একঃ স্কুল থেকে ফিরে দেখি- সুন্দর ঘুড়িটা উড়ছে। নাটাইটা বাড়ির সামনে আকন্দ গাছে বাঁধা। লম্বা লেজের ঘুড়িটা দেখে মনটা ভরে যায়।
ঘুড়িটা আমার জন্য বানিয়েছিলেন আমার বাবা।
দুইঃ তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। স্কুলের মাঠ ভেসে গেছে পানিতে। বৃষ্টি থামার নাম নেই। দিনের বেলায় নেমে এসেছে আঁধার। দেখি- বাবা হাজির স্কুলে ছাতা নিয়ে। বাবার হাত ধরে বাড়ি ফেরা - কতোই না সুখের।
তিনঃ বইয়ের মলাটগুলো সুন্দর করে করে দিতেন বাবা। আর সুন্দর স্টাইল করে ক্লাস-রুটিনও লিখে দিতেন তিনি।
|| || ||
সময় চলে। চলে। মিনিট। ঘন্টা। দিন। মাস। বছর। এভাবেই চলে আসছেসময়ের পরিক্রমা। সময় আসলে সময়েরই গহ্বরে মুখ লুকায়। পুরনো সময় গিয়ে আসে নূতন সময়। সময়ের সাথে সবই বদলায়। ফিরে আসে নূতন সাজে। ভিন্ন রূপে। সময়ের অমোঘ চক্করে পড়ে হারিয়ে যায় সময়ের সেরা সৃষ্টি- মানুষও। একজন মানুষের বিকল্প অন্য একজন মানুষ হতে পারে না কখনোই। তাই হারিয়ে যাওয়া মানুষটি শুধু স্মৃতি হয়েই বেঁচে থাকে প্রিয়জনদের কাছে। স্বজনদের কাছে।
মাকে হারিয়েছি কিশোরবেলায়। বাবা ছায়া হয়ে ছিলেন মাথার ওপর। আমাকে কাঁদিয়ে বাবাও চলে গেলেন তিন মাস আগে। বাবা। আহা বাবা। আমার বাবা কৃষক ছিলো। কিন্তু আমি যেনো রাজপুত্তুরই ছিলাম।
চলে যাবার মুহূর্তে আমি বাবার হাত ধরে ছিলাম। বাবাও শক্ত করে ধরে ছিলেন আমার হাত। এভাবেই চলে গেলেন। আমি যে কতো একা হয়ে গেলাম- কতোখানি- তা আমি ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারবে না জানি।
বাবাকে ঘিরে স্মৃতির শেষ নেই। অনেক পড়াশোনা করতেন আমার বাবা। অনেকদিন গ্রামের মাদ্রাসায় শিক্ষকতাও করেছেন। কোরআনের তাফসির, হাদিসের ব্যাখ্যা যেমন জানতেন, তেমনি মুখস্ত ছিলো অসংখ্য বচন/প্রবচন-শ্লোক। গ্রামের মানুষ সে সময় পঞ্জিকা দেখতে চলে আসতো বাবার কাছে। ডাক্তার তখন গ্রামে ছিলো দুর্লভ। প্রায়ই দেখতাম সকালে পাড়ার কিছু লোক বাড়িতে এসে হাজির। উদ্দেশ্য – ইঞ্জেকশন দেয়া। বাবা ডাক্তারের নির্দেশনা মতো ইঞ্জেকশন দিয়ে দিতেন গ্রামের লোকজনদের।
||আমি ছিলাম বাবার পরান!
বাবার আদর, বাবার স্নেহ একটু ব্যতিক্রম ছিলো
বাবা কেবল শাসন করেন এমন একটা ভ্রম ছিলো
কিন্তু বাবার ভালোবাসা
ছিলো গভীর, নয়তো ভাসা
প্রাণটা ছিলো আমার তরে, প্রকাশটাই যা কম ছিলো।
Comments (10)
বেশ ভাল লাগলো...