Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

sarwar hossain bhuiyan

১০ বছর আগে

ফটোসাংবাদিক আফতাব আহমেদ: ১৯৭৪ সালে বাসন্তীর জাল পরা জাল ছবি প্রসঙ্গ।

আমার বাসা পশ্চিম রামপুরায়। ফটোসাংবাদিক আফতাব আহমেদের বাসাও পশ্চিম রামপুরার ওয়াবদা রোডে। তিনি নিজ বাসায় খুন হয়েছেন। গত পরশুদিন সকালে তার হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। তবে কি কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে এ বিষয়ে পুলিশ ও পরিবার কেউ এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি। আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই, তার হত্যাকারীকে খোজে বের করুক এবং হত্যাকারীর প্রকৃত শাস্তি হোক।

কে সেই আফতাব আহমেদ?

তিনি সেই আফতাব আহমেদ, যিনি ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষের সময় “বাসন্তীর জাল পরা ছবি”

তোলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। যা পরবর্তীতে ভূয়া ছবি হিসেবে প্রকাশিত হয়। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর তিনি নিজেও তা স্বীকার করেছিলেন। আরো প্রমাণ হিসেবে জনাব লুৎফর রহমান রিটন এর একটি লেখার হুবহু এখানে দিচ্ছি-

“দৈনিক ইত্তেফাক দুর্ভিক্ষের সন্ধানে বিশেষ এসাইনমেন্ট দিয়ে রিপোর্টার শফিকুলকবির এবং ফটোগ্রাফার আফতাব আহমেদকে পাঠিয়েছিলো রংপুরের কুড়িগ্রামে। আগেথেকেই সবকিছু নির্ধারিত ছিলো। বিশেষ একটি নৌকায় বিশেষ একজনের পথ প্রদর্শনবা গাইডেন্সে বিশেষ একটি অঞ্চলে গিয়ে একটি হতদরিদ্র পরিবারের অনাহারী মেয়েবাসন্তীকে নগদ পঞ্চাশ টাকার বিনিময়ে রাজি করানো হয় একটি ফটোসেশনে। দরিদ্র্বাসন্তী চকচকে পঞ্চাশ টাকার নোটটি পাবে যদি একটি ছেঁড়া জাল সে পরিধান করেমাত্র কয়েক মিনিটের জন্যে। সেই সময়, ১৯৭৪ সালে, হতদরিদ্র বাসন্তীর কাছেপঞ্চাশটি টাকা রীতিমতো স্বপ্নের ব্যাপার। বাসন্তী রাজি হয়েছিলো। শফিকুলপঞ্চাশ টাকার নোটটি বাসন্তীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন। গাইড-এর দূতিয়ালীতেসংগৃহিত ছেঁড়া জালটি গায়ে জড়িয়ে কলার থোড় সংগ্রহ করছে অনাহারী বাসন্তী। তারপাশে দুর্গতি নামের ছিন্ন পোশাকের আরেকটি মেয়ে। আফতাবের ক্যামেরা সেইপূর্বপরিকল্পিত সাজানো ছবিটি ধারণ করেছিলো। রংপুর মিশন সাফল্যের সঙ্গেসম্পন্ন করে ঢাকায় ফিরে এসেছিলেন ইত্তেফাকের রিপোর্টার সফিকুল আরফটোগ্রাফার আফতাব। আফতাবের তোলা ভুয়া সেই ছবিগুলোর একটি ছাপা হয়েছিলোইত্তেফাকের প্রথম পাতায়।

কিন্তু সেই জাল পরা জাল ছবিটিই একটি বিরাট প্রেক্ষাপট তৈরী করে দিয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে খুন করার পিছনে। তার কিছু কারনও আছে-

১৯৭৪ সালে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে একটা দুর্ভিক্ষ হয়েছিলো। কেউ কেউ বলেনশেখ মুজিবকে বিপদে ফেলতে শক্তিশালী একটি চক্র সেই দুর্ভিক্ষকে সৃষ্টিকরেছিলো।আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ ড. নুরুল ইসলাম বাংলাদেশের প্রথমপরিকল্পনা কমিশনের উপপ্রধান ছিলেন। বস্তুতপক্ষে তিনিই আমাদের পরিকল্পনাকমিশনের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি তাঁর গ্রন্থ “মেকিং অব অ্যা নেশন: বাংলাদেশ”-এলিখেছেন, “১৯৭৪ সালে চালের উৎপাদন ১৯৭৩ সালের চেয়ে বেশি হয়েছিল। তবে সেইবছর জুলাই-আগস্ট মাসের ভয়াবহ বন্যায় দেশের তখনকার একমাত্র বৈদেশিক অর্থউপার্জনকারী ফসল পাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামজ্যামিতিক হারে বাড়ার কারণে দেশে সব ধরনের আমদানি করা পণ্যের দামও এ সময়অস্বাভাবিকভাবে বাড়ে। বন্যার কারণে আমন চাষও বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এসময় একটি জাতীয় দৈনিক এই মর্মে নিয়মিত সংবাদ প্রকাশ করে যে দেশে ভয়াবহখাদ্যঘাটতি আসন্ন এবং প্রচুর পরিমাণে চাল চোরাই পথে ভারতে পাচার হয়েযাচ্ছে। এই সংবাদে মজুতদারেরা দারুণ উৎসাহী হন এবং বাজার থেকে রাতারাতি সবচাল উধাও করে দিয়ে দেশে এক চরম কৃত্রিম খাদ্যসংকট সৃষ্টি করেন।ড.নুরুল ইসলাম আরো লিখেছেন,

