Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

Azimul Haque

৯ বছর আগে

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির হালচাল

নীলা এবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বাবিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে। ভর্তি-কাযর্ক্রম শুরু হলেই ও ভর্তি হয়ে যাবে ওখানে। গত বছর (২০১৩ সাল) ইন্টারমিডিয়েটে জিপিএ-৪.৬০ নিয়ে পাশ করা নীলা ঐবছর কোথাও চান্স পায়নি। একবছর ভালমত কোচিং করে এবছর ও চিটাগাং, বরিশাল, সিলেট, রাজশাহীসহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য দরখাস্ত করেছিল। অস্বচ্ছল অভিভাবকের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছিল এত জায়গায় কেমন করে তারা যাবেন মেয়েকে নিয়ে। চিটাগাং, বরিশাল, সিলেটে তাঁদের কোন আত্মীয়-স্বজন নাই, কোথায় থাকবেন, কী করবেন, এই নিয়ে যখনতারানিদারূণ দুশ্চিন্তায়, তখনই চৈত্রের দাবদাহের পর একপশলা বৃষ্টির মত তাদের নিকট এল জীবনের সবচেয়ে খুশির খরবটা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে নীলা।

নীলার তো হোল, কিন্তু এদেশে চরম দুশ্চিন্তা নিয়ে অপেক্ষমান লাখ লাখ ছাত্র-ছাত্রীর কী হবে! ভর্তি-পরীক্ষায় অংশ নিতে অভিভাবকসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত ওদের শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। এ যে কী নিদারুণ যাতনা, তা ভূক্তভুগী ছাড়া আর কারো পক্ষে অনূধাবন করা সম্ভব হবেনা। অথচ মেডিক্যালের মত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি-পরীক্ষা নেয়া যায় বলে প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ড. জাফর ইকবাল সহ অন্যান্য শিক্ষা ও প্রযুক্তিবিদগন গণমাধ্যমে মতামত প্রকাশ করে আসছেন দীঘর্দিন ধরে। তাতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের পছন্দমতো বিশ্ববিদ্যালয় হতেই পরীক্ষা দিতে পারবে। কিন্তু ভিসি এবং শিক্ষক মহোদয়বৃন্দের রহস্যময় আপত্তির কারনে এই সমন্বিত পদ্ধতির ভর্তি-পরীক্ষার সুফল থেকে এদেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থী বঞ্চিত হচ্ছে এবং তাদের অভিভাবকগন নিদারুণ কষ্ট ও যাতনা ভোগ করে যাচ্ছেন। শীঘ্র দেশের সবোর্চ্চ পর্যায় হতে এর সমাধান হওয়া উচিৎ।

এবছর ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমেই ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এবার ভর্তি-পরীক্ষায় ৫০%-এরও কম শিক্ষার্থী উত্তীর্ন হয়েছে। এরও আগে শোনা গিয়েছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার ইংরেজি বিভাগের ভর্তি-পরীক্ষায় মাত্র দু’জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ন হয়েছে। ফলে গুঞ্জন উঠেছে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষামান কমে যাওয়ার। এপ্রসঙ্গে টিভির এক টকশোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি জনাব আ আ ম স আরেফিন বলেন “শিক্ষার্থীরা এইচএসসি-তে একধরনের কারিকুলাম অনুসরন করে পাশ করে আর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি-পরীক্ষা নেয় তাদের মতো করে প্রশ্নপত্র তৈরী করে। দু’টো দু’ধরনের বিষয়। কাজেই জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মান কমে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি-পরীক্ষায় উত্তীর্ন না হওয়ার কারনে, এটা বলা যাবেনা।” আসলে এটাই সঠিক। আর ইংরেজি বিষয়ের ভর্তি-পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্বাবদ্যালয়ে মাত্র দু’জন শিক্ষার্থীর উত্তীর্ন হওয়ার বিষয়ে যেটা হয়েছে তা হলো যে, এবছর সম্পূর্ন নুতনভাবে শিক্ষার্থীদেরকে নৈর্ব্যক্তিক ইংরেজি বিষয়েরও পরীক্ষা দিতে হয়েছে এবং শোনা যায়, এতে ভাল ইংরেজি-জানা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকও উত্তীর্ন হতে পারতেননা। শিক্ষাসচিবের একটি উক্তি জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষামান কমে যাওয়া-না-যাওয়া প্রসঙ্গে এখানে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, মান কমে যাওয়া-না-যাওয়া সম্পর্কে কি কোন মানদন্ড আছে না-কি যে ঢালাওভাবে বলা হচ্ছে এসব? এতে শিক্ষার্থীদেরকে ছোট করা হচ্ছে এবং তাদের মধ্যে হতাশাও তৈরী করা হচ্ছে।

