Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

সালাহ্‌ আদ-দীন

১০ বছর আগে

বিলেতের পথে পথেঃ বিলেতের বিস্ময় পাথরের সৌধ বা Stonehenge


বিলেতের বিস্ময় Stonehenge

শতাব্দীর পর শতাব্দী নৃবিজ্ঞানী আর ঐতিহাসিকদের কাছে গোলক ধাঁধা হয়ে থাকা এক বিস্ময়ের নাম Stonehenge. ইংল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলের Wiltshire কাউন্টিতে অবস্তিত এই সৌধটি Salisbury থেকে প্রায় ৮ মাইল উত্তরে এবং Amesbury থেকে ৩ মাইল পশ্চিমে বিশাল খোলা জায়গার মধ্যে অবস্থিত। এটি ১৬০ টিরও বেশি পাথরের সমন্বয়ে গঠিত, যাদের একেকটির ওজন প্রায় ৪ থেকে ৪০ টনেরও বেশি। কার্বন পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন এই সৌধটি নির্মাণ করা হয়েছে আজ থেকে প্রায় চার হাজার বছর আগে। মানে যখন মিশরে পিরামিড তৈরি করা হয়েছে তখন। শুধু তাই নয় বিজ্ঞানীরা সৌধটির ইনার সার্কেলের পাথর গুলো(bluestones)’র মিনারেল স্যাম্পল পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছেন এই পাথর গুলো নিয়ে আসা হয়েছে প্রায় ১৫০ মাইল দূরে পার্শ্ববর্তী দেশ ওয়েলসের Preseli Hills নামক জায়গা থেকে! মনে করা হয় এগুলো নিয়ে আসার জন্যে Bristol channel এবং Avon নদী ব্যাবহার করা হয়েছিল। আর আকারে বড় পাথর গুলো (sarsen stones) নিয়ে আসা হয়েছে প্রায় ১৯ মাইল উত্তরের Wiltshire এর Marlbrough Downs নামক জায়গা থেকে। এটি নির্মাণ করতে অংশ নিয়েছিল হাজার হাজার শ্রমিক আর লেগেছিল অনুমানিক ছয়শত বছরেরও বেশি সময়! এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন নির্মাণ করা হয়েছিল এই সৌধ? ইতিহাস বলছে তখনও আবিষ্কার হয়নি চাকা! তাহলে কিভাবে পরিবহন করা হয়েছিল এই পাথর গুলো? আর কেনই বা লোকালয়ের বাহিরে এই বিশাল চরন ভূমিতে নির্মাণ করা হয়েছিল এই সৌধ। আজও এমন অনেক না জানা প্রশ্নের উত্তরের পেছনে ছুটছেন বিজ্ঞানীরা। তবে আমি গবেষণা নয় শুধু ইতিহাসের এই বিস্ময় দেখার জন্যেই গিয়েছিলাম সেখানে। অল্পতে অবাক হওয়ার অভ্যাস আছে আমার। তবে সেদিন আমি আসলেই প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশিই অবাক হয়েছিলাম। অবাক আর বিস্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে ছিলাম অসাধারণ এই মানব কীর্তির দিকে।


আবাক হয়ে তাকিয়ে থাকা

পৃথিবীর যে কয়েকটি স্থাপনা আমাকে খুব বেশি ভাবায় তার মধ্যে নর্থ আমেরিকার পিরামিড, মিসরের পিরামিড আর এই Stonehenge অন্যতম। আমি ভেবে পাই না আজ থেকে হাজার জাহার বছর আগে যখন মানুষ চাকাও তৈরি করেনি! ঠিক সেই সময় কোন প্রকার আধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়া একেকটা সভ্যতা কিভাবে অমন বিশাল আর ধাঁধায় ভরা স্থাপনা নির্মাণ করেছিল! বিশেষ করে Stonehenge এর নির্মাণ কালীন সময়ের গাণিতিক হিসাব নিকাস আমাকে অবাক করেছে সবচেয়ে বেশি! বিশেষ করে সৌধটি এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যে এখানকার সবচেয়ে বড় দিনে যখন সূর্য উদয় হয় তখন একটা বিশেষ পাথরের ঠিক উপরের দিকে সূর্য উদয় হয়। আবার সবচেয়ে ছোট দিনে যখন সূর্য অস্ত যায় তখনও একটি বিশেষ পাথরের উপর দিয়ে যায়। শুধু তাই নয়, ঐ বিশেষ পাথরটির ছায়া গিয়ে পড়ে আরেক পাশের বিশেষ আরেকটি পাথরের উপর। হিসাবটা একেবারেই নিখুঁত!! আমি চিন্তা করে পাইনা তখনকার মানুষ এত সুক্ষ হিসাব করেছিল কিভাবে! এই বিশেষ কারনেই অনেক নৃবিজ্ঞানী মনে করেন সৌধটি যারা তৈরি করেছিল তারা হয়ত সূর্য পূজারী ছিল এবং সূর্যের পুজার নিমিক্তেই তৈরি করা হয়েছিল এই বিস্ময়কর সৌধ! আবার হয়ত সূর্যের গতিবিধির হিসাব নিকাস এবং যেহেতু তখন তাদের একমাত্র জীবিকা ছিল কৃষি কাজ তাই দিনের হিসাব নিকাসের নিমিক্তে হলেও হতে পারে।


