Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

রাজু আহমেদ

৯ বছর আগে

নতুন বেতন কাঠামোর সূফল-কূফল

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সদস্যরা প্রায় একবছর কাজ করে ২১ ডিসেম্বর নতুন বেতন কাঠামোর প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে নতুন বেতন কাঠামো সরকারি চাকরিজীবিদের জন্য প্রযোজ্য হবে হবে জানা গেছে এই বেতন কাঠামোয় মোট ১৬টি গ্রেডে বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে নতুন বেতন কাঠামোয় সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ গ্রেডে ১০০ শতাংশ পর‌্যন্ত বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ রয়েছে মাঝের গ্রেডগুলোতে বেতন বাড়বে বিভিন্ন পর‌্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বোচ্চ বেতন ৮২ হাজার এবং সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণ করে অষ্টম বেতন কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে প্রস্তাবিত বেতন স্কেলের সাথে বাড়িভাড়া, গৃহনির্মান, চিকিৎসা ভাতাসহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধা বাড়ানোর সুপারিশ রয়েছে সর্বশেষ ২০০৯ সালে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো হয়েছিল তখন সরকারী চাকরিজীবিদের সর্বনিম্ন বেতন ছিল ৪১০০ এবং সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা (বেসিক) সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর ফলে তাদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসবে এবং স্বাচ্ছন্দে জীবন যাপনের নিশ্চয়তাও থাকবে তবে বর্তমান কমিশন বেতন কাঠামোর যে চূড়ান্ত কপি জমা দিয়েছে তাতে সমস্যার কতটা সমাধান হবে এবং কতগুলো নতুন সমস্যা উদ্ভব হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেটাই প্রধান বিবেচ্য প্রস্তাবিত নতুন বেতন কাঠামোর ঘোষণায় সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেও কানাঘুষা শুরু হওয়া অস্বাভাবিক নয় কারণ নতুন বেতন কাঠামোয় প্রথম গ্রেডের কর্মকর্তারা খুশি হলেও মাঝারি গ্রেডে যারা রয়েছেন এমন কর্মকর্তারা খুব খুশি নন অন্যদিকে  নিম্নপদের কর্মচারীরা নতুন ঘোষণায় মন্দের ভাল ছাড়া আর কিছুই দেখছেন না নতুন বেতন কাঠামো কার‌্যকর হওয়ার পর দেশের ১৩ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এর আওতায় আসবেন এর মধ্যে চাকরিতে সক্রিয় ১১ লাখ এবং অবসরকালীন ২ লাখ এ সুবিধার আওতায় আসবে বর্তমানে  প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বেতন-ভাতা বাবদ বছরে রাষ্ট্রকে ৩৮ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে হয় নতুন বেতন কাঠামো কার‌্যকর হলে এ ব্যয় ৬৩.৭ ভাগ বৃদ্ধি পাবে এ বেতন কাঠামোতে কর্মচারী-কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক বেতন বৈষম্য সৃষ্টি হবে বর্তমানে যেখানে কর্মকর্তাদের বেতন ও কর্মচারীদের বেতনে পার্থক্য ১ : ১০ সেখানে প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোতে পার্থক্য হবে ২ : ২০ অর্থ্যাৎ পূর্বের বেতনের তুলনায় নতুন বেতন কাঠামোয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনের পার্থক্য হবে বিশাল অঙ্কের নতুন বেতন কাঠামোতে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য সৃষ্টি হলেও সর্বোপরি সবাই খুশি-ই হবে যদিও এ বেতন কাঠামোতে দৃশ্যত বৈষম্য বিদ্ধমান তবুও এ নিয়ে সরকারি কোন কর্মকর্তা কোন প্রকার বিপক্ষ যুক্তিতে আসবে না কেননা তাদের স্বার্থ-ই তো বেশি রক্ষা পাচ্ছে কর্মচারীদের দিক থেকেও কোন প্রকার অভিযোগ তোলা হবে না কেননা তারা পূর্বের থেকে ভালো থাকার নিশ্চয়তা পাচ্ছে কিন্তু বাস্তবিক কতটুকু ভালো তারা থাকতে পারবে ?

