Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

রাজু আহমেদ

৯ বছর আগে

দক্ষ ও নিরপেক্ষ চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর অনুপস্থিতির গচ্ছা দিচ্ছে দেশ

রাজনৈতিক আদর্শের বিবেচনায় দেশের গোটা জনসমষ্টির সমর্থন দু’টো অংশে বিভক্ত । তবে আওয়ামীলীগ এবং বিএনপি সমর্থকের বাইরেও দেশের জনগণের একাংশের সমর্থন রয়েছে গোটা কয়েক ক্ষুদ্র রাজনৈতিক দলের ওপর । তবে সে সকল রাজনৈতিক দলগুলোও বিএনপি কিংবা আওয়ামীলীগের সাথে সরাসরি জোটবদ্ধ কিংবা আদর্শের প্রশ্নে এদের সাথে একতাবদ্ধ হওয়ায় আওয়ামীলীগ এবং বিএনিপিকেই মূল শক্তিশালী রাজনৈতিক দল হিসেবে বিবেচনা করা হয় । দেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ এ দু’ই দলের সমর্থনে পরস্পরের সাথে প্রতিযোগীতায় লিপ্ত । রাজনৈতিক এ বিভক্তির যেমন সূফল আছে তেমনি কূফলও অনেক । চরম দলীয়করণের তেমন একটি কূফলের গচ্ছা দিচ্ছে দেশ । গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক সুষ্ঠু বিকাশের স্বার্থেই দেশে কিছু নিরপেক্ষ ব্যক্তি ও সংগঠন থাকা একান্ত প্রয়োজন । দেশের যদি মাত্র কয়েকটি নিরপেক্ষ সংগঠন থাকত তবে চলমান রাজনৈতিক উদ্ভূত পরিস্থিতে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ থাকত না । রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় যে সংগঠনগুলোকে চাপ সৃষ্টিকারী সংগঠন হিসেবে বর্ণনা করা হয় তেমন কোন দক্ষ ও নিরপেক্ষ সংগঠনের উপস্থিতি দেশে নাই । এরপরেও যারা নিজেদেরকে চাপসৃষ্টিকারী সংগঠন বলে দাবী করে তারাও দেশের বৃহৎ দু’টো রাজনৈতিক দলের ব্যানারে কর্মকান্ড পরিচালনা করার ফলে জনগণ যেমন তাদের উপর আস্থা রাখে না তেমনি তারাও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠায় জোড় দিয়ে আওয়ামীলীগ কিংবা বিএনপির কাছে কোন দাবী পেশ করতে পারছে না কিংবা দাবী পেশ করেও তার গ্রহনযোগ্যতা পাচ্ছে না । অথচ দেশে যদি মাত্র কয়েকটি নিরপেক্ষ চাপসৃষ্টিকারী সংগঠনের উপস্থিতি থাকত তবে দেশের এমন বিপুল পরিমান ক্ষতি হওয়ার প্রশ্নই উঠত না । চাপসৃষ্টিকারী দলগুলো যদি নিরপেক্ষ থাকত তবে হয় আওয়ামীলীগকে সংলাপে বসার জন্য নমনীয় করতে বাধ্য করত পারত নতুবা বিএনপিকে হরতাল, অবরোধসহ সকল ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড আহ্বান থেকে বিরত রাখতে পারত । সরকার ও বিরোধীদলের প্রতি চাপসৃষ্টি করে যাদের এরূপ করার কথা তারা ক্ষমতার পালাবদলে দু’টো রাজনৈতিক দলের ব্যানারে এমন সব বক্তব্য-বিবৃতি কিংবা কর্মকান্ড পরিচালনা করেন যা খোদ ক্ষমতাশীনদলের কর্মী কিংবা নেতারাও করতে সাহস পায় না । চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর উপস্থিতি যখন একান্ত প্রয়োজন ছিল তখন দলীয় তকমাহীন এমন কোন সংগঠন দেশের কোথাও খুঁজে না পাওয়াটা গণতান্ত্রিক ভাবধারার বাংলাদেশের জন্য সত্যিই দূর্ভাগ্যজনক । হাস্যকার হলেও সত্য, যার অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে দেশে বর্তমান উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজমান সেই ব্যক্তিটিই চলমান সমস্যা নিরসণ করার জন্য অনশন করার ঘোষণা দিয়েছেন । এতে ফল কতটুকু হবে তা সময় স্পষ্ট করবে কিন্তু রাজনৈতিক ব্যানারে এসে সরকার কিংবা বিরোধীদলের উপর চাপসৃষ্টি করে তাতে সন্তোষজনক ফল পাওয়া যাবে বলে আস্থা নাই বরং হাস্যকার কিছু উক্তির জন্ম দিবে বলে অনেকটা নিশ্চিত । এখনো সময় আছে, দেশের কয়েকটি বিশেষ শ্রেণী যদি রাজনৈতিক তকমা ত্যাগ করে দেশের স্বার্থে দেশ ও দেশের মানুষকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসে তবে আওয়ামীলীগ এবং বিএনপি-উভয়দলকেই নমনীয় করার মাধ্যমে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান সম্ভব । তবে এগিয়ে আসা যাদের দায়িত্ব তাদেরকে অবশ্যই রাজনৈতিক পক্ষপাতমুক্ত হয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে ।

