Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

বাঙালি আইনজীবী সমাজকর্মী,ভাষাসৈনিক ও রাজনীতিবিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের ১২৮তম জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা


মহান ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক, বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান ও আইনজীবি, শহীদ বুদ্ধিজীবী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। দেশ বিভাগের আগে তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের ভারত অংশে এবং পরে পূর্ব পাকিস্তানে রাজনীতিবিদ হিসেবে সক্রিয় ছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র; যেখানে বাঙালিরা মাথা উচুঁ করে দাঁড়াবে, সেখানে রাষ্ট্রভাষা হবে বাংলা, আইন-কানুন সব হবে বাংলায়, সিভিল সার্ভিস পরীা হবে বাংলায়, টাকা হবে বাংলায়, স্ট্যাম্প হবে বাংলায়, পার্লামেন্টে বক্তৃতা হবে বাংলায় এবং তার সবকিছুই সম্ভব হয়েছে। এটাই তাঁর জীবনের সার্থকতা। নির্লোভ, নির্ভীক, সাহসী, স্পষ্টবাদী, অসাম্প্রদায়িক, রাজনীতিবিদ, নিখাঁদ দেশপ্রেমিক সমাজসেবী শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত যে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম উপকরণ ভাষার স্বাধীনতা আন্দোলনে পুরোপুরি সফল হয়েছিলেন তাই নয়, তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তির সংগ্রাম তথা স্বাধীনতার সংগ্রামে মার্চ মাসে কুমিল্লা থেকেই বলা যায় দুর্বার সোচ্চার আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। ১৯৫৮ সালে যখন মার্শাল ল হয় তখন তিরি যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রী ছিলেন। মার্শাল ল-এর পরে তিনি ঢাকা ছেড়ে কুমিল্লায় এসে বসবাস করেন। আজ এই মহান নেতার ১২৮তম জন্মবার্ষিকী। ১৮৮৬ সালের আজকের দিনে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার রামরাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আইনজীবী, ভাষা সৈনিক ও রাজনীতিবিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের ১২৮তম জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা।

(ধীরেন্দ্রনাথ দত্তেরবসত বাড়ির এ্খনকার অবস্থা)
ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ১৮৮৬ সালের ২ নভেম্বরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার রামরাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা জগবন্ধু দত্ত। শৈশবেই মাতৃহারা হন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। ১৯০৪ সালে নবীনগর উচ্চবিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ছাত্র অবস্থায় ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ১৯০৫ সালে সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী এবং ব্যারিস্টার আবদুর রসুলের রাজনৈতিক মতাদর্শে প্রভাবিত হয়ে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন। এরই মাঝে ১৯০৬ সালে তিনি কুমিল্লা কলেজ হতে কৃতিত্বের সঙ্গে এফ.এ. পরীক্ষায় পাস করার পর ১৯০৬ সালের ৭ ডিসেম্বর সুরবালা দেবীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। এরপর বি.এ. পড়ার জন্য তি্নি কলকাতার রিপন কলেজে ভর্তি হন। ১৯০৭ সালে ত্রিপুরা হিতসাধনী সভার সেক্রেটারি নির্বাচিত হন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। ১৯০৮ সালে ধীরেন্দ্রনাথ কলকাতার রিপন কলেজ হতে কৃতিত্বের সঙ্গে বি.এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং এই রিপন কলেজ থেকেই ১৯১০ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে আইন পাস পাশ করেন।