 

সবার মূখেই প্রচলিত, সরকারি চাকুরিজীবিদের বেতন অনেক কম সরকারি চাকুরিজীবিদের বেতনের দৈন্যদশা এবং সে বেতন দিয়ে জীবন নির্বাহ করা কতটা কষ্টের সেটা আমার চেয়ে আর কে বেশি জানে ? বাবা সরকারি প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক ছিলেন নামেই শুধু শিক্ষকতার মত মহৎ পেশা কিন্তু বেতন যা পেতেন তা দিয়ে আমাদের ভাই-বোনদের পড়াশুনার খরচ দিয়ে সংসার চালানো জন্য অর্থ তার কাছে অবশিষ্ট থাকত, সেটা দেখিনি কখনো ভাগ্যিস চাল কিনতে কিংবা ভাড়া বাড়িতে থাকতে হতনা, সেজন্যই রক্ষা তবে এদেশের অনেক শিক্ষক কিংবা কর্মচারী তার ক্ষেত থেকে ধান কিংবা নিজ বাড়িতে বাসের সুযোগ পাননা তাদের যে কষ্ট তা আসলেই অমানবিক   কাজেই মানসম্মত বেতন নির্ধারণ করা রাষ্ট্রেরও দায়িত্ব রাষ্ট্রও সে পথেই হাঁটেছে তবে যেভাবে বেতন কাঠামো নির্ধারণ করেছে তাতে একদিকে যেমন মূল্যস্ফীতি সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে অন্যদিকে সমাজের অন্য পেশাজিবীদের মধ্যে যারা আছেন তাদের বেসরকারি খাত থেকে প্রাপ্ত আয়ে জীবিকা নির্বাহ অনিশ্চয়তা মধ্যে পড়বে সুতরাং প্রজাতন্ত্র তার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপকার করতে গিয়ে রাষ্ট্রের বৃহৎ অংশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সম্ভাবনা সৃষ্টি করে দিয়েছে

 

প্রতিবার সরকারি বেতন বাড়ানোর পরেই ব্যবসায়ীমহল অস্বাভাবিকভাবে দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি করেন দ্রব্যমূল্যে বৃদ্ধির পিছনে যৌক্তিক কোন কারণ না থাকলেও বেতন বাড়ার সাথে সাথে এটা করা হবেই যে কারণে কর্মচারীদের বেতন দ্বিগুন করা হলেও তাদের উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা আদৌ নাই যদি রাষ্ট্র দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধ না করতে পারে অন্যদিকে রাষ্ট্রের মোট কর্মক্ষম জনশক্তির প্রায় ১০০ ভাগের ১ ভাগ সরকারি কাজে নিয়োজিত বাকীদেরকে বিভিন্ন আধা-সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে কাজেই অল্প সংখ্যক মানুষ যখন মানসম্মত বেতন পেয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে শুরু করবে তখন সমাজের বৃহৎ অংশও তাদের প্রাপ্য অধিকার আদায়ে আন্দোলনে নামবে অতীতেও বারবার এমনটাই হয়েছে তাতে দেখা যাবে শৃঙ্খলার চেয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সম্ভাবনাই বেশি তৈরি হবে   বিশেষ করে সরকারি চাকুরিজীবিদের সাথে আধা-সরকারি চাকুরিজীবিদের বেতন কাঠামোতে যখন উল্লেখযোগ্য বৈষম্য দৃশ্যমান হবে তখন তারা আন্দোলনে নামবেই অর্থমন্ত্রী মহোদয় দাবী করেছেন রাষ্ট্রের এ পরিমান অর্থ যোগান দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে কাজেই নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কোন কারণ নাই তবুও আগাম ভাবা উচিত অন্য সকল আশঙ্কার কথা ও রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা রক্ষা করার কথা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়াতে হবে কিন্তু সে জন্য আরেকটু চিন্তা-ভাবনা করা যেতে পারে এক বারে শতভাগ বেতন বাড়ানোর অর্থনৈতিক সংগতি রাষ্ট্রের আছে কিনা এবং এভাবে বেতন বৃদ্ধি করলে রাষ্ট্রের আধা সরকারি ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে কিরুপ প্রভাব পড়বে সেটাও ভেবে দেখা আবশ্যক

