Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

বর্ণ হীন

১০ বছর আগে

বর্ণালি পাখি

যেখানেই আছে গুল্ম-আবৃত পাতাঝরা জঙ্গল, সেখানেই দেখা যায় অপরূপ সুন্দর এক পাখি। লোকালয় থেকে সামান্য দূরে ঝোপঝাড়ে ভরা বাগানেও দেখা যায়। কিন্তু তার আশপাশে বাঁশবন আর আগাছায় পরিপূর্ণ নালা-নর্দমা কিংবা খাল থাকতেই হবে। হাঁটার মধ্যে চাঞ্চল্য থাকলেও, ডাক দেওয়ার সময় পাখিটির ভঙ্গি হয় দেখার মতো। অনেকটা বনমোরগের মতো মাথা ও ঘাড় পেছন দিকে হেলিয়ে বুক চিতিয়ে হাঁটে। তারপর ঠোঁট জোড়া উপর দিকে তুলে শিস দেয় পরপর তিন-চারবার, ‘হুইট-টিউ’। মূলত ডাকাডাকি করে সকালে আর সন্ধ্যায়। তবে আকাশ মেঘলা হলে দিনের বেলায়ও ডাকে।

কাঠশালিক আকারের এই পাখিটির নাম ‘বর্ণালি’। ইংরেজি নাম The Indian Pitta এবং বৈজ্ঞানিক নাম Pitta brachyuran। ভারতে এটা ‘নওরং’ নামেও পরিচিত। রংয়ের বাহার যেন তার সারা শরীরে-- নীল, সবুজ, হলুদ, কালো, সাদা, কোন রং নেই তার শরীরে। পেটে আর লেজের তলায় আছে টুকটুকে লাল ছোপ। এ কারণে, নওরং নামেই ডাকা হোক আর বর্ণালি নামেই, দুই নামেরই সার্থকতা স্পষ্ট।

দিনের বেলা ওরা মাটিতে ঘুরে বেড়ায়। মাটিতে ঝরাপাতা সরিয়ে সরিয়ে পোকা খোঁজে। চলাফেরা করে লাফিয়ে লাফিয়ে। তখন তার ছোট্ট লেজখানা বারবার ওঠানামা করে। সন্ধ্যা হলেই মাটি ছেড়ে গাছের ডালে উঠে যায়। রাত কাটায় গাছের ডালেই। অবশ্য দিনের বেলাও মাঝেমধ্যে গাছের ডালে উঠে যায়। কোনো কারণে ভয়ে পেলেই উড়ে গিয়ে কাছাকাছি কোনো গাছের ডালে আশ্রয় নেয়। আবার ভয় কেটে গেলে নেমে আসে মাটিতে, আহারের খোঁজে।

ওরা লম্বায় হয় প্রায় ২০ সেন্টিমিটার। ছেলে ও মেয়েদের আলাদা করে চেনার সহজ উপায় অবশ্য নেই। মজার বিষয় হল, এদের শিস নকল করে ডাক দিলে ওরা সহজে বুঝতে পারে না। উত্তরও দেয়, মানে ওরাও তখন ডাকে। এ সময় ওদের পর্যবেক্ষণ করা অনেক সহজ।

গেরুয়া রংয়ের মাথা বর্ণালির। মাথার চাঁদি থেকে একটি কালো দাগ চওড়া হয়ে মাথার শেষ পর্যন্ত এসে ঠেকেছে। চোখের নিচ থেকে অন্য একটি কালো দাগ গিয়ে মিশেছে মাথার দাগের সঙ্গে। দুই চোখের ঠিক উপরের দিকে আছে দুটি সাদা দাগ। যেন সাদা ভ্রু। পিঠ সবুজ, কটি সবুজ। কোমরে উজ্জ্বল নীল পালক। আর লেজের নিচে এক ছোপ লাল দাগ। এক শরীরে এত রংয়ের বৈচিত্র্য কিন্তু অন্য কোনো পাখিরই নেই। ঠিক এ ধরনের পাখি ইউরোপ কিংবা আমেরিকাতেও দেখা যায় না।

ওদের খাবার তালিকায় আছে পিঁপড়ে, পিঁপড়ের ডিম, গোবরেপোকা, আরশোলাসহ মাটিতে ঘুরে বেড়ানো সব ধরনের পোকাই। একটি কথা না বললেই নয়, প্রজনন ঋতু ছাড়া ওরা একা-একাই ঘুরে বেড়ায়। দুটি বর্ণালি মুখোমুখি হলেই ঝগড়া বেঁধে যায়। যাকে বলে, ওরা ভীষণ ঝগড়াটে।

বর্ষাকালই বর্ণালিদের প্রজননকাল। মে থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে ওরা বাসা বানায়। ডিম পাড়ে, বাচ্চা ফোটায়। ডিম পাড়ে ৪ থেকে ৬টি। উজ্জ্বল সাদা ডিম। কয়েকদিন গেলে সেই ডিমে বেগুনি রংয়ের ছিটছোপ দেখা দেয়।

যেখানে সুযোগ পায় সেখানেই বাসা বানায় ওরা। তবে বাসা বানানোর জন্য পছন্দের জায়গা ঝোপঝাড়সমৃদ্ধ বড় গাছের গোড়া, কিংবা গোড়া থেকে একটু উপরের চিকন ডাল। দুই ডালের ফাঁকে গোলাকার বাসা বানায় তারা। সেই গোলাকার বাসার এক পাশে থাকে গোল মতো ছোট্ট দরজা। সেই দরজা দিয়েই তারা যাওয়া-আসা করে।

অনেকেই মনে করে ওরা আমাদের দেশে অতিথি হয়ে আসে। মানে যাদের বলা হয় অতিথি পাখি। কথাটা আদৌ ঠিক নয়। বর্ণালিরা বাংলাদেশের স্থায়ী বাসিন্দা। তবে শীতকালে তারা ভ্রমণে বের হয়। আমাদের দেশ থেকে অতিথি হয়ে চলে যায় দক্ষিণ ভারতে। আবার শীত শেষ হলেই চলে আসে।

বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর প্রদেশেও বর্ণালিদের দেখা যায়।


 

 

০ Likes ৯ Comments ০ Share ৫২৭ Views

Comments (9)

  • - ঘাস ফুল

    গল্পের শুরুটা চমৎকার হয়েছে। রুদ্র আর নীলিমার খুনসুটিগুলো বেশ লাগলো। লেখায় এক ধরণের আকর্ষণ আছে, যা পাঠককে ধরে রাখতে সাহায্য করবে। এখনো পর্যন্ত ভালোবাসার গল্পই মনে হচ্ছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় আপাতত বলা মুশকিল। সব মিলিয়ে প্রথম পর্ব দারুণ লাগলো। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ইশতিয়াক। 

    - আলভিনা চৌধুরী

    না বুঝলে নীলিমা রাগ করবে। নাহ্‌ রাগ না। অভিমান করবে। হয়তো কাঁদবে। রুদ্র কি বুঝবে? বোঝার কথা। চোখের জল কখনো লুকায় না। তারপরও না বুঝলে গাধাটার খবর আছে আজ। খুনোখুনি হবে। খুনোখুনির পর ভালোবাসা। তার আগে না।

    মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন ! 

    - সনাতন পাঠক

    ভাল লাগা রইলো। ধন্যবাদ।

    Load more comments...