(সহযোদ্ধাদের সাথে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত)
কর্মজীবনে তিনি প্রায় একবছরকাল কুমিল্লার মুরাদনগর বাঙ্গুরা উমালোচন হাই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। এর পর ১৯১১ সালে আইন ব্যবসা করার জন্য তিনি কুমিল্লা জেলা বারে যোগদান করেন। ১৯১৫ সালের ভয়াবহ বন্যার সময় বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণের কাজে অংশগ্রহণ করেন। মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ অনুসরণে তিনি মুক্তি সংঘ নামে একটি সমাজকল্যাণমূলক সংস্থা গঠন করেন। কুমিল্লার অভয় আশ্রম-এর কর্মকাণ্ডের সাথেও তিনি জড়িত ছিলেন। ১৯১৯ সালে ময়মনসিংহ শহরে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের সম্মেলনে তিনি অংশগ্রহণ করেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের আহ্বানে তিনি তিন মাসের জন্য আইন ব্যবসা স্থগিত রাখেন এবং অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেন। বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন সংশোধন, বঙ্গীয় কৃষিঋণ গ্রহীতা ও বঙ্গীয় মহাজনি আইন পাসের সাথে ধীরেন দত্ত সংশ্লিষ্ট ছিলেন। ১৯৩৬ সালে ত্রিপুরা (বর্তমানে কুমিল্লা) জেলা বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। ১৯৩৭ সালে তিনি বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৪২ সালে ভারত ছাড় আন্দোলনে যোগ দেন। ব্রিটিশ বিরোধী কার্যকলাপের জন্য তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হয়ে বিভিন্ন কারাগারে বিনাশ্রম ও সশ্রম দণ্ড ভোগ করেন। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের সময় ত্রাণসামগ্রী বিতরণে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে তিনি কংগ্রেস দলের টিকিটে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন। পাকিস্তানের সংবিধান রচনার জন্য ঐ বছর ডিসেম্বরে পূর্ববঙ্গ হতে তিনি পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালের পর একজন অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিক হিসেবে পাকিস্তানের রাজনীতিতে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেন। ১৯৪৮ সালের ২৫ আগস্ট পাকিস্তান গণপরিষদে তিনি অধিবেশনের সকল কার্যবিবরণী ইংরেজি ও উর্দুর পাশাপাশি বাংলাতেও রাখার দাবি উত্থাপন করেন। ১৯৫৪ সালের জুন মাসে পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশনে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে গভর্নরের শাসন প্রবর্তনের বিরুদ্ধে একটি ছাঁটাই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ১৯৫৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর হতে ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর পর্যন্ত আতাউর রহমান খানের মন্ত্রিসভায় তিনি পূর্ব পাকিস্তানের স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন।

ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ কিংবা ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে শহীদ হননি; নিখোঁজ হয়েছেন ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ। ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ রাতে কুমিল্লার কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী এ্যাডভোকেট আবদুল করিমের তত্ত্বাবধানে ছোট ছেলে দিলীপকুমার দত্তসহ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাঁদেরকে ময়নামতি সেনানিবাসে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। অসমর্থিত সূত্রে জানা যায়, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে শহীদ হন। যে-মাটিতে বোনা হয়েছিল স্বাধীনতার বীজ, সে-মাটি উর্বর হয়েছিল তাঁর রক্তে। সপুত্র জীবন দিয়েই মাতৃভূমি ও মাতৃভূমির মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ও কর্তব্যবোধের অনবদ্য দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তিনি।
দুর্ভাগ্য, আমরা এই চরম আত্মত্যাগী সংগ্রামীকে যথাযোগ্য সম্মান দিইনি, তাঁকে মর্যাদা দিইনি, ইতিহাসে যথোপযুক্ত স্থান দিইনি; পক্ষান্তরে, যে মানুষটির দুঃসাহসিক ভূমিকার জন্যে আজ আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলছি, সরকারী কাজে বাংলা ব্যবহার করছি, তাঁর নামটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের কোথাও, কোনো জায়গায় খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে, স্রোতকে যেমন আলাদা করা যায় না নদীর থেকে, তেমনি শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নাম পৃথক করা যায় না বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে। তিনি এমন একজন নেতা, যাঁকে নিয়ে যেকোনো জাতি গর্ব করতে পারে।

তবে আশার কথা সম্প্রতি কুমিল্লা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক শহীদ বুদ্ধিজীবী ধীরেন্দ্র নাথ দত্তের নামে রাস্তার নামকরণ হয়েছে। জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে শহীদ খাজা নিজাম উদ্দিন সড়ক পর্যন্ত রাস্তাটি এখন থেকে শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত সড়ক নামে পরিচিত হবে। আইনজীবী, ভাষা সৈনিক ও রাজনীতিবিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের আজ ১২৮তম জন্মবার্ষিকী। মহান ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক, বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান ও আইনজীবি, শহীদ বুদ্ধিজীবী ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা

০ Likes ০ Comments ০ Share ৫৮৮ Views