Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

রাজীব নূর খান

৯ বছর আগে

প্রেমের বংশীয়াল



নাম মোহাম্মদ মোস্তফা। বয়স পঞ্চাশ। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। হাস্যমুখী এবং আলাপী। গ্রামের বাড়ি বরিশাল। চার ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। সব সম্পত্তি ভাই-বোনদের বিলিয়ে দিয়ে তিনি নিঃস্ব অবস্থায় ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। এখন কারো সঙ্গে যোগাযোগ নেই। সব কিছু মিলিয়ে আলাভোলা ধরনের একজন মানুষ। সারা ঢাকা শহর ঘুরে বাঁশি বাজান। বাঁশি দিয়ে তিনি যেকোনো সুর তুলতে পারেন। পথচারীরা তার বাঁশি শুনে মুগ্ধ হয়, কেউ কেউ খুশি হয়ে কিছু টাকা দেয় কিংবা চা-দোকান থেকে রুটি-কলা খাওয়ায়।

মোস্তফা এক সময় বাঁশি শেখার জন্য অনেকের কাছে ছুটে গিয়েছেন, কিন্তু টাকা ছাড়া কেউ তাকে বাঁশি বাজানো শেখাতে রাজি হয়নি। দীর্ঘ দুই বছর সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় বাঁশি বাজানো শেখেন তিনি। মোস্তফার সঙ্গে সেদিন দেখা হয় ইস্কাটন গার্ডেনে। তিনি বলেন, ‘আমার বাঁশির করুণ সুর শুনে মানুষের চোখে পানি এসে পড়ে।’ এক প্রফেসর একবার তাকে বলেছিলেন, ‘হে বাদক তোমার বাঁশির সুরে মানুষের দুঃখ-কষ্ট ঝরে পড়ে।’
হাতে বাঁশি নিয়ে হেঁটে হেঁটে সারা দেশ ঘুরে বেড়ান তিনি। যেখানেই ওরস অনুষ্ঠিত হয় সেখানেই চলে যান। সারা রাত জেগে গান শোনেন। এভাবে তিনি বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল ঘুরেছেন। লালনের গান তার বিশেষ প্রিয়। বেশির ভাগ সময়ই তার বাঁশিতে লালনের গানের সুর তোলেন। বাঁশিতে লম্বা একটা টান দিয়ে তিনি হাসি মুখে বললেন, ‘কম করে বিশবার বর্ডার পার হয়ে ইন্ডিয়া চলে গিয়েছি, আজমীর শরীফে। এখন পাসপোর্ট বানিয়েছি। আর লুকিয়ে যেতে হয় না।’

তার কাছে জানতে চাওয়া হলো, ‘দেশ নিয়ে আপনার ভাবনা কি?’ বললেন, ‘দেশ নিয়ে ভাববার লোকের অভাব নেই। আমি আমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত।’

হাঁটতে হাঁটতে দিনের শেষে যেখানে রাত হয় সেখানেই ঘুমিয়ে পড়েন মোস্তফা। ঘুম নিয়ে তার কোনো সমস্যা নেই। শোয়া মাত্র ঘুমিয়ে পড়েন। খাওয়া নিয়েও তার কোনো চিন্তা নেই। কোনোদিন ভিক্ষা করেননি। তার বাঁশি শুনে মানুষ খুশি হয়ে তার হাতে টাকা গুঁজে দেয়। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘সারা দিন ঘুরে বাঁশি বাজান, কিন্তু কোনো কাজকর্ম করছেন না কেন?’ হাসি মুখে বললেন, ‘আমি বাঁশি হাতে নিয়ে ঈশ্বরকে খুঁজে বেড়াই। খুজতে খুঁজতে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ি, তখন বাঁশি বাজাই।

হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সামনের রাস্তার ফুটপাতে বসিয়ে তিনি তার বাঁশি দিয়ে তিনটা বিখ্যাত গানের সুর তুলে শোনালেন : ‘আমি অপার হয়ে বসে আছি ওহে দয়াময়…’, ‘মাটির পিঞ্জরার মাঝে বন্দি হইয়ারে/ কান্দে হাসন রাজার মন মুনিয়ারে’ এবং ‘বাড়ির পাশে আরশি নগর…।’ তার বাঁশি শুনে ফুটপাত ভরে গেছে মানুষে।

বংশীয়াল মোস্তফার সঙ্গে আলাপ শেষ করে তাকে প্রস্তাব দেওয়া হলো, ‘আসুন চা-নাস্তা খাই।’ হাসি মুখে বললেন, ‘আমি তিনবেলা খাই না, একবেলা খাই। তাই আমার শরীর-স্বাস্থ্য ঠিক আছে। কোনো অসুখ-বিসুখ নেই। খুব ভালো আছি। তিনি বলেন, যে পর্যন্ত ঈশ্বরকে খুঁজে না পাব, সে পর্যন্ত আমার মৃত্যু নেই।’
০ Likes ১ Comments ০ Share ৪১৪ Views

Comments (1)

  • - লাবিবা রাইহান

    ভালো লাগা রেখে যাচ্ছি।

    - এবিএম হারুনার রশিদ

    ভালো লিখেছেন।

    - সরফরাজ আহমেদ খান

    ভালো লাগা রেখে যাচ্ছি ভাই।