Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

প্লাস-মাইনাস



ভালোবাসা বুঝেনা এমন কোন প্রাণি এ পৃথিবীতে নেই। জন্মের পর থেকেই তারা ভালোবাসার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পরে। সদ্য জন্মপ্রাপ্ত শিশুটিও ভালোবাসা বুঝে। হয়তো সে তখনো ভালোবাসা কি তা জানেনা। তবে সে ভালোবাসার অনুভূতিগুলো বুঝতে পারে। সেই অনুভূতিগুলোর সামান্য অনুপস্থিতি তাকে কষ্ট দেয়। একটা ছোট্ট শিশুকে দেখবেন তার বাবা অফিসে যাওয়ার সময় কেমন কান্না করে। তার মা যদি একটু আড়াল হয় তাহলে পাগল হয়ে যায়। এমন করে সংসারের প্রতিটি মানুষের জন্য শিশুটি এমন করে। সে কিন্তু কিছু না বুঝেও ভালোবাসতে শিখে যায়। কিছু না জেনেও ভালোবাসার মানুষগুলোকে তার চারপাশে সব সময় দেখতে চায়।

অর্ক আর খুশবু খুব ছোটবেলা থেকেই পাশাপাশি বাসায় থাকে। তারা ছোটবেলা থেকেই একসাথে খেলে, স্কুলে যায়। খুশবুর জীবনের প্রথম বন্ধু ছিলো অর্ক আর অর্কের জীবনেরও প্রথম বান্ধবী ছিলো খুশবু। পাশাপাশি বাসায় ছিলো বলে তাদের এই বন্ধুত্ব আরও বেশি গভীর ছিলো। কখনো কখনো তো একজন আরেকজনকে ছাড়া খেতেই বসতোনা। প্রতিদিন বিকালে তারা বের হতো, একসাথে ঘুরতো খেলতে তাদের বিল্ডিংয়ের সামনে ছোট মাঠটাতে। এভাবে করে বেশ ভালোই কেটে যাচ্ছিলো তাদের ছোট্ট বেলার জীবন। কিন্তু ধীরে ধীরে বড় হওয়ার সাথে সাথে তাদের মানসিক পরিবর্তন হতে লাগলো। অর্কটা ছিলো একটু বেশিই এ্যাডভান্স। টু-থ্রি তে পড়েই যেন বড়দের মতো বুঝতো। টু-থ্রি তে উঠেই অর্ক তখন খুশবুর সাথে বেশি মিশতে চাইতোনা। আগের মতো খুশবুর সাথে খেলতেও চাইতোনা। কিন্তু খুশবু বেচারীর তো অর্কর সাথে কথা না বললে, একসাথে খেলতে না পারলে কিছুই ভালো লাগতোনা। খুশবুটা ছিলো একটু কম চালাক, ও এতো কিছু বুঝতোনা। ওর একটাই কথা অর্কর সাথে খেলবে, আর অর্ক ওর সাথে তখন আর মিশতেই চাইতোনা। এভাবে করে ক্লাস ফাইভে উঠে গেলো তারা। আগে একসাথে স্কুলে গেলে ফাইভে উঠার পর অর্কর তীব্র আপত্তির কারণে তারা আর একসাথে স্কুলে যেতোনা। খুশবুকে তার মা স্কুলে নিয়ে যেতো আর ফেরত আনতো। খুশবুও অনেক চেষ্টা করেও যখন আর মিশতে পারেনি অর্কর সাথে তখন হাল ছেড়ে দেয়। এরপর থেকে খুশবুর সাথে অর্কর তেমন একটা কথা আর হতোনা।

প্রায় দুই বছর পর। একদিন হঠাতই অর্কের সাথে খুশবুর দেখা হয় লাইব্রেরীতে বই কিনতে যেয়ে। খুশবু খেয়াল করেনি যে অর্ক অন্য স্কুলের বুকলিস্ট দিয়ে বই কিনছে। এরপর দিন স্কুলে অর্ককে দেখলো একজন মেডামের সাথে বলতে যে সে অন্য স্কুলে চলে যাচ্ছে। অর্কর চলে যাওয়ার কথা শুনে খুশবু খুবই খুশী হয়ে ছিলো। খুশবুর অনেক রাগ ছিলো অর্কর উপর। তাই সে অর্কর চলে যাওয়ার খবর শুনে আনন্দ অনুভব করছিলো। ঐদিনই বাসায় যেয়ে দেখে অর্করা বাসা পাল্টিয়ে এক বিল্ডিং পরে অন্য একটা বিল্ডিংয়ে চলে যাচ্ছে। খুশবু এবার আরও খুশী হলো। সে রাগে বসে বলছিলো "যাক শয়তানটা দূরে চলে, আর যেন ওকে আমি আর না দেখি "

