চৌষট্টি কলা বলতে বাৎসায়নের কামসূত্র গ্রন্থে বর্ণিত ৬৪ প্রকার কার্যক্রমকে বোঝায়। নর-নারীর দাম্পত্য জীবনকে সুখী, তৃপ্তিকর এবং সন্তোষজনক করার জন্য এসব আচার-বিধির ওপর বাৎসায়ন গুরুত্ব আরোপ করেন। এইগুলো নিম্নরূপ:
কণ্ঠ সঙ্গীত। যন্ত্র সঙ্গীতে পারদর্শিতা। নৃত্য-কলা। চিত্রাঙ্কন। কেশ সজ্জা। পুষ্পশয্যা নির্মাণ। নানাবিধ বর্ণে গৃহ সুসজ্জিতকরণ। নিজ পোষাক-পরিচ্ছদ, কেশ, নখ, দন্ত, প্রত্যক্ষ বর্ণের দ্বারা সুসজ্জিতকরণ। বর্ণাঢ্য প্রস্তর এবং ধাতব পদার্থে ঘর ও শয্যা সুশোভিত করা। ভিন্ন ভিন্ন উৎসবে বা আনন্দে শয্যা নানাভাবে আস্তরণ দেওয়া। সাঁতার ও জলকেলি। প্রিয় লোককে আকর্ষণ করার জন্য মন্ত্র-তন্ত্র অনুশীলন। ফুল নিয়ে মালা গাঁথা ও অঙ্গাদি সুশোভিত করা। ফুল নিয়ে মালার মুকুট ও বেষ্টন। নিজের শোভন বেশভুষা করা-এক উৎসবে এক প্রকার, অন্য উৎসবে অন্য প্রকার। চিত্তহারী প্রথায় কানের দুল পরিধান করা। সুগন্ধি দ্রব্য তৈরী করা। তৈজসপত্রাদি তৈরী সম্বন্ধে শিক্ষা করা। নূতন ভূষণ তৈরী বা পুরানো বিভিন্ন ধরনের অলঙ্কার নতুন করে গড়া। অতিথিচর্যা। পরিচ্ছদ রচনার সুচারুতা। হাতের কাজ। রন্ধনকলা। পানীয় দ্রব্য, বিবিধ মিষ্টান্ন, আচার, চাটনি, ইত্যাদি তৈরীতে পারদর্শিতা। সেলাই ও দেহের বস্ত্রাবরণ করতে সুদক্ষতা। বস্ত্রখণ্ড ও সুতা দিয়ে পাখি, পাতা, ফুল ইত্যাদি তৈরী করা। বীণা ও ডমরুর শব্দ অনুকরণ। নানাবিধ হেঁয়ালীপূর্ণ আচরণ। তাৎক্ষণিক কাব্যরচনা ও আবৃত্তি। কঠিন অর্থপূর্ণ দুরূহ শব্দের অর্থ নিরূপণ করা। সুমধুর কণ্ঠে শাস্ত্রীয় শ্লোক আবৃত্তি। নাটক, অভিনয়, দর্শন ও নাটকের বিভিন্ন চরিত্রের প্রকৃত সমালোচনা। কোনও কবিতার হারানো পংক্তির পুণরুদ্ধার করা বা তা পুণরায় নতুন করে লেখা। বেত বা তৃণ থেকে নানাবিধ নতুন নতুন আসবাবপত্র রচনা বা বোনা। কাঠ থেকে কুঁদে ছবি বা দৃশ্য রচনা। কাঠমিস্ত্রীর কাজ, এবং বাড়ি-ঘর নির্মাণ। সোনা, রূপা ও দামী পাথর বসিয়ে নানা কাজ করা। রসায়ন বা ধাতব শাস্ত্র অধ্যয়ন। উজ্জ্বল পাথর ও দামী ধাতুর বস্তু রচনা। কানন রচনা ও পুষ্পবিন্যাস। ভেড়া, মোরগ এবং পায়রাদের নিয়ে কৌতুকপূর্ণ খেলা করার উৎসাহ দান। শুক, ময়না প্রভৃতি পাখিকে কথা শেখানো ও তাদের দিয়ে মজাদার কাজ করানো। গাত্র মর্দন করতে শেখা, বেশভূষা রচনা করা, কাজের শিল্প শিক্ষা করা। সংবাদ প্রাপ্তির নমুনাস্বরূপ আঙ্গুলের দাগ বোঝা। গুপ্ত সংকেত শেখা ও ব্যবহার। বিভিন্ন দেশের লিখিত ভাষা ও কথাবার্তা বোঝা। ঘোড়া, হাতী ও যানবাহন সুসজ্জিত করা। সংকেত চিহ্ন বা গুপ্ত বার্তা বোঝা। নানা ধরণের যন্ত্রে জ্ঞানলাভ করা। স্মৃতিশক্তি বা স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করার অভ্যাস। নানাবিধ পুস্তক পাঠ। নানাবিধ পুস্তক রচনা। অভিধান ও বিশ্বকোষ সংগ্রহ। ছন্দের নিয়ম এবং বক্তৃতা শিল্প শিক্ষা। লুকাবার শিল্প, তুলা রচিত দ্রব্যকে পশমরূপে রূপদান, সাধারণ দ্রব্যকে চিত্তাকর্ষক করে তোলা। নানা বস্ত্র পরিধান করা। দাবা খেলা ও পাশা খেলায় দক্ষতা। বস্ত্র পরিচ্ছদ পরিধান করে নিজেকে অন্যের চোখে আকর্ষণীয় করে তোলা। শিশুদের মত পুতুল ও গোলাকার সব বস্তু নিয়ে খেলা করা। নানা প্রকার শারীরিক ব্যায়াম ও কলাকৌশল শিক্ষা করা। রাজনীতি শিক্ষা করা। সামরিক রীতি-নীতি সম্পর্কে জ্ঞান। মুখ দেখে মানুষের চরিত্র আন্দাজকরণ। কৃত্রিম পুষ্প তৈরী। কাদা বা নরম মাটি দিয়ে পুতুল, মূর্তি নির্মাণ। গণিত বিষয়ে জ্ঞান লাভ।