Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

বউ পিটানির গল্প

 

তখন ক্লাশ টু তে পড়ি। সবুজ ঘেরা প্রকৃতির বুকে আমাদের বাড়ির পাঁচটা ঘর যেন প্রকৃতির এক একটা অলংকার। মালতি দি, কাজলা দি, স্বপ্না দি- প্রকৃতির আদরে গড়া তিনজন বালিকা। আমার চেয়ে ওরা বছর কয়েকের বড় হবে। তিনজন মেয়ের সাথে আমি একমাত্র ছেলে। ওদের সাথে আমার ফেলে আসা স্বপ্নের শৈশব জড়ানো।


আমরা একসাথে খেলাধুলা করতাম। ওরা তিনজন মেয়ে বলে ওদের সাথে মেয়েলি খেলাগুলোই জমত। বউচি, পুতুলের বিয়ে, দাপ্পা, এক্কা- দোক্কা, সংসার- সংসার খেলায় ওদের মধ্যমনি ছিলাম আমি। যা দুষ্ট, যা চঞ্চল, যা শয়তান (ওদের ভাষায়) ছিলাম যে ওরা সবসময় আমায় নিয়ে ব্যস্ত থাকত। তবু সবখেলায় যেন আমার উপস্থিতি না থাকলে ওদের চলেনা।

একদিন সংসার সংসার খেলতে গিয়ে স্বপ্না দি মালতী দির একটা কলস ভেঙ্গে ফেললে ওদের মধ্যে এমন তুমুল ঝগড়া শুরু হল যে শেষ পর্যন্ত আমাদের সোনার সংসার ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেল। ওরা এখন আলাদা সংসার পাতবে। আমি ছেলে, তাই আমার কদর বেশি। আমায় নিয়ে টানাটানি। মালতী দির অনেক খেলনার জিনিস, তাই আমি মালতী দির সাথেই খেলতে রাজী হলাম।

একই বাড়িতে দুটো সংসার। আমি আর মালতী দি। কাজলা দি আর স্বপ্না দি। আমি আমাদের সংসারের গৃহকর্তা। আমি প্রতিদিন বাজার থেকে চাল (ইঁদুরে কাটা মাটি), ডাল (ধানের চিটা), হলুদ মরিচ (পোড়া মাটির গুড়ো), মাছ তরকারি (কচুরি পানা) ইত্যাদি নিয়ে আসি। মালতী দি রাঁধে আর আমি খাই। মাঝে মাঝে মিছামিছি ঝগড়াও হত।

বাজারের ব্যাগ খুলে মালতী দির চিৎকার, “তোমার কি আক্কেল জ্ঞান হইবে না? বাজার থেকে এই পচা মাছ কেউ আনে? চালেও তো অনেক পোকা। বুঝছি কাল থেকে আমারই বাজার যাওয়া লাগব।”

আমিও মালতী দির দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে বলতাম, “এই বেটি, তরকারিতে এত লবণ কেন? মাছ গুলোও তো পুড়িয়ে ফেলেছিস।”

এইভাবে কর্তা গিন্নির সংসার ঝগড়া হাসি ঠাট্টায় ভালোই চলছিল। হঠাৎ একদিন স্বপ্না দি আমার হাতে একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বলল, “অপু, এভাবে মিছামিছি সংসার খেলে মজা নেই। আজ যদি বাড়ি গিয়ে দেখিস মলতীর রান্না হয়নি তাহলে ওরে এমন মার মারবি যাতে ও চিল্লায়া কান্দে।”

স্বপ্না দির কাছ থেকে খেলার নতুন কৌশল শিখে আমি বাঁশের কঞ্চি দোলাতে দোলাতে ঘরে ফিরলাম। কলাপাতার বেড়া দেয়া আমাদের রান্নাঘরে ঢুকে দেখি রান্না এখনও হয়নি। এখনও মালতী দি মাছ কাটছে। আমি হাতের কঞ্চি নাড়াতে নাড়াতে ওর পাশে দাড়ালাম। মালতী দি আমার দিকে ফিরে তাকাল, ওর চোখে শংকা নেই। আমি ওর পিঠে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বসিয়ে দিলাম এক ঘা। মালতী দি কেঁদে ফেলল।

