Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

বাংলাদেশে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের অন্যতম পথিকৃত, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাংবাদিক সাইমন ড্রিং-এর ৬৯তম আজ জন্মদিনে শুভেচ্ছা


বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন ধারণার অন্যতম রূপকার, আন্তর্জাতিক পুরস্কার বিজয়ী বৈদেশিক সংবাদদাতা, টেলিভিশন উপস্থাপক এবং প্রতিবেদন নির্মাতা সাইমন ড্রিং। তিনি বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের বৈদেশিক প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বের অনেক জায়গা ভ্রমণ করে তরতাজা ও গুরুত্বপূর্ণ খবর পরিবেশনের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হন। এছাড়াও তিনি লন্ডনভিত্তিক দ্য ডেইলী টেলিগ্রাফ, বিবিসি টেলিভিশন এবং রেডিও সংবাদ ও চলতি ঘটনা তুলে ধরার লক্ষ্যে অনবরত কাজ করছেন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর জঘন্য ও নৃশংসতার বিবরণ দৈনিকে তুলে ধরে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বাংলাদেশের গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী প্রথম বিদেশী সাংবাদিক সাইমন ড্রিং এর আজ ৬৯তম জন্মদিন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী বন্ধু খ্যাতিসম্পন্ন সাংবাদিক সাইমন ড্রিংএর জন্মদিনে আমাদের শুভেচ্ছা।

বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সংবাদ পরিবেশনায় কিংবদন্তি বিখ্যাত সাংবাদিক, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ও প্রামাণ্য চিত্র নির্মাতা সাইমন ড্রিং ১৯৪৫ সালের ১১ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের নরফোকের ফাকেনহাম শহরে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবকালে আওজ নদীতে উলঙ্গ অবস্থায় সাঁতার কাটার অভিযোগে তাঁকে বোর্ডিং স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এরপর তিনি কিংস্‌ লিন টেকনিক্যাল কলেজে অধ্যয়ন করেন। ১৬ বৎসর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করেন। ১৯৬২ সালে বহিঃবিশ্ব ভ্রমণের অংশ হিসেবে ভারত ভ্রমণ করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর নৃশংসতার বিবরণ সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সাইমন ড্রিং কিংস লিন টেকনিক্যাল কলেজে পড়ালেখা করেন। ১৬ বছর বয়সে বিশ্বভ্রমণে বের হন। ১৯৬৩ সালে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ওয়ার্ল্ড সংবাদপত্রে প্রুফ রিডারের কাজ নেন। ১৯৬৪ সালে লাওসে নিউইয়র্ক টাইমসের স্ট্রিংগার হিসেবে কাজ করেন। একই বছর ভিয়েতনামে রয়টার্সের যুদ্ধবিষয়ক সংবাদ প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে সাইমন ড্রিং হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে (বর্তমানে হোটেল রূপসী বাংলা) লুকিয়ে ছিলেন। তৎকালীন পাকিস্তানে সামরিক আইনের তোয়াক্কা না করে ২৭ মার্চ তিনি মুক্তিযুদ্ধের সংবাদ সংগ্রহ করে ডেইলি টেলিগ্রাফে পাঠান। যা ‘ট্যাংকস ক্র্যাশ রিভোল্ট ইন পাকিস্তান’ শিরোনামে ৩০ মার্চ প্রকাশিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত সৃষ্টিতে এ প্রতিবেদনটি বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে সাড়া জাগিয়েছিল। ১৯৭১ সালে সরকার তাকে জোরপূর্বক পাকিস্তান থেকে বের করে দেয়। একই বছরের নভেম্বরে ইংল্যান্ড থেকে কলকাতায় আসেন তিনি। সেখান থেকে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের খবরাখবর ওই দৈনিকে প্রেরণ করতেন। ১৬ ডিসেম্বর যৌথবাহিনীর সঙ্গে তিনি ঢাকায় আসেন।

১৯৭০ এবং ১৯৮০-এর দশক জুড়ে তিনি ডেইলি টেলিগ্রাফ এবং বিবিসি টেলিভিশন নিউজের বৈদেশিক সংবাদদাতা হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কর্মরত ছিলেন। ওই সময় ভারত, পাকিস্তান, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ল্যাটিন আমেরিকা এবং ইউরোপের অস্থিতিশীল ঘটনাপ্রবাহ নিয়মিত সংবাদ মাধ্যমে তুলে ধরেন। ইরানের শাহবিরোধী গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে নন্দিত হন তিনি। পেশাগত জীবনে ২২টি যুদ্ধ ও অভ্যুত্থান কাভার করেছেন। বিবিসি টেলিভিশন ও রেডিও'র সংবাদ এবং সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে কাজ করেছেন প্রায় ২০ বছর। তিনি বিভিন্ন চ্যানেলের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীন ও লাতিন আমেরিকার ওপর নির্মাণ করেন বিভিন্ন অনুষ্ঠান। এসব প্রামাণ্যচিত্র বা অনুষ্ঠানের উপস্থাপক, পরিচালক ও প্রযোজন ছিলেন তিনি নিজেই। এ ছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সংবাদপত্র ও সাময়িকীতে লিখেছেন তিনি। ১৯৮৬ সালে লন্ডনে তিনি স্পোর্ট এইড নামের দাতব্য তহবিলের ধারণা তুলে ধরেন। স্যার বব গেল্ডোফের সাহায্যে ১২০টি দেশের প্রায় ২০ মিলিয়ন মানুষের অংশগ্রহণে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। ৩৭ মিলিয়ন ডলার এই তহবিলে জমা হয়। ওই বছর দ্য রেস এসেইন্ট টাইম শিরোনামে অন্য আরেকটি দাতব্য তহবিল গড়েন সাইমন ড্রিং। এতে ১৬০টি দেশের প্রায় ৫৫ মিলিয়ন মানুষ অংশগ্রহণ করেন

