Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

শেরিফ আল সায়ার

১০ বছর আগে

দুই মার্কার প্রতি সমবেদনা!

দুই নেত্রীর ফোনালাপে সমাধান আসবে। এমন আশায় ২৬ অক্টোবর থেকে সবার নজর ছিল গণমাধ্যমগুলোতে। কখন দুজনের কথা হবে। দুপুরেই জানা গেল বিএনপি নেত্রীর রেড ফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করেও পাননি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। গুঞ্জন তখনই শুরু। সোশ্যাল মিডিয়া চটকদার স্ট্যাটাস দিয়ে বিষয়টি হাস্যকর হয়ে উঠছিল। অন্যদিকে বিএনপি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, সন্ধ্যায় খালেদা জিয়াকে ফোন দেওয়ার জন্য। আর তাছাড়া নেত্রীর রেড ফোন নষ্ট।

দুই নেত্রীর পরীক্ষা যেন তখনই শুরু। ইগো`র দেয়াল ভেঙে কে কাকে ফোন দেবেন? সবাই ভাবছিলেন, প্রধানমন্ত্রী যেহেতু একবার ফোন দিয়েছেন সেহেতু নিশ্চয়ই এবার খালেদা জিয়া কলব্যাক করবেন। কিন্তু সেটাও হলো না। তবে আন্তরিকতার প্রশ্নে এ যাত্রায় এগিয়ে গেলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। ফোন দিলেন খালেদা জিয়াকে। কি কথা হয়েছে আমরা জানি না। আবছা আবছা কথাবর্তা শুনেছি টিভি মিডিয়াতে।

২৮ তারিখ গভীর রাতেই একটি টিভি মিডিয়ার বদৌলতে প্রকাশ হয় দুই নেত্রীর ফোনালাপ। অবাক বিস্ময়ে শুনছে পুরো জাতি।

বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা নানান মতও প্রকাশ করছেন। সবাই দুই নেত্রীর ফোনালাপে বিরক্ত। যে সংলাপ সবাই আশা করেছে সেই কাঙ্খিত সংলাপ হবে স্বপ্নের মতো সুন্দর। তবে স্বপ্ন তো স্বপ্নই থেকে যায়। সংলাপ শেষ পর্যন্ত কোন দিকে গড়াবে সে বিষয়টিও হয়ে উঠেছে ঘোলাটে। আসলে যেখানে দুই নেত্রীর ফোনালাপই ঠিক মতো হয়নি সেখানে সামনা-সামনি ওনারা আসলে কি আলাপ করবেন সে বিষয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

 

২. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ফোনে বারবার বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে হরতাল প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। কিন্তু তিনি কোনোভাবেই হরতাল স্থগিত বা প্রত্যাহার করবেন না বলে জানিয়ে দেন।

হরতাল কারও কাম্য নয়। কেউ হরতাল চায় না। এ সহিংসতার মধ্যে দিয়ে দেশের কোনো মানুষ যেতে চায় না। দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ দিন আনে দিন খায়। তাদের কথা তো কেউ ভাবে না। এগুলো বহু পুরানো কথা। কিন্তু এগুলো শোনার চেষ্টা কেউই করেন না। কয়েকটি সহিংতার চিত্র তুলে দেওয়া যেতে পারে- হরতালের দ্বিতীয় দিন ২৮ অক্টোবর সোমবার দেশজুড়ে পুলিশ ও হরতালবিরোধীদের সঙ্গে ১৮ দলীয় জোট নেতাকর্মীদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, হামলা পাল্টা হামলা ও বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। এতে বিএনপি দলীয় এক সংসদ সদস্যসহ চার শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। স্কুলছাত্র, শিশু, পথচারী, ওসি ও নারীকর্মীসহ কমপক্ষে ২২ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এম্বুল্যান্সসহ অসংখ্য যানবাহন ভাংচুর করা হয়।

হরতালের সংবাদে ভরপুর সবগুলো পত্রিকা। ইত্তেফাকের শেষ পাতায় ২৯ অক্টোবর ‘বোমা হামলায় রং মিস্ত্রির চোখ সিএনজি চালকের গেল হাত:রাজধানীতে হরতালের নৃশংসতা’ শিরোনামে সংবাদ থেকে জানা যায়, বোমা হামলায় আহত হয়েছেন রং মিস্ত্রি আব্দুর রহমান বেপারী ও সিএনজি চালিত অটোরিকশার চালক আয়ুব আলী মণ্ডল।