“এই সময় চোরাচালান নিবৃত্ত করার দায়িত্বে নিয়োজিতসেনাবাহিনীর তৎকালীন উপপ্রধান জিয়াউর রহমান তাঁর সঙ্গে একদিন তাঁর দপ্তরেসাক্ষাৎ করেন এবং জানান, মাসে ৫ থেকে ১০ লাখ টন চাল ভারতে পাচার হয়েযাচ্ছে। ড. নুরুল ইসলাম জিয়াউর রহমানের কাছে জানতে চান, কীভাবে এত বিশালপরিমাণের চাল চোরাচালান হওয়া সম্ভব? তখন জিয়াউর রহমান তাঁর কোনো উত্তরদিতে না পারলেও অনেকটা ক্ষুব্ধ হয়ে ফিরে যান।“

আর এদিকে দৈনিক ইত্তেফাক উত্তরবঙ্গের (অর্ধ-উন্মাদ) বাসন্তীর ছেঁড়া জাল পরা ছবিছেপে তখন চারদিকে হইচই ফেলে দেয়। পত্রিকায় উল্লেখ করা হয়, “দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এতই খারাপযে বাংলাদেশের নারীদের এখন কাপড়ের পরিবর্তে জাল পরে থাকতে হচ্ছে।“

বাংলাদেশ যে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হতে যাচ্ছে, তা প্রমাণ করার জন্য সবারআপ্রাণ চেষ্টা।শেখ মুজিবের দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যশত্রুরা তাঁকে রাষ্ট্রপরিচালনায় ব্যর্থ প্রমাণ করতে আদাজল খেয়ে উঠেপড়েলেগেছিলো। তাই আমি মনে করি, বঙ্গবন্ধু খুন হবার প্রেক্ষাপট নির্মানের পিছনে বাসন্তীর জাল পরা জাল ছবিটিও একটি কারণ। এসব কারনে আফতাব আহমেদের খুন হওয়াকে কেউ কেউ বলছেন, “যেমন কর্ম তেমন ফল”।

এবার জনাব আফতাব আহমেদ সম্পর্কে অন্য প্রসঙ্গ :

আফতাব আহমেদ বলেছিলেন, তিনি বঙ্গবন্ধু কিংবা আওয়ামী লীগের বিরোধী কেউ নন।১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যদের আত্মসমর্পণসহতিনি বঙ্গবন্ধুর বহু ছবি তুলেছেন। ৬৯-৭০-৭১ সালের বহু ঐতিহাসিক ছবি তাঁরতোলা। সেসব ছবিতে বঙ্গবন্ধুসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ আছেন।বাস্তবে তিনি বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগের বিরোধী শিবিরের বিশ্বস্ত লোকছিলেন।

তিনি যে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের বিশ্বস্ত লোক ছিলেন তার প্রমান নীচে দেয় হলো-

১৯৯৮ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন তৎকালীনবিরোধীদলের নেত্রী খালেদা জিয়া ফটোসাংবাদিকদের কোনো একটি অনুষ্ঠানেচুয়াত্তরে দুর্ভিক্ষের বিশেষ করে বাসন্তীর মর্মষ্পর্শী ছবিটি তোলার কারণেআলোকচিত্রি আফতাব আহমেদকে পুরস্কার দেবার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এবং সেই ঘোষণারপর ইত্তেফাকে বিবৃতি দিয়ে আফতাব আহমেদ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন খালেদাজিয়ার প্রতি।

 

তাছাড়া তিনি ২০০৬ সালে একুশে পদকপেয়েছিলেন । আর সেই পুরস্কারটি দিয়েছিলো বিএনপি-জামাত জোট সরকার।

২০০৬সালে আরেকটি ঘটনায় আফতাব আহমেদের রাজনৈতিক চরিত্রটি আরো ষ্পষ্ট হয়ে ধরাপড়ে। সেই বছর ইসলামিক ছাত্র শিবিরের একটি অনুষ্ঠানে তাঁকে বিশেষ পদক প্রদানকরা হয়। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর হাত থেকে পদকটি গ্রহণকরেছিলেন হাস্যোজ্জ্বল আফতাব আহমেদ।

তথ্যসূত্র-

(১) চুয়াত্তরের বাসন্তীর জাল পরা জাল ছবি এবং আলোকচিত্রি আফতাবের অস্বাভাবিক মৃত্যু

(২)বঙ্গবন্ধু হত্যার দায়

০ Likes ৪ Comments ০ Share ৮১২ Views

Comments (4)

  • - রোদেলা

    কবিতাতেই হোক বসত বাড়ী।

    • - মো: সাজিদ খান

      আপু আপনাকে ধন্যবাদ ।

    - ধ্রুব তারা

    ভাই বাংলায় কাকের চেয়ে কবির সংখ্যা বেশি। 

    • - মো: সাজিদ খান

      ভাই কথাটা আমার গায়ে লাগছে । আমি অপমানিত বোধ করলাম ।ভাল থাখবেন ।

    - sheikh akm jakaria

    আমরাও চাই, আপনি  নতুন নতুন কবিতা সৃষ্টি করে  বেচে থাকুন আমাদের মাঝে.........

    • - মো: সাজিদ খান

      দোয়া করুন আপনার চাওয়া যেন পূন্য হয় । ধন্যবাদ আপনাকে

    Load more comments...