Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

প্রখ্যাত মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি


বাংলাদেশের অন্যতম কালজয়ী অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি। ১৯৮০ ও ৯০’র দশকে যে কয়েকজন অভিনয় শিল্পী মঞ্চ ও টিভি নাটককে অসম্ভব জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিলেন, ফরীদি ছিলেন তাদেরই একজন। মঞ্চ, টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে হুমায়ুন ফরিদি নিজস্ব একটি অভিনয়-ধারা তৈরী করতে পেরেছিলেন যা তাঁকে সময়ের কোলে অনন্য করে রেখেছে। তিনি ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম সংগঠক এবং অভিনেতা। গ্রাম থিয়েটারেরও সংগঠক হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। তিনটি মাধ্যমে সাবলীল অভিনয়ের জন্য তিনি অসামান্য খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। মঞ্চ, টেলিভিশন ও সিনেমায় আলোড়ন তোলা এই অভিনেতা অসাধারণ সব অভিনয়ের মাধ্যমে খ্যাতির ‍তুঙ্গে ছিলেন। কিংবদন্তি এই অভিনেতার উপস্থিতিতেই দর্শক-শ্রোতা খুঁজে পেতো অনাবিল আনন্দ ও মুগ্ধতা। কিংবদন্তি এই অভিনেতা ২০১২ সালের আজকের দিনে ঢাকায় মৃত্যুবরন করেন। নন্দিত এই অভিনেতার আজ দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। বরেণ্য অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

হুমায়ুন ফরীদি বাংলা ভাষা আন্দোলের উত্তাল সময়ে ১৯৫২ সালের ২৯ মে ঢাকার নারিন্দায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম এটিএম নূরুল ইসলাম ও মা বেগম ফরিদা ইসলাম। চার ভাই-বোনের মধ্যে তাঁর অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। ইউনাইটেড ইসলামিয়া গভর্নমেন্ট হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন তিনি। মাধ্যমিক স্তর উত্তীর্ণের পর চাঁদপুর সরকারী কলেজে পড়াশোনা করেন। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনান্তে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি আল-বেরুনী হলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি বিশিষ্ট নাট্যকার সেলিম আল-দীনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন।

১৯৭৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত নাট্য উৎসবে তিনি অন্যতম সংগঠক ছিলেন। মূলতঃ এ উৎসবের মাধ্যমেই তিনি নাট্যাঙ্গনে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থাতেই তিনি ঢাকা থিয়েটারের সদস্যপদ লাভ করেন। এরপর তিনি গণমাধ্যমে অনেক নাটকে অভিনয় করেন। ১৯৯০-এর দশকে হুমায়ুন ফরীদি চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। সেখানেও তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন। বলা হয়ে থাকে যে, স্যুটিংস্থলে অভিনেতার তুলনায় দর্শকেরা হুমায়ুন ফরীদির দিকেই আকর্ষিত হতো বেশি। বাংলাদেশের নাট্য ও সিনেমা জগতে তিনি অসাধারণ ও অবিসংবাদিত চরিত্রে অভিনয়ের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন। অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত বিখ্যাত ধারাবাহিক নাটক সংশপ্তকে অভিনয় করে তিনি নিজেকে নিযে যান অন্য উচ্চতায়। সংশপ্তক নাটকে 'কানকাটা রমজান' চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বিখ্যাত হয়েছিলেন তিনি। এছাড়াও যে সব নাটকে অভিনয়ের জন্য খ্যাতি লাভ করেন তন্মধ্যেঃ

মঞ্চঃ ১। কিত্তনখোলা, ২। মুন্তাসির ফ্যান্টাসি, ৩। কিরামত মঙ্গল, ৪। ধূর্ত উই
টিভিঃ ১। নিখোঁজ সংবাদ, ২। হঠাৎ একদিন, ৩। পাথর সময়, ৪। সংশপ্তক, ৫। সমূদ্রে গাংচিল, ৭। কাছের মানুষ, ৮। মোহনা, ৯। নীল নকশাল সন্ধানে, ১০। দূরবীন দিয়ে দেখুন, ১১। ভাঙ্গনের শব্দ শুনি, ১২। কোথাও কেউ নেই ইত্যাদি

চলচ্চিত্রে ফরীদির প্রথম অভিনয় তানভীর মোকাম্মেলের হুলিয়ায়। চলচ্চিত্রে নাম লিখিয়ে গ্রাম-গঞ্জের মানুষেরও খুব কাছাকাছি পেঁৗছে যান ফরীদি। বাংলা চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে তিনি যোগ করেছিলেন এক নতুন মাত্রা। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র সমূহঃ ১। সন্ত্রাস, ২। দহন, ৩। লড়াকু, ৪। দিনমজুর, ৫। বীর পুরুষ, ৬। বিশ্ব প্রেমিক, ৭। আজকের হিটলার, ৮। মায়ের অধিকার, ৯। বিদ্রোহী চারিদিকে, ১০। মনে পড়ে তোমাকে, ১১। ব্যাচেলর, ১২। জয়যাত্রা, ১৩। শ্যামল ছায়া ইত্যাদি।