প্রতিদিনের মতো সোমবার কাজের সন্ধানে কেরানীগঞ্জ জিনজিরা খেজুরবাগ এলাকার বাসা থেকে বের হন রং মিস্ত্রি আব্দুর রহমান বেপারী (৫০)। সকাল ৭টায় তিনি পুরনো ঢাকার রায় সাহেব বাজার চৌরাস্তায় অন্যান্য শ্রমিকের সঙ্গে ফুটপাতে সারিবদ্ধভাবে বসেন কাজের আসায়। হঠাত্ একটি হাত বোমা তার শরীর ঘেঁষে বিস্ফোরিত হয়। মুখমণ্ডল ঝলসে যায়। তাকে অন্য শ্রমিকরা দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।

হাসপাতাল চক্ষু বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. আল মাহমুদ লেমন আহত দিনমজুর রহমানের চোখ পরীক্ষা করে দেখেন, বোমার আঘাতে তার বাম চোখের কর্নিয়া নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি চিরতরে অন্ধ হয়ে গেছেন। অন্য চোখটিতেও লেগেছে আঘাত। তাকে শেরে বাংলা নগর চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে তার সংসার। সারাদিন রং মিস্ত্রির কাজ করে যা আয় করেন। তা দিয়ে চলতো রহমান বেপারীর সংসার। এক চোখ হারিয়ে রহমান বেপারী কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, এখন আমার সন্তানরা কী খেয়ে বাঁচবো, আমি তো কোন দল করি না। আমাকে কেন বোমা মারলো? ঐ সময় উপস্থিত চিকিৎসক, সাংবাদিকরা রহমান বেপারীকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা খুঁজে পাননি।

রবিবার রাতে সিএনজি চালক আয়ুব আলী মণ্ডল (৪০) গাড়ি নিয়ে মাদারটেক নন্দীপাড়ার বাসা থেকে বের হন। শাহজাহানপুর আমতলা এলাকায় যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করেন আয়ুব আলী। হঠাত্ তার সিএনজিটিকে লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করা হয় একটি পেট্রোল বোমা। আয়ুবের বাম হাতের ওপর বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। চোখের পলকে আগুন সিএনজিতে ছড়িয়ে পড়ে। চালক আয়ুব আলীর শরীরে ৪০ ভাগ ঝলসে যায়। বাম হাতটির অবস্থা গুরুতর। তাকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। হাতটি কেটে ফেলতে হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিত্সকরা। দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে আয়ুব আলীর সংসার। তার আয়ের ওপর চলতো পরিবার।

এই দুইজন মানুষের খবর নেবেন না দুই নেত্রী। তাদের ধ্বসে পড়া পরিবারকে হয়ত কিছু টাকা পয়সাও দিতে পারেন। কিন্তু চিরতরে রাজনীতির অভিশাপে পড়লো এ দুজনের জীবন। রাষ্ট্রের নোংরা রাজনীতির খেলায় দুই নেত্রীর ফোনালাপে কথা হবে না আব্দুর রহমান বেপারী এবং আয়ুব আলী মণ্ডলকে নিয়ে। তারা রেড ফোন ডেড কেন? এ বিষয়ে আলোচনা করবেন, ঝগড়া করবেন। ব্যক্তিগত ক্ষোভ, রাজনীতির ক্ষোভ, ক্ষমতার লোভে তারা তারা জনগণকে পণ্য হিসেবেই ব্যবহার করেন। শেষ পর্যন্ত তারা দুজনই চান ক্ষমতা। ক্ষমতার গদিতে বসে আসলে ওনারা কি করতে চান? কি চান ওনারা? এ বিষয়ে এখন নিজেদের নিজেদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত।

৩.

দুই জনের ফোনের আলাপ প্রকাশ হয়ে গেছে। রাষ্ট্র তাদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা দেখতে চায়, জনগণ জানতেও চায়। কিন্তু দুই নেত্রীর ‘ঝগড়া’ জাতি দেখতেও চায় না, শুনতেও চায় না। আক্রমণাত্মক হতে দেখা গেছে বিরোধী দলীয় নেতাকে। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলতে গেলে ফোনে কথা বলারই সুযোগ দেননি। তার গত সাড়ে চার বছরের ক্ষোভ হতাশার স্বচ্ছ চিত্র ফুটে উঠেছে খালেদা জিয়ার কথার মধ্যে দিয়েই।

জনগণের সময় এসেছে দুই নেত্রীর কাছে হিসাব চাওয়ার। তাদের প্রশ্ন করুক, এ জাতি ১৯৯১ থেকে আপনাদের বারবার ক্ষমতায় এনেছে। কি করেছেন আপনারা? কার জন্য করেছেন? নিজের জন্য কি করেছেন? বঙ্গবন্ধু এবং জিয়াকে রাজনীতির ট্রাম কার্ড বানিয়ে আর কতদিন রাজনীতির মাঠে টিকে থাকবেন?

