প্রতিশ্রুতিশীল ব্যাটসম্যান ছিলেন। বয়স ছিলো তখন মাত্র ২২। কিন্তু ক্রিকেট মাঠই ফিলিপ হিউজেসের মতো আরো আগেই সেই টগবগে পাকিস্তানী যুবা জুলফিকার ভাট্টিকে। বুকে বলের আগাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। একটি বল কিভাবে মৃত্যুর কারণ হয়ে দাড়াতে পারে তার শেষ প্রমাণটা ভাট্টির। ঘটনাটা গেলো বছরের শেষ সময়টার। হিউজের মৃত্যুর পর এখন তো স্তম্ভিত এবং শোক সাগর বলা চলে ক্রিকেট বিশ্বকে। খেলার ভালোবাসায় মাঠে নেমে মৃত্যুর দেশে পাড়ি দেওয়ার এমন মহা বিয়োগান্ত ঘটনা নিয়মিত ঘটে না মোটে। কিন্তু ইতিহাস বলছে, ক্রিকেটাররা আসলে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েই দেশের জার্সি শরীরে তুলে নামেন মাঠে।
ভাট্টি নিজের প্রিয় ওয়ান ডাউনে ব্যাট করছিলেন। লোকাল ক্লাবের সুপারস্টার হয়ে ওঠা ভাট্টির মৃত্যুতে পাকিস্তানের তৃতীয় সবচেয়ে বড় সিন্ধ রাজ্যে তিন দিনের জন্য সব ধরনের খেলাধুলা বন্ধ থাকে। হিউজেসের মৃত্যুতে যেমন ৪ ডিসেম্বর শুরু হতে যাওয়া ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচটাও অনিশ্চয়তায় পুরোপুরি। ভাট্টি, হিউজেসের মতো ক্রিকেটের ভালোবাসায় মাঠ থেকেই কখনো না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার ইতিহাসটা খুব দীর্ঘ নয়। তবে এমন প্রত্যেকটা মৃত্যুই তো চোখে জল আনার মতো। রেকর্ড ঘেটে দেখা যাচ্ছে এর আগে আরো পাঁচজন ক্রিকেটার বলের আঘাতে আহত হয়ে পাড়ি জমিয়েছেন পরপারে। একটা মাত্র বল যে কিভাবে জীবন সংহারী হয়ে যায় কখনো, তা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে এবং হচ্ছে। ক্রিকেটারদের নিরাপদ রাখতে অনেক রকম গার্ড আবিষ্কার হচ্ছে। কত নিরাপত্তার ব্যবস্থা। তারপরও ক্রিকেট মাঠে ঢোকা মানে জীবনটাকে হাতে নিয়েই সবুজ ঘাসে পা রাখা। ১৯৫৭ সালে পাকিস্তানের মাত্র ১৭ বছরের আব্দুল আজিজ বুকে বলের আঘাত পাবার চার দিন পর মারা যান। ২০১৩ সালেই দক্ষিণ আফ্রিকার ৩২ বছরের অভিজ্ঞ ফাস্ট ক্লাস ক্রিকেটার ড্যারেন র্যান্ডাল মাথার পাশে আঘাত পেয়ে জীবন হারান। বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে তো কখনো সম্ভব হবে না রমন লাম্বার মৃত্যুর কথা ভোলা। ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে লিগের খেলা চলছিল।অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট এক ওভারের শেষ তিন বলের জন্য শর্ট লেগে দাঁড় করান ৩৮ বছরের ওই প্রবল সাহসী ক্রিকেটারকে। হেলমেট নিতে বললেও নেননি লাম্বা। সেই সাহসই হয়েছিল কাল। বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরিয়ান মেহরাব হোসেন অপির ব্যাট যে মুত্যুদূত হয়ে উঠেব কে জানতো! তার ব্যাট থেকে ছুটে আসা বল লাম্বার কানের পাশে আঘাত করে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ার পরও নিজে হেঁটেই মাঠ ছাড়েন লাম্বা। হাসপাতালে নেওয়া হয় তখনই। তিন দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর ওই বয়সে মৃত্যুর দেশই হয়েছে লাম্বার শেষ ঠিকানা।
ইতিহাস বলছে বলের আঘাতে ক্রিকেট মাঠ থেকে মৃত্যুর দেশে চলে যাওয়া প্রথম ক্রিকেটারের নাম জর্জ সামার্স। ঘটনাটা ১৮৭০ সালের। জর্জ তখন ২৫ বছরের। এই ইংলিশ ক্রিকেটার তার জীবনের সব ফাস্ট ক্লাস ম্যাচই খেলেছেন নটিংহামশায়ারের হয়ে। লর্ডসের উইকেট তখন খুব জঘণ্য হিসেবে পরিচিত। ১৯ জুন লর্ডসে জন প্লাটসের একটি শর্ট ডেলিভারির শিকার হন জর্জ। আর হেলমেট তো তখন থাকার প্রশ্নই আসে না। পরের ব্যাটসম্যান বিপজ্জনক বোলিংয়ের প্রতিবাদে প্রতিবাদে মাথায় তোয়ালে জড়িয়ে নেমেছিলেন মাঠে। মাথায় আঘাত পাওয়া জর্জ অন্যদের সহায়তায় মাঠ ছাড়েন। সবাই ভেবেছিল, চোটটা অত মারাত্মক নয়।
হাসপাতালেও যাননি জর্জ। ট্রেনে করে ফিরে যান নটিংহামে। কিন্তু এই ইনজুরিই চার দিন পর পৃথিবী থেকে কেড়ে নিয়ে যায় তাঁকে। ২১ জুন ছিল জর্জের ২৫ পেরিয়ে ২৬ হওয়ার দিন। হিউজ যেমন জন্মদিন পালনের দরজায় দাঁড়িয়েও মাঠ থেকে চির অজানায় চলে গেলেন। ৩০ জুন ২৬ শেষ হতো তাঁর। ক্রিকেট ইতিহাসে মাঠে বলের আঘাতে মর্মান্তিক মৃত্যুর প্রথম ও শেষ ঘটনার সঙ্গে কি দুঃখজনক মিলটাই না ঘটে গেল! উৎসঃ কালেরকণ্ঠ