Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

টনি ও টমি

মাঘ মাসের উত্তুরে হিমেল হাওয়া। তার ওপর একটু আগে কয়েক পশলা বৃষ্টি হয়েছে! এ জন্যে শীতটা খুব জেঁকে বসেছে। সবাই কাঁপছে শীতে। বুড়ি মা তার প্রিয় কুকুরটিকে সাবধান করে দিয়ে বললেন, ‘শীতের মধ্যে খুমিয়ে পড়ো না যেন! একটি গরু-ছাগলও যেন চুরি না যায়! হাঁস-মুরগীগুলোও যেন খেঁকশিয়ালে নিতে না পারে।’
বুড়ি মা’র কথা রাখতে পারেনি টনি। ঘুমিয়ে পড়েছিল সে। আর এই সুযোগে খোঁপ থেকে বড় মোরগটি চুরি করে নিয়ে গেছে ধূর্ত একটি খেঁকশিয়াল!
কুকুরটি নাম টনি। প্রায় বছর পনের ধরে বুড়ি মা’র প্রতিটি নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে আসছে। কোনদিন এতোটুকু ভুল হয়নি। কিন্তু রাতে প্রচন্ড শীতের মধ্যে খড়ের গাদায় আশ্রয় নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল টনি। সেই ফাঁকে মুরগীর খোঁপ থেকে বড় মোরগটি  খেঁকশিয়ালে নিয়ে গেছে।
এ জন্য বুড়ি মা সারাদিন রেগে আছেন টনির ওপর। সারাদিনে কিছুই খেতে দেয়নি টনিকে। যতোবার দেখা হয়েছে ততবার গালমন্দ করেছেন। রাতে দু’টি পোড়া রুটি টনির সামনে রেখে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন  বুড়ি মা!
বুড়ি মা’র আচরণে টনি খুব কষ্ট পেয়েছে। এ জন্য বুড়ি মার দেয়া রুটি খায়নি টনি। রুটি দু’টিকে এক পাশে সরিয়ে রেখে গোয়ালের দিকে, মুরগীর খোঁপের দিকে তীক্ষè নজর রাখলো টনি।
মধ্য রাতের পর হঠাৎ এক পশলা বৃষ্টিতে ভিজে গেলো টনি। ঠক্ ঠক্ করে কাঁপতে লাগলো সে। বৃষ্টি একটু থেমে এলে টনি দেখলো একটি খেঁকশিয়াল মুরগির খোঁপের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। টনি বুঝতে পারলো গতকালও এই খেকশিয়ালটিই মুরগি চুরি করেছে। ওর জন্যই সারাদিন বুড়ি মা টনিকে গালমন্দ করেছে, খেতেও দেয়নি।
শিয়ালটির ওপর খুব রাগ হলো টনির। টনি মনে মনে স্থির করলো, আজ সে খেঁকশিয়ালকে উচিত শিক্ষা দেবে।
টনি অন্ধকারের মধ্যে পা টিপে টিপে খেঁকশিয়ালটার কাছে গেলো। তারপর হঠাৎ পেছনের পা কামড়ে ধরলো। ব্যথায় কঁকিয়ে উঠলো শিয়ালটি।
শিয়ালটি চিৎকার করতে লাগলো, ‘উহ, মা মরে গেলাম। মরে গেলাম তো!.. ছেড়ে দাও, ছেড়ে দাও ভাই টনি...’।
টনি রাগে গর গর করতে লাগলো। আরও জোরে কামড়ে ধরলো শিয়ালের পা।
শিয়ালটি বললো, ‘ও ভাই টনি, রক্ত বেরোবে তো! আজকের মতো ছেড়ে দাও প্লিজ।’
টনি বলল, ‘না, ছাড়বো না। তোর জন্যই তো বুড়ি মা আমাকে গালমন্দ করেছে। সারাদিন খেতে দেয়নি!’
খেঁকশিয়ালটি খুব চালাক। বুঝলো এভাবে কাজ হবে না। সে অন্য বুদ্ধি করলো।
খেঁকশিয়াল বললো, ‘কী বলিস ভাই, সারাদিনে তোকে কিছুই খেতে দেয়নি বুড়ি মা!’
টনি বললো, ‘না দেয়নি।’
শিয়াল বললো, ‘এটা খুব অন্যায় করেছে বুড়ি মা। ঠিক আছে ভাই, আমি তোমাকে খেতে দেবো। তুমি আমার পাটা ছেড়ে দাও।’
টনি এতে আরও রেগে গেলো। আরও জোরে কামড়ে ধরলো খেঁকশিয়ালের পা।
