Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

বাংলাদেশের 'ফাদার অব মিডিয়া' একুশে টেলিভিশনের প্রতিষ্ঠাতা আবু সাইয়ীদ মাহমুদের একাদশ মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি


আবু সাইয়ীদ মাহমুদ সংক্ষেপে এ, এস, মাহমুদ। তাঁকে মনে করা হতো বাংলাদেশের ‘ফাদার অব মিডিয়া’। সব দিক থেকে এ এস মাহমুদ ছিলেন বিরল বিশ্বাসের অনন্যসাধারণ একজন মানুষ। সংস্কৃতি অঙ্গনের এমন কোন মাধ্যম নেই যে মাধ্যমে তাঁর পদচারনা ছিলো না। সাহিত্য, শিল্পকলা ও সংস্কৃতি জগতের মানুষের কাছে তিনি ছিলেন ‘আমাদের আপন একজন’। তিনি বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারী টেরিস্ট্রেরিয়াল টেলিভিশন ‘একুশে টেলিভিশনে’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। একুশে টেলিভিশন ছিলো তাঁর স্বপ্ন তৈরির কারখানা। এছাড়াও তিনি বহু প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন। ২০০১ সালে একুশে টেলিভিশন যখন হঠাৎ বন্ধ করে দেয়া হয় ,তখন সৃষ্টিশীল এই মানুষটি দারুন মনোকষ্ট নিয়ে ইংল্যান্ডে চলে যান। ইংল্যাণ্ডে থাকা অবস্থায় ২০০৩ সালের ২২শে জানুয়ারী আবু সাইয়ীদ মাহমুদ মৃত্যুবরন করেন এবং শেষ ইচ্ছানুযায়ী সেখানেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। আজ আবু সাইয়ীদ মাহমুদের একাদশ মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুদিনে তাঁর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।

আবু সাইয়ীদ মাহমুদ ১৯৩৩ সালের ১০ জুলাই সিলেটের এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। বাংলা সাহিত্যে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী তার মামা। আবু সাইয়ীদ মাহমুদ নিজের দেশকে ভালোবাসতেন এবং বাংলাদেশের শক্তি ও স্বাধীনতায় গভীরভাবে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন বিচ্ছিন্নতা, অসাম্য ও হতাশায় নিমজ্জিত দেশটিকে বদলে দেওয়ার, নতুন দিন আনার অমিত শক্তি ও সম্ভাবনা আছে এ দেশের মানুষের। বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারী টেরিস্ট্রেরিয়াল টেলিভিশন ‘একুশে টেলিভিশনের প্রতিষ্ঠাতা আবু সাইয়ীদ মাহমুদের বর্ণাঢ্যময় জীবনে বহু প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৫৭ সালে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে, বহুজাতিক তেল কোম্পানি শেলে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে। পরে তিনি যোগ দেন ইস্ট পাকিস্তান অয়েল কোম্পানিতে। কোম্পানিটি পরিচালনা করত পশ্চিম পাকিস্তানিরা, তাদের জাত্যভিমান সহ্য করা এ এস মাহমুদের পক্ষে কঠিন হয়ে ওঠে। ১৯৭১ সালে অনেকের মতো তিনিও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে তেল সরবরাহের দায়িত্বরত কর্মকর্তা হিসেবে তিনি যখন লক্ষ করেন, সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ নির্দেশে হঠাৎ করে বিপুলসংখ্যক লোকবল মোতায়েন ও প্রচুর পরিমাণ লজিস্টিকস আনা হচ্ছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এসবকিছু করছিল ২৫ মার্চের রাতে নারকীয় সামরিক হামলা পরিচালনার প্রস্তুতি হিসেবে। তিনি তখন ফতুল্লা তেল ডিপোকে সামরিক ট্যাংকারগুলোকে তেল না দিতে নির্দেশ দেন । পরবর্তীতে ডিপো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং তিনি মার্চের শেষে সপরিবারে লন্ডন চলে যান।