সত্যিকার অর্থে এই দুই দলের কোনো নির্দিষ্ট নীতি নেই। তাদের নীতি একটা সেটি হলো ‘ক্ষমতা’। ক্ষমতার রাজনীতি থেকে তারা কখনও বের হতে পারেন নি। পারবেনও না। ক্ষমতার আসনে বসলেই তারা দুই দলই ভুলে যান এ ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। এ গদি তাদের ছেড়ে দিতে হবে। নির্বাচনে যেতে হবে।

ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে নির্বাচন লাগে। ক্ষমতায় যেতে হলেও লাগে। এ ক্ষমতার জন্য ‘সংবিধান’ নামক একটি বইয়ের রেফারেন্স টেনে আনেন বারবার। রাষ্ট্রকে চালানোর জন্য সংবিধানে নিয়ম নীতি বেধে দেওয়া আছে। এই নিয়ম কারা বানান? কিংবা কারা বানিয়েছেন? কাদের জন্য বানিয়েছেন?

এ প্রশ্নগুলো উত্তর এ জীবনে কখনও মনে কারও জানা হবে না। সংবিধান রক্ষার নামে দেশকে তুলোধুনো করে দিতে পারেন দুই দলই। রাষ্ট্রের নাগরিকদের সুখে ও শান্তিতে রাখার জন্যই সংবিধান। এ গ্রন্থের সিংহভাগ ধারা ও উপধারা সুশাসন নিশ্চিত করার কথা বলে। সেগুলো নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্যই করেন না আমাদের রাজনীতিকরা।

দেখে-শুনে মনে হয়, সংবিধান হচ্ছে নির্বাচনি গাইডবই। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে সরকারি দল সংবিধানের দোহাই দেয় আর বিরোধী দল হুমকি দেয় লগি-বৈঠার কিংবা দা-কুড়ালের। বাঁধে হানাহানি-খুনোখুনি। এসবের শিকার হয় দেশের সাধারণ মানুষ। বাদ যান না রাজনৈতিক দলের সাধারণ নেতা-কর্মীরাও। এই হচ্ছে আমাদের রাজনীতি।

আমাদের দুই নেত্রীকে এ জাতি ক্ষমতা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেন। এ দেশের সাধারণ মানুষ ক্ষমতা চান না। তারা ভোট দিয়েই খুশি থাকতে চান। এক ‘স্বপ্ন দেশের’ সন্ধানে পার করতে থাকেন বছরের পর বছর। পাঁচ বছর-পাঁচ বছর ক্ষমতার লড়াই, লুটপাটের লড়াই, হিংসার লড়াই, প্রতিশোধের লড়াই দেখেই যাচ্ছে এ দেশের মানুষ।

৪.

সামনে নির্বাচন হবে কি হবে না জানি না। তবে ঘুরে ফিরে দুই মার্কাই চিনবে বাংলাদেশের মানুষ। হয় নৌকা, না হয় ধানের শীষ। যাদের কাছে বড় কিছু এখন কেউ আশা করে না। মন্দের ভালর জন্যই মানুষ ঘুরে ফিরে তাদেরই ভোট দেয়। তাদের মার্কাই আসল, প্রার্থীর দিকে আজকাল কেউ বিচার করবে না। প্রার্থী যেই হোন মার্কাটা ঠিক থাকলেই চলবে।

এদেশের কোনও দল কখনও নিজের যোগ্যতায় ক্ষমতায় আসেনি। সরকারের ব্যর্থতার জন্যই বিরোধী দলগুলো ক্ষমতার গদিতে বসেন। সুতরাং সরকার হিসেবে দুই দলই ব্যর্থ। জনগণের পাল্স তারা কেউ কখনও বুঝেন নি। বুঝবেনও না। তবুও ভোটটা ওনারা মার্কায় ঠিকই পেয়ে যাবেন। এ বিষয়ে তাদের অনন্ত নিশ্চিত করেই বলে দেওয়া যায়। এজন্যই দুই দলের মার্কার প্রতি আমাদের সমবেদনা জানানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

০ Likes ২ Comments ০ Share ৫২২ Views