Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

পুরনো সেই দিনের কথা...চাটগাঁর মাটিতে প্রথম পদক্ষেপ (প্রতিযোগিতা ৩য় পর্ব, ক্যাটাগরিঃ ৩)

১৯৮৭ ইং সালে চাকরির সুবাদে আমার আব্বা চট্টগ্রামে বদলি হয়ে যানখুলনা থেকে আমাদের পরিবার স্থানান্তরিত হয়ে যায় চট্টগ্রামেআমাকে রেখে যাওয়া হয় খুলনাতেআমার এস.এস.সি পরীক্ষা সামনে থাকায় এবং টেস্ট পরীক্ষা চলাতে আমি আব্বার এক বন্ধুর বাসায় রয়ে গেলাম

আব্বা চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে বাসা নিয়েছিলেন। আগ্রাবাদ শব্দটা আমাকে কেন জানি সেই সময়ে ভারতের আগ্রার কথা মনে করিয়ে দিতোচোখে ভাসতো আগ্রার তাজমহল- সম্রাট শাহজাহান- তার প্রেয়সী মমতাজখুলনায় আজন্ম বড় হয়েছি এস.এস.সি পর্যন্ততাই এই বিভাগের বাহিরে যাওয়া হয় নাইচট্টগ্রাম আমার কাছে এক আলাদা অনুভুতি নিয়ে নতুন বউ এর মত অপেক্ষা করছিল... আমার হৃদয়ে
বরণ করে নিবে বলে!

জীবনের প্রথম বিমান ভ্রমণ বলে কথাতাও আমার স্বপ্নের শহর চাটগায়!
খুব এক্সাইটেড আমি!! যশোহর পর্যন্ত বিমানের বাসে করে গেলাম
সেখান থেকে ফকার-২৮ এ প্রথমে ঢাকাট্রানজিট প্যাসেঞ্জার কি তা কি বুঝতাম তখন? দুই ঘন্টা ঢাকা এয়ারপোর্টে বসে থাকলামকোনো মাছি পেলাম না যে মারবডিউটি ফ্রী শপে ঘুরে কিছুক্ষণ বেড়িয়ে সময় কাটানোর চেষ্টা করলামএখন এই শপের সামনে থাকলে তরল জাতীয় কিছু কিনে সময় কাটানো যেতোকিন্তু একজন ১৬ বছরের ছেলে যে জীবনে প্রথম বিমান ভ্রমন করছে- একা একা- গন্তব্য স্বপ্নের শহর চট্টগ্রাম; সে কি আর জানত কি পাওয়া যায় বা কি খেতে হয়

এয়ার হোষ্টেসদের চেহারা দেখে খুব ভালো লাগলতখন বয়সটা ছিল ভাল লাগা শুরু করারআর কল্পনায় নারী চরিত্র যে কি রূপ নিয়ে আসতো না, সেটা বলতে পারবআমার তখন এক একজন মেয়ের এক এক জিনিস ভালো লাঘতজিনিস বলতে অন্য কিছু বুঝে নেয়া ঠিক হবে নাকারো নাকের অংশটা- কারো ভ্রু'র বাঁকা চাহনি- মুখের শেপ- ঠোঁটের রং... কপালের পাশ দিয়ে নেমে পড়া কয়েকটি চুল... একটা তিল... চোখের কথা বলতে পারবো নাতখন চোখের দিকে তাকাতে পারতাম নাএক একজন মেয়ে আমাকে এক এক ভাবে অ্যাপীল এনে দিতআমি এজন্য সবার ই প্রেমে পড়ে যেতামসে সময় আমি ছিলাম একজন ১০০ভাগ সুখী মানুষ। 

একসময় চট্টগ্রাম বিমান বন্দরে বিমান ল্যান্ড করলবিমানে বসে কি কি দেখলাম সেটা বয়ান করে সবার বিরক্তির উদ্রেক করলাম নাআমার প্রিয় শহরে প্রথম পা রাখলাম
এয়ারপোর্টের মাটিতে!

আহ!

শান্তি... শান্তি...

তখন কি ভেবেছিলাম এই শহর আমার জীবনে কি ভুমিকা রাখবে? আমাকে নিজের ভিতরে এতো কঠিন ভাবে টেনে নিবে? আমাকে উজাড় করে ভালবাসা দিবে?

একটা টেক্সি (পুরনো দিনের) নিয়ে বড় পোলের সামনে আগ্রাবাদ সি.ডি.এ আবাসিক এলাকার বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলামতখন তো আর মোবাইল ছিল নাসেই ১৯৮৭ সালএয়ারপোর্ট থেকে আব্বার অফিসের নাম্বারে টেলিফোন করে ঠিকানা জেনে নিলামবোট ক্লাব এর পাশ দিয়ে কর্ণফুলী দেখতে দেখতে পথ অতিক্রম করা... সাম্পানের ঢেউয়ের মাথায় নেচে নেচে নদী পাড়ি দেওয়া... শাহীন কলেজের গেইট...রিফাইনারি হয়ে বি এন এস  ঘাটি পার হয়ে এগিয়ে যাবার সময়ের সেই অনুভুতি কি লিখে বোঝানো যাবে!!

 আর এখন ঠিক মনে নেই, কোন যায়গাটায় আসার পরে প্রথম দূর থেকে বাটালী হিলটাকে (আমার জীবনের সেটাই প্রথম পাহাড় দেখা) দেখলামআমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলামঅনেকের কাছেই আমার এই অনুভুতিকে ছেলেমানুষি মনে হতে পারে (হলেও ক্ষতি নেই, তখন তো ছেলে মানুষই ছিলাম)কিন্তু আমার কাছে তখন যা দেখছি তাকেই পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য মনে হচ্ছিল

খুলনা শহরের এক অখ্যাত বালক তার জীবনের প্রথম আকাশ যাত্রা নিরাপদে সম্পন্ন করে বিখ্যাত এক শহরে বেলা শেষের কিছু আগে তার মায়ের কাছে ঘরে ফিরে এলো

তার প্রিয় শহরে সন্ধ্যা নামি নামি করছে... অনুভুতিতে যদিও তখনো এক রৌদ্রোজ্জল অনন্ত বিকেল বিরাজমান।।

১৯ Likes ৪০ Comments ০ Share ৩৯২ Views