Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

nushrika mahdeen

১০ বছর আগে

নাচের পাখী গানের পাখী চাকদোয়েল

নাচে আবার গায়ও-- এমন পাখি খুব একটা দেখা যায় না। এ তেমনই এক পাখি। তবে নাচেই বেশি, গায় কম। সারা দিনই সে নাচে। নাচছে না-- এমন কখনও দেখিনি তাকে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনবরত নাচে। নাচটাও দেখার মতো। যেন পেখম খুলে নাচে। লেজটাকে পাখার মতো ছড়িয়ে দিয়ে, এই ডাল থেকে ওই ডালে নাচতে নাচতে ঘুরে বেড়ায়। তখন মনে হয় যেন এক রূপকথার পাখি। এই কারণে ওকে অনেকেই বলে নাচুনে পাখি। ভারতে তার নাম শুনেছি শামচিরি। আর বাংলায় বলা হয় চাকদোয়েল। চাকদোয়েলের ইংরেজি নাম White-browed Fantail এবং বৈজ্ঞানিক নাম Rhipidura aureola। লম্বায় ১৮ সেন্টিমিটার। স্ত্রী ও পুরুষ দেখতে একই রকম। কালো রংয়ের এই পাখিটাকে হুট করে দেখলে ধোঁয়াটে মনে হয়। মাথা কালো। মাথার দুপাশে চোখের ঠিক উপরের অংশ থেকে দুটি সাদা সরু দাগ আছে। মাথার কালো রং নিচের দিকে আসতে আসতে ধোঁয়াটে হয়ে আছে। গলা ও ঘাড়ের দুপাশ সাদা। পেট ধূসর। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে তার লেজ। সুন্দর করে সাজিয়ে জাপানি পাখার মতো ছড়িয়ে রাখে। নাচানাচি করার সময় লেজের দুপাশ থেকে ডালা দুটি ঝুলে থাকে। পা আর ঠোঁট কালো।

চাকদোয়েল মূলত গাছপালায় ঘেরা ছোট ছোট জঙ্গলে বসবাস করে। পুকুরপাড়ের ঝোপঝাড় আর বৈচিত্র্যময় বাগান পেলে ওরা ছুটে আসবেই। সেই বাগান বা ঝোড়ঝাড় লোকালয়ের আশপাশে হলেও ক্ষতি নেই। ওরা জোড়ায় জোড়ায় একই এলাকায় নিয়মিত ঘোরাফেরা করে। প্রায়ই দেখা যায়, দুটি পাখি মিলে এই গাছ থেকে ওই গাছে, এ পাতার আড়াল থেকে সে পাতার আড়ালে, ডানে-বামে ঘুরে ঘুরে নেচে বেড়াচ্ছে। কখনও কখনও বাগানের বেড়ায় কিংবা পাঁচিলে উড়ে আসে, নাচে। আবার মাঝে মধ্যে পাতার আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে ডিগবাজি দিয়ে সাবলীল ভঙ্গিতে উড়ন্ত পোকামাকড় ধরে, আবার পাতার আড়ালে চলে যায়। পোকা খাওয়ার সময় একবার ঘাড় ঝাড়া দেয়।

চাকদোয়েলের জীবনযাত্রা যেন সংগীত ও ছন্দের জালে জড়ানো। পোকা ধরার সময় দুই ঠোঁটের ঠোকরের কর্কশ ‘চাক-চাক’ শব্দ শোনা যায়। কোনো কারণে বিরক্ত হলে কিংবা ভয় পেলেও এ ধরনের আওয়াজ করে ওরা। পাখিটি ছোট, তবে ভীষণ দুরন্ত আর দুর্দান্ত সাহসী। মানুষের উপস্থিতিতেও সে নির্বিকার। মনে হয় যেন কাউকে গ্রাহ্যই করে না। সে তার মতো করে নাচতে থাকে, গাইতে থাকে। লেজের পাখা ছড়িয়ে দিয়ে কখনও হাঁটে কখনও নাচে; মাতিয়ে রাখে তার নিজের জগৎ। ওরা একটু আড়ালে কিংবা আলোআঁধারিতে থাকতে পছন্দ করে সত্য, কিন্তু মানুষের উপস্থিতিতেও তার বেলে নাচ কিংবা সুরের মূর্ছনা বন্ধ হয় না।

মশা-মাছি আর এ জাতীয় ডানাওয়ালা ছোট ছোট পতঙ্গ এদের মূল খাবার। খাবারের প্রাচুর্য্য থাকলে ওদের গান যেন আর থামতেই চায় না। তাদের গানের চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন প্রয়াত অজয় হোম, “ছোট সাদা-কালো পাখিটা উঁচু গাছে ঘন পাতার ডালে বসে মেম সাহেবের হাতপাখার মতো লেজ একবার খুলছিল আর গোটাচ্ছিল। পরিষ্কার শুদ্ধস্বরে ‘সা-নি-ধা’ বলে থেমে গেল। এই শুদ্ধ তিনটি পর্দা এক পাখির মুখে শুনে চমকে উঠলাম। আবার গাছের ডালে বসে পরের স্বর থেকে গাইল ‘মা-পা-গা’। খারাপ লাগছিল। হঠাৎ তিন পর্দাতেই গান থেমে যাওয়াতে। কিন্তু আরম্ভ করল ঠিক যে পর্দায় ছেড়েছিল তার পর থেকে। কখনও বা চারটে পর্দা ‘সা-নি-পা’ বা ‘সা-রে-গা’ এক সঙ্গে।”

চাক-দোয়েলের ছোট্ট সুন্দর বাসার গড়ন অনেকটা মদের গ্লাসের মতো। মিহি ঘাস আর তন্তু দিয়ে বানানো বাসটি দেখার মতোও বটে। বাসার চারদিকে মাকড়সার জাল দিয়ে ঢাকা থাকে। ফটিকজল পাখির বাসার সঙ্গে এদের বাসার বেশ মিল আছে। জমি থেকে দশ কিংবা তার চেয়েও বেশি উঁচুতে এরা বাসা বাঁধে। সেই বাসায় গোলাপি আভাযুক্ত হলদে রংয়ের তিনটি ডিম পাড়ে তারা। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে ১৬-১৮ দিন সময় লাগে।

০ Likes ২৩ Comments ০ Share ১৪১৫ Views

Comments (23)

  • - লুব্ধক রয়

    ভাল লেগেছে দাদা

    • - কে,এইচ, মাহা বুব

      নিয়োমিত পাবো আশা করি , মন্তব্য করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ , ভালো থাকবেন ।

    - রুদ্র আমিন

    ভাল লাগল ভাই।

    • - কে,এইচ, মাহা বুব

      পড়ার জন্য এবং মন্তব্য করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ । ভালো থাকবেন ।