Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

মেঘলা মেয়ে

৯ বছর আগে

বিদ্যুতের বিকল্প হতে পারে বায়োগ্যাস

 

বৈদ্যুতিক ও জ্বালানি চাহিদার এ সংকটময় সময়ে এর বিকল্প এবং ভালোমানের ব্যবস্থার সন্ধান করতে হবে। বর্তমানে বৈদ্যুতিক ও জ্বালানি চাহিদা মেটাতে ব্যবহার করা যায় বায়োগ্যাস। এবং বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করে নিজের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে সরবরাহ করে আয় করা যায়। 

বায়োগ্যাস এক ধরনের প্রাকৃতিক গ্যাস, যা আমাদের চারপাশের আবর্জনা, বিষ্ঠা, প্রাণীর মলমূত্র, গোবর দিয়ে উৎপাদন করতে পারি। এই গ্যাস আমাদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চাহিদা মেটাবে। বাণিজ্যিকভাবে বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করে বাসাবাড়িতে সংযোগ দিয়ে প্রচুর আয় করা সম্ভব। ইট, সিমেন্ট ও বালু দিয়ে এই প্লান্ট তৈরি করা হয় এবং এর স্থায়িত্ব ৩০ বছরেরও বেশি। এই চেম্বারে গ্যাস তৈরির জন্য গোবর, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠার সঙ্গে পানি মিশিয়ে কমপক্ষে ১৫ দিন জমা করতে হয়। এই চেম্বারের সঙ্গে পাইপ যুক্ত করে তার মাথায় মিটার ও ছাঁকনি বসাতে হয়। তারপর সংযোগ দেওয়ার জন্য লাইন টেনে নিতে হয়। রান্নার কাজে এ গ্যাস ব্যবহার করতে চাইলে মিটারে গ্যাস জমা হওয়ার সিগন্যাল এলে চুলা জ্বালাতে হয়। গ্রামগঞ্জে যেখানে বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি, সেখানে বায়োগ্যাস প্লান্টের ব্যবসার অপার সম্ভাবনা রয়েছে।

যেভাবে শুরু করতে হবে

বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের জন্য নিজস্ব জমি থাকতে হবে। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের 'ফিক্সড ডোম' প্রযুক্তির সাহায্যে বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করতে পারে। এই প্লান্ট মাটির নিচে থাকে। ফলে জায়গার কোনো অপচয় হয় না। ইট-সিমেন্ট-বালুর পরিবর্তে হালকা বহনযোগ্য গ্লাস ফাইবারের স্থির ডোম মডেল উদ্ভাবন করেছেন বিসিএসআইআরের বিজ্ঞানীরা। এটি সহজে স্থাপনযোগ্য, সাশ্রয়ী, জায়গা লাগে কম। বাণিজ্যিকভাবে বায়োগ্যাস প্লান্ট চালু করতে চাইলে বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকেও কারিগরি সহায়তা নিতে পারেন। বগুড়ার মাসুদ বায়োগ্যাস কনসালট্যান্ট ফার্ম এমন একটি প্রতিষ্ঠান। বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের বিষয়ে যাবতীয় পরামর্শ ও সহায়তা দেয় প্রতিষ্ঠানটি।

গ্রাহক করবেন যাদের

জ্বালানি সংকটের কারণে মানুষ এখন বিকল্প জ্বালানি হিসেবে ব্যায়ো প্লান্ট থেকে সংযোগ নিচ্ছে। গ্রাম এলাকায় প্লান্ট বসিয়ে বাড়ি বাড়ি সংযোগ দিয়ে রোজগার করা সম্ভব।

শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ীর রাউতারা গ্রামে 'মিসেস এলিজা খান মডেল গো-খামার ও বায়োগ্যাস প্লান্ট' থেকে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে উৎপন্ন হচ্ছে বায়োগ্যাস। উৎপন্ন বায়োগ্যাস কাজে লাগিয়ে পাঁচ হাজার ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। উৎপাদিত বিদ্যুৎ বহুমুখী কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

