Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

@ Kabir

৬ বছর আগে

পালানকুইন

        আজকে অফিসের প্রথম দিন নিভার।অফিসে ঢুকতেই অফিসের সবাই তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।   চোখের কাজলে চোখ দুইটা যেন মৃদু হেসে যাচ্ছে,চাঁদনী রাতের মতো চুল গুলোও শুভ্র ছড়াচ্ছে, গোলাপি ঠোঁট আর গোলাপি শাড়ীতে আজ তাকে গল্পের অপরূপ ডানাকাটা পরীর মতোই লাগছে। এমন মেয়ের দিকে সবাই তাকাবে সেটাই স্বাভাবিক। নিভা এদিক ওদিক একবার চোখ মেলে সোজা বস এর রুমে চলে গেলো। -মে আই কামিং স্যার? --ইয়েস।প্লিজ সিট। -কেমন আছেন? --ভালো। আপনি? -জ্বী স্যার ভালো। --কাজের কথায় আসি তাহলে......(কথা শেষ না হতেই) ব্ল্যাক ফুলস্লিভ শার্ট,ব্লু কোট-প্যন্ট,লাইট ব্লু টাই আর ব্ল্যাক শু,চুলের ক্ল্যাসিক কাটে সিঁথিতে জেল দেয়া লালচে সাদা বর্ণের স্মার্ট ইয়ং ম্যান হাতে একটা ফাইল নিয়ে দরজার ওপাশ থেকে। -মে আই কামিং স্যার? চেনা কন্ঠ শুনে নিভা একটু পিছনে তাকিয়েই অবাক,ঘাবড়ে গেলো, চোখে প্রশ্নবোধক চিহ্ন... --ইয়েস মিস্টার তাযিন।প্লিজ সিট। তাযিন ও নিভাকে দেখে অবাক!কিন্ত অবাক না হওয়ার ভান করে.... -স্যার ফাইলটা একটু চেক করে নিন। --ওকে.....। আর মিস নিভা তাযিন ই আমাদের কোম্পানির সব ক্লায়েন্ট দের সাথে ডিল করে।আপনি এখন থেকে তাযিন সাহেবের সাথেই কাজ করবেন।  নিভা এখন আরও অবাক হয়ে গেলো। -অকে স্যার। তাহলে তাযিন সাহেব আপনি উনাকে উনার বসার রুম টা দেখিয়ে দিন। -অকে স্যার। দুজনেই বস এর রুম থেকে বের হয়ে আসলো। নিভা মনে মনে বলছে যেই ছেলেকে আমি দুই বছর আগে ইমমেচুয়ের ছিল তাই ব্রেকআপ করেছি।এলোমেলো চুল,ঢিলেঢালা পোশাক এমনকি তখন সে নিজেকেই গুছিয়ে রাখতে পারতো না আর কখন কি কথা বলতে হবে সেটার কোনো জ্ঞানই ছিল না।সেই ছেলে আজ এতো বড় কোম্পানির ক্লায়েন্ট দের সাথে ডিল করে! -মিস নিভা এটা আপনার রুম। -তুমি আপনি করে বলছো কেন? -তাহলে কি বলবো ? -তুমি চিনতে পারছো না আমাকে? -সরি না। নিভার মাথায় কেমন যেন হয়ে উঠলো। তারাহুরো করেই সে চেয়ারে বসলো। আর এমন টা হবেই না কেন সে কোনো কিছুই মেলাতে পারছে না।নিজের চোখ দুটোই তো তার সঙ্গ দিচ্ছে না। পরের দিন তারা দুজন ক্লায়েন্ট এর সাথে মিটিং শেষে গাড়িতে তাদের অফিসের দিকে আসতেছে। হঠাৎ নিভা বলে উঠলো থামাও....গাড়ী থামাও.... গাড়ী থামাও.....।কিছু বুঝে না উঠতেই ব্রেকে চাপ আর নিভা গাড়ী থেকে নেমে গেলো। -কি হলো গাড়ী থেকে নেমে গেলেন? -জায়গাটা অনেক সুন্দর নাহ? -সুন্দর কিন্ত সবার জন্য না। -কেন? -না কিছু না।চলুন...অফিসে বসের সাথে একটা মিটিং আছে আবার।দেরি হয়ে যাবে। -দেখলাম তো ক্লায়েন্ট দের সাথে কতো সুন্দর করে কথা বললে আর আমার সাথে কি অ্যাঁ....... -সেটা আমার জব। -জব ছাড়া কি আর মানুষের লাইফ নাই? -কিন্ত এতো সুন্দর জায়গায় দারিয়ে এতো সুন্দর নারীর সাথে কথা বলার যোগ্যতা আমার নাই।গাড়ী তে উঠুন।  গাড়ী তে যেতে যেতে নিভার মনে হাজারো প্রশ্ন ঘুরতেছে। যেই ছেলে আগে কথা বললেই একটা না একটা ঝামেলা পাকায় ফেলতো।সে আজকে ক্লায়েন্ট এর সাথে এতো সুন্দর গুছিয়ে কথা বললো কিভাবে? তার ড্রেস আপ গেট আপ ফুল চেঞ্জ কিভাবে?ড্যাম স্মার্ট ডোন্ট কেয়ার টাইপ ছেলে কিভাবে হয়ে গেলো? আর আমাকে কি সত্যিই সে চিনতে পারছে না!?কিছু দিন এইভাবে কেটে গেলো। নাহ কিন্ত শাহেদের তো কোনো চেঞ্জই হচ্ছে না। মনে হচ্ছে নিভা এবার কিছু উল্টা পাল্টা করেই ফেলবে। সে ফল কাটা চাকুটা নিয়ে তাযিনের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।