Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিঃ এ সমাজের জন্য শুভ না অশুভ ? [প্রবন্ধ] (পর্ব-৩, ক্যাটাগরি-৩)

জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত বিজ্ঞানের কল্যাণে যা দেখেছি তা এককথায় অবিশ্বাস্য ! প্রতিনিয়ত নতুন নতুন আবিষ্কারে বিজ্ঞান যেন চমকে দিচ্ছে সমগ্র বিশ্বকেই ! কিন্তু প্রযুক্তির এই নতুন নতুন সব আবিষ্কারই কি মানুষের জন্য কল্যাণকর ?

একটা সময় ছিল- যখন একজন মানুষ তার প্রিয় মানুষগুলোর সাথে যোগাযোগ করতে অপেক্ষা করতে হতো ১ সপ্তাহ কিংবা ১ মাস, কখনো কখনো হয়তো কয়েক মাসও ! প্রযুক্তির কল্যাণে আজ মুহূর্তেই একজন আরেকজনের কাছে যোগাযোগ করতে পারছে, কথা বলতে পারছে, একজন হাজার মাইল দূরে থেকেও অন্যজনকে দেখতে পারছে । একটা সময় হিসেব-নিকেশ রাখার জন্য কতো খাতাপত্র, রেজিস্টার রাখতে হতো । এখন এসব কাজ কম্পিউটারে করে দিচ্ছে নিমিষেই ! দেশ-বিদেশের খবরাখবর রাখার জন্য এখন আর মুদ্রিত খবরের কাগজ কিনতে হয় না, রেডিওতে কান পেতে বসে থাকতে হয় না কিংবা টিভির সামনেও গিয়ে বসতে হয় না ! বিজ্ঞানের আশীর্বাদে এগুলো তো এখন আপনার হাতের মুঠোয় !

লেখাপড়ার ক্ষেত্রেও এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ! একটা শব্দের অর্থ জানার জন্য ঘরে অভিধান না থাকলে কি ঝামেলাই না পোহাতে হতো একটা সময় ! আজ এমন কত অভিধান আপনার সাথেই থাকে সবসময় ! প্রশ্নপত্র তৈরি, পরীক্ষার খাতা দেখা, ফলাফল প্রকাশ- কিসে নেই প্রযুক্তির ব্যবহার ! তাছাড়া, পড়ালেখা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য, বিশ্লেষণ, পরামর্শ কি নেই আপনার হাতের কাছে ! সব অবদান কিন্তু সেই বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিরই !

ব্যবসায়িক বিভিন্ন কার্যক্রমের পাশাপাশি সকল প্রকার যোগাযোগ আর লেনদেনকেও সহজতর করেছে আধুনিক প্রযুক্তি ! তাছাড়া দূরে থাকা মানুষগুলোর সাথে দূরত্বটাকেও যেন নিয়ে এসেছে হাতের মুঠোয় ! বন্ধুত্বের পথকে করেছে সহজ থেকে সহজতর ।

এতক্ষণ যা বলেছি তাতে অবশ্য খুব সামান্যই বলা হলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অবদান সম্পর্কে ! সত্যি বলতে কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, লেখাপড়া, খেলাধুলাসহ দেশের এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগেনি । তবে এসবের অগ্রগতিতে সবচেয়ে অগ্রণী ভুমিকা পালন করছে কে জানেন তো ? “ইন্টারনেট” !

এই বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি কি শুধু আমাদের উপকারই করছে ! পূর্বের অংশটুকু পড়ে সেরকম মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক ! তবে বাস্তব সত্যটা হচ্ছে এর মন্দ দিকও নেহাত কম নয় !

স্বাভাবিকভাবে লক্ষ্য করলেই চোখে পড়বে আজকাল শিশুরা নিজেরা খেলার চেয়ে খেলা দেখতেই ভালবাসে ! একটু ভুল বলে ফেললাম বোধ হয় ! ওরা খেলতেও ভালবাসে ! তবে সেটা মোবাইলে ! বাইরের জগতের প্রতি কমে গেছে আকর্ষণ ! ছেলে-মেয়েরা হয়ে গেছে ঘরমুখো ! সব যে এখন ওদের হাতের কাছেই !

বাহ্যিক যোগাযোগের দূরত্ব কমেছে বৈকি তবে প্রতিনিয়ত বাড়ছে মনের সাথে মনের দূরত্ব ! মানুষের আবেগ হারিয়ে যাচ্ছে ! দিনে দিনে রোবটে পরিণত হচ্ছে মানুষ ! বাড়ছে পারিবারিক সমস্যা আর জটিলতা ! একটা সময় ছিল- ছেলেমেয়েরা গুরুজনকে দেখলে বসা থেকে উঠে যেত, সালাম দিত, কুশলাদি বিনিময় করতো ! সেই ছেলেমেয়েরা আজ বাড়িতে অতিথি গেলেও ঠিকভাবে কথা বলার সুযোগ থাকে না ! ভাবছেন নিশ্চয়- এর সাথে বিজ্ঞানের কি সম্পর্ক ? আছে, নিশ্চয় আছে ! অতিথিদের ওদের কথা বলার সুযোগ নেই কেন জানেন ? কারণ, ওদের কেউ মোবাইল বা কম্পিউটারে গেমস খেলছে, কেউ গান শুনছে, কেউ ফেসবুকে, কেউ বা সিরিয়াল দেখায় ব্যস্ত ! এগুলো ওরা করতে পারছে কি জন্য নিশ্চয় সেটা আর বলার প্রয়োজন নেই ! এতক্ষণ যা বললাম এগুলো তো তবু ভালো ! আরেকটু গভীরে যাই !

