভবনটিকে প্রায় ৩০০০ কর্মী ছিল। কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে বেশিরভাগ ছিল নারী যাদের সাথে তাদের শিশু সন্তানও সেখানে নার্সারী সুবিধায় ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা মতে সকাল নয়টার দিকে হঠাৎ করে বিকট শব্দ এবং কাঁপনে তারা ভূমিকম্পের আশঙ্কা করেন। পরে বেরিয়ে দেখেন বিরাট এলাকা ধুলা বলিতে ধোঁয়াটে হয়ে পড়েছে।" দূর্ঘটনার পর সাধারণ জনগণ, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধারকাজ চালায়। এই ঘটনার ১৭ দিন পর ১০ মে ধ্বংসস্তূপ থেকে রেশমা নামের এক মেয়েকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। হতাহতদের পরিবারের আর্তনাদ আর আহাজারিতে আজও আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে ওঠে।

(উদ্ধারকৃত পোশাক শ্রমিক রেশামা)
ঘটনার পরদিন অর্থাৎ ২৫ এপ্রিল একদিনের জাতীয় শোক পালন করা হয়। এঘটনার পর উত্তেজিত পোশাক শ্রমিকরা দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবীতে ঢাকা, গাজীপুর ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যপক আন্দোলন গাড়ি ও বিভিন্ন ভবনে ভাংচুর চালায়। ২৫ শে এপ্রিল ঢাকা উন্নয়ন কতৃপক্ষ ভবন ও ঐ ভবনের গার্মেন্টস মালিকদেরকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করেন। এই দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করতে সরকারীভাবে আলাদা কয়েকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এদের সাত দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবার আহ্বান করা হয়। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী এই ঘটনায় দায়ীদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। ২৭শে এপ্রিল এই ভবনের দুটি গার্মেন্টসের মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া সাভার পৌরসভার দুজন প্রকৌশলীকেও গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেয়া হয়। ২৮শে এপ্রিল এই ঘটনায় দায়ী ভবন মালিক সোহেল রানাকে বেনাপোল সীমান্ত থেকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় র‌্যাব গ্রেপ্তার করে।

(পোশাক শ্রমিকদের রক্তে গড়া দৃষ্টিনন্দন বিজিএমই এ ভবন)
রানা প্লাজা ধসের পর একটি সহায়তা তহবিল গঠন করে বিজিএমইএ। প্রতিটি সদস্যকে ন্যূনতম ২৫ হাজার টাকা করে তহবিলে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। পাঁচ হাজার ৪০০ সদস্যের মধ্যে বিজিএমইএর তহবিলে মাত্র এক হাজার ৮৪২ সদস্য সাড়ে ১৪ কোটি টাকা টাকা জমা দেয়। এর মধ্যে বিকেএমইএ দেয় এক কোটি টাকা। বিজিএমইএর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই তহবিল থেকে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় তিন কোটি ৯০ লাখ, বেতন-ভাতা সাত কোটি ৬০ লাখ, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা দুই কোটি, প্রসূতি শ্রমিকদের সহায়তায় চার লাখ ২০ হাজার এবং উদ্ধার ও পুনর্বাসনকাজে ৯৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়। এছাড়াও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গঠিত রানা প্লাজা অ্যারেঞ্জমেন্ট কো-অর্ডিনেশন কমিটির তথ্য অনুযায়ী, রানা প্লাজার পাঁচ কারখানায় ২৯ পোশাক তৈরী করানো ২৯ ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে ক্ষতিপূরণের জন্য গঠিত চার কোটি ডলারের ‘রানা প্লাজা ডোনারস ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠন করা হলেও এর মধ্যে ১৬ প্রতিষ্ঠান তহবিলে অর্থও দেয়নি, কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি। ২৮ জানুয়ারি এই তহবিল গঠিত হলেও আজ পর্যন্ত এই ফান্ডে জমা পড়েছে মাত্র এক কোটি ৫০ লাখ ডলার যা প্রতিশ্রুত অর্থের এক-তৃতীয়াংশ। সাভারের রানা প্লাজা ধসের এক বছর হলে গেলেও এখনো এ ঘটনায় হতাহত শ্রমিকদের পরিবার ন্যায্য ক্ষতিপূরণ বুঝে পায়নি। এমনকি কে কত ক্ষতিপূরণ পাবেন, তা-ও চূড়ান্ত হয়নি। এরই মধ্যে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে পিছটান দিয়েছে।

রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার সম্পত্তি বাজেয়াপ্তর বিষয়ে গত বছর ৩০ এপ্রিল হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সোহেল রানার ব্যক্তিগত সব সম্পদসহ ধসে পড়া রানা প্লাজার চার পোশাক কারখানার মালামাল জব্দের বিষয়ে একটি রিট করেছিলো। এ রিটের আদেশে বলা হয়েছে রানা প্লাজার সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হোক। হাইকোর্টের ওই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩ মার্চ ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি বিবিধ মামলা করা হয়। ওই মামলার আলোকেই সোহেল রানার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। বাজেয়াপ্ত করা সোহেল রানার ব্যক্তিগত সকল সম্পত্তি যথা সাভার বাসস্ট্যান্ডের রানা প্লাজার ১৮ শতক, বাজার রোডের বহুতল ভবন রানা টাওয়ারের ১০ শতক এবং ধামরাইয়ে সোহেল রানার মালিকানাধীন ১ একর ৪৬ শতাংশের ওপর নির্মাণ করা রানা ব্রিকসসহ যে স্থাবর সম্পদের খোঁজ পেয়েছে তা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এর পর যদি আরও কোনো সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া যায়, সেগুলোও বাজেয়াপ্ত করবে সরকার। দু'একদিনের মধ্যে জনগণকে জানাতে পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। আর পোশাকশিল্পের মালপত্র টেন্ডার দিয়ে বিক্রি করা হবে।

রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের অবিলম্বে ক্ষতিপূরণ প্রদান, খুনিদের বিচার, আহতদের পুনর্বাসন ও গার্মেন্টস শিল্পে ২৪ এপ্রিল শোক দিবস পালনের দাবি জানিয়েছে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন। আজ রানা প্লাজায় নিহতদের স্মরণে শোক দিবস পালন করবে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং বিটিএমএর সদস্যভুক্ত সব কারখানা। মর্মান্তিক রানা প্লাজা দূর্ঘটনার বর্ষপূর্তিতে নিহত সকলের আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং আহতদের এবং তাদের পরিবারের সকলের প্রতি সমবেদনা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করছি।

০ Likes ০ Comments ০ Share ৪৬৭ Views

Comments (0)

  • - md abdulla al manun

    himu bi apne amon golpo lakhen ja onek abeg ar u