Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

রাজীব নূর খান

৯ বছর আগে

দেশটাকে পঙ্গু করে লাভ টা কি ভাই?

কোনো ব্যক্তিকে খুন করার অধিকার কারো নেই। দোষী হলেও দায়িত্বটা আপনার নয়। ব্লগার হত্যার ব্যাপারটা বাংলাদেশে আস্তে আস্তে অনেক প্রকট হচ্ছে। মুক্তমনা'রা কলম দিয়ে লিখেছে, এগুলোর জবাবও উচিত কলম দিয়ে দেওয়া, চাপাতি দিয়ে নয়। যে লেখাটা ভাল লাগবে না, সেটা বর্জন করলেই হয়। যারা চটি গল্প গুলো লেখে- সেগুলো অবশ্যই ইসলাম বিরোধী তাদের জন্য তো কেউ চাপাতি হাতে নেয় না। অভিজিৎ কিন্তু শুধু লিখেছে, কাউকে শারীরিক ভাবে আঘাত করেনি, তা যত খারাপ লেখাই হোক। তার লেখা আপনার ভালো না লাগতেই পারে। সেক্ষেত্রে তার লেখা না পড়লেই পারেন। অথবা তার চেয়েও ১০০ গুন কঠিন ভাষায় তার প্রতিবাদ করতে পারেন। কিন্তু লেখার প্রতিবাদ লেখা দিয়ে হতে হবে।

অভিজিত নাস্তিক, না আস্তিক, সেটি বিবেচ্য নয়। তিনি আওয়ামী লীগ ঘেষা, নাকি বামপন্থি, নাকি ডানপন্থি, সেটিও কথা না। তিনি একজন লেখক। তিনি যুক্তির পথে হাটতেন। আমাদের নিষ্ঠুর রাজনীতি তাঁর পথচলা থামিয়ে দিলো। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমরা মন্তব্য করে বসি। তদন্ত ছাড়াই বলে দেই এটা অমুক গোষ্টির কাজ। নাস্তিক হলে তাকে আস্তিকরা মারবেন, মুক্তিযোদ্ধা হলে রাজাকাররা মারবে, আওয়ামী লীগ হলে বিএনপি বা জামাত-শিবিররা মারবে, মৌলবাদীরা মরলে নাস্তিকরা মারবে, বিএনপি-জামাত মরলে পুলিশ মারবে- এমনই সব প্রচলিত ধ্যান ধারণা আমাদের চিন্তা-চেতনার জায়গায় পঁচন ধরাতে শুরু করেছে।

টিএসসি আর শাহবাগ থানার মাঝামাঝি স্থানে তো অন্তত ডজনেরও বেশি পুলিশ সদস্য থাকার কথা। টিএসসির অদূরেই এ ঘটনা ঘটিয়ে দুর্বৃত্তরা কীভাবে পালালো। বইমেলার শেষেই ঘটল এই ঘটনা। তার ওপর এত ব্যস্ততম সড়কের ফুটপাতে। ব্যক্তিগতভাবে আমি অভিজিৎ রায়ের লেখাও ঠিকমত পড়িনি। আস্তিক নাস্তিক ক্যাচাল উন্নত বিশ্বে অন্তত ২০০ বছর আগেই শেষ হইছে। আমরা এখনও এই সব নিয়ে পড়ে আছি বা আমাদের মধ্যে এই সব চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। এদেশে মুক্তিবুদ্ধি চর্চা করা যাবে না? মতের অমিল হলেই আপনি "হিটলিষ্ট" এ ঢুকে পড়বেন। ধর্মান্ধ, কাপুরুষ, জঙ্গী গোষ্ঠী তাদের "ধর্ম" রক্ষায়, তাদের তথাকথিত অস্তিত্ব রক্ষায় নেমে পড়বে। কুরআন অধ্যয়ন করে দেখ। "ফিৎনা বা বিবাদ হত্যার চেয়েও নিকৃষ্টতম" (সূরা বাক্বারা, আয়াত:১৯১)।

অভিজিৎ রায়ের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে অবিশ্বাসের দর্শন, ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’, ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে’, ‘ভালবাসা কারে কয়’, স্বতন্ত্র ভাবনা : মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধির মুক্তি, সমকামিতা : বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান। কেউ যখন তার বুদ্বি-বিবেক-চিন্তা দিয়ে ইসলামের বিপক্ষে কথা বলছে, আপনিও যুক্তি দিয়ে তার কথার জবাব দেন। এটাই হবে সত্যিকারের সংগ্রাম। যদি প্রতিবাদ করতে হয় তাহলে উনাদের লেখা বিশ্লেষণ করে হাতে কলম তুলে আপনিও লিখে প্রতিবাদ করুন। নৃশংসতা কোন ধর্মে নাই। পবিত্র ইসলাম ধর্মে তো নাই-ই। মৌলবাদীরা মনে করছে যে তারা ইসলামকে রক্ষা করছে কিন্তু তারা বুঝতে পারছেনা যে তারা বাস্তবে ইসলামকে সারা পথিবীর কাছে কতটা ঘৃনার বস্তু করে তুলছে।