অন্যান্য বছরগুলোতে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের শিক্ষামান কমে-যাওয়া সম্পর্কিত কোন কথা ওঠেনি, এবার এতো প্রকটভাবে উঠছে কেন, তা যদি আমরা ভাবি তবে দেখব, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এবার ভর্তি-পরীক্ষার প্রশ্নপত্রগুলি অত্যন্ত কঠিনভাবে প্রণয়ন করা হচ্ছে ভাল শিক্ষার্থী ছেঁকে তোলার জন্য। প্রশ্নগুলি এমসিকিউ ধরনের। অবশ্য আগেও এরকমই প্রশ্ন হোত্ তবে এবারের সাথে পাথর্ক্য হচ্ছে, এবার প্রশ্নগুলির যে ৪টি করে উত্তর থাকে, সেগুলি প্রায় একই মনে হয় অর্থাৎ ৪টি উত্তরের মধ্যে কোনটি সবোর্তভাবে সঠিক, তা শিক্ষার্থীদের পক্ষে এতো স্বল্পসময়ের মধ্যে খুঁজে বের করা আসলেই কঠিন। আবার নেগেটিভ মার্কের ভয় আর সীটের অপ্রতুলতার টেনশন। শিক্ষার্থীরা যাবে কোথায়! আর তাই বলা যায়, দেশের শিক্ষামান কমে যাচ্ছে, এটা ঠিক নয়।

সম্প্রতি ঢাকা এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার কোন শিক্ষার্থীকে ভর্তি-পরীক্ষায় সুযোগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে। কারন হিসেবে তারা বলছেন, অনেকে দ্বিতীয়বার ভর্তি-পরীক্ষা দিয়ে উর্ত্তীর্ন হয়ে অন্য বিভাগে চলে যায়। ফলে প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া তার ঐ সীটটা খালি হয়ে যায় এবং অনার্স পযর্ন্ত বাকী তিন বছর সীটটা খালি হয়ে পড়ে থাকে। এটা অপচয় এবং এই অপচয় রোধকল্পে তারা কোন শিক্ষার্থীকে দ্বিতীয়বার ভর্তি-পরীক্ষার সুযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা রহিত করলেন। এটাতে এবছর (২০১৪) যারা এইচএসসি পাশ করলো, তারা মনে করেছিল, এবছর না হলে আগামী বছর তারা চেষ্টা করে কোথাও ভর্তি হবে। দ্বিতীয়বার ভর্তি-পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ ছিল বলেই তারা এরকম চিন্তা করেছিল। আগেই যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এরকম সিদ্ধান্ত নিত, তবে তারাও সেভাবে প্রস্তুত হতো। অতএব তাদের এবিষয়ক আন্দোলন অবশ্যই বিবেচনার দাবী কিন্তু রাখে। সীটের মন্দার এই যুগে কোন সীট খালি না রাখার এই সিদ্ধান্ত অবশ্যই সমথর্নযোগ্য, তবে এবছর থেকে তা করলে এবছর যারা পাশ করল, তাদের উপর অবিচার করা হবে। কারন আগে থেকে তাদের বিষয়টা জানিয়ে দেয়া হয়নি। বিষয়টা সংশ্লিষ্ট সকলের বিবেচনার দাবী রাখে। আর কম গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে ভর্তি হয়ে একবছর পর সীট খালি করে রেখে ভাল বিষয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে যাবে কর্তৃপক্ষের নাকের ডগার উপর দিয়ে, কারো কিছু করার থাকবেনা, এটা মনে হয়না। ২০ নম্বর পর্যন্ত কেটে নেয়ার বিধান করা যায় এক্ষেত্রে (প্রথমবার কোথাও চান্স-না-পাওয়া শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে নয়), অথবা একবার ভর্তি হলে সীটটা যাতে ছেড়ে যেতে না পারে কেউ, সেব্যবস্থা নেয়াটা কঠিন কিছু হতে পারেনা।

এক নিউজে দেখলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মহোদয় বলেছেন, দেশ ও জাতির স্বার্থে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং তা বদলাবেননা। এতদিনে তাঁর এই বোধটা কেন হল, তা আমাদের বোধগোম্য হলোনা। দেশ ও জাতির স্বার্থটা ভিসি মহোদয় আরো আগে কেন বুঝলেননা, বোঝা গেলনা। গত কমপক্ষে কয়েক বছর ধরে নিশ্চয় তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪শ করে সীট খালি থাকত। আগে বলেননি আর এখন ২০১৪ সালের এইচএসসি পাশকৃত শিক্ষার্থীরা কেন তাঁর এই আগে-না-বলার দায় নেবে, তা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের গার্ডিয়ান হিসেবে তাঁর কাছেই প্রশ্নটা রেখে গেলাম। এবছরের এইচএসসি পাশকৃত শিক্ষার্থী হলে তিনি কী করতেন? 

০ Likes ২ Comments ০ Share ৬৬১ Views

Comments (2)

  • - তাহমিদুর রহমান

    কেউ বিশ্বাস করবে কিনা জানিনা, আমি এখনো মিনা কার্টুন দেখি। আই লাভ মিনা কার্টুন।