টনি বললো, খবরদার বুড়ি মা’র দুর্নাম করবে না এতোটুকু। উনি আমার মালকিন। তাছাড়া তুমি তো চুরি করে খাও। তোমার খাবার খাবো আমি! কী মনে করেছো আমাকে! মরে গেলেও চোরের খাবার খাই না আমি।’
ঁেখকশিয়াল বলল, ‘ঠিক আছে ভাই। নাইবা খেলে। কিন্তু আমাকে মেরে ফেলবে নাকি?’
‘মেরেই ফেলবো। ঠিক মেরে ফেলবো তোমাকে।’ টনি বলল।
হঠাৎ খেঁকশিয়ালটি কেঁদে ফেললো। বললো, ‘তাহলে আমার বাচ্চারা তো না খেয়ে মরে যাবে।’
এ কথায় টনির খুব কষ্ট হলো। মনে মনে ভাবলো, দোষ যদি কিছু করেই থাকে তো খেঁকশিয়ালটি করেছে। ওকে মেরে ফেললে ওর বাচ্চারা খেতে না পেরে মরে যাবে। একজনের দোষে অন্যজনকে দোষ দিতে মন সায় দিলো না টনির।
টনি বলল, ‘তোমাকে ছেড়ে দিতে পারি। তবে একটি শর্ত আছে।’
খেঁকশিয়াল বলল, ‘শর্ত! ঠিক আছে। তুমি যে শর্ত দেবে আমি তা মেনে নেবো।’
টনি বলল, ‘কোনদিন আর বুড়ি মা’র মোরগ-মুরগি চুরি করতে পারবে না।’
খেঁকশিয়াল বলল, ‘তাহলে খাবো কি? ’
টনি বলল, ‘তার আমি কী জানি! তুমি যদি রাজী হও তো বলো। আমি তোমার পা ছেড়ে দেবো। না হলে তোমার পা আমি খেয়ে ফেলবো। তুমি তো জানোই আজ সারাদিন কিছু খাইনি। খুব খিদে  পেয়েছে আমার। চাই কি তোমাকেও খেয়ে ফেলতে পারি!’
টনির কথায় খেঁকশিয়ালটি খুব ভয় পেলো। বললো, ‘ঠিক আছে। তোমার শর্ত মেনে নিলাম। এবার আমার পা ছেড়ে দাও ভাই। ওহ্, খুব লাগছে... উহ্ মরে গেলাম!’
টনি বললো, ‘মনে থাকবে তো?’
খেঁকশিয়াল বললো, ‘মনে থাকবে ভাই। আর কোনদিন বুড়ি মা’র বাড়ির কাছেও আসবো না।’
টনি খেঁকশিয়ালের কথায় বিশ্বাস করে ওর পা ছেড়ে দিলো।
ছাড়া পেয়ে খেঁকশিয়াল খুব খুশি হয়ে বললো, ‘তুমি আমার সঙ্গে চলো তোমাকে খাবার দেবো আমি।’
খেঁকশিয়ালের কথায় খুব রাগ করলো টনি। বললো, ‘তুমি তো চোর! আগেও তো বলেছি, চোরের খাবার আমি খাই না। সময় থাকতে কেটে পড়ো ভাই,  না হলে কিন্তু...।’
অবস্থা বেগতিক দেখে খেঁকশিয়াল কেটে পড়লো।
সকালে বুড়ি মা ঘাস খাওয়ানোর জন্য গরু-ছাগলগুলো মাঠে নিয়ে গেলেন। খোঁপ থেকে মোরগ-মুরগিগুলো বের করে খাবার দিলেন। কিন্তু টনির দিকে একবারও ফিরে তাকালোন না।
টনি সিদ্ধান্ত নিলো বুড়ি মার বাড়িতে আর থাকবে না সে।
বিকেলের দিকে টনি বাড়ি থেকে বের হয়ে আস্তে আস্তে হাঁটতে লাগলো। হাঁটতে হাঁটতে ছোট একটি শহরে এসে পৌঁঁঁছলো টনি। একটি রেস্টুরেন্টের সামনে এসে রান্না করা মাংসের গন্ধ পেয়ে টনির খুব খেতে ইচ্ছে হলো। কিন্তু দোকানদার একটি লাঠি নিয়ে টনিকে তেড়ে এলো। টনি বুঝতে পারলো না দোকানদার কেন তাকে মারতে এলো। সে কোন অন্যায় করেনি! মন খারাপ করে আবার হাঁটা শুরু করলো টনি। কিছুদিন যেতেই দেখলো ডাস্টবিনে তার মতো আরও কয়েকটি কুকুর কী যেন খাচ্ছে। টনি এগিয়ে গেলো সেদিকটায়।
একটি কুকুর বললো, ‘তুমি কে ভাই?’
টনি কিছুই বললো না। কথা বলার শক্তি ছিলো না তার। খুব করুণ চোখে চেয়ে থাকলো কুকুরগুলোর দিকে।
কুকুরটি আবার বললো, ‘কী হয়েছে তোমার? শরীর খারাপ বুঝি? খিদে পেয়েছে? কিছু খাবে?’
টনি মাথা নেড়ে জানালো ওর খুব খিদে পেয়েছে। কিছু খেতে চায়।
কুকুরটি বললো, ‘তাহলে তুমি আমার সঙ্গে চলো, ওই ডাস্টবিনে অনেক খাবার আছে। তুমি খেতে পারবে।’