 

দেশের চলমান সমস্যার সমাধানে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী অনবদ্য ভূমিকা পালন করতে পারে । সাধারণত চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বলতে এমন এক গোষ্ঠীকে বুঝায় যার সদস্যরা সমভাবাপন্ন এবং অভিন্ন স্বার্থের দ্বারা আবদ্ধ । সরকার কিংবা বিরোধীদলের উপর চাপসৃষ্টিতে ব্যবসায়ী সমিতি, শিক্ষক সমিতি, শ্রমিক সমিতি ও ছাত্র সংসদ বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে । অথচ দূর্ভাগ্যের হলেও দেশের ব্যবসায়ীদের অধিকাংশ তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য রাজনৈতিক দল দু’টোর সাথে এমনভাবে জড়িত যে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তারা সত্য উপস্থাপনের ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছে । দেশের বিশেষ করে ব্যবসাখাতের এমন মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার পরেও কেবল রাজনৈতিক সার্থের কারণে তারা ক্ষতির জরিপ প্রকাশ ছাড়া অন্য কোন উদ্যোগ নিচ্ছে বলে দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না । শিক্ষিকরা জাতির বিবেক অথচ দূর্ভাগ্য জাতির কেননা শিক্ষকদের বিবেকই আজ প্রশ্নবিদ্ধ । কর্মস্থলে কর্তৃত্ব কিংবা ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য রাজনৈতিক দলের ঝান্ডা তারা এমনভাবে আঁকড়ে ধরেছে যাতে ন্যায়ের পক্ষে কথাবলার সৎ সাহস তারা অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে । অথচ ইতিহাসে শিক্ষকদের কত সুনামের কথা লিখিত আছে । আজকের শিক্ষকরাও যে সম্মান পায়না তা কিন্তু নয় বরং কোন শিক্ষক যদি বিএনপিপন্থী রাজনৈতিক ব্যানারের হয় তবে বিএনপিপন্থী ছাত্ররা তাকে সম্মান করে আবার কোন শিক্ষক যদি আওয়ামীলীগের দলীয় ব্যানারের হয় তবে আওয়ামীলীগপন্থী ছাত্ররা তাকে সম্মান দেখায় । শিক্ষকের সম্মান পাওয়ার কথা সকল দলের ছাত্রের কাছ থেকে অথচ খুব কম সংখ্যক শিক্ষক সকল মতের ছাত্রদের কাছ থেকে সম্মান পায় । কিছু শিক্ষক যে নিরপেক্ষ নাই তাও নয় তবে রাজনৈতিক ব্যানারের শিক্ষকদের দাপটে তাদের অবস্থান শিক্ষক মিলনায়তনের বাইরে প্রকাশ পায় না । চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ শ্রমিক সমিতি । সরকারী কিংবা বিরোধীদলের অযোক্তিক সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় শ্রমিকদের । একদিনের হরতাল কিংবা অবরোধে শ্রমিকদের জীবনকে দূর্বিষহ করে তোলে । দিনের আয়ে দিন চলে যাদের তাদের জীবনে হরতাল, অবরোধসহ অন্যান্য কর্মসূচী মারাত্মক ধ্বস নামায় । কাজেই চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী হিসেবে শ্রমিক সমিতি অত্যন্ত কার‌্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে অথচ দেশের শ্রমিক সমিতিগুলোর নেতারা কতটা শ্রমিক ও শ্রমিক বান্ধব তা নিয়েই রয়েছে নানা প্রশ্ন । শ্রমিক নেতারা সাধারণ শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার চেয়ে রাজনৈতিক নেতাদের সাথে দফা-রফা করে নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় বেশি মনোনিবেশ করে । অনেকে তো আবার রাজনৈতিক ব্যানারেই শ্রমিক নেতা হন । আজকে যারা ছাত্রা তারাই আগামী বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিবে । দেশের বিভিন্ন অর্জনে ছাত্রদের ভূমিকা অনস্বীকার‌্য । অথচ বর্তমান সময় ছাত্ররা দলীয় সমর্থনে এমনভাবে অন্ধ হয়ে আছে যে কারণে নিজের দল ছাড়া অন্য দলের সকল কর্মকান্ডকে বেঠিক বলে মনে হয় এবং নিজ দল ন্যায়-অন্যায় যাই করুক সব বিনাবিচারে সঠিক বলে মনে করে । ছাত্রদের নৈতিকতার এমন অধঃপতনে ছাত্রদের চেয়ে দেশের স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক কিছু নেতা বেশি দায়ী তবুও ছাত্ররাও সকল দায় এড়িয়ে যেতে পারে না । রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক আন্দোলনে ছাত্রদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় কেননা শিক্ষা জীবনের প্রতিটি মূহুর্ত মূল্যবান । অথচ রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্রদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট করলেও ছাত্রদের তা নিয়ে খুব বেশি মাথা ব্যথা পরিলক্ষিত হয়না । বরং ছাত্রদের বৃহৎ অংশ নির্বিচারবাদী হয়ে দেশের দু’টো বৃহৎ রাজনৈতিক দলে বিভক্ত হয়ে তারা ন্যায়-সত্যের শপথ ভূলে গেছে । ব্যবসায়ী সমিতি, শিক্ষক সমিতি, শ্রমিক সমিতি এবং ছাত্র সংসদ যতদিন দল নিরপেক্ষ হয়ে দেশের কল্যানে ব্রতী না হবে ততদিন দেশকে এমনভাবেই গচ্ছা দিতে হবে । ব্যক্তি কিংবা দলীয় স্বার্থের কাছে জাতীয় স্বার্থ যতদিন বড় না হবে ততদিন দেশের কাঙ্খিত উন্নয়ন হবে না ।   