কিন্তু এই রাগ কি আসলেই রাগ ছিলো নাকি অভিমান। যে মেয়েটা এখনো বুঝতে পারেনি শুধু শুধু একটা ছেলের জন্য তার মনে এতো অভিমান জমে কেন? কেন তার সাথে মিশতে না পারার দুঃখ তাকে প্রতিনিয়ত কুড়ে খাচ্ছে? নিজের অগোচরেই যে খুশবু অর্ককে খুব ভালোবেসে ফেলেছিলো, যখন কিনা সে ভালোবাসা কি তাই জানেনা। সত্যিকারার্থে খুশবুর ভালোবাসাটাই আসল ছিলো। যে মেয়েটি তার দেহের পরিবর্তন ও মানসিক পরিবর্তন হওয়ার পরও বুঝতে পারতোনা অর্ক তার থেকে আলাদা, আগের মতো তার সাথে এখন মিশা যাবেনা। সে যে অর্ককে কতোটা আপন ভেবেছিলো তা শুধু সেই জানে। খুশবুর এই অনুভূতি কিংবা আবেগে কোন কৃত্রিমতা ছিলোনা। সত্য থেকেও আরও কয়েক ধাপ উপরে ছিলো তার এই ভালোবাসা। অর্কই শুধু বুঝতোনা, যাকে ঘিরে খুশবুর এতোসব ভালোবাসা।

অর্ক, খুশবু দুইজনই এখন একটু বড় হয়ে গেছে। বহুদিন হলো তাদের দেখা হয়না। তারা দুইজনই এখন দশম শ্রেণিতে পড়ে। একদিন দুইজনের দেখা হয়ে গেল বাসে। অর্কই খুশবুকে ডাক দিলো, "খুশবু "।খুশবু অর্কর দিকে তাকিয়ে বললো, "কেমন আছো?" "ভালোই, স্কুল ছুটি হলো এতক্ষণে তোমার? " "হ্যাঁ, আজ কোচিং ছিলো ""ও " তুমি কোথায় গেছিলে? " "প্রাইভেট পড়তে মিশু ভাইয়ের কাছে "। এরপর অর্ক বাস থেকে নেমে গেল।

এসএসসি পরীক্ষা প্রায় কাছাকাছি চলে আসছে। এখন স্কুলে শুধু মডেল টেস্ট হয়। বেশিরভাগ সময় ক্লাসে সবাই আড্ডা দিতো তখন। কারণ কয়দিন পরই রেগ ডে হবে তাদের তাই। একদিন নেহা (খুশবুর সহপাঠী) বোর্ডে লেখলো অর্ক+শাহানা। খুশবুর তখন আর বুঝতে বাকি রইলোনা যে অর্ক আর শাহানার মধ্যে কিছু একটা চলছিলো। তবুও আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য সে শাহানার পিছু নিলো। শাহানার বাসা ছিলো অর্কর বিল্ডিংয়ে। আর খুশবুর বাসা ছিলো তাদের বিল্ডিং থেকে এক বিল্ডিং পর।

মঙ্গলবার ছিলো দিনটি। সেদিন হঠাতই দুপুরের দিকে বৃষ্টি হওয়া শুরু করলো। খুশবু মনে মনে ভাবলো যদি সত্যিই তাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক হয় তাহলে তারা বৃষ্টিতে ভিজতে অবশ্যই ছাদে উঠবে এখন। তাই সে তাদের বিল্ডিংয়ের ছাদে উঠে অর্কদের বিল্ডিংয়ের ছাদের দিকে অনেক্ষণ তাকিয়ে ছিলো। হঠাতই দেখলো অর্ক আর শাহানা বৃষ্টিতে একসাথে ভিজতেছে আর হাত ধরে পাশাপাশি হাঁটছে। তখন খুশবু খুব কান্না করলো আর অনেকক্ষণ একা একা বৃষ্টিতে ভিজে বাসায় চলে গেল।

০ Likes ০ Comments ০ Share ৪২৮ Views