Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

বাংলাদেশ পারেনি ৩৪ বছরেও থাইল্যান্ডে মেট্রোরেল হয়েছে মাত্র ৯ বছরে

ব্যাংকক, থাইল্যান্ড থেকে ফিরে ইমরুল কাওসার ইমন : পৃথিবীর সব বড় বড় শহরে নাগরিক সুবিধার কথা বিবেচনা করে নির্মাণ করা হয়েছে স্কাইট্রেন। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে স্কাইট্রেন নির্মাণ শুরু হয় নব্বই দশকে। ন’বছর দীর্ঘ নির্মানযজ্ঞ শেষে ৫ ডিসেম্বর ১৯৯৯ সালে প্রথম থাই রানী মাহা চাকরি শ্রীধরন স্কাইট্রেনের উদ্বোধন করেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ৪৩ বছর পার হয়ে গেলেও আমাদের মোট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনার পরী উড়ে গেছে আর কল্পনা রয়ে গেছে। আশির দশকে প্রেসিডেন্ট এরশাদের সময় সর্বপ্রথম এর উদ্যোগ নেওয়া হয় কিন্তু বার বার রাজনৈতিক কারণে এটি আর বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি।    এবিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ‘আশা করা হচ্ছে ঢাকায় শিগিররি মেট্রোরেল নির্মানের কাজ শুরু হবে। সকল পরিকল্পনা শেষ, এবার বাস্তবায়নের পালা।’ কিন্তু বাস্তব চিত্র হলো সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। এখনও এ মোট্রোরেল কিংবা স্কাইরেলের নির্মাণের কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না।  খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে সামরিক সরকারে সময় প্রেসিডেন্ট এরশাদ প্রথম মোট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলেন। আর এ লক্ষে একটি রাশিয়ান নির্মাতা সংস্থাকে ফিজিবিলিপি টেস্ট করার জন্য দায়িত্বও দেয়া হয়েছিল। দীর্ঘ সময় ধরে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে একটি রুট ম্যাপও তৈরি করে। কিন্তু পরবর্তিতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি। এরপর বিএনপি সরকার প্রথম বার ক্ষমতা গ্রহণের পর তারা এবিষয়ে আবারো কার্যক্রম শুরু করে। তৎকালীন বিএনপি সরকার ওই রাশিয়ান কোম্পানিসহ আরো একটি সাউথ কোরিয়ান কোম্পানিকে ফিজিবিলিটি টেস্ট করার দায়িত্ব দেয়। দীর্ঘ সময় ওই কাজ করার পর তা অজ্ঞত কারণে আবারো ফাইল বন্দি হয়ে থাকে। এরপর নব্বই-এর দশকে আওয়ামী লীগ সরকারও বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা শুরু করে। কিন্তু তাতেও কোনো ফয়দা হয়নি। পরবর্তিতে ২০০০ সালের পর বিএনপির যোগাযোগ মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বিভিন্ন সময় সাধারণ মানুষকে মেট্রোরেলের স্বপ্ন দেখালেও সে স্বপ্ন শুধু স্বপনই থেকে যায়, তা আর বাস্তবে রূপ নেয়নি। অবশেষে আবারো আওয়ামী লীগ সরকার এসে নতুন করে পরিকল্পনা করে আন্ডার গ্রাউন্ডের পরিবর্তে স্কাইট্রেন নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে। যা এখনও রুট নির্ধারণের কার্যক্রমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।  