সূর্য উদয়ের দৃশ্য


সূর্যের আলো পড়ার গাণিতিক দৃশ্য


গাণিতিক হিসাব নিকাশ

তবে ২০০৮ সালে Stonehenge Riverside Project এর আওতায় বেশ কিছু আর্কিওলজিস্ট সৌধটির কিছু অংশ খনন করে বেশ কিছু অবজেক্ট পান। তার মধ্যে ছিল প্রায় তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার খ্রিষ্ট পূর্বের মানব দেহের প্রায় ৬০টি কঙ্কাল, যাদের সকলেই যুবক ছিল। এছাড়া রেড হরিনের শিং, গৃহ পালিত পশুর চোয়াল। বিজ্ঞানীরা কার্বন পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন যে কঙ্কাল গুলো সৌধের পাথরের চেয়েও বেশি পুরানো। ফলে তারা মত প্রকাশ করেন যে, সৌধটি শুরুর দিকে হয়ত burial ground হিসাবে ব্যাবরিত হয়েছিল। Stonehenge Riverside Project এর টিম লিডার Mike Parker Pearson এ সম্পর্কে বলে ছিলেন, Stonehenge was a place of burial from its beginning to its zenith in the mid third millennium B.C. The cremation burial dating to Stonehenge's sarsen stones phase is likely just one of many from this later period of the monument's use and demonstrates that it was still very much a domain of the dead.


Stonehenge এর পাশে প্রাপ্ত মানুষের কঙ্কাল

সৌধটির পাশে খনন করে পাওয়া পিউর স্বর্ণের দুটি অবজেক্ট সহ বেশ কিছু অবজেক্ট বর্তমানে Wiltshire heritage museum এ প্রদর্শনের জন্যে রাখা হয়েছে। তবে জানা যায় ১৬২০ সালে George Villiers (First Duke of Buckingham) সৌধটির মাঝখান খনন করেছিলেন গুপ্তধনের আশায়।




Stonehenge এর সাথে আমার পরিচয় সেই ছোট বেলায়। তখন কম্পিউটারের মনিটরে দেখা ছবিটার নাম জানতাম না। তবে স্পষ্ট মনে আছে খুব অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতাম ছবিটার দিকে। আর যেদিন বাস্তবে Stonehenge এর সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেদিনও ঠিক একই ভাবে অবাক হয়ে থাকিয়ে ছিলাম।



ক্যালেন্ডারে নভেম্বর মাসের ১১ তারিখ, সোমবার। সকালে ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হয়ে গেল। আমি যখন কোথাও বেড়াতে যাই তখন সবকিছু একদম ম্যাপ করে নেই। বেশির ভাগ ভ্রমণ এমন ভাবে সাঁজাতে হয় যে আমাকে দিনের মধ্যেই ফিরে আসতে হবে। তাই আলাদা করে সময় ভাগ করে নিতে হয়। আমার বেশ কিছু কলিগ আছে যাদের আমার ভ্রমণ কাহিনী বললে চোখ কপালে তুলে তাকায়। তবে আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি ভ্রমনে সময়টাকে ব্যাবহার যতটা বুদ্ধি খাটিয়ে করা যায় ভ্রমণ তত উপভোগ্য হয়।


বৃষ্টি সামান্য টেনশনে ফেলে দিয়েছিল

জানালার পর্দা সরিয়ে দেখলাম টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছে। অবশ্য গতকালের আবহাওয়া বার্তায় এমনটাই বলে ছিল। এখানকার বৃষ্টি অবশ্য বাংলাদেশের টিপ টিপ বৃষ্টির মত না। এখানকার একেকটা বৃষ্টির ফোটা মানে বরফের টুকরা। তাড়াহুড়ো করে ফ্রেস হয়ে জামা কাপড় পরে বের হলাম। মাঝে মাঝে ক্যামেরা নিতে ভুলে যাই তাই ইদানিং আগের দিন রাতেই ব্যাগ গুছিয়ে রাখে দেই তাই কাজ বলতে জামা পরেই বের হলাম। লম্বা ট্রেন জার্নি। অনলাইনে টিকিট করা ছিল। শুধু স্টেশন থেকে টিকিট সংগ্রহ করে ট্রেনে চড়ে বসলাম। সকালের নাস্তা ট্রেনেই সারতে হল। ট্রেন থেকে এক কাপ কড়া কফি আর ব্যাগে রাখা চকলেট আর পপ কর্ণের প্যাকেট মুটামুটি উপকারে এল।