ব্যক্তিগত জীবনে হুমায়ুন ফরীদি প্রথমে বেলি ফুলের মালা দিয়ে ফরিদপুরের মেয়ে মিনুকে বিয়ে করেন। তখন এই বিয়ে সারাদেশে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। এ ঘরে তাদের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে, নাম দেবযানি। পরে তিনি ঘর বাঁধেন প্রখ্যাত অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে। কিন্তু ২০০৮ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এর পর ধানমণ্ডির বাসায় তিনি একাই থাকতেন।

কৌতুক প্রিয় হুমাযূন ফরীদি অভিনয়ে ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক ও পেশাদার। কোন চরিত্র চিত্রনে তাঁর পেশাদারীত্ব দেশের শিল্পী মহলে এখনো কিংবদন্তিসম। খুব সংক্ষিপ্ত সময়ে বহুমাত্রিক অভিনয় দিয়ে তিনি দর্শক হ্রদয়ে স্থায়ী আসন নিশ্চিত করেছেন। মাটি ও মানুষের সাথে ছিলো তাঁর ঘনিষ্ট সম্পর্ক। দেশের সংকটে-সংগ্রামে এগিয়ে গিয়েছেন সাধারণ মানুষের কাতারে, যুক্ত হয়েছেন প্রতিবাদী মিছিলে। 'শিল্পের জন্য শিল্প' নয় ববং মানুষের সাথে তাঁর সকল কর্মকে সম্পৃক্ত করেছেন আজীবন। নাট্যাঙ্গনে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তাঁকে সম্মাননা প্রদান করেন এবং ২০০৪ সালে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। সর্বশেষ তিনি হেমন্ত নামের একটি ধারাবাহিক নাটকে নির্দেশনা দেন এবং পূর্ণ চাঁদের অপূর্ণতায় নামের একটি নাটকে অভিনয় করেন। এর পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

জনপ্রিয় এই অভিনেতা ফুসফুসের জটিলতাসহ আরো কিছু সমস্যায় ভুগছিলেন। মৃত্যুর আগে তিনি রাজধানীর ধানমণ্ডির মডার্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া না করা এবং কম ঘুমানোর কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে তার দেহের ওজন কমে যায়। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রাও হ্রাস পায়। এ কারণে তাকে কয়েক ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে।

তার প্রিয় উক্তি ছিল, বাঁচো এবং বাঁচতে দাও। ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় মঞ্চ, টেলিভিশন আর চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে 'বেঁচে থাকার' হাজারো রং ছড়িয়ে কিংবদন্তি এই অভিনেতা ১৯১২ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। আজ তাঁর ২য় মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুদিনে তাঁর জন্য আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

০ Likes ৫ Comments ০ Share ৯৫৩ Views

Comments (5)

  • - ঘাস ফুল

    ১. অর্থমন্ত্রী হেফাজতকে নিয়ে মন্তব্য করতে যেয়ে দেশের জনগণকে মনে হয় দুই ভাগে ভাগ করে ফেলেছেন। যারা হেফাজত করেন, তাদের মনে হয় তিনি জনগণের কাতারেই ধরেন নাই। অর্থমন্ত্রণালয়ের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হয়ে এই ধরণের কথা তার মুখে শোভা পায় না। তার এই বক্তব্যে রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবকেই প্রকট করে তুলেছে। 

    ২. বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের কথার ওপর পক্ষ বিপক্ষ থাকতে পারে। তবে আমি কোনটাতেই না গিয়ে নিজস্ব কিছু বক্তব্য তোমার সাথে শেয়ার করছি। ধর্ম বিশ্বাস যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এখানে জোরাজুরির কোন স্থান নাই। যারা ওয়াজ করছেন, তাদের মধ্যকার কিছু ধার্মিক(?)/বকধার্মিকের বিতর্কিত কাজের জন্য কিংবা তাদের কিছু স্ববিরোধী কার্যকলাপের জন্য আজ মানুষ তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলার সুযোগ পাচ্ছে। ব্যাপারটা এরকম, নিজে ভালো না হয়ে অন্যকে ভালো হওয়ার উপদেশ দেয়া। যারা সচেতন তারা এই ধরণের উপদেশ কতটুকু আন্তরিকতার সহিত গ্রহণ করবে, সেটা তাদের ভেবে দেখা উচিৎ। 

    শিক্ষণীয় বস্তু কেউ কখনো কাউকে নির্ধারণ করে দিয়ে শিখাতে পারবে না। এটা আসলেই ব্যক্তিতান্ত্রিক। তবে পথ দেখিয়ে দিতে কোন সমস্যা নাই। কিন্তু পথ বেছে নেয়ার দায়িত্বও ব্যক্তিগত। ধন্যবাদ অর্ক। ভালো থেকো। 

     

    • - জাওয়াদ আহমেদ অর্ক

      ধন্যবাদ । আমি আপনার সাথে একমত যে, যে কোন পথ আমি বা আপনি কাউকে সাজেস্ট করতে পারি সর্বোচ্চ । কিন্তু জাহাঙ্গীর সাহেবের মতন এইটা তো বলতে পারি না , যে তাদের থেকে কিছুই শেখার নেই ।  

    • Load more relies...