বাইরে থেকে স্বপ্না দি বলল, “আরে আরও মার।” আমি আবার কঞ্চি তুলতেই মালতী দি দৌড় দিল। স্বপ্না দির ইঙ্গিতে আমি মালতী দির পিছু ছুটলাম। কিছু দূর যেতে না যেতেই মালতী দি হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল। আর আমি বাঁশের কঞ্চি দিয়ে পিটুনির পর পিটুনি দিতে থাকলাম। আর ও চিৎকার করে যাচ্ছিল। অবশেষে মালতী দির মা ও জ্যাঠাইমা ওকে উদ্ধার করল।

পরদিন বাবা মালতী দির কাছে আমাকে নিয়ে গেল। গিয়ে দেখি দিদি জ্বরে কাতরাচ্ছেন। ওর পিঠে জ্যাঠাইমা তেল মালিশ করে দিচ্ছিল। আমি ওর পা ধরে বললাম, “এমন হবে বুঝতে পারিনি দিদি। ঐ স্বপ্না দি ই তো আমার হাতে কঞ্চিটা দিয়ে তোকে মারতে বলল।”

মালতি দি কাতর স্বরে আমার হাতটা ধরে বলল, “তা আমি জানি ভাই। তুই আর কখনও ওর কথা শুনিস না।”

এত সহজে ওর কাছ থেকে ক্ষমা পাব ভাবিনি। তবু ওর শিয়রে গিয়ে বললাম, “সত্যি তুই আমাকে মাফ করে দিয়েছিস দিদি?’

মালতী দি স্মিত হেসে বলল, “হ্যা রে। যা হাড়ি পাতিল গুলো গুছিয়ে রাখ। নইলে স্বপ্না শয়তানি আবার চুরি করবে।”

আমি উঠে যাচ্ছিলাম। মালতী দির ডাকে আবার দাঁড়ালাম। “আর শোন। চাল নেই, চাল আনিস।”

কিছু মানুষ এত সহজে ক্ষমা করার গুণ কোথা থেকে পায় কে জানে। ক্ষমা এত সহজ? একটা খুনি আমার একজন প্রিয় মানুষকে খুন করে বলেছিল, “আমাকে কি কোনদিন ক্ষমা করতে পারবেনা?” আমি রাগে ক্ষোভে বলেছিলাম, “মানুষ তো, হয়ত পারবনা। যদি কখনও দেবতা হতে পারি ক্ষমা করে দেব।” আজ অনেক দিন পর, দিদির কথা মনে পড়ে মনে হচ্ছে আমি ভুল বলেছিলাম। দেবতারা বর্ণাঢ্য পূজা নৈবেদ্য ছাড়া ক্ষমা করতে জানেনা। অথচ চোখের সামনে সেই খুনিটা উল্লাস করছে দেখেও মনে হচ্ছে এ নির্বোধ, তুমি মানুষ। একে ক্ষমা করে দাও। হাতের মধ্যে অনেকগুলো অস্ত্র থাকা স্বত্বেও আমি কিছুই করতে পারলাম না। একমাত্র মানুষই জানে ক্ষমা করতে।

১ Likes ৫ Comments ০ Share ৬৮২ Views

Comments (5)

  • - Developer

    • - আশরাফুল কবীর

      #প্রথমেই এলিস মুনরোকে শুভেচ্ছা পাশাপাশি নোবেল সাহিত্য পরিষদকে শুভেচ্ছা জানাই ছোট গল্পের কারিগরকে এ পুরষ্কারের জন্য নির্বাচিত করায়..আশা রাখি কিছু গল্প পড়তে পারবো।

      #ভাল থাকুন সবসময়, এ প্রত্যাশা।