Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম নেতা কমরেড অনিল মুখার্জির ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি


জাতীয় মুক্তি আন্দোলন তথা মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামের বিশিষ্ট সংগঠক কমরেড অনিল মুখার্জি। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম স্থপতি, শ্রমিক আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব অ্নিল মুখার্জি ব্রিটিশদের শোষণ ও নির্যাতন থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য একের পর এক আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে ছিনিয়ে আনেন স্বাধীনতার সূর্য। স্কুল জীবনেই তিনি জন রীডের সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের উপর রচিত 'দুনিয়া কাঁপানো দশ দিন' পড়ে ব্যাপকভাবে আলোড়িত হন। ১৯৩০ সালে কলেজের ছাত্র থাকাবস্থায় কংগ্রেসের আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহন করেন তিনি। সেই আন্দোলনেই প্রথম গ্রেফতার হন। গ্রেফতারের পর ব্রিটিশ সরকার প্রথমে তাঁকে মেদিনীপুর ও হিজলি জেলে আটক করে রাখে। পরে তাঁকে আন্দামান জেলে নির্বাসিত করা হয়। আন্দামানে থাকাকালীন সময়ে অনিল মুখার্জী মার্কসবাদে দীক্ষিত হন। ১৯৫৬ সালে কমরেড অনিল মুখার্জী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির (গোপন) কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে মস্কোতে অনুষ্ঠিত বিশ্বের ৭৫টি দেশের কমিউনিস্ট পার্টির মহাসম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিত্ব করেন। বস্তুত ১৯৫৫ সাল থেকে ১৯৭১ সাল টানা ১৭ বছর তিনি পলাতক ও আত্মগোপনে থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধেও অনিল মুখার্জী অন্যতম সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশ-সোভিয়েত মৈত্রী সমিতিরও তিনি ছিলেন অন্যতম রূপকার। আজীবন সংগ্রামী এই মানুষটি ১৯৮২ সালের আজকের দিনে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। আজ তার ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। অকৃতদার কমিউনিস্ট নেতা অনিল মুখার্জির মৃত্যুদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি। 

১৯১২ সালের ১০ অক্টোবর মুন্সিগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন অনিল মুখার্জি। ১৯২৯ সালে মুন্সিগঞ্জ স্কুল থেকে তিনি মেট্রিক পাশ করেন। পরে মুন্সিগঞ্জ সরকারী কলেজে ইন্টার মিডিয়েট ভর্তি হন। এ সময় সারা ভারতবর্ষে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ছিল তুঙ্গে। মায়ের মুখে গল্প শুনতে শুনতে সেই ছেলেবেলাতেই ইংরেজদের প্রতি বিদ্বেষ জন্ম নেয় তাঁর মনে। আর ক্ষুদরিাম ও কানাইলালের গল্প শুনে তাঁদের মতো দেশ মাতৃকার মুক্তির জন্য জীবন উৎসর্গ করার শপথ নেন তিনি। সেকারণে স্কুলে পড়ার সময়েই জড়িয়ে পড়েন বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে। কিশোর বয়সে রাজনীতিতে নামার পর থেকে নিজের জীবনের সুখ-সম্ভোগের চিন্তা অনিল মুখার্জির মনকে কোন দিন পীড়া দেয়নি। ১৯৩০ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণের কারণে প্রথম কারাবরণ করেন অনিল মুখার্জি। পরে তাকে নারায়ণগঞ্জের স্বগৃহে অন্তরীণ রাখা হয়। কিন্তু তিনি অন্তরীণ আদেশ অমান্য করে আত্মগোপন করেন। আত্মগোপন থাকাকালীন কুমিল্লার প্রবীণ বিপ্লবী নেতা হরিকুমার চক্রবর্তীসহ পুলিশ কর্তৃক ঘেরাও হয়ে আহত অবস্থায় ধরা পড়েন অনিল মুখার্জি। এসময় তিনি প্রথমে ঢাকা ও পরে মেদিনীপুরের হিজলী বন্দী শিবিরে আটক ছিলেন। জেলে থাকা অবস্থায় সশস্ত্র সংগ্রামে জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁকে ব্রিটিশ সরকার ১৯৩০ সালে আন্দামান জেলে প্রেরণ করে। আন্দামান বন্দীদের মরণপণ আন্দোলনের ফলে ১৯৩৮ সালে তিনি মুক্তি পান। মুক্তি লাভের পর তিনি সার্বক্ষণিক কর্মী হিসেবে কমরেড নেপাল নাগের সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন। এসময় তিনি নারায়ণগঞ্জের পার্টি কর্মীদের সহায়তায় শীতলক্ষা নদীর দুই পাড়ের সুতাকল ও বস্ত্রকল শ্রমিকদের মধ্যে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৪৬ সালে কমরেড অনিল মুখার্জী নারায়ণগঞ্জে সুতাকল শ্রমিকদের ঐতিহাসিক ধর্মঘট ও জঙ্গি সংগ্রাম পরিচালনা করেন। কিন্তু তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী তাঁর ওপর এজন্য হত্যার মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে। ফলে তিনি আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর কমরেড অনিল মুখার্জী নিজ মাতৃভূমি পূর্ব পাকিস্তানেই থেকে যান এবং আত্মগোপনে থেকে কমিউনিস্ট পার্টি ও শ্রমিক আন্দোলন সংগঠিত করেন। পূর্বের খুনের মিথ্যা মামলার কারণে ১৯৫১ সালে তিনি ধরা পড়েন। প্রমাণের অভাবে তিনি তখন ফাঁসির সেল থেকে স্থানান্তরিত হন। 