 

এটা প্রায় সর্বজনবিদিত, রাষ্ট্রের অধিকাংশ দুর্নীতিমূলক কর্মকান্ডের সাথে সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জড়িত এতদিন বলা হত, যা বেতন পাই তাতে চলে না তাই কিছুটা বাড়াতি আয়ের চেষ্টা তবে এ কথা বলার দিন সম্ভবত শেষ হয়েছে কারণ সরকার যে বেতন কাঠামো নির্ধারণ করেছে তাতে বেশ ভালোভাবেই জীবিকা নির্বাহ করতে পারার কথা কাজেই এ বেতন কাঠামো বাস্তবায়িত করার পূর্বে প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি নিশ্চয়তা দেয় যে, তাদের দ্বারা কোনরূপ দুর্নীতি হবে না তবে প্রস্তাবিত বেতন কাঠামো অচিরেই কার‌্যকর করারপক্ষে রাষ্ট্রের প্রতি অনুরোধ থাকবে কিন্তু মানসম্মত বেতন কাঠামো দেয়ার পরেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশের মধ্যে দুর্নীতিপরায়ণ মানসিকতা থেকে যায় তবে বেতন বৃদ্ধি করে লাভ কি ? নৈতিকভাবে নতুন বেতনকাঠামোর প্রসংশা করি শুধু কিছু সৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য কেননা রাষ্ট্র নির্ধারিত যে সামান্য অঙ্কের বেতন তারা পান তা দিয়ে সন্তানদের শিক্ষা নিশ্চিত করে তিন বেলা খাওয়ার সামর্থ্য থাকেনা তবে এ সৎ সংখ্যক মানুষের সংখ্যা রাষ্ট্রে বোধ হয় একেবারে হাতেগোনা নিশ্চয়ই নতুন বেতন কাঠামো কার‌্যকরী হবে কারণ যারা এটা কার‌্যকরী করবেন তারাই বেশি লাভবান হচ্ছেনআশা করি, বেতন কাঠামোর নতুন প্রস্তাব কার‌্যকরী হওয়ার সাথে সাথে দুর্নীতি কমে আসার নিশ্চয়তা থাকবে এবং বিনা প্রয়োজনে যেন ব্যবসায়ীরা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করার সুযোগ না পায় তার জন্য রাষ্ট্র থেকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে সার্বিক বিবেচনায় এ উচ্চবিলাসী বেতন কাঠামো দরিদ্র বাংলাদেশের সাথে আদৌ মানানসই নয় তবুও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বিবেচনায় বেতন কাঠামোটি দ্রুত বাস্তবায়ন হোক কর্মকর্তাদের বেতন শতভাগ বৃদ্ধি না করে অন্য কিছুও ভাবা যেত পারশুধু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে রাষ্ট্র চলে না রাষ্ট্রের এরা ছাড়াও বৃহৎ একটি অংশ বেসরকারি খাতে রয়েছে এদের মধ্যে আয়ে আর্থিক অসঙ্গতি দেখা দিলেই সংঘাত ও বিশৃঙ্খলা অনিবার‌্য সুতরাং যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেন তাদেরকে আরও গভীরভাবে ভেবে দেখার অনুরোধ রইল সর্বোপরি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবার দৃঢ় অবস্থান কাম্য

 

রাজু আহমেদ কলামিষ্ট

raju69mathbaria@gmail.com

০ Likes ০ Comments ০ Share ৫৩১ Views

Comments (0)

  • - খোন্দকার শাহিদুল হক

    বেশ ভালো লাগল। অনেক কিছু জানা হলো। শুভকামনা রইল।