টনি কুকুরটির সঙ্গে ডাস্টবিনের কাছে গিয়ে দেখলো, সেখানে প্রচুর বাসি ও পচা খাবার পড়ে আছে। টনি কোনদিন পচা খাবার খায়নি বলে কিছুই খেতে পারলো না।
টনির জন্য খুব মায়া হলো কুকুরটির। শেষে দু’জনে মিলে কসাইয়ের দোকানের সামনে গেলো। কসাই  লোকটি খুব ভালো। কুকুরটিকে সে আগে থেকেই চিনতো। বললো, ‘কিরে আজ আবার কাকে নিয়ে এলি? নিজেই তো খেতে পারিস না! অথচ  প্রতিদিন একজন করে সঙ্গে নিয়ে আসিস!’
কুকুরটি কসাইয়ের কাছে গিয়ে লেজ নাড়তে লাগলো। রোজই কুকুরটি এমন করলে কসাই দোকান থেকে কিছু মাংস খেতে দেয় কুকুরটিকে। আজ কসাই লোকটি একটু বেশি খাবার দিলো। কুকুরটিও আজ একটু বেশি লেজ নাড়লো।
কুকুরটি আগে টনিকে খাওয়ালো। তারপর কিছু পড়ে থাকলে নিজে খেলো। এরপর দু’জনে একটি গাছ তলায় গিয়ে বিশ্রাম নিলো। টনি কুকুরটিকে বুড়ি মা’র কথা খুলে বললো।
কুকুরটি বললো, ‘এটা কিন্তু ঠিক করোনি টনি। বুড়ি মা তোমাকে কত বছর আদর করেছেন। একদিন না হয় তোমাকে কষ্ট দিয়েছেন। তাতেই তুমি চলে আসলে! চলো চলো তোমাকে বুড়ি মা’র কাছে পৌঁছে দিয়ে আসি। তাড়াতাড়ি চলো। সন্ধ্যে হয়ে এলো বুঝি!’
বুড়ি মা’র জন্য টনির খুব খারাপ লাগছিল। নিজের ভুল বুঝতে পারলো টনি। বন্ধু কুকুরটিকে নিয়ে আস্তে আস্তে বুড়ি মা’র বাড়িতে গিয়ে হাজির হলো।
বুড়ি মা তখন উঠানে বসে পান খাচ্ছিলেন। আর এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিলেন।
বুড়ি মা টনিকে দেখে বললেন, ‘এই টনি কোথায় ছিলি সারাদিন? কোথাও গেলে তো বলেকয়ে যেতে হয়, নাকি? কত খুঁজেছি তোকে! তোর জন্য খাবার নিয়ে বসে আছি সারাদিন। আয় তাড়াতাড়ি খেয়ে  নে।’
এবার কুকুরটিকে দেখলো বুড়ি মা। বললেন, ‘কাকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিস?’
টনি কিছু বলছে না দেখে বুড়ি মা টনিকে মাথায়-পিঠে হাত বুলালেন। বললেন, ‘রাগ করেছিস! বোকা কোথাকার!’
টনির রাগ পড়ে গেলো। বলল, বুড়ি মা, ও আমার বন্ধু। খুব ভালো বন্ধু!’
বুড়ি মা বললেন, ‘ও তাই বুঝি! এতোদিন তো বলিসনি যে তোর বন্ধু আছে! তোর বন্ধুর নাম কি?’
টনি বলল, ‘ওর কোন নাম নেই।’
বুড়ি মা হেসে বললেন, ‘ঠিক আছে, আজ থেকে তোর নাম ‘টমি’। এই নামেরই ডাকবো তোকে।’
বুড়ি মার কথা শুনে কুকুরটি হাসতে লাগলো।
বুড়ি মা জিজ্ঞেস করলেন, কি নামটা পছন্দ হয়েছে তো?’
কুকুরটি বললো, খুব পছন্দ হয়েছে।’
বুড়ি মা বললেন, এবার থেকে তোমরা দুই বন্ধু এখানেই থাকবে। কি রাজি তো?
টনি ও টমি দু’জনে খুশি হলো। টমি বুড়ি মাকে বলল, এখন থেকে তোমার কোন কিছু চুরি যাবে না বুড়ি  মা, আমরা দু’জনে সব দেখে রাখবো।
বুড়ি মা খুশি হলেন। ওদের দু’জনে বেশ কিছু রান্না করা মাংস খেতে দিলেন।

২৪ মে, ২০১২

০ Likes ১৪ Comments ০ Share ৭০১ Views

Comments (14)

  • - আলমগীর সরকার লিটন

    চারু দা

    এ গল্প অংশ পড়লাম

    খুবি ভাল লাগল অস্তে অস্তে সবি পড়ব

     

    • - চারু মান্নান

    - মোঃসরোয়ার জাহান

    ভালো লাগলো লেখাটি পড়ে,শুভ কামনা রইল