দরজা বন্ধের শব্দে শাহেদ তাকিয়ে দেখে নিভা চাকু হাতে। -এই তুমি এইগুলো কি করছো? -চাকু দেখেই চিনে গেলে নাহ!!তুমি হয়ে গেলাম আপনি থেকে? নিভা এইবার গলার কাছে চাকুটা নিয়ে গেলো। -নিভু তুমি কি করছো এইগুলো? আগে নিভাকে তাযিন আদর করে নিভু বলেই ডাকতো। -এইতো এখন নামও মনে পড়ে গেছে।তাও সেই নাম যেই নামে শুধু তুমিই ডাকতে। তাযিন তো ভয়ে চুপসে গেছে এতোকক্ষনে। -চাকু টাকু সরাও আমি চিনছি তো এখন?মেরে ফেলবে নাকি? নিভা চাকুটা ফেলে দিয়ে তাযিন কে জরিয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। তোমাকে আমি মারতে পারি!কিন্ত ব্রেকআপ এর পর তুমি প্রতিনিয়ত আমাকে মেরে ফেলেছো।কতো খুঁজেছি...অনেক খুঁজেছি তোমাকে....কোথাও দেখা পাইনি।কতো রাত কেঁদেছি তোমার জন্য।কতো রাত কেটেছ একলা নির্ঘুম,রাতের আকাশের যুগল তারাগুলোও মনে করে দিয়েছে তোমার কথা।দুইটা বছর আমার কিভাবে গেছে আমি বলতে পারবো না।জানি আমার ভুল হয়ে গেছে আমি সরি তো।না সরি নাহ... তুমি জানো না তাযিন...তুমি আমাকে কতো কষ্ট দিছো!!তোমাকে হারানোর পর আমি বুঝেছি তুমি ছিলে আমার পূর্ণতা।আমার হার্ট-বিটের আওয়াজ ছিলে তুমি।চেনা পথে যখন আমাদের অস্তিত্ব খুঁজতে গিয়েছি তখন আমার পাশে তোমার হাত খুঁজে পায়নি।আর তোমার সাথে ওমন হবেনা।ক্ষমা করে দাও আমায়।তোমাকে ছাড়া আমি অপরিপূর্ণ আমি।পূর্ণ করে দাও আমাই তুমি।আর এখন তোমাকে কাছে পেয়েও আমি ঠিক মতো কথায় বলতে পারতেছিলাম না।এখন এইগুলো ছাড়া কি করতাম আমি বলো?আর কতো কষ্ট দিবে আমাকে? তাযিনের মনের যতো রাগ ক্ষোভ ততোক্ষণে গলে বাষ্প হয়ে উড়ে গেছে,ভালোবাসার বাতাসে পরিনত হয়ে গেছে।তাযিন নিভার হাত দুটো ধরে চোখের পানি মুছে দিচ্ছে আর বলতেছে....  -অকে বাবা..... এখন কান্না টা থামাও। এই কান্না দেখার জন্য আমি পৃথিবীতে আসি নাই। -তাহলে এতোদিন তুমি কাদালে আমায় ওইটার কি হবে? -ওহ......আর আমি কি চোখ দিয়ে এতোদিন ময়লা ফেলাইছি.....উমমম.....? -অকে কাটাকাটি সব। -অকে। -আর শোনো আমার সাথে এখন তুমি এতো স্মার্ট তুমি সাজবে না ঠিক আছে.....আমার আগের ইমমেচুয়ের আনস্মার্ট তাযিনই চাই.....। তাযিন জরিয়ে ধরে বললো... -অকে মাই এঞ্জেল। নিভা তাযিনের কানের কাছে মুখটা সরিয়ে মৃদু কন্ঠে বলে.... -উইল ইউ মেরি মি? -এখন? -হুম এখনি। -কিন্তু কিভাবে? -কাজী অফিসে গিয়ে। -কিন্ত তোমার তো ইচ্ছা ছিল পালানকুইনে চড়ে আমাদের বিয়ে হবে।(১৮৯০ খ্রীঃ এর সময় ফ্রান্সে বিয়েতে পালানকুইন নামক এক যানবাহন ব্যাবহার করা হতো) -না এখন তুমি থাকলেই হবে।আমি আর হারাতে চাই না তোমাকে।চলো..... চলো তো.....চলো....  নিভা তাযিনের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে। তাযিন বলে... -গাড়ী? -না লাগবে না। -তাহলে,কিসে? -রিকশায় যাবো। -ওহ আচ্ছা... চলো.....। রিকশায় উঠে নিভা তাযিনের হাত ধরে তার কাঁধে মাথা রেখে চোখ দুটো বন্ধ করে শান্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছে।তাযিন ও তার মাথাটা একটু কাত করে নিভার মাথার উপরে রাখলো।দুনিয়ার সব সুখ,শান্তি আর ভালোবাসার সৌন্দর্য এখন তাদের মাঝেই বিরাজমান। তাদের দুজনার মুখ যেন মায়ার রসে ভরতি।বৃষ্টি হলে লাল গোলাপের পাপড়ির উপরে যেভাবে বৃষ্টি কণা জমে থাকে আর সেগুলোর উপরে সূর্যের আলো পড়লে যেমন আলো প্রতিফলিত হয় ঠিক আজকেও সূর্যের আলো তাদের লাল মুখে পড়ে প্রতিফলিত হচ্ছে। হুডি তোলা রিকশায় তাদের দুজনকে দেখে মনে হচ্ছে তারা পালানকুইনে বসে আছে।
০ Likes ০ Comments ০ Share ৪৪৭ Views