Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

Azimul Haque

৯ বছর আগে

তাজউদ্দিন আহমদ সম্পর্কিত একটি লিখা প্রসঙ্গে

 

 

 

ইদানিং একাত্তরের ২৫শে মাচ্চের রাত্রের জনাব তাজউদ্দিন এবং শেখ মুজিবর রহমানের মধ্যকার এক মতানৈক্য সম্পর্কে জনাব তাজউদ্দিনের বড় কন্যা কিছু মন্তব্য করেছেন মর্মে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে । তিনি বলেছেন, উক্ত রাতে জনাব তাজউদ্দিন আহমদ শেখ মজিবর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করতে বলেছিলেন, তাঁকে ধরা না দিয়ে  গোপনে আন্দোলন সংঘটিত করে বাংলাদেশ স্বাধীন করার কার্যক্রমে সরাসরি নেতৃত্ব দিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন । কিন্তু শেখ মুজিব তা করেননি । এটি তিনি (লেখিকা) শেখ মুজিবের মৃত্যুভীতি হিসেবে দেখেছেন । তিনি বলেছেন, মৃত্যুর ভয়ে শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেননি ।

আমরা যারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে কিছুটা হলেও জানি, শুধু জানিই বা বলি কেন, যারা আমরা উনার একাত্তরের ৭ই মার্চ্চের ভাষণ শুনেছি, আমরা যারা তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক পথ-পরিক্রমা সম্পর্কে শুনেছি, তারাই অনূভব করবো, তিনি আমাদের শরীর-শিহরিত-করে-তোলা অনেক বড় রাজনীতিবিদ । ৭ই মার্চ্চের ভাষণ যখনই শুনি, আগের মতোই, এতোটুকু কম না হয়ে আজো আমি শিহরিত হয়ে উঠি । আজো তাঁর ছবিগুলোর সামনে দাঁড়ালে মনে হয়, হাঁ, ইনিই আমাদের জাতির পিতা । মনে হয়, ৭ই মার্চ্চ যাঁর আহ্বানের কথা ছিল আমাদেরকে, সেই অধিকারপ্রাপ্ত ব্যক্তি ইনি এবং শুধুমাত্রই ইনি । সঠিক ব্যক্তিই আমাদের আহ্বান করেছিলেন, যে আহ্বান করার কথা ছিল শুধুই ওনার ।

জনাব তাজউদ্দিন আহমদও বিষয়গুলিকে এভাবেই দেখতেন এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাঁরও ছিল অগাধ বিশ্বাস । তিনিও জানতেন এবং মানতেনও যে, বঙ্গবন্ধুই একমাত্র নেতা, যাঁর উপর পূর্ন আস্থা এবং বিশ্বাস রাখা যায় । রেখেওছিলেন তাই, এটা নির্দ্দিধায় বলা যায় এবং যেগুলোর অনেক প্রমানও আমরা দেখতে পাই । ইতিহাসে কিছু কিছু নেতা দেশ-কাল-পাত্র ছাড়িয়ে যান, সমাধানের সঠিক পথের দিশা দিয়ে যান অথবা দিশার ইঙ্গিত দিয়ে যান । এসমস্ত নেতার গৃহীত পদক্ষেপগুলিকে কোন প্রশ্ন না করেই আন্তরিকভাবে সম্পূর্ন বিশ্বাসের সাথে বরণ করা হয় ।

চীনের মহান নেতা মাওসেতুং-য়ের এরকম অনেক অন্ধভক্ত ছিলেন । একটা ঘটনা বলি । সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে মাওসেতুং-এর সেনাবাহিনী লালফৌজ একবার চরম বিপদে পড়ে । সামনে খরস্রোতা নদী, যেটা তাদেরকে সামনে থাকা একটা ব্রীজের উপর দিয়ে পার হতেই হবে, নতুবা পেছালে বিপদ, সরকারী বাহিনী এগিয়ে আসছে । নদীর ওপারেও শত্রু তাক করে আছে । মাওসেতুং দেখলেন, ওপারের ঘাঁটিটা ধ্বংস করতে পরেলে মুক্তি মিলবে । তবে ঘাঁটিটার কাছাকাছি তো যেতে হবে ব্রীজের উপর দিয়ে । কিভাবে সম্ভব !

মাওসেতুং বললেন, কিছু লোককে ব্রীজের উপর দিয়ে দৌড়ে যেয়ে ওপারের ঘঁটি ধ্বংস করতে হবে এবং এজন্য কিছু জীবন যেতে হবে । সাথে সাথে হাত তুললেন অনেক পোড়-খাওয়া-যোদ্ধা, যাঁরা ব্রীজের উপর দিয়ে দৌড়ে যেতে শুরু করলেন, কিছু লুটিয়ে পড়লেন আর যারা বেঁচে গেলেন, তারাই ধ্বংস করলেন ওপারের ঘাঁটি এবং এভাবেই তাঁরা সে-যাত্রায় রক্ষা পেয়েছিলেন । মাওসেতুং-য়ের সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা ছিল বলেই তাঁর সিদ্ধান্ত সকলে অকুন্ঠচিত্তে মেনে নিতেন । এঁদের মধ্যে সবচেয়ে বড় নেতা ছিলেন চৌএনলাই । চৌএনলাই ছিলেন মাওসেতুংয়ের সেকেন্ডম্যান, যিনি সবসময় মনে করতেন মাওসেতুং যে সিদ্ধান্তই নেন, সঠিক-ই নেন ।

আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে আমি মনে করি বঙ্গবন্ধুর সাথে তাজউদ্দিনেরও সেরকমই সম্পর্ক ছিল । চীনের চৌএনলাই-য়ের মত তাঁরও বঙ্গবন্ধুর সাথে আস্থা এবং বিশ্বাসের অকৃত্রিম এক দৃঢ় বন্ধনের সৃষ্টি হয়েছিল । আমার মনে হয়না, একাত্তরের ২৫শে মার্চ্চের রাতেও তিনি বঙ্গবন্ধুর ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে’ স্বাক্ষর না করাটাকে এবং সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ পরিচালণা করার তাঁর আহ্বানে বঙ্গবন্ধুর নেতিবাচকতাকে তিনি বেঠিক বলে মেনে নিয়েছিলেন । আর ভয় পাওয়ার কথা হলেও বলতে হয়, বঙ্গবন্ধুর মত লোক ভয় পেতে পারেননা । আর যদি পানও, তবুও কি তিনি নেতা হিসেবে একটু কমে গেলেন ? তাঁর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক-পরিক্রমা এবং৭ই মার্চ্চের ভাষণ আসলেই তাঁকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে ।

জানিনা, জনাব তাজউদ্দিন আহমদ-কন্যা কর্তৃক ঘটনাটা লিপিবদ্ধ করার সময় এসমস্ত বিষয় তাঁর বিবেচনায় ছিল কি-না ।

০ Likes ২ Comments ০ Share ৩৫৩ Views