Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

"ফেলে আসা স্মৃতি"

সবার জীবনেই কম-বেশি অভিজ্ঞতা থাকে। প্রায় প্রতিনিয়তই কাউকে না কাউকে নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। আমিও হয়েছিলাম আর সেই অভিজ্ঞতার কথাই আজ বলব।  

(১) আমি তখন ক্লাস নবম শ্রেণীর ছাত্রী। যথানিয়মেই একদিন স্কুল থেকে বান্ধবীদের সাথে গল্প করতে করতে বাসায় ফিরছি। এমন সময় দেখলাম আমাদের পাশ কাটিয়ে তিন/চারটে ছেলে যাচ্ছে কিছুটা সন্ত্রাসীদের মত ভাব নিয়ে। অপেক্ষাকৃত সামনের ছেলেটি কি যেন বলছে আর কিছুক্ষণ পরপর সিগারেটে ফুঁ দিচ্ছে। এটা দেখে হতভম্ব আমি সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়লাম কারন ছেলেটার বয়স বেশি হলেও ৯বছরের উপরে নয়। এতটুকু বয়সে কিভাবে মাদকের কালো থাবায় ছেলেটির সুন্দর জীবনটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সেকথা হয়ত ছেলেটি নিজেও অনুভব করতে পারছে না। পরিস্থিতিটায় এক মুহূর্তের জন্য কোথায় যেন হারিয়ে গেলাম। ভাবলাম ছেলেটির পরিবারের কথা, তাদের বাবা-মা কতটাই না কষ্টে আছেন এরকম একটি ছেলে নিয়ে। আর আমাদের সমাজটাও কতটা কঠিন তারা পারে শুধু মাদকাসক্তকেই ঘৃণা করতে মাদকদ্রব্যকে নয়! ছেলেটি যদি আমার ভাই হত তাহলে হয়তবা টেনে গালে দু’টো চড় বসিয়ে দিতাম কিন্তু ভাইয়ের মত ভাইতো না! আর তাছাড়া আমাদের দেশের স্বার্থপর মানুষগুলো (আমিও অবশ্যই ব্যাতিক্রম নই)মুখে যতই বলুক না কেন নিজে কতটা এগিয়ে এসেছে মানুষের কল্যানের জন্য বলুন?! বান্ধবীদের কথায় চিন্তার সেতুতে টান পড়ল, যেন সংবিৎ ফিরে পেলাম। একবার পিছনের দিকে তাকিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলাম। পথে আর কোন কথা বললাম না, সারাটাদিন মন খারাপ করেই কেটে গেল।  

(২) একদিন কোচিং ছুটির পর বান্ধবীরা মিলে বইয়ের দোকানে যাওয়ার জন্য মিরপুর-১০এ গেলাম। সেখানে ওভারব্রিজের ওপর উঠার পর অবাক হয়ে গেলাম এটা দেখে যে সেখানে প্রায় ৮/৯মাসের একটি শিশু শুয়ে আছে ভিক্ষার জন্যে। কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়ালাম, এদিক-সেদিক তাকিয়ে বাচ্চার বাবা-মাকে খুঁজলাম কিন্তু কাউকেই আমরা পেলাম না। সেখানে দাঁড়িয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ভাবছি এতটুকু অবুঝ শিশুর জীবন নিয়ে ব্যাবসা করার মত বাবা-মাও যে এই পৃথিবীতে আছেন তা আমার ধারণার বাহিরে ছিল। এই পরিস্থিতিতে বেশিক্ষণ ঠিক থাকতে পারলাম না সেখানে, বুকের ভেতরটা কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠল। শত চেষ্টা করেও চোখের জল আটকে রাখতে পারিনি সেদিন। নিজেকে প্রচন্ড অপরাধীর মত লাগছিল, আমার বান্ধবীরা আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল যদিও কিন্তু তখন আমার কিছুই করার ছিল না, অনেক চেষ্টা করেও কান্না থামাতে পারছিলাম না। ওরা আমাকে বারবার বলছিল এতটুকু, সামান্য বিষয় নিয়ে মন খারাপ করে লাভ কি! যেখানে একজনের জীবন নিয়ে কথা সেটা কি করে সামান্য বিষয় হয় আমি বুঝতে পারলাম না। টিস্যু দিয়ে চোখ মুছে বাচ্চাটাকে ৫০টাকা দিয়ে চলে এলাম সেখান থেকে। অবশ্য এটা ছাড়া আমার আর কিছুই করার ছিল না কারন যেখানে আমার নিজের জীবনধারণের জন্য বাবা-মায়ের উপর নির্ভর থাকতে হয় সেখানে আমি কি করে ঐ বাচ্চাটার সুস্থভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা দেব?! আসলে জীবনে অনেক সময় এমন অনেক পরিস্থিতি আসে যখন আমরা আসলেই চাই অন্যের জন্য, সমাজের জন্য অনেক কিছু করতে কিন্তু না পারার ব্যার্থতা বরাবরই দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়! আমরা যা চাই তা নৈতিক হলেও অনেক সময়ই আমরা সেটা করতে পারিনা আর যা চাই না হোক অনেক সময় সেটাই হয় আর এটাই হচ্ছে অন্তত আমার জীবনের অনেক বড় একটা সীমাবদ্ধতা!  

(উল্লেখ্য, লেখা দু’টো সম্পূর্ণই আমার স্কুল সময়ের ডায়েরি থেকে তুলে দেয়া যদিও কিছুটা সংশোধন করার চেষ্টা করেছি তবুও বানানে অথবা শব্দ প্রয়োগে কোথাও ভুল থাকলে ক্ষমাপ্রার্থী। স্মৃতিচারণায় লেখব বলে পুরনো ডায়েরি খুঁজতে গিয়েই লেখাটা খুঁজে পাওয়া। ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার জন্য)
০ Likes ০ Comments ০ Share ৪২৯ Views

Comments (0)

  • - ওয়াহিদ মামুন

    ভাল লিখেছেন

    - প্রলয় সাহা

    অনেক ভালো লেগেছে। 

    - তামান্না তাবাসসুম

    সুন্দর লেখনী :)