১৯৫৫ সালে কমরেড অনিল মুখার্জি ছাড়া পান। কিন্তু ওই বছরই পুলিশ ধর্মঘটের যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার এড়াতে তাঁকে আবার তাকে আত্মগোপনে যেতে হয়।তবে এ অবস্থায়ই তিনি গোপনে দু’বার সোভিয়েত ইউনিয়নে পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিনিধি রূপে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট সম্মেলনে এবং সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে ও অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশের কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে যোগ দেন। ১৯৫৬ সালে কমরেড অনিল মুখার্জী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির (গোপন) কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৬৮ সালে কমিউনিস্ট পার্টির গোপনে অনুষ্ঠিত প্রথম কংগ্রেসে তিনি তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক নির্বাচিত হন। এছাড়াও ১৯৬৯ সালে মস্কোতে অনুষ্ঠিত বিশ্বের ৭৫টি দেশের কমিউনিস্ট পার্টির মহাসম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিত্ব করেন অনিল মুখার্জি।এরপর ১৯৭৩ ও ১৯৮০ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির দ্বিতীয় ও তৃতীয় কংগ্রেসে পুনরায় তাঁকে কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। 

সক্রিয় রাজনৈতিক আন্দোলনের নেতৃত্বদানের পাশাপাশি লেখালেখিও চালিয়ে গেছেন অনিল মুখার্জি । তিনি সাপ্তাহিক একতা, দৈনিক সংবাদসহ অসংখ্য সংকলনে লিখেছেন। পাকিস্তান আমলে গোপন কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র ‘শিখা’য় তিনি আলীম ছদ্মনামে লিখতেন। তাঁর রচিত ‘সাম্যবাদের ভূমিকা’ ও শ্রমিক আন্দোলনের ‘হাতে খড়ি’ বহুল পঠিত ও সমাদৃত গ্রন্থ। ১৯৩৮ সালে জেল থেকে বেরুনোর পর অনিল মুখার্জি হাত দেন তাঁর বিখ্যাত বই 'সাম্যবাদের ভূমিকা' লেখার কাজে। ১৯৪২ সালে রচিত এটি তাঁর প্রথম ও শ্রেষ্ঠ বই। এখন পর্যন্ত এর প্রায় দশ-বারোটি সংস্করণ বেরিয়েছে। এটি শুধু বাংলাদেশেই নয়, সমানভাবে জনপ্রিয় হয়েছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে এই বই খুব কঠোরভাবে বেআইনি করে রাখা হয়। তখন অনেকেই এই বইটি হাতে হাতে লিখে নিজেরা পড়তেন ও শ্রমিকদের পড়তে দিতেন। ১৯৬৫ সালে বইটি গোপনে প্রকাশ করা হয়েছিল। পরে ১৯৭০ সালে 'সাম্যবাদের ভূমিকা' ও 'শ্রমিক আন্দোলনের হাতেখড়ি' বই দু'টির প্রকাশ্য সংস্করণ প্রকাশিত হয়। ‘স্বাধীন বাংলাদেশ সংগ্রামের পটভূমি’ তাঁর আরেকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। ছোটদের জন্যও তিনি রচনা করেছেন ‘হারানো খোকা’ নামক গ্রন্থ। অনিল মুখার্জি বেশ কিছু কবিতাও লিখেছেন।

কমিউনিস্ট ও শ্রমিক আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব অনিল মুখার্জি ১৯৮২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭০ বছর। আজীবন সংগ্রামী এই মানুষটির আজ তার ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। অকৃতদার কমিউনিস্ট নেতা অনিল মুখার্জির মৃত্যুদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
০ Likes ০ Comments ০ Share ৪২৬ Views

Comments (0)

  • - আলমগীর সরকার লিটন

    সুন্দর

     

    - ছড়াবাজ

    দিনাজপুরের জামিল মিয়া,
    আইলো বুঝি হেথা,
    লাগছে কেমন এই আঙিনা?
    নাই ক্যা নিজের কথা?

    - টোকাই

    ভালো লাগলো । খুব সুন্দর ।