গত শতকের শেষ দিকে একুশে টেলিভিশনের মাধ্যমে সাইমন ড্রিং শুরু করেছিলেন পরিবর্তনের এক যুদ্ধ। তিনি বাংলাদেশের একমাত্র বেসরকারি টেরেস্ট্রিয়াল টেলিভিশন চ্যানেল একুশে টেলিভিশনের সাথে যুক্ত ছিলেন। বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদ পরিবেশনে তিনি রেখেছেন অগ্রণী ভূমিকা। আজকে দেশের স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলোতে যেই আঙ্গিকে সংবাদ পরিবেশন করা হয়, বেসরকারী টেলিস্টরিয়াল টিভি চ্যানেল একুশে টেলিভিশনের মাধ্যমে তা শুরু করেছিলেন সায়মন ড্রিং। ১৯৯৭ সালে বিবিসি ছেড়ে তিনি একুশে'র ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব দেন। ২০০২ সালে সম্প্রচার আইন লঙ্ঘনের কারণে চ্যানেলটি সম্প্রচার কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়। তিনি ও সহযোগী তিনজন নির্বাহী পরিচালক প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত হন। ওই বছর অক্টোবর মাসে সরকার তার ভিসা এবং ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করে। ২০০২ সালের ১ অক্টোবর তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন।

সাইমন ড্রিংক ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশে পাকিস্তানী সেনাদের নির্যাতনের ওপর প্রতিবেদন তৈরী করে অর্জন করেন ইন্টারন্যাশনাল রিপোর্টার অব দ্য ইয়ার; ইরিত্রিয়া যুদ্ধের ওপর ভ্যালিয়ান্ট ফর ট্রুথ; কুর্দিদের বিরুদ্ধে তুরস্কের যুদ্ধের প্রতিবেদনের জন্য সনি এবং হাইতিতে আমেরিকান আগ্রাসনের ওপর প্রতিবেদন তৈরী করে অর্জন করেন নিউইয়র্ক ফেস্টিভ্যাল গ্রান্ড প্রাইজ। এছাড়াও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে সম্মাননা লাভ করেন। বর্তমানে তিনি স্ত্রী ফাইওনা ম্যাকফেরসনকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে বসবাস করছেন। তাঁর স্ত্রী আইনজীবী এবং রোমানিয়াভিত্তিক ব্রিটিশ চিলড্রেনস্‌ চ্যারিটি'র নির্বাহী পরিচালক। তাদের সংসারে ২৩ ডিসেম্বর, ২০১০ তারিখে যমজ কন্যা - আভা রোজ এবং ইন্ডিয়া রোজ জন্মগ্রহণ করে। ড্রিংয়ের পূর্বেকার সংসারে তানিয়া নাম্নী আরেকটি কন্যা রয়েছে। সে নিকোলাস এবং জেমস নামের দু'টি পুত্র সন্তান নিয়ে স্পেনে বসবাস করছে।

বাংলাদেশে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের অন্যতম পথিকৃত, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাংবাদিক সাইমন ড্রিং-এর ৬৯তম আজ জন্মদিন। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সংবাদ পরিবেশনায় কিংবদন্তি, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী বন্ধু সাইমন ড্রিং এর জন্মদিনে আমাদের ফুলেল শুভেচ্ছা।

০ Likes ২ Comments ০ Share ১০৩৯ Views

Comments (2)

  • - আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম

    মাঈনউদ্দিন মইনুল সাহেবের সাথে গত বছরের বইমেলায় দেখা হওয়াটা আমার জন্য এক বিরাট সৌভাগ্যের ব্যাপার ছিল। এমন একজন গুনী ব্লগার যে কোন ব্লগের সম্পদ। তাঁর কাছে ব্লগিং বিষয়ে আমি অনেক কিছু শিখেছি। লেখালেখির মাধ্যমে তিনি রুচিশীল ও সৃষ্টিশীল ব্লগিং বিষয়ে অন্যতম পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। 

    তাঁর ও আপনার জন্য রইল শুভকামনা।

    • - নীল সাধু

      শুভেচ্ছা সালাম জানবেন আবু হেনা ভাই।
      আপনার সাথে সহমত জানাই। সত্য বলেছেন।


      শুভকামনা রইলো। সুন্দর থাকুন।

    • Load more relies...
    - আহমেদ ইশতিয়াক

    ভাগ্যবান, সকল গুণী ব্লগারদের সংস্পর্শে আসতে পেরে।

    মাঈনউদ্দিন মইনুল ভাইকে অনেক শুভেচ্ছা...

    আর সাধু ভাই... আপনার পোস্ট নিয়ে তো কোন কথাই নেই ...

    • - নীল সাধু

      শুভেচ্ছা ইশতিয়াক।

    • Load more relies...
    - ফেরদৌসা রুহি

    ব্লগের আলোকিত মানুষ মাঈনউদ্দিন মইনুল ভাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা

     

     

    উনি আমারও খুব পছন্দের একজন মানুষ

    নীলদাকে ধন্যবাদ

     

     

    • - নীল সাধু

      শুভেচ্ছা ফেরদৌসা!
      আশা করি কুশলে আছেন


      শুভকামনা নিরন্তর জানবেন

    • Load more relies...
    Load more comments...