 

দেশের ভয়াবহ পরিস্থিতির বর্ণনা নতুন করে দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়না । দেশের সর্বস্তরে বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি দেখা দিয়েছে এটা সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন । কোথাও মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নাই । স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি কবে ফিরবে তাও একপ্রকার অনিশ্চিত । দেশের প্রতি ফুট মরণ উপত্যাকার পরিণত হয়েছে । এ থেকে উত্তরণের পথগুলোও একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে । রাজনৈতিক দলগুলোর দূরত্ব ও অসহিষ্ণুতায় সাধারণ মানুষকে মৃত্যু মুখে ঠেলে দিচ্ছে । দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দক্ষ মধ্যস্থতাকারীর অভাবে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি পরস্পর উল্টোপথে ছুটছে । দু’টো দলেরই দাবী-তারা দেশের মানুষের শান্তি ও কল্যান চায় অথচ দেশের শান্তি ও কল্যান যে তারাই কেড়ে নিচ্ছে এটা বুঝেও বোধহয় না বোঝার ভান করছে । দু’দলের তুমুল লড়াইয়ে মৃত্যুর দ্বারস্থ হচ্ছে সাধারণ মানুষ । জীবন ও জীবিকার তাগিদে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষকে প্রতিনিয়ত রাস্তায় বের হতেই হয় অথচ কোথাও জীবনের নিরাপত্তা নাই । এভাবে চলতে পারে না । স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশের এমন চিত্র খুব বেশি ব্যথিত করে । মানুষের আত্মর্নাদ ও দীর্ঘশ্বাস আকাশ বাতাসকে ভারী করে তুলেছে তবুও মুক্তির উপায় সহসা দৃশ্যমান হচ্ছে না । রাজনৈতিক দলগুলোর যে অবস্থান তাতে তারা নমনীয় হয়ে উদ্যোগ গ্রহন করে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনবে সে আশাও প্রায় অনিশ্চিত  । সব কিছুর পরেও এ থেকে পরিত্রানের পথ খুঁজতেই হবে । অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, কেবল নিরপেক্ষ চাপসৃষ্টিকারী মহলের উদ্যোগেই চলমান সমস্যার সমাধান সম্ভব । একটি দেশের সামগ্রিক বিকাশের জন্য দক্ষ ও নিরপেক্ষ চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর উপস্থিতি খুব বেশি প্রয়োজন । দেশের এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও যদি এটা অনুভূত না হয় তবে জাতির জন্য এর চেয়ে বড় লজ্জা কিছু অবশিষ্ট থাকবে বলে মনে হয় না । দায়িত্বশীলরা এবং জাতির বিবেকরা এটা যতদ্রুত উপলব্ধি করবে তত দ্রুত অন্ধকার দূরীভূত হয়ে আলোর দিশা জাতির সামনে প্রজ্জ্বলিত হবে ।

 

রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।

raju69mathbaria@gmail.com

 

০ Likes ২ Comments ০ Share ৩০১ Views