অন্যদিকে থাইল্যান্ড সরকার ব্যাংকক শহরে মাত্র ৯ বছরের মাথায় স্কাইট্রেনের অধিকাংশ নির্মাণ কাজ শেষ করে এবং যাত্রী পরিবহণ করে। ব্যাংককে স্কাইরেল নিয়ন্ত্রণ করে ওই দেশের সরকারি সংস্থা ব্যাংকক মেট্রোপলিটন এডমিনিস্ট্রেশন (বিএমএ)। বিএমএ কর্তৃপক্ষ জানায়, থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের মানুষের জীবনযাত্রার মানকে স্বাভাবিক রাখতে ১৯৯০ সালে সরকার স্কাইট্রেন নির্মাণের কাজ শুরু করে। আর এর নামকরণ করা হয় ‘ব্যাংকক মাস ট্রান্সিট সিস্টেম’ অথবা ‘বিটিএস’। পুরো ব্যাংকক শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যানজট মুক্ত করার লক্ষে ৩৬ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার জুড়ে তৈরি করা হয় স্কাইরেল। এতে মোট ৩৪টি স্টেশন রয়েছে। আর এক সঙ্গে ডাবল লাইনে দিনের শুরু থেকে মাঝ রাত পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯০ সালে ব্যাংককে মেট্রোরেলের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। আর ওই বছরেই কানাডার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিন। কিন্তু মাত্র দু’বছরের মাথায় ১৯৯২ সালে রাজনৈতিক কারণে ওই কোম্পানিটির সঙ্গে সরকারের চুক্তি বাতিল হয়ে যায়। এবং পরবর্তিতে সামরিক সরকার ওই বছরেই নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে পুররায় কাজ দেয়। এ নির্মাণ কাজের মোট ২৮ দশমিক ১ শতাংশ টাকা দেয় সরকার। আর বাকি খরচ বহন করে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। মাত্র ১০ বছরের মধ্যেই নির্মাণ সম্পন্ন হয় স্কাইট্রেনের।  সরেজমিন দেখা গেছে, ব্যাংকক শহরে তিন ধরনের ট্রেন লাইন রয়েছে। এর মধ্যে সবগুলো রেল স্টেশনেই রয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে টিকেট ক্রয় ও গেইট পাস। এক কথায় টিকেট ক্রয়ের সময় একটি অটোমেশিনে কয়েন দিলে এরপর গন্তব্য অনুযায়ী টিকেট বেরিয়ে আসে। যেখানে মানুষের কোনো কার্যক্রম নেই। স্টেশনে অপেক্ষমান রাশিয়ান যাত্রী গ্রেস বলেন, ‘এ ট্রেন ব্যবস্থা ব্যাংককের মানুষের জীবন যাপনকে খুবই সহজ, সাশ্রয়ী ও উন্নত করেছে। মানুষের সময়ও বাঁচিয়ে দিচ্ছে।’ তিনি বলেন, আমি আশির দশকে ব্যাংকক শহরে এসেছিলাম। সেসময় আমি ভেবেছিলাম আর এ শহরে আসবো না। এটি ছিল নোংরা, যানজট আর বিরক্তের এক শহর। কিন্তু অস্বাভাবিক ভাবে মাত্র ১৫ বছরে এ শহরের পুরো দৃশ্যপটই পরিবর্তন হয়ে গেছে। যেটা কল্পনা করাও কঠিন। তিনি আরো বলেন, ‘এখন আমি ছুটি পেলেই ব্যাংককে চলে আসি। কারণ এখানে সব সুযোগ সুবিধাই আছে।’  জানা গেছে, ৯ ডিসেম্বর ২০০৫ সাল থেকে প্রতিদিন ১০ লাখ লোক এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাতায়াত করে। ২০১৪ সাল থেকে ৫১টি অত্যাধুনিক ট্রেনের মাধ্যমে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ এ ট্রেনে চলাচল করে। ১৯৯৯ সালের পর থেকে ২০০৯, ২০১১, ২০১৩ সালে পাঁচ দফায় এ রেলের সম্প্রসারণ করা হয়। কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৭ সালের মধ্যে আরো ১২ দশমিক ৬ কিলোমিটার সম্পসারণ করা হবে। এবং এতে স্টেশন হবে আরো ৭টি।  

১ Likes ০ Comments ০ Share ৪৪২ Views