বাইবেলে লেখা আছে, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ছেলের বউ রেবেকাকে স্নেহ এবং ভালবাসার চিহ্নস্বরূপ নাকফুল উপহার দেন আব্রাহাম। এ ঘটনা প্রায় ৯ হাজার বছর আগের। কিছুদিন পর থেকেই বেদুইন এবং যাযাবরদের মাধ্যমে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে নাকে গয়না পরার রীতি। আর ষোড়শ শতকে ভারতীয় উপমহাদেশে মুঘলদের আগমনের পরই এ অঞ্চলে শুরু হয় মেয়েদের নাক ফোঁড়ানোর রেওয়াজ।
আমাদের দেশে প্রচলিত ধারণা হলো- নাকফুল কেবল বিবাহিত নারীর জন্যই। অর্থাৎ শুধু তারাই নাকফুল পরবেন, যাদের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে এ ধারণা আজ দূর হতে চলেছে।
হালে কিশোরী থেকে তরুণী শাড়ি তো বটেই, সালোয়ার-কামিজ, স্কার্ট-টপস, এমনকি জিন্স-ফতুয়ার সঙ্গে নাকে ঝিলিক দেওয়া একটা পাথর নিয়ে দেদার ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিবাহিত নারীর চিহ্ন- এই কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে নাকফুলের ফ্যাশনটাই এখন সবার কাছে বড় হয়ে উঠেছে।
আমাদের দেশে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী সবাই নাকফুল পরে বাঁ নাকে। তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। জনপ্রিয় অভিনেত্রী ববিতা প্রচলিত সেই রীতির বাইরে গিয়ে ডান নাকে নাকফুল পরার ফ্যাশন চালু করেছিলেন। ববিতাকে অনুসরণ করে অনেকেই তখন ডান নাকে নাকফুল পরতেন।
ববিতার যুগ থেকে চলে আসি হাল আমলে। এ সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী এবং মডেল নোভা। সব সময় নাকে পরেন একটি হীরার নাকফুল। নোভা বলেন, পুরো মুখের মাঝখানে ঝলমল করে যদি একটি পাথর জ্বলতে থাকে তাহলে তো আমার মনে হয় পুরো মুখের সৌন্দর্যে এক আলাদা দ্যুতি খেলা করে।
ফ্যাশন হাউস কে ক্র্যাফটের নির্বাহী পরিচালক এবং ফ্যাশনডিজাইনার শাহনাজ খান নাকফুলের ফ্যাশন সম্পর্কে বলেন, নাকফুল এখন ফ্যাশনের এক অন্যতম উপাদান। সব বয়সের নারীরাই এখন নাকফুল পরছে। নাকফুল পরার ব্যাপারে শাহনাজ খানের পরামর্শ হলো, যেকোনও রঙের নাকফুলই আলাদা সৌন্দর্য প্রকাশ করে। আবার পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে নাকফুল পরলেও আকর্ষণীয় লাগে। তিনি আরও বলেন, তবে সালোয়ার-কামিজ, জিন্স-ফতুয়ার সঙ্গে ভালো লাগে ছোট্ট এক পাথরের নাকফুল কিংবা নথ। অন্যদিকে শাড়ির সঙ্গে ভালো মানায় বড় নাকফুল। নাকে ঝিকিমিকি করা পাথর ফ্যাশন হলেও নাক ফোঁড়ানোর সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত- বলছিলেন বিউটি এক্সপার্ট শারমীন কচি। তিনি বলেন, আমরা অনেকে বাড়িতেই মা-চাচিদের হাতে নাক ফোঁড়াই। এটা খুব বিপজ্জনক। নাক ফোঁড়ানোর নির্দিষ্ট একটি স্থান থাকে। সেটি অনেক সময়ই আমরা ঠিকভাবে বুঝতে পারি না। ওপর-নিচ হয়ে যায়। এতে সৌন্দর্যের হানি হয়। তাই দক্ষ হাতে পার্লারে গিয়ে নাক ফোঁড়ানোই বুদ্ধিমানের কাজ। নাক ফোঁড়ানোর পর অনেকেরই অ্যালার্জির সমস্যার কারণে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। তাই যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে তারা এ সময় টক জাতীয় খাবার, বেগুন, গরুর মাংস- এসব খাবার এড়িয়ে গেলে এ জাতীয় সমস্যার হাত থেকে রক্ষা পাবেন। আর ঘা শুকানোর জন্য ভিটামিন-সি জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খেলে ঘা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে
যাবে।