Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

সাদাত কামাল

১০ বছর আগে

বাঘ

একবার একটা বাঘ তার একমাত্র ছেলে মাইকেলকে নিয়ে গেল হরিণ শিকার করতে। মাইকেল হরিণ শিকারে তার বাবা টমাসের থেকেও অনেক বেশি দক্ষ ছিল। বাপ-বেটা দুজন সুন্দরবনের হিরন-পয়েন্টে ঘাসের মধ্যে ভাল একটা ঘনঝোপ ঠিক করে শিকারের পজিশন নিয়ে হরিণের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।

বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরে তারা দুজন দেখতে পেল যে, কিছু হরিণ-হরিণী তাদের ছানাপুনা নিয়ে মনের আনন্দে সেই ঘন ঘাসের দিকে আসছে তাদের পেটপূর্তি করতে। মাইকেল তার গোঁপের তলে কুটিল হাসির একটি রেখা ফুটিয়ে বলল, বাবা আজ আমরা আমাদের মাকে আমাদের শিকারটি উপহার দেব, ওকে। টমাসের মুখে শব্দহীন সিরিয়াস গাম্ভীর্য। সে মনে মনে তার টার্গেট নির্বাচনে ব্যস্ত।

এমন সময় অনেক দূর থেকে কিছু মানুষের ক্যামেরার শাটারের ক্লিক-ক্লিক শব্দ টমাসের খাড়া কানে তীক্ষ্ণ তীরের মতো আঘাত করল। মাইকেল বলেই ফেলল, আবারও সেই উটকো ঝামেলা। টমাস বলল, ওদিকে কান না দিয়ে এবারে আমাদের ফাঁকা পেটের শব্দের দিকে কান দিয়ে শিকারে মননিবেশ কর। ঐ শব্দে হরিণগুলো আর একটু পরই আমাদের থেকে দূরে চলে যাবে।

অপেক্ষার প্রায় টান টান শেষ মূহুর্ত। আর দেরি করা মোটেও ঠিক হবে না। তাই কোনো টুরিস্ট-ফুরিস্ট না গুনেই তারা বাপ-বেটা লাঁফিয়ে পড়লো দুটি হরিণের ওপর। তারা সেগুলিকে মেরে, টেনে তাদের মা আর মাইকেলের বোন এলিসার জন্য নিয়ে গেল।

বেশকয়েক বছর পরের কথা। মানুষেরা হিরণ-পয়েন্টে মাইকেলদের বসবাসের স্থানে চেকপোস্ট বানিয়েছে। মাইকেলের বাবা টমাস সেই চেকপোস্ট থেকে ছোঁড়া গুলিতে মারা গেছে। মাইকেল তার মা, বোন আর বোনের একমাত্র ছেলে নিটনকে নিয়ে অন্যস্থানে চলে এসেছে। এখানে হরিণ প্রায় নেই বললেই চলে। তাই মামা-ভাগ্নে এখন মাঝেমধ্যেই তাদের পরিবারের জন্য মাছ শিকার করে।

একদিন মামা-ভাগ্নে ঠিক করলো যে তারা মানুষের বসতিতে যেয়ে রাতের আঁধারে গরু শিকার করবে। সেই কবে যে তারা শেষবারের মতো গরুর স্বাদ পেয়ে ছিল তা ঠিক মনে নেই তাদের। মাইকেল তার দাদার মুখে শুনেছিল মানুষ্য বসতিতে গরু শিকারের অভিজ্ঞতার কথা। সেই অভিজ্ঞতাটা বোধহয় আজ এতদিন পরে তাদের পেটের দায়ে কাজে দিতে চলেছে।

যে সমস্ত বাঘ পূর্বে মানুষ্য বসতিতে গেছে তাদের বেশির ভাগই মারা পড়েছে। আর যারা শিকার করে ফিরেছে তাঁরা একেকজন মহাবীর। তাদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে আরও ভালভাবে প্রস্তুতি নিল মাইকেল আর নিটন। নিটনের মা এলিসা প্রথমে রাজি হচ্ছিল না এই মিশনে নিটনকে যেতে দিতে। কিন্তু নিটনের কিচ্ছু হবে না, এই আশ্বাস দিয়ে মাইকেল নিটনকে তার সাথে নেবার ব্যবস্থা করলো।

সবকিছু ঠিকঠাক করে মামা-ভাগ্নে এক চাঁদরাতে তাদের মিশনে বের হলো। তখন মাঝরাত। বসতিতে মানুষ্য জাতির নাক ডাকার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। গোলপাতা, মাটি আর খড় নিয়েই বেশির ভাগ বাড়ি তৈরি। মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি বাড়ি পাকা। গরুগুলো সব ঘুমাচ্ছে। মাইকেল আর নিটন তাদের নিঃশব্দ পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছে। প্রখর দৃষ্টি তাদের।

এমন সময় একটা পাঁকা বাড়ির সামনে হঠাৎ করে মাইকেল থমকে দাঁড়াল। নিটন বলল, কি হল মামা! থামলে যে ? মাইকেল বলে উঠল, বাবা! নিটন বলল, মানে। এরপর মাইকেল নিটনকে তার সামনের পা তুলে দেখাল যে সেই পাঁকা বাড়িটির দেয়ালে একটা ছবি ঝুলছে। সেখানে ছোট মাইকেল আর তাঁর বাবা টমাস হরিণ শিকার করছে। ইমোশনাল মাইকেল তাদের গরু শিকারের প্লান পাল্টে ফেলে, দেয়াল থেকে সেই ছবিটি পেড়ে মুখে করে তাদের বাড়িতে নিয়ে গেল সে রাতে।

বাঘেরা সবাই ছবিটি দেখছে অবাক দৃষ্টিতে। তাদের শিকার, তাদের বসতি, তাদের চামড়া আজ সবই মানুষের বিনোদনে পরিণত হয়েছে। মানুষকেও বাঘেরা এবার বিনোদন বানাবে তাদের জন্য। মানুষের রক্তের স্বাদ আলাদা। মাইকেলের কানে সেই ক্যামেরার শাটারের ক্লিক-ক্লিক শব্দ বাজছে। সে ভাবছে, এবারে ছবিতে হরিণের স্থানে থাকবে মানুষ।

(ধারাবাহিক)  

০ Likes ৯ Comments ০ Share ৫৩৭ Views

Comments (9)

  • - ঘাস ফুল

    সব রাজনীতিবিদরাই রসুনের কোয়ার মতো এক জায়গায় মিশে আছে। সবার ধান্ধাও তাই একই। ক্ষমতা, টাকা আর বিলাসিতা। নির্বাচন এলে আমরা সাধারণ জনগণও কিছুটা ধান্ধাবাজি করি। আসল নকল যাচাই না করে টুপাইস পকেটে ভরে নিজের বিবেক বিক্রি করে দেই। তাই শুধু রাজনীতিবিদদেরই সচেতন বা ভালো হলে হবে না। আমাদেরও সাথে সাথে হতে হবে। লেখাটা ভালো লেগেছে। ভোটের ভাষণ আসলেই এমন। যদিও অন্ত্যমিল রেখে লিখেছেন, তারপরও বলব এটাকে কবিতা ক্যাটাগরিতে দিতে পারতেন। কারণ ছড়ার বেলায় ছন্দের যেমন গুরুত্ব আছে, ঠিক তেমনি মাত্রারও সমান গুরুত্ব আছে। লেখাটাতে মাত্রা বিভ্রাট আছে। ধন্যবাদ জিয়াউল।