Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

নন্দিত কথাশিল্পী ও বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের পথিকৃৎ হুমায়ূন আহমেদের ৬৫তম জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা


বিংশ শতাব্দীর বাঙ্গালি জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম বাংলা সাহিত্যের প্রবাদ প্রতীম কথাশিল্পী হুমায়ুন আহমেদ। তিনি একাধারে কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, চলচ্চিত্র র্নিমাতা ছিলেন। সত্তুর দশকে ছাত্রবস্থায় তিনি লেখালেখি শুরু করেন। নন্দিত নরকে উপন্যাস লিখেই হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্য জীবনের শুরু। কিন্তু তা প্রকাশ করা সম্ভব হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২-এ, আহমেদ ছফার উদ্যোগে। নন্দিত নরকে প্রকাশিত হলে পাঠকমহলে ব্যাপক সমাদৃত হয়। এরপর শঙ্খনীল কারাগার, রজনী, এপিটাফ, জ্যোত্‍স্না ও জননীর মতো একের পর এক উপন্যাস লেখেন তিনি। প্রখ্যাত ভাষাশাস্র পন্ডিত আহমদ শরীফ উক্ত গ্রন্থটির ভুমিকায় বাংলা সাহিত্যের আকাশে হুমায়ূন আহমেদ নামক এক উজ্জল নক্ষত্রের ঘোষনা করেন। দ্বিতীয় উপন্যাস ‘শঙ্খনীল কারাগার’কে কবি শামসুর রাহমান বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস হিসাবে আখ্যায়িত করেন। তবে সব ছাপিয়েই বাঙালির আপন হয়ে ওঠে তাঁর উপন্যাসের চরিত্র হিমু এবং মিসির আলিরা। যে উপন্যাসের ভাষায় উঠে এসেছিল নাগরিক এবং মধ্যবিত্ত জীবনের কথন রীতি। জননন্দিত এই কথা সাহিত্যিক ‌১৯৪৮ সালের আজকের দিনে জন্মগ্রহণ করেন। হুমায়ুন আহমেদের ৬৫তম জন্মদিনে আমাদের শুভেচ্ছা।

হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ই নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানার কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা আখতার খাতুন। ছোটকালে হুমায়ূন আহমেদের নাম রাখা হয়েছিল ছিল শামসুর রহমান; ডাকনাম কাজল। তাঁর পিতা নিজের নাম ফয়জুর রহমানের সাথে মিল রেখে ছেলের নাম রাখেন শামসুর রহমান। ১৯৬২-৬৪ সালে চট্টগ্রামে থাকাকালে হুমায়ুন আহমেদের নাম ছিল বাচ্চু। পরবর্তীতে তিনি নিজেই নাম পরিবর্তন করে ‌হুমায়ূন আহমেদ রাখেন।

হুমুয়ূন আহমদের বাল্যজীবন কেটেছে সিলেট, কুমিল্লা,চট্রগ্রাম ও বগুড়ায়। তিনি বগুড়া জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন এবং রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে সব গ্রুপে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। তিনি পরে ঢাকা কলেজে ভর্তি হনএবং সেখান থেকেই বিজ্ঞানে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে অধ্যয়ন করেন এবং প্রথম শ্রেণীতে বিএসসি (সম্মান) ও এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পলিমার রসায়ন বিষয়ে গবেষণা করে পিএইচডি লাভ করেন। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এক সময় তিনি ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন।

(প্রথম স্ত্রী গুলতেকিনের সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদ)
ছাত্র জীবনে একটি নাতিদীর্ঘ উপন্যাস রচনার মধ্য দিয়ে হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্যজীবনের শুরু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসীন হলের সাথে সম্পৃক্ত ছাত্র হুমায়ূন আহমেদের এই উপন্যাসটির নাম নন্দিত নরকে। ’১৯৭১, শংখনীল কারাগার, আজ চিত্রার বিয়ে, আমার আপন আধাঁর, আকাশ জোড়া মেঘ, আশাবরী, আমি মিসির আলী, আমার আছে জল, এবং হিমু, বাসর, র্নিবাসন, বল পয়েন্ট, ছায়াবিথী, দিনের শেষে, দেবী,নিশিথীনি, একজন মায়াবতী, ইরিনা, মেঘ বলেছে যাব যাব, মধ্যাহ্ন, ময়ুরাক্ষী, নিষাদ, পাখি আমার একলা পাখি, সাঁজ ঘর, তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রনে, বাদশাহ নামদার ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ।

(ছোট ভাই মহম্মদ জাফর ইকবালের সাথে হুমায়ূন আহমেদ)
লেখালেখির পাশাপাশি তিনি অসংখ্য নাটক ও চলচ্চিত্র র্নিমান করেন। আশির দশকে হুমায়ুন হাত দেন নাটক লেখার কাজে। ১৯৮৩ সালে প্রচারিত হয় তার প্রথম টেলিভিশন নাটক প্রথম প্রহর। এই সব দিনরাত্রি, অয়োময়, আজ রবিবার, কোথাও কেউ নেই, নক্ষত্রের রাত, বহুব্রীহির মতো টেলিভিশনে সম্প্রচারিত সেই সব নাটক হুমায়ূন আহমেদকে পৌঁছে দেয় বাঙালির প্রতিটি ঘরে। নক্ষত্রের রাত ছিল তার র্দীঘ ধারাবাহিক নাটক। এছাড়া একদিন হঠাৎ, এবং আইনস্টাইন, আজ দুপুরে তোমার নিমন্ত্রন, আজ জরির বিয়ে, আমরা তিনজন, অন্তরার বাবা, বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল,ভূতবিলাস ,চোর, চৈত্র দিনের গান, চন্দ্র কারিগর, দুরন্ত, ফুচকা বিলাস, গুনীন, নিশিকাব্য, রুপার ঘন্টা সহ অসংখ্য খন্ডনাটক র্নিমান করেছেন।