আজকাল অনেক ছেলেমেয়ে পরীক্ষার আগে সবচেয়ে বেশি সময় কাটায় কোথায় জানেন ? পড়ালেখায় ? মোটেই না ! ইন্টারনেটে ! আরেকটু নির্দিষ্ট করে বললে ফেসবুকে ! আজকাল ওখানে নাকি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও পাওয়া যায় ! প্রকৃতপক্ষে, ছেলে-মেয়েদের পোশাক-আশাকে, চলাফেরায়, ফ্যাশনে, খাওয়া-দাওয়ায় সবখানেই পড়ছে প্রযুক্তির প্রভাব !

তবে এই প্রযুক্তির সবচেয়ে খারাপ দিক মনে হয় পর্ণগ্রাফিকে যুব সমাজের কাছে সহজলভ্য করা ! একটা সময়ে দেখতাম পর্ণ মুভি দেখার জন্য মানুষকে কতো কষ্ট করতে হতো ! যার কারণে সেটার প্রতি মানুষের আকর্ষণও ছিল কম ! আর আজকের ছেলেমেয়েরা পর্ণ ভিডিও বা মুভি তো পেয়ে যাচ্ছে না চাইতেই ! তাতে করে যুব সমাজের দিনে দিনে কি পরিণতি হচ্ছে সেটা তো দেখতেই পাচ্ছেন ! আর পর্ণগ্রাফিকে যুব সমাজের কাছে আরো সহজলভ্য করেছে আধুনিক স্মার্টফোন ! বাবা-মা যত সচেতনই হোক, কেউ নিজে থেকে পর্ণগ্রাফি থেকে দূরে থাকতে না চাইলে তার জন্য পর্ণ ভিডিও বা মুভি দেখা এখন কোন ব্যাপারই না ! নিজের রুমে বসে এমনকি ক্লাসরুমে বন্ধুদের সাথে বসেও পর্ণ দেখার সুযোগ যে এখন অপরিসীম ! ফেসবুক, টুইটার, বিভিন্ন অখ্যাত অনলাইন পত্রিকা সবখানেই রয়েছে খারাপ পথে যাওয়ার লিংক ! আর অনলাইন সুবিধা থাকার কারণে বিদেশী পর্ণ টিভি প্রোগ্রামও এখন দেখা যায় অনায়াসেই ! আর এমন খারাপ পথে হাঁটায় কেউ বাঁধা না দিলে মানুষ তো সে পথে হাঁটবেই ! এটাই যে তার স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য ! এক পর্ণ নিয়ে বলতে গিয়েই অনেক লিখা হয়ে গেল ! প্রযুক্তির কল্যাণে সন্ত্রসাবাদের বিস্তার কিংবা মানুষকে ধ্বংস করার আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্রের কথা আজ আর নাই বা বললাম !

সমাজের বর্তমান যা অবস্থা তাতে যদি প্রযুক্তির বিশেষ করে ইন্টারনেটের অপব্যবহার সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করা না যায় এবং সরকারিভাবে অবাধ পর্ণগ্রাফির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয় তবে এই সোনার বাংলা যে অচিরেই তার বাঙালি ঐতিহ্য হারাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই ! চারিত্রিক অধঃপতনের শেষ সীমায় গিয়ে ঠেকবে যুব সমাজ ! পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুকরণে বাড়বে সামাজিক অপরাধ, পোশাক-আশাকে বাড়বে নগ্নতা, বাড়বে সামাজিক স্বীকৃতি বহির্ভূত সম্পর্কের মাত্রা ! নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়বে সমাজের মানুষ !

সেই দিনটাও আমাদের সমাজ দেখুক সেটা নিশ্চয় আমাদের কারোরই কাম্য নয় ! আর তাই... সমাজকে প্রযুক্তির এই অভিশাপ থেকে বাঁচাতে এগিয়ে আসতে হবে আমাকে, আপনাকে, সমাজকে, সরকারকে সংঘবদ্ধভাবে আমাদের সবাইকেই !

১ Likes ২ Comments ০ Share ৫২২ Views

Comments (2)

  • - চারু মান্নান

    বাহ দারুন কিব,,,,,,,,,,,,,,,,

    • - মাসুম বাদল

      চমৎকার...emoticonsemoticons

    • Load more relies...