অসাম্প্রদায়িকতা মানে সকল ধর্মের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। অসাম্প্রদায়িকতা মানে সংখ্যাগুরু হয়ে সংখ্যালঘুকে আক্রমন বা কটাক্ষ নয়। আবার অসাম্প্রদায়িকতা মানে সংখ্যালঘু হয়ে সংখ্যাগুরুকে আক্রমন বা কটাক্ষ নয়। ২০১১ সাল থেকে ব্লগের ব্যাপক প্রসারের সাথে সাথে অনেকেই ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে নিজেদের মত ও মুক্তচিন্তা প্রকাশের প্রসার হয়। এখন কি আমরা মূর্খ হয়ে গিয়ে টিপসই দিয়ে কাজ চালিয়ে যাব? ব্লগারদের কলম যে কতটা ধারালো, কঠিন নির্মম আঘাত করায় পারঙ্গম। এই হত্যাই তার প্রমাণ। নরাধম নরপিশাচরা লেখার জবাব লেখা দিয়ে দিতে অক্ষম। এখনও যদি ঘুম না ভাঙ্গে অনেক দেরি হয়ে যাবে।তাই সরকারের উচিত আড়মোরা ভেঙ্গে জেগে উঠে ইবলিশ নিধনে সর্বশক্তি নিয়োগ করা।

এই দেশে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নতি করা ছাড়া উপায় নাই, ব্রেনওয়াশ করে জঙ্গিতে রুপ দেয়া খুবই সহজ এইখানে। হাটহাজারীর তেতুল হুজুরের মত অনেক মানুষ আছে এই দেশে, যারা কিনা শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কার করতে গেলেই আন্দোলনের হুমকি দেয়। কারন একটাই, মানুষ যতই সচেতন হবে, ইসলামের আসল রুপ জানবে, ততোই এই সব ভন্ডদের দিন শেষ হয়ে যাবে। না, তোমরা মানুষ নয়-/ তোমরাই হলে জঘন্য জানোয়ার হিংস্র হায়েনা,/ তোমাদের মাঝে তাই, মানবতা নাই এক বিন্দু ! আমার বিশ্বাস- জঙ্গিদের পতন একদিন হবেই। আর, সেটা ঘটবে এই মুক্তমনাদের লেখনীর মাধ্যমেই।

আল্লাহ ১৮ হাজার সৃষ্টির মধ্যে নাকি আমাদের আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করেছে। তবে আল্লাহ যেই হিসেবে আমাদের শ্রেষ্ঠ বলেছেন আমরা বরং তার উল্টোটা বুঝেছি। সৃষ্টি জগতে অন্য কোন প্রানী ব্যক্তিগত খোভে তার স্বজাতিকে খুন করতে পারে না যেটা মানুষ পারে। খুব কষ্ট হয় যখন শুনি শুধুই লেখার কারনে তাদের খুন হতে হয়! হুমায়ুন আজাদ স্যার, রাজীব হায়দার থেকে এখন অভিজিৎ রায় পর্যন্ত! বাচার মত বাচতে খুব ইচ্ছে করে। তবুও বেচে থাকা যেন গন্ডারের চামরা নিয়ে অভিভাবক হীন রাস্তার কুকুরের মত!

দেশটাকে পঙ্গু করে লাভ টা কি ভাই? যতই পঙ্গু করতে চান না কেন দেশটার পা আবার গজাবে।
সবার প্রতি অনুরোধ আপনারা রাস্তায় অমানুষ হবেনা, অমানুষের মত আচরন করবেন না। মা যদি হয় দেশ। আর দেশে যারা খুন, বোমাবাজি করছেন- তারা আসলে নিজের মা কে হত্যা করেছে। সুস্থ মানসিকতার পরিচয় দিন। জয় হোক মানুষের, দীর্ঘজীবী হোক মনুষ্যত্ব।
০ Likes ০ Comments ০ Share ৩৫১ Views

Comments (0)

  • - রাসেল মিয়া

    সুন্দর লিখাটি।