চট্টগ্রামের পটিয়ার হাইদগাঁওয়ে দুই ভাই জসিম ও সেলিম নিজেদের পোলট্রি ফার্মের বিষ্ঠা দিয়ে বিশাল বায়োগ্যাস প্লান্ট গড়ে তুলেছেন। প্লান্টের গ্যাস ব্যবহারকারী হাসিনা আকতার জানান, প্রাকৃতিক গ্যাসের চেয়ে এই গ্যাসের চাপ একটু কম। তবু স্বাভাবিকভাবে রান্নার কাজ করা যাচ্ছে। জ্বালানি কাঠের পরিবর্তে বায়োগ্যাস ব্যবহারের ফলে অনেক টাকাও সাশ্রয় হচ্ছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন বলেন, 'জসিম ও সেলিমের বায়োগ্যাস প্লান্ট পাড়ার চেহারাই পাল্টে দিয়েছে। এখানে কোনো লোডশেডিং নেই। সারাক্ষণ বাতি জ্বলে। নির্বিঘ্নে চলে রান্নাবান্নার কাজও।'

নীলফামারীর ডিমলা এলাকায় বায়োগ্যাসকে সিএনজিতে রূপান্তরিত করেছেন স্থানীয় যুবক আবু সুফিয়ান। তিনি বলেন, 'আমার প্লান্ট থেকে স্থানীয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি চাহিদা পূরণ করার পর বায়োগ্যাসকে সিএনজিতে রূপান্তরিত করে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাড়ায় চালাচ্ছি।'

প্রাথমিক বিনিয়োগ

বাণিজ্যিকভাবে বায়োগ্যাস প্লান্ট করতে চাইলে দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। তবে বড় আকারে শুরু করতে চাইলে বিনিয়োগের পরিমাণ আরো বাড়াতে হবে। পটিয়ার জসিম ও সেলিম জানান, 'আমরা দুটি প্লান্টে ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম। তবে এর চেয়ে অনেক কম খরচেও প্লান্ট করা সম্ভব। রংপুর-দিনাজপুর রিহ্যাবিলিটেশন সার্ভিস (আরডিআরএস) নামে একটি সংস্থাও অল্প খরচে বায়োগ্যাস প্লান্টের বিষয়ে সহায়তা দেয়।'

নিতে পারেন ব্যাংক ঋণ

বায়োগ্যাস প্লান্ট পরিবেশবান্ধব। তাই সরকার এ প্রকল্পে সহায়তা করে থাকে। বিভিন্ন এনজিও ও বিদেশি সংস্থাও আর্থিকভাবে সহায়তা দিয়ে থাকে। পটিয়ার হাইদগাঁওয়ের সেলিম ও জসিম জানান, শর্ত সাপেক্ষে বিভিন্ন ব্যাংক ঋণ দিয়ে থাকে। পূবালী ব্যাংক পটিয়া শাখা থেকে ২০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে তাঁরা দুটি প্রকল্প শুরু করে।

সফল ব্যবসায়ীর পরামর্শ

ভারতের আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করার পর পরই আবু সুফিয়ান নীলফামারীতে স্থাপন করেন বায়োগ্যাস প্লান্ট। তিনি জানান, 'প্রাথমিকভাবে নিজেদের চাহিদা মেটাতে প্লান্ট স্থাপন করলেও পরে বাণিজ্যিকভাবে বায়োগ্যাস উৎপাদন শুরু করি। এটা এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলে।' তাঁর পরামর্শ, 'বাণিজ্যিকভাবে বায়োগ্যাস প্লান্ট করতে চাইলে অর্থনৈতিক সামর্থ্যের পাশাপাশি একাগ্রতা ও ধৈর্য রাখতে হবে। আর প্রথমে বড় প্রকল্পে না যাওয়াই ভালো।'

আয় কেমন

প্লান্ট সঠিকভাবে চললে ও সংযোগ দেওয়ার পর ঠিকঠাক সেবা দিতে পারলে ভালো আয় করা সম্ভব। একবার সুনাম ছড়িয়ে পড়লে গ্রাহকের অভাব হবে না। যত বেশি গ্রাহক, লাভও তত বেশি। শুরুতে এ ব্যবসা থেকে মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। ধীরে ধীরে বাড়বে লাভের পরিমাণ। সেলিম ও জসিম জানান, তাঁদের দুই প্লান্ট থেকে নিজেদের চাহিদা পূরণ করে মাসে আয় হচ্ছে ৫০ হাজার টাকা।

১ Likes ৪ Comments ০ Share ৬৫৪ Views