।। ১ ।।
ঢাকা শহরে এমন নিরিবিলিতে বাসা ভাড়া পাওয়া চাট্টিখানি কথা না। এর উপর বাড়িওয়ালার মেয়ে (মিলি)যদি সুন্দরী হয় তাহলে তো সোনায়-সোহাগা! ঝোপ বুঝে কোপ মারতে পারলেই রাজ্য ও রাজকন্যা দুটোই আমার।কিন্তু বাড়িওয়ালা জাদরেল টাইপের লোক।ভাড়াটিয়াদের ছাদে উঠা সম্পুর্ন নিষেধ বলে ঘোষনা করল। মিলিদের দোতলা ফ্ল্যাটের নিচতলায় আমরা আর উপরের তালায় থাকে মিলিরা।
সেদিন রাতে প্রচন্ড গরমে টিকতে না পেরে নিষেধাজ্ঞার খ্যাতা পুড়ে ছাদে উঠে হাওয়া খাচ্ছিলাম।পরনের কাপড় বলতে ছিল শুধু লুঙ্গি। দখিনা বাতাস আর মৃদু চাঁদের আলোতে যখন আমি কবিতার জাল বুনতে ব্যস্ত তখনই পেছনে হঠাৎ মেয়েলি কন্ঠের আওয়াজে হুঁশ ফিরে পেলাম।
- অ্যাই, কে ওখানে?
এই সেরেছে, ধরা খেয়ে গেলাম নাকি!ওখান থেকে সরতে গিয়ে খেয়াল করলাম লুঙ্গিটা আর জায়গামত নেই। কখন যে বাতাসের দোলায় পাশে ক্যাকটাস গাছের সাথে জড়িয়ে গেছে টের পাইনি। এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির ঘনঘটায় হতচকিত হয়ে মান- সম্মান বাঁচাতে ওটা ফেলেই ছাদ থেকে দিলাম লাফ। পরদিন শুনতে পেলাম কাল রাতে মিলি নাকি ছাদে ল্যাংটা ভূত দেখে জ্ঞান হারিয়েছে।যাক বাবা, এ যাত্রায় অন্তত বাঁচলাম !!!
।।২ ।।
সামনেই কোরবানীর ঈদ। বাবা এবার একটা কাল ছাগলও কিনেছে। সেদিন বিকেলে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে মিলি আর তার ভাইয়ের ব্যাডমিন্টন খেলা দেখছিলাম।আমার পাশেই ছিল ছাগলটা।আমার মুখে থাকা চকলেটটা হঠাৎ মাটিতে পড়ে গেল।মিলিকে দেখতে এতই মশগুল ছিলাম যে, বেখেয়ালে সেটা মাটি থেকে তুলে আবার মুখে দিলাম।
কিন্তু ব্যাপার কি? চকলেটের স্বাদটা এমন লাগছে কেন? নিচে চোখ পড়তেই দেখি ছাগলের ল্যাদার মাঝে আমার চকলেটটা পড়ে আছে। তাহলে কি আমি চকলেট ভেবে ছাগলের ……...?? আমার আর বুঝতে বাকি রইল না। ওয়াক থু!!!!
।। ৩ ।।
গরু্র সাথে আমার শত্রুতা বেশ আগে থেকেই।ন্যাড়া বেল তলায় বারবার যায় না। কিন্তু আমাকে যেতে হল। ঈদের পরদিন সকালে মিলি এসে জানাল তার বাবা নাকি আমাকে জরুরি তলব করেছেন। আমি তড়িঘড়ি করে গিয়ে দেখি মিলির বাবা হাতি সাইজের গরু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।ওনারা ঈদের পরদিনও কোরবানী করেন। কিন্তু আজ এটিকে জবাই করার মত কাউকে খুঁজে পাচ্ছেন না।তাছাড়া উনার নিজেরও আগের দিন আঙ্গুল কেটে গেছে।জবাই করার গুরুদ্বায়িত্ব এখন আমার উপর অর্পন করতে চান।
গরুর দিকে তাকিয়েই আমার গলা শুকিয়ে এল। জীবনে একটা মুরগীও জবাই করিনি।কিন্তু মিলির সামনে নিজের প্রেস্টিজ রক্ষার্থে রাজি হয়ে গেলাম। আশেপাশের কিছু পোলাপান এনে বহু কসরত করে গরুকে শোয়ানো হল।আমি চোখ বন্ধ করে কাপা কাপা হাতে গরুর গলায় ছুরি চালালাম।
কিন্তু কি ব্যাপার? কাটে না কেন? পাশ থেকে এক পিচ্চি হেসে বলল – “ আরে ছুরি উল্টো করে ধরে ভোতা পাশ দিয়ে চালালে কাটবে কি করে?” ওহ্ তাইতো! এতই নার্ভাস ছিলাম খেয়াল করিনি। তাড়াতাড়ি ছুরি ঠিক করে ধারাল পাশ দিয়ে আবার দিলাম পোঁচ।যেই না একটু লেগেছে, ওমনি সবাইকে ঝেড়ে ফেলে গরু উঠে দাঁড়াল। আমি সাথে সাথে ও-মা-গো চিৎকার করে ভয়ে ছুরি-টুরি ফেলে উল্টোদিকে দিলাম দৌড়।নিজে বাঁচলে গরুর নাম!
এরপরের কয়দিন ঘর থেকে বের হলেই নানামুখী তিরস্কারের চোটে লজ্জায় আর কাউকে মুখ দেখাতে পারিনি।এই জীবনে আর যাই হোক প্রেম হবে না। চুলোয় যাক সব।
“এই জীবনে আর হবে না আমার দ্বারা প্রেম,
প্রেমের মাঠে বরাবরই খেয়েই যাচ্ছি গেম।”
Comments (0)
গরুর একটা ছবি দিলে দেখতে পারতাম বেশ ।
ঈদের অনেক শুভেচ্ছা রইল আপনার এবং আপনার পরিবারের জন্যে ।।