হুমায়ূন আহমেদের প্রথম চলচ্চিত্র ছিল আগুনের পরশমনি। এরপর একে একে র্নিমান করেন শ্যামল ছায়া, আমার আছে জল, শ্রাবন মেঘের দিন, দুই দুয়ারি, চন্দ্রকথা, নয় নম্বর বিপদ সংকেত । ঘেটুপুত্র কমলা ছিল তার র্নিমিত র্সবশেষ চলচ্চিত্র। হুমায়ূন আহমেদ অনেক গাণের লিখেছেন যা শ্রোতা মহলে খুবই জনপ্রিয় যদিও তিনি গান রচয়িতা বা গীতিকার নন। তিনি নাটক ও চলচ্চিত্রের প্রয়োজনে এইসব গান রচনা করেছেন। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য হুমায়ূন আহমেদ অনেক সম্মাননা ও পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। যথাঃ ১। বাংলা একাডেমী পুরস্কার ১৯৮১, ২। শিশু একাডেমী পুরস্কার, ৩। একুশে পদক ১৯৯৪, ৫। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (শ্রেষ্ঠ কাহিনী ১৯৯৪, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ১৯৯৪, শ্রেষ্ঠ সংলাপ ১৯৯৪), ৬। লেখক শিবির পুরস্কার ১৯৭৩), ৭। মাইকেল মধুসুদন পদক (১৯৮৭), ৮। বাচশাস পুরস্কার (১৯৮৮), ৯। হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), ১০। জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদক ইত্যাদি।

(দ্বিতীয় স্ত্রী শাওন ও পুত্র নিষাদের সাথে হুমায়ূন আহমেদ)
ব্যাক্তিগত জীবনে হুমায়ূন আহমেদ ২বার বিয়ের পিড়িতে বসেন। তার প্রথম স্ত্রীর নাম গুলতেকিন আহমেদ। তাদের বিয়ে হয় ১৯৭৩ সালে। এই ঘরে তাদের তিন মেয়ে এবং দুই ছেলে জন্মগ্রহণ করে। তিন মেয়ের নাম বিপাশা আহমেদ, নোভা আহমেদ, শীলা আহমেদ এবং ছেলের নাম নূহাশ আহমেদ। অন্য আরেকটি ছেলে অকালে মারা যায়। ১৯৯০ খৃস্টাব্দের মধ্যভাগ থেকে শীলা আহমেদের বান্ধবী এবং তার বেশ কিছু নাটক-চলচ্চিত্রে অভিনয় করা অভিনেত্রী শাওনের সাথে হুমায়ূন আহমেদের ঘনিষ্ঠতা জন্মে। এর ফলে সৃষ্ট পারিবারিক অশান্তির অবসানকল্পে ২০০৫-এ গুলতেকিনের সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয় এবং ঐ বছরই শাওনকে বিয়ে করেন। এ ঘরে তাদের তিন ছেলেমেয়ের জন্মগ্রহণ করে। প্রথম ভূমিষ্ঠ কন্যটি মারা যায়। ছেলেদের নাম নিষাদ হুমায়ূন ও নিনিত হুমায়ুন।

শুধু বাংলাদেশই নয়, পৃথিবীর সব প্রান্তের বাঙালিকেই ছুঁয়ে জননন্দিত এই কথা সাহিত্যিক সাহিত্যিক ২০১২ সালের ১৯ জুলাই আমেরিকায় মৃত্যুবরন করেন। মৃত্যুর সময় হাসপাতালে ছিলেন তাঁর স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, ছোট ভাই মহম্মদ জাফর ইকবাল, বন্ধু মজহারুল ইসলাম।

ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার হুমায়ুন আহমেদের আজ ৬৫তম জন্মদিন। জন্মদিনে তাকে স্মরন করছি গভীর শ্রদ্ধায়।

০ Likes ৮ Comments ০ Share ৭৯৫ Views

Comments (8)

  • - লুব্ধক রয়

    ক্যাপশান মিলেনি যদিও তবু বুনোফুল ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ।  

    • - এই মেঘ এই রোদ্দুর

      ক্যাপশন মিলায়ে দিলাম

       

      ধন্যবাদ

    - লুৎফুর রহমান পাশা

    বুনো ফুলের ছবি গুলো দারুন হয়েছে।

    • - এই মেঘ এই রোদ্দুর

      ধন্যবাদ

    - এম রহমান

    ওয়াও নাইস ফটো। আপনার ছবি তোলার হাত বেশ সুন্দর

    • - এই মেঘ এই রোদ্দুর

      থ্যাংকু থ্যাংকু .........

    Load more comments...