স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশে ফিরে এসে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ইংরেজী দৈনিক ডেইলি স্টার।
আবু সাইয়ীদ মাহমুদ ছিলেন‘ডেইলী স্টার’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। এছাড়াও তিনি ‘ট্রান্সকম লিমিটেডের ডিরেক্টর, এবং ‘ঢাকা চেম্বারের প্রেসিডেন্ট ছিলেন দু’বার। বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারী রেডিও ‘মেট্রো ওয়েভের’ প্রতিষ্ঠাতাও ছিলেন তিনি। এস, এ মাহমুদ স্বপ্ন দেখার সাহস করেছিলেন এবং সেই স্বপ্ন সত্য করার সাহস ও অঙ্গীকার তাঁর ছিল। ‘একুশে টেলিভিশন’ ছিল তাঁর স্বপ্ন; সেই স্বপ্নকে তিনি বাস্তব রূপ দিয়েছিলেন। একুশে টেলিভিশন ছিলো তাঁর স্বপ্ন তৈরির কারখানা। সন্তানের মত আগলে রেখেছিলেন তিনি এ প্রতিষ্ঠানটিকে। চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস মাহমুদ একদম শুরু থেকেই একুশে টেলিভিশন গড়ে তোলার সব কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন: এর দর্শন, এর আধেয়, এর ভাবমূর্তি এবং দেশে একটা পরিবর্তন সূচিত করার কাজে সহযোগিতা করার অঙ্গীকার। এস এ মাহমুদ ন্যায়বিচার ও অসাম্প্রদায়িকতায় গভীরভাবে বিশ্বাসী ছিলেন; মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাগুলো তাই তাঁর মনে গভীরভাবে প্রোথিত ছিল। এই মূল্যবোধগুলোর ওপর ভিত্তি করেই তিনি গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন একুশে টেলিভিশনকে।

খবর, তথ্য, সাংস্কৃতিক ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানগুলো দিয়ে একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) জয় করেছিল কোটি কোটি দর্শকের হূদয়; তাদের সামনে খুলে ধরেছিল পুরো পৃথিবী এবং বাংলাদেশের সব মানুষের মধ্যে তৈরি করেছিল যোগাযোগের সেতুবন্ধন। ইটিভির এই সাফল্যই শেষ পর্যন্ত ছিল তার পতনের কারণ। ইটিভির সম্প্রচার শুরু হওয়ার পর দুই বছরের কিছু বেশি সময় পেরোলে আবির্ভাব ঘটে তাঁদের, যাঁরা ইটিভি বন্ধ করে দেওয়ার সংকল্প করেন; ফলে এ এস মাহমুদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দেশ ত্যাগ করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প রইল না। হঠাৎ করে একুশে টেলিভিশনকে বন্ধ করে দিলে সৃষ্টিশীল এই মানুষটি দারুন মনোকষ্ট নিয়ে ইংল্যান্ডে চলে যান। ২০০৩ সালের ২২ জানুয়ারী আবু সাইয়ীদ মাহমুদ ইংল্যান্ডে মৃত্যুবরন করেন এবং তাঁর ইচ্ছানুযায়ী সেখানেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়।

বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারী টেরিস্ট্রেরিয়াল টেলিভিশন ‘একুশে টেলিভিশনের প্রতিষ্ঠাতা "ফাদার অব মিডিয়া" আবু সাইয়ীদ মাহমুদের একাদশ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে স্মরন করছি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।

০ Likes ২ Comments ০ Share ৫৯৯ Views

Comments (2)

  • - সকাল রয়

    সময় পেলে একদিন যাবো

    • - লুৎফুর রহমান পাশা

      ২৩ তারিখে বিকাল বেলা চইলা আসেন । পিকনিক শেষে রাতে চলে যাবেন। বেশী সময় তো লাগে না।

    - তাহমিদুর রহমান

    আমি যেতে পারছি না। কোনভাবেই সম্ভব না। 

    • - লুৎফুর রহমান পাশা

      আপনে একটা দুই নম্বর। আপনেরে মাইনাস..............

    - ঘাস ফুল

    মোড়াপাড়া জমিদার বাড়ির ভিতর বাহির সব তুলে এনেছেন দেখছি। বনভোজনে যাওয়ার জন্য এই পোষ্ট অনেককেই আগ্রহী করে তুলবে, অন্তত যারা এই পুরনো নিদর্শন দেখতে মুখিয়ে থাকেন। মোড়াপাড়া জমিদার বাড়ি সম্বন্ধে অনেক কিছু জানলাম। কখনো যাওয়া হয় নাই সেখানে। দেশে আসলে এক নজর দেখে আসার ইচ্ছা আছে। ধন্যবাদ পাশা ভাই কষ্ট করে জমিদার বাড়িটি সম্বন্ধে আমাদের পূর্ব ধারণা দেয়ার জন্য। 

    • - লুৎফুর রহমান পাশা

      আমি আগেও বহুবার সেখানে গিয়েছি। যারা যায়নাই তাদেরকে লোভ লাগানোর জন্যই এই পোস্ট। এছাড়া যারা যাবেনা তাদের মনে যাতে আফসুস লাগে সেই ব্যবস্থা করা।

    Load more comments...