ট্রেনের জানালার পাশে বসে বৃষ্টি দেখায় অদ্ভুত রকমের একটা ভাল লাগা কাজ করে। ট্রেন কখনও ছোট ছোট গ্রামের ভিতর দিয়ে আবার কখনও শহর, কখনও মাঠ ঘাট আর নদী পেরিয়ে ছুটে চলছে গন্তব্যে। এখানে আমি সবচেয়ে বেশি যেই জিনিসটা মিস করি তা হচ্ছে নদী! আমি হাওর, খাল-বিল, নদী-দীঘির সাথে মিশেই বড় হয়েছি। তাই এখানে কালে ভাদ্রে একটি নদী দেখলে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকি। যেন কতদিনের চেনা একটি প্রিয় মুখ! সময় যাচ্ছে বৃষ্টি বাড়ছে, আর বৃষ্টি বাড়ার সাথে সাথে আমার টেনশন একটু একটু করে বাড়ছে। কারন বৃষ্টির মধ্যে হয়ত আমি ঘুরতে পারব কিন্তু ছবি তুলতে পারব না! দেখতে দেখতে একসময় ট্রেন সাউথাম্পটন চলে এলো। এখানে নেমে আমাকে Salisbury’র ট্রেনে Salisbury যেতে হবে। ট্রেনের জন্যে বেশিক্ষন অপেক্ষা করতে হয়নি। Salisbury স্টেশনে যখন পৌঁছলাম ঘড়ির কাটায় তখন বিকাল সাড়ে তিনটা বেজে গেছে। সাধারণত এখান থেকে পর্যটকদের জন্যে আলাদা বাসের ব্যাবস্থা থাকে স্টেশনের বাহিরে কোন পর্যটক বাস না দেখে অনুসন্ধান ডেস্কে খোঁজ নিয়ে জানলাম আজ আর কোন বাস নেই। অবশেষে উপায় না দেখে ট্যাক্সি ভাড়া করতে হল।


মূল গঠন কাঠামো যেরকম ছিল

আল্লাহ্‌র কাছে করা দোয়া বোধয় কবুল হয়ে গিয়েছিল। আমি যখন টিকেট কেটে Stonehenge’এ প্রবেশ করলাম তখন বৃষ্টি হচ্ছিল না। একদিকে শীত আর অন্যদিকে বৃষ্টি তাই পর্যটকের তেমন ভিড় নেই বললেই চলে। ঘুরে ঘুরে দেখলাম। মনে হল মানুষের অসাধ্য কিছু স্রষ্টা রাখেননি। বিশাল বিশাল পাথর। কিছু অংশ মাটিতে পড়ে আছে। আগে পাথর ছুঁয়ে দেখার সুযোগ থাকলেও বর্তমানে আর সেই সুযোগ নেই।


বর্তমানে যেরকম আছে

তবে সৌধে ব্যাবরিত পাথর গুলোর নির্মাণ শৈলী আমাকে খুব অবাক করেছে। ইতিহাস খুঁজলে জানা যায় যেই সময়ে এই সৌধটি নির্মাণ করা হয়েছে তখনও মানুষ মেটালিক টুল ব্যাবহার কড়া শেখেনি। সেই সাথে জায়গাটি খনন করে নৃ বিজ্ঞানীরা যে সকল টুল পেয়েছেন সেগুলো পাথরের তৈরি। সেই পাথর দিয়েই সৌধের পাথর গুলোকে সুন্দর শেইপ দেয়া হয়ে ছিল। শুধু তাই নয়। বড় পাথরের উপরে পাথর গুলোকে এমন ভাবে বসানো হয়েছে যেভাবে বর্তমান সময়ে কাঠের একটা অংশের সাথে আরেকটা অংশ যোগ করা হয় ঠিক সেই ভাবে!


আমার তুলা আরও একটি ছবি

ধিরে ধিরে সন্ধ্যা নামছে। এবার আমার দ্বিতীয় গন্তব্য Salisbury cathedral. তবে আজ আর নয় কথা হবে অন্য আরেকটি পর্বে। তত দিন পর্যন্ত সাথেই থাকুন।

০ Likes ১৪ Comments ০ Share ৭০৮ Views

Comments (14)

  • - নীল সাধু

    হুম ভালোবেসে একা থাকার যন্ত্রণা আছে। আছে কষ্টের নীল স্রোতে ভেসে যাবার বিরহ। তবু ভালোবাসে মানুষ। 

    • - মোকসেদুল ইসলাম

      ধন্যবাদ নীলদা

    • Load more relies...
    - লুৎফুর রহমান পাশা

    এথ ক্ষেপলেন কেন? মেয়েদের আশেপাশে সারাক্ষনই কেউনা কেউ থাকে তাই তারা একা থাকার যন্ত্রনা বুঝেনা। আর যদি সত্যি সত্যি একা হয়ে যায় তারা আর পৃথিবীতে থাকেনা।

    • - মোকসেদুল ইসলাম

      পাশা ভাই কবির মতো বলতে হয় “দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি তাই যাহা অসে কই মুখে।”

      মায়েদের আশেপাশে সবাই থাকতে পারে কিন্তু সবাই তো আর প্রিয় হতে পারে না। প্রিয় মানুষ হয় একজনই।

    - লুব্ধক রয়

    সুন্দর কবিতা লিখেছেন।

    • - মোকসেদুল ইসলাম

      অশেষ ধন্যবাদ 

    Load more comments...